শ্রাবণেও খাল-বিল-পুকুর পানি শূন্য : পাট নিয়ে দিশেহারা চাষি

আষাঢ়-শ্রাবণেও বৃষ্টি না হওয়া এবং তীব্র রোদ ও দাপদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে খাল-বিল, ডোবা, পুকুর। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের পাট চাষিরা। পাট কেটে পচনের জন্য জাগ দেয়া কৃষকেরাও বিপাকে পড়েছেন পানির স্তর দ্রুত হ্রাস পাওয়ায়। পাট জাগ দেয়ার জন্য ন্যূনতম যে পরিমান পানি থাকার প্রয়োজন সেটি না থাকায় চরম হতাশায় ভুগছেন এই অঞ্চলের চাষিরা।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামের পাট চাষি ওমর আলী সরকার জানান, নদীর খালগুলোও শুকিয়ে গেছে। পাট কাটার উপর্যুক্ত সময় হলেও খাল বিলে পানি না থাকায় কাটতে পারছেন না। একই গ্রামের মনের হোসেন জানান, ১০ দিন আগে পাট জাগ দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন পানি না থাকায় জাগ দেয়া পাটগুলো শুকনোতে পড়েছে এবং এগুলোর আঁশ ছাড়ানো সম্ভব হবে না বলে তিনি জানান। এ কারণে পাটের আঁশ ছাড়াতে পারছেন না তিনি। ফুলছড়ি উপজেলার চাষি জয়নাল আবেদিন জালাল জানান, ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি জাগ দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় পাট জমি থেকে কাটতে পারছিনা, তবে দ্বিতীয় দফা বন্যার আশঙ্কায় তিনি চিন্তিত।

সদর উপজেলার বোয়ালী গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, ৪ কিলোমিটার দূরে ঘিয়ে আলাই নদীতে পাট জাগ দিয়েছি, কিন্তু সেখানেও পানি কমে যাচ্ছে, বৃষ্টিপাত না হলেও পাট ছাড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে তিনি জানান। এই গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, প্রচ- রোদের তাপদহে পাট লালচে হয়ে যাচ্ছে এবং গরু ছাগলে ক্ষতি করছে।

সুন্দরগঞ্জের পাট চাষী নিজাম উদ্দিন মোল্লা জানান পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জাগ দেয়া পাট কালো হচ্ছে এতে পাটের বিক্রয় মূল্য হবে বলে তিনি জানান।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ গ্রামের মুনছুর আলী বলেন, পাট উৎপাদন ও ঘরে তোলা পর্যন্ত যে ব্যয় এরপর যদি পানির অভাবে জাগ দেয়া না যায় তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

নাকাইহাট গ্রামের তছের মিয়া বলেন, স্যালো মেশিন পানি সেচে পাট জাগ দেয়া হচ্ছে, তবে এতে অনেক ব্যয়। যার কারনো লোকসান গুণতে হবে।

সাঘাটার পাটি ব্যবসায়ী নুরে আলম বলেন, পানির অভাবে পাটের রং ঠিকমতো আসবে না, একারণে চাষিরা প্রকৃত মূল্যও পাবেন না বলে তিনি জানান।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৩ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। চর ও বন্যা কবলিত এলাকার চাষিরা পাট কাটতে শুরু করেছে কিন্তু নদীর খাল-বিলে পানি দ্রুত কমে যাওয়া পঁচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এছাড়াও মেইনল্যান্ডের চাষিরা পুকুর ভাড়া করে পাট জাগ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান। আবার অনেক পাট চাষি পুকুরে পানি সেঁচ দিয়ে জাগ দিচ্ছেন। তিনি জানান, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে আষাঢ়-শ্রাবণে খালবিল, পুকুর ডোবা পানি শূন্য হওয়ায় পাট জাগ দেয়ার যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে এতে চাষিরা কিছুটা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২ , ০৬ শ্রাবণ ১৪২৯ ২২ জিলহজ ১৪৪৩

