আদালতপাড়া থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিল সহযোগীরা

জঙ্গিদের ধরতে পারলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার, সারাদেশে রেড এলার্ট

ঢাকার আদালতপাড়া থেকে পুলিশের ওপর হামলা করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের সহযোগীরা। দন্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার এটি দ্বিতীয় ঘটনা। গতকাল দপুরে ওই ২ জঙ্গিসহ ৪ জঙ্গিকে অন্য একটি মামলায় আদালতে হাজির করে ফিরিয়ে নেয়ার সময় হামলার ঘটনাটি ঘটে বলে প্রত্যক্ষদশীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের, পলাতক জঙ্গিদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা এবং সারাদেশে রেড এলার্ট জারির পাশাপাশি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে গতকাল সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, জঙ্গি মামলার আসামি ছিনতাইয়ে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, চার আসামি আদালতে হাজিরা শেষ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন পুলিশ এবং একজন আনসার সদস্য। গেটের সামনে আসার পরপরই ওই ৪ আসামি পুলিশ ও আনসার সদস্যকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। বাইরে আরও চারজন লোক ছিল বাইক নিয়ে। রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে মোটরসাইকেলে থাকা লোকেরা সিগন্যাল দেয়ার পরই গেটের কাছে এসে আসামিরা পুলিশকে কিলঘুষি দেয়া শুরু করে। এর মধ্যে গেটের দারোয়ান ধরতে এলে তাকেও স্প্রে মারা হয়, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পার্কিংয়ে আরও ৩ জন ড্রাইভার ছিলেন, তাদেরও স্প্রে মেরে অজ্ঞান করা হয়। পথচারী ছিলেন অনেক, তাদের মধ্যে প্রথম কয়েকজনকে স্প্রে মারার পর বাকি পথচারীরা সরে যান। ‘ওপেন’ কাজ হয়েছে, কিন্তু কেউ ভয়ে সামনে যায়নি। ওই যে যাওয়ার পরপর স্প্রে মারে, আর অজ্ঞান হয়ে যায়, এটা দেখে আর কেউ ভয়ে আগায়নি। বাইরে ওনাদের যে লোকজন ছিল তারাও হয়তো চাকু-ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এজন্য আমিও সামনে যাইনি। এর আগে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভানে হামলা ও পুলিশ হত্যা করে জঙ্গি ছিনতাই ও ২০১৭ গাজীপুরে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়। গতকালের ঘটনায় পুলিশের গাফলতিতে হয়েছে বলেও মনে করছেন আইনজীবীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি সদস্য মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে শাকিব ওরফে সাজিত ওরয়ে শাহাব এবং মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান প্রকাশক আরেফিন দীপন ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ছিল। আবু সিদ্দিক সোহেলের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কুমড়ীর হাটের ভেটেম্বর গ্রামে। তার পিতার নাম মো. আবু তাহের। তার বর্তমান ঠিকানা তুরাগের ৮নং ওয়ার্ডের বাউলিয় ধোবাবালি রোডের ১৬ নম্বর বাড়ি। আর মইনুল সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালাপরুকা মাধবপুরের মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। এ ঘটনায় গাফলতি থাকলে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেও পুলিশ দুই জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যদিকে ঘটনায় ডিএমপি থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পুরো কাজটি হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে। তাদের ভয়ে কেউ সামনে এগিয়ে আসেনি। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা চার ব্যক্তি তাদের (দুইজনকে) ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হাজতখানায় নেয়ার সময় সেখানে ৪ জঙ্গি সদস্য ছিল অন্য দুইজনকেও ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।

ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তাদের কয়েকজন সহযোগী ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। দুপুরে আদালতের ফটকের কাছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ‘কেমিক্যাল ছুড়ে অজ্ঞান করে’ তারা দুই জঙ্গিকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারকের সামনে হাজিরা শেষে আবার যখন তাদের নির্দিষ্ট রুমে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের কেমিক্যাল ছুড়ে অজ্ঞান করে তাদের নিয়ে পালিয়ে যায় তাদেরই কয়েকজন সমর্থক।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পলাতক জঙ্গিরা যাতে দেশ ছাড়তে না পারে সেজন্য রেড অ্যালার্ট জারি করে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। যদি কারো অবহেলা থাকে, গাফিলতি থাকে, যদি কেউ ইচ্ছা করে এই কাজটি করে থাকেন, তার উপযুক্ত ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব। নিশ্চয় আমরা তদন্ত কমিটি করব, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমাদের পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে তাদের। শীঘ্রই তাদের ধরতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

