বিএনপির সমাবেশের দিন এবার সিলেটেও ধর্মঘট

সিলেটে বিএনপির সমাবেশের দিন আগামী শনিবার বাস ধর্মঘটের ডাক ডেকেছে মালিক সমিতি। বাস ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোন সম্পর্ক নেই। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

তিনি বলেন, সিএনজি অটোরিকশায় গ্রিল সংযোজন, সিলেটে রেজিস্ট্রেমনবিহীন অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা, নতুন করে অটোরিকশার নিবন্ধন না দেয়ার দাবিতে আমরা এই মাসের শুরুতে বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়। তাই বাধ্য হয়ে আমরা প্রতীকী ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাস ধর্মঘট পালিত হবে।

পরিবহন মালিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সমাবেশের দু’দিন আগে থেকে ধর্মঘট ডাকার জন্য মালিক ও শ্রমিক নেতাদের ওপর চাপ ছিল। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতারাও সিলেটের নেতাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে তিন দিনের ধর্মঘট ডাকার অনুরোধ করেন। তবে সিলেটের মালিক ও শ্রমিক নেতারা ধর্মঘটের পক্ষে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সবপক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে মালিক পক্ষ কেবল সমাবেশের দিন ধর্মঘট ডাকছে বলে জানিয়েছে এই সূত্র।

তবে ধর্মঘটের বিষয়ে এখনও কিছু জানেন না জানিয়ে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল হক বলেন, আমরা ধর্মঘটের পক্ষে নই। কোন দলের কর্মসূচিতেই আমরা বাধা দিতে চাই না। শ্রমিকরা সবার সঙ্গে আছে।

প্রসঙ্গত নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ করছে বিএনপি। এ পর্যন্ত ৬ বিভাগে সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে। সবগুলো বিভাগেই সমাবেশের দু’দিন আগে থেকে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়। সিলেটে ১৯ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নগরের চৌহাট্টা এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের এই গণসমাবেশ সফলে নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

ধর্মঘটের ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপির সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার চাপ দিয়ে ধর্মঘট ডাকিয়েছে। তবে কোন ষড়যন্ত্রই গণজমায়েত বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

সমাবেশের আগেই ইজতেমা শুরু : বিএনপির সমাবেশের আগে ইজতেমায় আপত্তি জানিয়েছিল পুলিশ। ইজতেমা কয়েকদিন পিছিয়ে নেয়ার অনুরোধও করা হয়েছিল। তবে আপত্তি আর অনুরোধ উপেক্ষা করে একদিন আগে থেকেই সিলেটে শুরু হয়ে গেছে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ইজতেমা। এরই মধ্যে শনিবার শুরু হচ্ছে বিএনপির গনসমাবেশ।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশ আপত্তি জানানোর পর বুধবার থেকেই শুরু হয় ইজতেমার কার্যক্রম। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল মাঠে বুধবার সকাল থেকেই জড়ো হন আয়োজকদের অনেকে। এই মাঠেই ফজর ও জোহরের নামাজ আদায় করেন তারা।

যদিও মঙ্গলবার রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ইজতেমার আয়োজন কয়েকদিন পিছিয়ে নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। বিএনপির সমাবেশের সময়ে ইজতেমা আয়োজনে অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা থেকে এমন অনুরোধ করা হয় বলে জানিয়েছিলেন সিলেট মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ কমিশনার সুদীপ দাস।

১৯ নভেম্বর নগরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশের সময়ে ইজতেমা আয়োজনে আপত্তি পুলিশের।

তবে পুলিশের এমন আপত্তি আর অনুরোধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আয়োজকরা। পুলিশের নির্দেশনা পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাতেই তাদের অনেকে ইজতেমাস্থলে সমবেত হন। আয়োজক সংগঠন আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির বরুণার পীর হিসেবে পরিচিত মুফতি মাওলানা রশীদুর রহমান ফারুকও রাতে ইজতেমা মাঠে আসেন। পুলিশের আপত্তির কারণে বুধবার থেকেই ইজতেমা শুরুর ঘোষণা দেন তিনি। যা চলবে শনিবার পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে বুধবার সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, ইজতেমাকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে গোয়েন্দা রিপোর্টে এমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল। তাই আমরা অনুরোধ করেছিলাম বিএনপির গণসমাবেশের পর ইজতেমা আয়োজন করার। কিন্তু উদ্যোক্তারা তাতে রাজি হননি। ধর্মীয় বিষয় হওয়ায় আমরা তাদের মানাও করতে পারছি না। তবে শৃঙ্খলার ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার কথা বলেছি।

জানা গেছে, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৭৭ বছর পূর্তি ১৭ ও ১৮ নভেম্বর দুদিন ব্যাপী এই ইজতেমার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার ফজর থেকে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। তবে বুধবার থেকেই তা শুরু হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে আয়োজক সংগঠনের আমির মুফতি রশীদুর রহমান ফারুক বলেন, আমরা সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছি। আলেম উলামারাও আসতে শুরু করেছেন। এ অবস্থায় ইজতেমা পেছানা সম্ভব নয়। তবে আমরা আইন মান্য করি। এখানে কেউ বিশৃঙ্খলা করবে না। এখান থেকে কেউ বিএনপির সমাবেশেও যাবে না।

বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২ , ০২ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৪