শ্রাবণেও খাল-বিল-পুকুর পানি শূন্য : পাট নিয়ে দিশেহারা চাষি

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

image

গাইবান্ধা : পাটের আঁশ ধৌত করছেন বাগুরিয়া গ্রামের চাষি -সংবাদ

আষাঢ়-শ্রাবণেও বৃষ্টি না হওয়া এবং তীব্র রোদ ও দাপদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে খাল-বিল, ডোবা, পুকুর। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের পাট চাষিরা। পাট কেটে পচনের জন্য জাগ দেয়া কৃষকেরাও বিপাকে পড়েছেন পানির স্তর দ্রুত হ্রাস পাওয়ায়। পাট জাগ দেয়ার জন্য ন্যূনতম যে পরিমান পানি থাকার প্রয়োজন সেটি না থাকায় চরম হতাশায় ভুগছেন এই অঞ্চলের চাষিরা।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামের পাট চাষি ওমর আলী সরকার জানান, নদীর খালগুলোও শুকিয়ে গেছে। পাট কাটার উপর্যুক্ত সময় হলেও খাল বিলে পানি না থাকায় কাটতে পারছেন না। একই গ্রামের মনের হোসেন জানান, ১০ দিন আগে পাট জাগ দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন পানি না থাকায় জাগ দেয়া পাটগুলো শুকনোতে পড়েছে এবং এগুলোর আঁশ ছাড়ানো সম্ভব হবে না বলে তিনি জানান। এ কারণে পাটের আঁশ ছাড়াতে পারছেন না তিনি। ফুলছড়ি উপজেলার চাষি জয়নাল আবেদিন জালাল জানান, ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি জাগ দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় পাট জমি থেকে কাটতে পারছিনা, তবে দ্বিতীয় দফা বন্যার আশঙ্কায় তিনি চিন্তিত।

সদর উপজেলার বোয়ালী গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, ৪ কিলোমিটার দূরে ঘিয়ে আলাই নদীতে পাট জাগ দিয়েছি, কিন্তু সেখানেও পানি কমে যাচ্ছে, বৃষ্টিপাত না হলেও পাট ছাড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে তিনি জানান। এই গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, প্রচ- রোদের তাপদহে পাট লালচে হয়ে যাচ্ছে এবং গরু ছাগলে ক্ষতি করছে।

সুন্দরগঞ্জের পাট চাষী নিজাম উদ্দিন মোল্লা জানান পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জাগ দেয়া পাট কালো হচ্ছে এতে পাটের বিক্রয় মূল্য হবে বলে তিনি জানান।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ গ্রামের মুনছুর আলী বলেন, পাট উৎপাদন ও ঘরে তোলা পর্যন্ত যে ব্যয় এরপর যদি পানির অভাবে জাগ দেয়া না যায় তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

নাকাইহাট গ্রামের তছের মিয়া বলেন, স্যালো মেশিন পানি সেচে পাট জাগ দেয়া হচ্ছে, তবে এতে অনেক ব্যয়। যার কারনো লোকসান গুণতে হবে।

সাঘাটার পাটি ব্যবসায়ী নুরে আলম বলেন, পানির অভাবে পাটের রং ঠিকমতো আসবে না, একারণে চাষিরা প্রকৃত মূল্যও পাবেন না বলে তিনি জানান।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৩ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। চর ও বন্যা কবলিত এলাকার চাষিরা পাট কাটতে শুরু করেছে কিন্তু নদীর খাল-বিলে পানি দ্রুত কমে যাওয়া পঁচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এছাড়াও মেইনল্যান্ডের চাষিরা পুকুর ভাড়া করে পাট জাগ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান। আবার অনেক পাট চাষি পুকুরে পানি সেঁচ দিয়ে জাগ দিচ্ছেন। তিনি জানান, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে আষাঢ়-শ্রাবণে খালবিল, পুকুর ডোবা পানি শূন্য হওয়ায় পাট জাগ দেয়ার যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে এতে চাষিরা কিছুটা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।