এ ঘটনা অ্যালার্মিং কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা সব জিনিসই সিরিয়াসলি দেখি। আমরা সিনিয়াসলি দেখি বলেই অনেক জিনিস কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছি। জঙ্গির উত্থান হয়েছিল, জঙ্গির উত্থানও আমরা কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছি। হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেও আদালতে আসলে ডান্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফ (হাতকড়া) খুলে দিতে হবে। সেই অনুযায়ী তারা সেখানে গিয়েছিলেন। কোন ফাঁক-ফোঁকরে ঘটনাটি ঘটেছে, তদন্তের আগে বলতে পারবো না। আদালতের মতো একটি স্থানে এমন ঘটনা ঘটলো এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কোর্টের নিরাপত্তা নিয়ে তো এর আগে প্রশ্ন ওঠেনি। সবসময় তো এ রকমভাবেই চলে আসছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) একে এম হাফিজ আক্তার জানিয়েছেন, ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। জঙ্গিদের ফেলে যাওয়া বেশকিছু আলামত জব্দ করেছে পুলিশ। এছাড়া ওই সময়কার কিছু সিটিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে।

অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন, দুই জঙ্গিকে আদালতে হাজির করার সময় যে পুলিশ সদস্যের হেফাজতে ছিল তাদের জবানবন্দি নেয়াসহ তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিভাবে কোন পরিস্থিেিত এ ঘটনা ঘটেছে সেটি খুঁজে বের করা হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে পুলিশের করণীয় কী সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি তাদের মতামত তুলে ধরবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঘটনার তদন্তে ইতোমধ্যে ডিএমপি থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরতে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ইতোমধ্যে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে কার্যক্রম শুরু করেছে। র‌্যাবের সব ইউনিট এ বিষয়ে সমন্বিতভাবে মাঠে নেমেছে।

হামলা ও ছিনতাই পূর্বপরিকল্পিত

এদিকে আদালতপাড়া থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ। পুলিশের ধারণা কয়েকদিন রেকি করে সহযোগীদের ছিনিয়ে নিতে আসে আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা। ঘটনাস্থল থেকে হাতকড়া কাটার অ্যান্টিকাটার, চাবি ও পিপার স্প্রে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, আনসার আল ইসলাম কখনো রেকি ছাড়া, পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া কিছু করে না। এখানেও তারা রেকি করেছে বলেই মনে হচ্ছে। যেখান থেকে দুই আসামি ছিনতাই করা হয়েছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না, এটা হয়ত তারা জানত। জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সশস্ত্র হামলায় বিশ্বাসী আনসার আল ইসলাম। একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গতকাল ১২ আসামিকে কোর্টে তোলা হয়। তাদের মধ্যে চার জঙ্গি ছিলেন আনসার আল ইসলামের সশস্ত্র টিমের সদস্য। যারা প্রকাশক দীপন ও লেখক অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, চারজন চারজন করে আসামিদের কোর্ট থেকে গারদে নেয়া হচ্ছিল। প্রথম চারজনের মধ্যে ছিল জঙ্গি সদস্য আরাফাত, সবুর, মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে ছিনিয়ে নিতে আসা অন্য জঙ্গিরা। তারা রাস্তার বিপরীতে মোটরসাইকেল পার্ক করে দাঁড়িয়ে ছিল। গেটে আসা মাত্র পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে অজ্ঞান করা হয় পুলিশ সদস্য, গেটম্যান ও তিন গাড়িচালককে। এরপর পুলিশ ও আনসার সদস্যকে কিল-ঘুষি মেরে একটি বাইকে দুই জঙ্গিকে তুলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে তারা।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ছিনিয়ে নিতে আসা জঙ্গিরা পালানোর রুটম্যাপ ও ব্যাকআপ নিয়েই ঘটনাস্থলে এসেছিল। তারা জানত, এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। ধারণা করা হচ্ছে তাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ছিল। একাধিক জঙ্গি সদস্য এই ছিনিয়ে নেয়ার অপারেশনে যুক্ত ছিল। সঙ্গে আনা কাঁধব্যাগে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্রও আনা হয়ে থাকতে পারে।

সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিসহ জড়িতদের খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে একযোগে কাজ করছে ডিএমপি, ডিবি, সিটিটটিসিসহ বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য সব ইউনিট। তিনি বলেন, ঘটনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিটিটিসি অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা আশা করছি তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। কীভাবে জঙ্গিরা পালিয়ে গেল, কারা কীভাবে নিয়ে গেল, এগুলো দেখছি। জঙ্গিদের যাওয়ার পথ ধরে ধরে কয়েকটি টিম কাজ করছে। শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে নানামুখী তৎপরতা চলছে।

১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা

এদিকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি সদস্যের ছবি প্রকাশ করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ পুরস্কার দেয়া হবে। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুরস্কার ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পোস্ট করা হয়েছে। সারাদেশে পুলিশের মাধ্যমে পুরস্কার ঘোষণার বিষয়টি সর্বসাধারণকে জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

ডিএমপির তদন্ত কমিটি গঠন

আদালত থেকে হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল বিকেলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সভাপতি করে গঠিত কমিটির বাকি চার সদস্য হলেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন), যুগ্ম কমিশনার (সিটিটিসি), ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) ও ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (সিআরও)।

আদেশে বলা হয়েছে, দীপন হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত ২ আসামি ঢাকার আদালত থেকে ‘পলাতক’ হওয়ার ঘটনায় এ সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৪ জনকেই ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী যেভাবে হামলা হয়েছে তাতে মনে হয় ৪ জনকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কারণ জঙ্গিরা পূর্ব থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলাটি করেছে। তবে তারা দুজনকে ছিনিয়ে নিলেও অন্য দুজনকে ছিনিয়ে নিতে পারেনি। প্রক্ষদর্শী একজন বলেন, জঙ্গিরা ৪ জনই প্রথমে তাদের সঙ্গে থাকা পুলিশ ও আনসারকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। ঘুষি দেয়ায় পুলিশ সদস্য আহত হন এবং তার শরীর থেকে রক্ত বের হয়। যার ফলে তার হাতে থাকা দুই আসামি ছেড়ে দেন তিনি। আনসার সদস্য তার হাতে থাকা দুই আসামিকে ছাড়েননি। তাকে অনেক মারধর করা হয়েছে। তাকেও ঘুষি দেয়া হয়েছে, স্প্রে মারা হয়েছে। কিন্তু তিনি আসামি ছাড়েননি। পুলিশ সদস্য যে দুই আসামিকে ছেয়ে দিয়েছেন তারা বাইরে রাখা মোটরসাইকেলে উঠে চলে যায়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হয়তো ৪ জঙ্গিকেই ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। দুজনকে নিতে পারলেও অন্য দুজনকে নেয়া সম্ভব হয়নি। সেখানে দুটি মোটরসাইকেলে জঙ্গিদের সহযোগী ছিল। বিষয়গুলো এখন তদন্ত কমিটি তদন্ত করে দেখবেন।

২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও সারাদেশে রেড এলার্ট

এদিকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে এবং নতুন করে যাতে কোন ধরনের জঙ্গি তৎপড়তা তৈর না হয় সেজন্য সারাদেশে রেড এলার্ট জারি করেছে পুলিশ। সীমান্ত জেলাগুলোতে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। দুই জঙ্গির গ্রামের বাড়িসহ সম্ভব্য সব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘটনায় গতকাল কোতয়ালি থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