বিএনপির সমাবেশের দিন এবার সিলেটেও ধর্মঘট

প্রতিনিধি, সিলেট

সিলেটে বিএনপির সমাবেশের দিন আগামী শনিবার বাস ধর্মঘটের ডাক ডেকেছে মালিক সমিতি। বাস ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোন সম্পর্ক নেই। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

তিনি বলেন, সিএনজি অটোরিকশায় গ্রিল সংযোজন, সিলেটে রেজিস্ট্রেমনবিহীন অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা, নতুন করে অটোরিকশার নিবন্ধন না দেয়ার দাবিতে আমরা এই মাসের শুরুতে বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়। তাই বাধ্য হয়ে আমরা প্রতীকী ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাস ধর্মঘট পালিত হবে।

পরিবহন মালিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সমাবেশের দু’দিন আগে থেকে ধর্মঘট ডাকার জন্য মালিক ও শ্রমিক নেতাদের ওপর চাপ ছিল। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতারাও সিলেটের নেতাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে তিন দিনের ধর্মঘট ডাকার অনুরোধ করেন। তবে সিলেটের মালিক ও শ্রমিক নেতারা ধর্মঘটের পক্ষে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সবপক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে মালিক পক্ষ কেবল সমাবেশের দিন ধর্মঘট ডাকছে বলে জানিয়েছে এই সূত্র।

তবে ধর্মঘটের বিষয়ে এখনও কিছু জানেন না জানিয়ে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল হক বলেন, আমরা ধর্মঘটের পক্ষে নই। কোন দলের কর্মসূচিতেই আমরা বাধা দিতে চাই না। শ্রমিকরা সবার সঙ্গে আছে।

প্রসঙ্গত নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ করছে বিএনপি। এ পর্যন্ত ৬ বিভাগে সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে। সবগুলো বিভাগেই সমাবেশের দু’দিন আগে থেকে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়। সিলেটে ১৯ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নগরের চৌহাট্টা এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের এই গণসমাবেশ সফলে নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

ধর্মঘটের ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপির সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার চাপ দিয়ে ধর্মঘট ডাকিয়েছে। তবে কোন ষড়যন্ত্রই গণজমায়েত বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

সমাবেশের আগেই ইজতেমা শুরু : বিএনপির সমাবেশের আগে ইজতেমায় আপত্তি জানিয়েছিল পুলিশ। ইজতেমা কয়েকদিন পিছিয়ে নেয়ার অনুরোধও করা হয়েছিল। তবে আপত্তি আর অনুরোধ উপেক্ষা করে একদিন আগে থেকেই সিলেটে শুরু হয়ে গেছে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ইজতেমা। এরই মধ্যে শনিবার শুরু হচ্ছে বিএনপির গনসমাবেশ।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশ আপত্তি জানানোর পর বুধবার থেকেই শুরু হয় ইজতেমার কার্যক্রম। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল মাঠে বুধবার সকাল থেকেই জড়ো হন আয়োজকদের অনেকে। এই মাঠেই ফজর ও জোহরের নামাজ আদায় করেন তারা।

যদিও মঙ্গলবার রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ইজতেমার আয়োজন কয়েকদিন পিছিয়ে নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। বিএনপির সমাবেশের সময়ে ইজতেমা আয়োজনে অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা থেকে এমন অনুরোধ করা হয় বলে জানিয়েছিলেন সিলেট মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ কমিশনার সুদীপ দাস।

১৯ নভেম্বর নগরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশের সময়ে ইজতেমা আয়োজনে আপত্তি পুলিশের।

তবে পুলিশের এমন আপত্তি আর অনুরোধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আয়োজকরা। পুলিশের নির্দেশনা পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাতেই তাদের অনেকে ইজতেমাস্থলে সমবেত হন। আয়োজক সংগঠন আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির বরুণার পীর হিসেবে পরিচিত মুফতি মাওলানা রশীদুর রহমান ফারুকও রাতে ইজতেমা মাঠে আসেন। পুলিশের আপত্তির কারণে বুধবার থেকেই ইজতেমা শুরুর ঘোষণা দেন তিনি। যা চলবে শনিবার পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে বুধবার সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, ইজতেমাকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে গোয়েন্দা রিপোর্টে এমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল। তাই আমরা অনুরোধ করেছিলাম বিএনপির গণসমাবেশের পর ইজতেমা আয়োজন করার। কিন্তু উদ্যোক্তারা তাতে রাজি হননি। ধর্মীয় বিষয় হওয়ায় আমরা তাদের মানাও করতে পারছি না। তবে শৃঙ্খলার ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার কথা বলেছি।

জানা গেছে, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৭৭ বছর পূর্তি ১৭ ও ১৮ নভেম্বর দুদিন ব্যাপী এই ইজতেমার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার ফজর থেকে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। তবে বুধবার থেকেই তা শুরু হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে আয়োজক সংগঠনের আমির মুফতি রশীদুর রহমান ফারুক বলেন, আমরা সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছি। আলেম উলামারাও আসতে শুরু করেছেন। এ অবস্থায় ইজতেমা পেছানা সম্ভব নয়। তবে আমরা আইন মান্য করি। এখানে কেউ বিশৃঙ্খলা করবে না। এখান থেকে কেউ বিএনপির সমাবেশেও যাবে না।