নারীর প্রতি সহিংসতা : ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বেশি

কর্মজীবী নারীদের তুলনায় গৃহিণীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা নিজ গৃহেই সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ এবং ঝুঁকির মধ্যে থাকে বলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়।

শিশুদের নিয়ে বলা হয়, শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয় পরিচিত মানুষ, বিশেষ করে নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দ্বারা। আর শিশুদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে তরুণদের সম্পৃক্ততা বেশি বলে বলা হয় এই সমীক্ষায়।

গতকাল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে রাজধানীর সেগুনবাগিচা কার্যালয়ের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র ২০২১ ধর্ষণ, দলবদ্ধধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি ও যৌতুক’ শীর্ষক সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

নারীর প্রতি সহিংসতার মূল কারণ নারীর প্রতি পুরুষের অধস্তন মনোভাব ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করে সমীক্ষায় বলা হয়, নারীর প্রতি যেসব সহিংসতা হয় তার মধ্যে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা বেশি হচ্ছে বলে মনে করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, ২০২১ সালে ধর্ষণের ৮১০টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২২৫টি, ধর্ষণের চেষ্টা ১৯২টি, উত্ত্যক্ত করা ও যৌন হয়রানি ৯৬টি ও যৌতুকের ১১৪টি ঘটনা ঘটেছে। গত বছরগুলোর মতো এবছরও ধর্ষণের শিকার নারীর (১৮ বছরের বেশি) ও কন্যা (১৮ বছরের কম) সংখ্যা বেশি। নারীদের তুলনায় কন্যা শিশুরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে বেশি।

১৪-১৮ বছরের কন্যা শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও দলবদ্ধ ধর্ষণে শিকার হয়েছে যথাক্রমে ১৮, ১১ ও ৩১ শতাংশ। উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ১০-১৩ বছরের শিশুর সংখ্যা ২২ শতাংশ। যৌতুকের ক্ষেত্রে ১৮-২২ বছরের নারীরা সাধারণত বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। এই হার ২২ শতাংশ।

কন্যাদের মধ্যে ৬ষ্ঠÑ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই হার ৪৫%, দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ৫২% এবং উত্ত্যক্তের ক্ষেত্রে ৬৭%।

কর্মজীবী নারীদের তুলনায় গৃহিণীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যৌতুকের জন্য ৮৩%, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, উত্ত্যক্তকরণ, ধর্ষণের চেষ্টায় যথাক্রমে ৩৬%, ৩৭%, ১৭% এবং ৪৬% গৃহিণী নির্যাতনের শিকার হন। এই গবেষণায় ১৮ বছরের কম বয়স্কদের কন্যা এবং ১৮ বছরের বেশি বয়স্কদের নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের মডারেটর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নানা ধরনের গবেষণা করে থাকে। তবে এটা ঠিক গবেষণা নয়, সমীক্ষা। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই গবেষণা থেকে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরন (প্যাটার্ন) বা কোন ধরনের অপরাধ বেশি হয় তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। তথ্য উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ডা. ফওজিয়া মোসলেম জানান, একটা সময় পারিবারিক সহিংসতা বেশি ছিল কিন্তু এখন ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ বেড়েছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে সামাজিক পরিসরে নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যারা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি তরুণ। তরুণরা এর বাইরেও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ। সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

যৌতুক, উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টা নারী ও কন্যা নির্যাতনের এই পাঁচটি ক্ষেত্র বিবেচনায় নিয়ে দেশের ১২টি জতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদরে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ এই সমীক্ষা করে।

সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ।

সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম, সম্পাদকম-লী, সাংবাদিক এবং সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২ , ০২ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৪

নারীর প্রতি সহিংসতা : ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বেশি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

কর্মজীবী নারীদের তুলনায় গৃহিণীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা নিজ গৃহেই সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ এবং ঝুঁকির মধ্যে থাকে বলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়।

শিশুদের নিয়ে বলা হয়, শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয় পরিচিত মানুষ, বিশেষ করে নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দ্বারা। আর শিশুদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে তরুণদের সম্পৃক্ততা বেশি বলে বলা হয় এই সমীক্ষায়।

গতকাল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে রাজধানীর সেগুনবাগিচা কার্যালয়ের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র ২০২১ ধর্ষণ, দলবদ্ধধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি ও যৌতুক’ শীর্ষক সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

নারীর প্রতি সহিংসতার মূল কারণ নারীর প্রতি পুরুষের অধস্তন মনোভাব ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করে সমীক্ষায় বলা হয়, নারীর প্রতি যেসব সহিংসতা হয় তার মধ্যে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা বেশি হচ্ছে বলে মনে করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, ২০২১ সালে ধর্ষণের ৮১০টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২২৫টি, ধর্ষণের চেষ্টা ১৯২টি, উত্ত্যক্ত করা ও যৌন হয়রানি ৯৬টি ও যৌতুকের ১১৪টি ঘটনা ঘটেছে। গত বছরগুলোর মতো এবছরও ধর্ষণের শিকার নারীর (১৮ বছরের বেশি) ও কন্যা (১৮ বছরের কম) সংখ্যা বেশি। নারীদের তুলনায় কন্যা শিশুরা ধর্ষণের শিকার হয়েছে বেশি।

১৪-১৮ বছরের কন্যা শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও দলবদ্ধ ধর্ষণে শিকার হয়েছে যথাক্রমে ১৮, ১১ ও ৩১ শতাংশ। উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ১০-১৩ বছরের শিশুর সংখ্যা ২২ শতাংশ। যৌতুকের ক্ষেত্রে ১৮-২২ বছরের নারীরা সাধারণত বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। এই হার ২২ শতাংশ।

কন্যাদের মধ্যে ৬ষ্ঠÑ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই হার ৪৫%, দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ৫২% এবং উত্ত্যক্তের ক্ষেত্রে ৬৭%।

কর্মজীবী নারীদের তুলনায় গৃহিণীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যৌতুকের জন্য ৮৩%, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, উত্ত্যক্তকরণ, ধর্ষণের চেষ্টায় যথাক্রমে ৩৬%, ৩৭%, ১৭% এবং ৪৬% গৃহিণী নির্যাতনের শিকার হন। এই গবেষণায় ১৮ বছরের কম বয়স্কদের কন্যা এবং ১৮ বছরের বেশি বয়স্কদের নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের মডারেটর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নানা ধরনের গবেষণা করে থাকে। তবে এটা ঠিক গবেষণা নয়, সমীক্ষা। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই গবেষণা থেকে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরন (প্যাটার্ন) বা কোন ধরনের অপরাধ বেশি হয় তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। তথ্য উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ডা. ফওজিয়া মোসলেম জানান, একটা সময় পারিবারিক সহিংসতা বেশি ছিল কিন্তু এখন ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ বেড়েছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে সামাজিক পরিসরে নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যারা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি তরুণ। তরুণরা এর বাইরেও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ। সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

যৌতুক, উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টা নারী ও কন্যা নির্যাতনের এই পাঁচটি ক্ষেত্র বিবেচনায় নিয়ে দেশের ১২টি জতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদরে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ এই সমীক্ষা করে।

সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ।

সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম, সম্পাদকম-লী, সাংবাদিক এবং সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।