পুলিশের গাফলতি দেখছে আইনজীবীরা

আদালতের সামনে থেকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা। সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতের হাজির করার সময় ছিল না তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে উপস্থিত করার কথা থাকলেও শুধু হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাপস কুমার পাল বলেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানোর কথা। কিন্তু তাদের কেন তা পরানো হলো না তা বোধগম্য নয়। রাষ্ট্রেপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার খান জাকির বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল। তাদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা হয়নি শুধু হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, দুই জঙ্গিকে আদালতে হাজির করার দায়িত্বে যেসব পুলিশ সদস্য ছিল তাদের যেমন গাফলতি ছিল, তেমনি আদালতপাড়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদেরও গাফলতি ছিল মনে হচ্ছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার সে ধরনের প্রস্তুতি দায়িত্বশীলদের ছিল না। যেহেতু তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে তারা বিষয়টি তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

জঙ্গি ছিনতাইকারী শনাক্ত

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে ঢাকা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেট থেকে দুই আসামিকে কারা ছিনিয়ে নিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দুজন আসামিকে কয়েকজন জঙ্গি এসে পুলিশকে আক্রমণ করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সংক্রান্ত একটি মামলা হয়েছে। মামলায় আবদুস সবুর ও আরাফাত রহমানসহ ২০ জনকে এজহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, আদালতের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ইতোমধ্যে যারা পালিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করার কাজ শুরু হয়েছে।

আগেও দু’বার হামলা

জঙ্গি মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ জেএমপির সক্রিয় সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮), মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান (৩৫) এবং রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদকে (৩৫) ২০১৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যানে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয়। তারা একটি মামলায় হাজিরা করাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় আতিক নামের পুলিশের এক সদস্য জঙ্গিদের গুলিতে মারা যায়। যদিও পরে রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ পুলিশের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে মারা যায়। কিন্তু ওই দুই জঙ্গিকে আর গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ওই হামলায় নেতৃত্ব দেয়া কয়েকজনকে পুলিশ ও র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় পর ২০১৭ সালের ৬ মার্চ গাজীপুরের টঙ্গীতে হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের বহনকারী প্রিজনভ্যানে হামলা করে তাদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে সহযোগী জঙ্গিরা। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোস্তফা কামাল ও মিনহাজুল ইসলামসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২ , ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৪

আদালতপাড়া থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিল সহযোগীরা

জঙ্গিদের ধরতে পারলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার, সারাদেশে রেড এলার্ট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ঢাকার আদালতপাড়া থেকে পুলিশের ওপর হামলা করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের সহযোগীরা। দন্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার এটি দ্বিতীয় ঘটনা। গতকাল দপুরে ওই ২ জঙ্গিসহ ৪ জঙ্গিকে অন্য একটি মামলায় আদালতে হাজির করে ফিরিয়ে নেয়ার সময় হামলার ঘটনাটি ঘটে বলে প্রত্যক্ষদশীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের, পলাতক জঙ্গিদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা এবং সারাদেশে রেড এলার্ট জারির পাশাপাশি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে গতকাল সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, জঙ্গি মামলার আসামি ছিনতাইয়ে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, চার আসামি আদালতে হাজিরা শেষ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন পুলিশ এবং একজন আনসার সদস্য। গেটের সামনে আসার পরপরই ওই ৪ আসামি পুলিশ ও আনসার সদস্যকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। বাইরে আরও চারজন লোক ছিল বাইক নিয়ে। রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে মোটরসাইকেলে থাকা লোকেরা সিগন্যাল দেয়ার পরই গেটের কাছে এসে আসামিরা পুলিশকে কিলঘুষি দেয়া শুরু করে। এর মধ্যে গেটের দারোয়ান ধরতে এলে তাকেও স্প্রে মারা হয়, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পার্কিংয়ে আরও ৩ জন ড্রাইভার ছিলেন, তাদেরও স্প্রে মেরে অজ্ঞান করা হয়। পথচারী ছিলেন অনেক, তাদের মধ্যে প্রথম কয়েকজনকে স্প্রে মারার পর বাকি পথচারীরা সরে যান। ‘ওপেন’ কাজ হয়েছে, কিন্তু কেউ ভয়ে সামনে যায়নি। ওই যে যাওয়ার পরপর স্প্রে মারে, আর অজ্ঞান হয়ে যায়, এটা দেখে আর কেউ ভয়ে আগায়নি। বাইরে ওনাদের যে লোকজন ছিল তারাও হয়তো চাকু-ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এজন্য আমিও সামনে যাইনি। এর আগে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভানে হামলা ও পুলিশ হত্যা করে জঙ্গি ছিনতাই ও ২০১৭ গাজীপুরে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়। গতকালের ঘটনায় পুলিশের গাফলতিতে হয়েছে বলেও মনে করছেন আইনজীবীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি সদস্য মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে শাকিব ওরফে সাজিত ওরয়ে শাহাব এবং মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান প্রকাশক আরেফিন দীপন ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ছিল। আবু সিদ্দিক সোহেলের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কুমড়ীর হাটের ভেটেম্বর গ্রামে। তার পিতার নাম মো. আবু তাহের। তার বর্তমান ঠিকানা তুরাগের ৮নং ওয়ার্ডের বাউলিয় ধোবাবালি রোডের ১৬ নম্বর বাড়ি। আর মইনুল সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালাপরুকা মাধবপুরের মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। এ ঘটনায় গাফলতি থাকলে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেও পুলিশ দুই জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যদিকে ঘটনায় ডিএমপি থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পুরো কাজটি হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে। তাদের ভয়ে কেউ সামনে এগিয়ে আসেনি। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা চার ব্যক্তি তাদের (দুইজনকে) ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হাজতখানায় নেয়ার সময় সেখানে ৪ জঙ্গি সদস্য ছিল অন্য দুইজনকেও ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।

ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তাদের কয়েকজন সহযোগী ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। দুপুরে আদালতের ফটকের কাছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ‘কেমিক্যাল ছুড়ে অজ্ঞান করে’ তারা দুই জঙ্গিকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারকের সামনে হাজিরা শেষে আবার যখন তাদের নির্দিষ্ট রুমে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের কেমিক্যাল ছুড়ে অজ্ঞান করে তাদের নিয়ে পালিয়ে যায় তাদেরই কয়েকজন সমর্থক।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পলাতক জঙ্গিরা যাতে দেশ ছাড়তে না পারে সেজন্য রেড অ্যালার্ট জারি করে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। যদি কারো অবহেলা থাকে, গাফিলতি থাকে, যদি কেউ ইচ্ছা করে এই কাজটি করে থাকেন, তার উপযুক্ত ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব। নিশ্চয় আমরা তদন্ত কমিটি করব, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমাদের পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে তাদের। শীঘ্রই তাদের ধরতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

এ ঘটনা অ্যালার্মিং কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা সব জিনিসই সিরিয়াসলি দেখি। আমরা সিনিয়াসলি দেখি বলেই অনেক জিনিস কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছি। জঙ্গির উত্থান হয়েছিল, জঙ্গির উত্থানও আমরা কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছি। হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেও আদালতে আসলে ডান্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফ (হাতকড়া) খুলে দিতে হবে। সেই অনুযায়ী তারা সেখানে গিয়েছিলেন। কোন ফাঁক-ফোঁকরে ঘটনাটি ঘটেছে, তদন্তের আগে বলতে পারবো না। আদালতের মতো একটি স্থানে এমন ঘটনা ঘটলো এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কোর্টের নিরাপত্তা নিয়ে তো এর আগে প্রশ্ন ওঠেনি। সবসময় তো এ রকমভাবেই চলে আসছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) একে এম হাফিজ আক্তার জানিয়েছেন, ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। জঙ্গিদের ফেলে যাওয়া বেশকিছু আলামত জব্দ করেছে পুলিশ। এছাড়া ওই সময়কার কিছু সিটিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে।

অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন, দুই জঙ্গিকে আদালতে হাজির করার সময় যে পুলিশ সদস্যের হেফাজতে ছিল তাদের জবানবন্দি নেয়াসহ তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিভাবে কোন পরিস্থিেিত এ ঘটনা ঘটেছে সেটি খুঁজে বের করা হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে পুলিশের করণীয় কী সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি তাদের মতামত তুলে ধরবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঘটনার তদন্তে ইতোমধ্যে ডিএমপি থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরতে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ইতোমধ্যে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে কার্যক্রম শুরু করেছে। র‌্যাবের সব ইউনিট এ বিষয়ে সমন্বিতভাবে মাঠে নেমেছে।

হামলা ও ছিনতাই পূর্বপরিকল্পিত

এদিকে আদালতপাড়া থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ। পুলিশের ধারণা কয়েকদিন রেকি করে সহযোগীদের ছিনিয়ে নিতে আসে আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা। ঘটনাস্থল থেকে হাতকড়া কাটার অ্যান্টিকাটার, চাবি ও পিপার স্প্রে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, আনসার আল ইসলাম কখনো রেকি ছাড়া, পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া কিছু করে না। এখানেও তারা রেকি করেছে বলেই মনে হচ্ছে। যেখান থেকে দুই আসামি ছিনতাই করা হয়েছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না, এটা হয়ত তারা জানত। জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সশস্ত্র হামলায় বিশ্বাসী আনসার আল ইসলাম। একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গতকাল ১২ আসামিকে কোর্টে তোলা হয়। তাদের মধ্যে চার জঙ্গি ছিলেন আনসার আল ইসলামের সশস্ত্র টিমের সদস্য। যারা প্রকাশক দীপন ও লেখক অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, চারজন চারজন করে আসামিদের কোর্ট থেকে গারদে নেয়া হচ্ছিল। প্রথম চারজনের মধ্যে ছিল জঙ্গি সদস্য আরাফাত, সবুর, মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে ছিনিয়ে নিতে আসা অন্য জঙ্গিরা। তারা রাস্তার বিপরীতে মোটরসাইকেল পার্ক করে দাঁড়িয়ে ছিল। গেটে আসা মাত্র পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে অজ্ঞান করা হয় পুলিশ সদস্য, গেটম্যান ও তিন গাড়িচালককে। এরপর পুলিশ ও আনসার সদস্যকে কিল-ঘুষি মেরে একটি বাইকে দুই জঙ্গিকে তুলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে তারা।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ছিনিয়ে নিতে আসা জঙ্গিরা পালানোর রুটম্যাপ ও ব্যাকআপ নিয়েই ঘটনাস্থলে এসেছিল। তারা জানত, এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। ধারণা করা হচ্ছে তাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ছিল। একাধিক জঙ্গি সদস্য এই ছিনিয়ে নেয়ার অপারেশনে যুক্ত ছিল। সঙ্গে আনা কাঁধব্যাগে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্রও আনা হয়ে থাকতে পারে।

সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিসহ জড়িতদের খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে একযোগে কাজ করছে ডিএমপি, ডিবি, সিটিটটিসিসহ বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য সব ইউনিট। তিনি বলেন, ঘটনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিটিটিসি অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা আশা করছি তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। কীভাবে জঙ্গিরা পালিয়ে গেল, কারা কীভাবে নিয়ে গেল, এগুলো দেখছি। জঙ্গিদের যাওয়ার পথ ধরে ধরে কয়েকটি টিম কাজ করছে। শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে নানামুখী তৎপরতা চলছে।

১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা

এদিকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি সদস্যের ছবি প্রকাশ করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ পুরস্কার দেয়া হবে। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুরস্কার ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পোস্ট করা হয়েছে। সারাদেশে পুলিশের মাধ্যমে পুরস্কার ঘোষণার বিষয়টি সর্বসাধারণকে জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

ডিএমপির তদন্ত কমিটি গঠন

আদালত থেকে হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল বিকেলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সভাপতি করে গঠিত কমিটির বাকি চার সদস্য হলেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন), যুগ্ম কমিশনার (সিটিটিসি), ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) ও ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (সিআরও)।

আদেশে বলা হয়েছে, দীপন হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত ২ আসামি ঢাকার আদালত থেকে ‘পলাতক’ হওয়ার ঘটনায় এ সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৪ জনকেই ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী যেভাবে হামলা হয়েছে তাতে মনে হয় ৪ জনকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কারণ জঙ্গিরা পূর্ব থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলাটি করেছে। তবে তারা দুজনকে ছিনিয়ে নিলেও অন্য দুজনকে ছিনিয়ে নিতে পারেনি। প্রক্ষদর্শী একজন বলেন, জঙ্গিরা ৪ জনই প্রথমে তাদের সঙ্গে থাকা পুলিশ ও আনসারকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। ঘুষি দেয়ায় পুলিশ সদস্য আহত হন এবং তার শরীর থেকে রক্ত বের হয়। যার ফলে তার হাতে থাকা দুই আসামি ছেড়ে দেন তিনি। আনসার সদস্য তার হাতে থাকা দুই আসামিকে ছাড়েননি। তাকে অনেক মারধর করা হয়েছে। তাকেও ঘুষি দেয়া হয়েছে, স্প্রে মারা হয়েছে। কিন্তু তিনি আসামি ছাড়েননি। পুলিশ সদস্য যে দুই আসামিকে ছেয়ে দিয়েছেন তারা বাইরে রাখা মোটরসাইকেলে উঠে চলে যায়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হয়তো ৪ জঙ্গিকেই ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। দুজনকে নিতে পারলেও অন্য দুজনকে নেয়া সম্ভব হয়নি। সেখানে দুটি মোটরসাইকেলে জঙ্গিদের সহযোগী ছিল। বিষয়গুলো এখন তদন্ত কমিটি তদন্ত করে দেখবেন।

২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও সারাদেশে রেড এলার্ট

এদিকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে এবং নতুন করে যাতে কোন ধরনের জঙ্গি তৎপড়তা তৈর না হয় সেজন্য সারাদেশে রেড এলার্ট জারি করেছে পুলিশ। সীমান্ত জেলাগুলোতে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। দুই জঙ্গির গ্রামের বাড়িসহ সম্ভব্য সব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘটনায় গতকাল কোতয়ালি থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

পুলিশের গাফলতি দেখছে আইনজীবীরা

আদালতের সামনে থেকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা। সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতের হাজির করার সময় ছিল না তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে উপস্থিত করার কথা থাকলেও শুধু হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাপস কুমার পাল বলেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানোর কথা। কিন্তু তাদের কেন তা পরানো হলো না তা বোধগম্য নয়। রাষ্ট্রেপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার খান জাকির বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল। তাদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা হয়নি শুধু হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, দুই জঙ্গিকে আদালতে হাজির করার দায়িত্বে যেসব পুলিশ সদস্য ছিল তাদের যেমন গাফলতি ছিল, তেমনি আদালতপাড়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদেরও গাফলতি ছিল মনে হচ্ছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার সে ধরনের প্রস্তুতি দায়িত্বশীলদের ছিল না। যেহেতু তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে তারা বিষয়টি তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

জঙ্গি ছিনতাইকারী শনাক্ত

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে ঢাকা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেট থেকে দুই আসামিকে কারা ছিনিয়ে নিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দুজন আসামিকে কয়েকজন জঙ্গি এসে পুলিশকে আক্রমণ করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সংক্রান্ত একটি মামলা হয়েছে। মামলায় আবদুস সবুর ও আরাফাত রহমানসহ ২০ জনকে এজহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, আদালতের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ইতোমধ্যে যারা পালিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করার কাজ শুরু হয়েছে।

আগেও দু’বার হামলা

জঙ্গি মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ জেএমপির সক্রিয় সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮), মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান (৩৫) এবং রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদকে (৩৫) ২০১৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যানে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয়। তারা একটি মামলায় হাজিরা করাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় আতিক নামের পুলিশের এক সদস্য জঙ্গিদের গুলিতে মারা যায়। যদিও পরে রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ পুলিশের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে মারা যায়। কিন্তু ওই দুই জঙ্গিকে আর গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ওই হামলায় নেতৃত্ব দেয়া কয়েকজনকে পুলিশ ও র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় পর ২০১৭ সালের ৬ মার্চ গাজীপুরের টঙ্গীতে হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের বহনকারী প্রিজনভ্যানে হামলা করে তাদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে সহযোগী জঙ্গিরা। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোস্তফা কামাল ও মিনহাজুল ইসলামসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।