পুলিশ বলছে ‘চক্রটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ছিনতাই করে’

ব্যবসায়ী মো. শহিদুল হক ভাগনে মো. রিয়াজকে সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দরে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা শেষ করে একটি প্রাইভেটকারে ফের বাড়ির উদ্দেশে যখন রওনা দেন তখন রাত সোয়া ১টা। বনানীর মহখালী ফ্লাইওভার দিয়ে যখন যাচ্ছিলেন তখন তাদের গতিরোধ করে আরও একটি গাড়ি। র‌্যাবের পোশাক পরিহত এক ব্যক্তিসহ ৩ জন গাড়ি থেকে নেমেই অস্ত্রের মুখে ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ও তার ভাগনে রিয়াজকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হ্যান্ডকাপ পড়ান। এরপর শুরু করেন মারধর। এক পর্যায়ে তাদের কাছে থাকা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করেন। পরে আশপাশের লোকজন ও পুলিশের সহযোগিতায় রক্ষা পান ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ও তার ভাগনে।

পুলিশ বলছে, মধ্য রাতে প্রাইভেট কার থামিয়ে ব্যবসায়ী শহিদুল ও তার ভাগনে মো. রিয়াজকে অপহরণের চেষ্টা করে র‌্যাপিড অ্যাক্যশন ব্যাটেলিয়ন র‌্যাব পরিচয়ে। ভুক্তভোগীদের চিৎকারে লোকজন ছুটে আসলে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে চলে আসে পুলিশ। তবে ততক্ষণে অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা আল মোমেন পালিয়ে গেলেও তার সহযোগী আরিয়ান জয়কে আটক করা হয়। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ঘটনার মূল হোতা আল মোমেন ও তার আরেক সহযোগী গাড়িচালক ফরহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঘটনায় ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আরিয়ান আহমেদ জয়কে। এছাড়া আল মোমেন ও মো. ফরহাদ হোসেনও মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার ৩ জনকে গতকাল আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করেছে।

পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার মধ্যরাতে ভুক্তভোগীরা বিমানবন্দর এলাকা থেকে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে একটি গাড়ি তাদের পিছু নেয়। মহাখালী ফ্লাইওভারের উপর উঠলে পেছনে থাকা গাড়িটি সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। এ সময় তাদের পিস্তল দেখিয়ে গাড়ি থেকে নামানো হয় এবং হাতে হ্যান্ডকাপ পরানো হয়। ওই সময় ভুক্তভোগীরা চিৎকার শুরু করলে অনেকেই সড়ক ধরে চলে গেলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে ওই পথ ধরে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্য যাচ্ছিলেন। তারা এমন দৃশ্য দেখে থেমে যান এবং র‌্যাবের জ্যাকেট পরিহিত সদস্যদের এমন কা- দেখে তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। পরে ওই পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রা এক দুষ্কৃতকারীকে আটক করে বনানী থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

বনানী থানার একজন পুলিশ সদস্য ভুক্তভোগী রিয়াজ ও শহীদুলের বরাত দিয়ে জানান, ভুক্তভোগী দু’জন বিমানবন্দর থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি তাদের ফলো করে এবং ঘটনাস্থলে গাড়ি থামিয়ে মারধর শুরু করে। পুরো গাড়ি চেক করবে বলে জানায়। এ সময় তাদের গুলি করে মেরে ফেলবে বলেও তারা হুমকি দেয়।

পুলিশ বলছে, মূলত ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মূলত ভুক্তভোগীদের ভাড়া করা প্রাইভেটকারের চালকও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তার সহযোগিতায় র‌্যাবের পোশাক পড়ে ভুক্তভোগীদের আটক করে তাদের কাছ থেকে টাকাসহ মূলব্যান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিতে। কারণ ভুক্তভোগী শহিদুল ও রিয়াজ ব্যবসায়ী। তাদের ধারণা ছিল তাদের কাছে অনেক টাকা-পয়সা থাকতে পারে। সে কারণে টার্গেট করে তাদের আটক করা হয়েছে।

চক্রটি এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই কাজে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে টার্গেট ব্যক্তিকে থামিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর মারধর করে টাকা পয়সা রেখে নির্জন স্থানে ফেলে চলে যায়। মূলত গাড়ি চালকদের সহযোগিতায় এরা র‌্যাব- পুলিশ পরিচয়ে এ ধরনের কাজ করে থাকে। গ্রেপ্তার মমিনুল র‌্যাবের সদস্য বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার কাছে যে আইডি কার্ড ছিল সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তার নাম জয়। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। তিনি টঙ্গীতে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন।

বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া জানান, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বনানী থানায় একটি মামলা করেন। ঘটনার সময় আটক হওয়া একজনের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযানে নেমে মমিনুল ইসলাম এবং এক গাড়ি চালকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। যে গাড়ি চালককে আটক করা হয়েছে ওই গাড়ি চালকই ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলামকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে গাড়ি চালকের সহযোগিতায় ঘটনানি ঘটেছে। গ্রেপ্তার অন্যজন মমিনুলের আত্মীয়।

পুলিশ জানিয়েছে আটক মমিনুল ইসলাম নিজেকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলামকে তুলে নিতে চেয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে মমিনুল ইসলামই চক্রের মূল হোতা। এ চক্রে একাধিক সদস্য থাকতে পারে। গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তার জয় পুলিশকে জানিয়েছেন, মমিন নামে এক র‌্যাব সদস্যের সঙ্গে মাদক সংক্রান্ত্র কাজ করতে গিয়ে তার পরিচয় হয়। শুক্রবার রাতে একটি অপারেশন আছে বলে তাকে মহাখালীতে নিয়ে আসেন। তিনিও ওই সময় ভুক্তভোগীদের মারধর করেন বলে স্বীকার করেছেন।

রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৭ মাঘ ১৪২৯, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

র‌্যাব পরিচয়ে দুই ব্যবসায়ীকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মারধর

পুলিশ বলছে ‘চক্রটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ছিনতাই করে’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ব্যবসায়ী মো. শহিদুল হক ভাগনে মো. রিয়াজকে সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দরে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা শেষ করে একটি প্রাইভেটকারে ফের বাড়ির উদ্দেশে যখন রওনা দেন তখন রাত সোয়া ১টা। বনানীর মহখালী ফ্লাইওভার দিয়ে যখন যাচ্ছিলেন তখন তাদের গতিরোধ করে আরও একটি গাড়ি। র‌্যাবের পোশাক পরিহত এক ব্যক্তিসহ ৩ জন গাড়ি থেকে নেমেই অস্ত্রের মুখে ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ও তার ভাগনে রিয়াজকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হ্যান্ডকাপ পড়ান। এরপর শুরু করেন মারধর। এক পর্যায়ে তাদের কাছে থাকা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করেন। পরে আশপাশের লোকজন ও পুলিশের সহযোগিতায় রক্ষা পান ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ও তার ভাগনে।

পুলিশ বলছে, মধ্য রাতে প্রাইভেট কার থামিয়ে ব্যবসায়ী শহিদুল ও তার ভাগনে মো. রিয়াজকে অপহরণের চেষ্টা করে র‌্যাপিড অ্যাক্যশন ব্যাটেলিয়ন র‌্যাব পরিচয়ে। ভুক্তভোগীদের চিৎকারে লোকজন ছুটে আসলে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে চলে আসে পুলিশ। তবে ততক্ষণে অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা আল মোমেন পালিয়ে গেলেও তার সহযোগী আরিয়ান জয়কে আটক করা হয়। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ঘটনার মূল হোতা আল মোমেন ও তার আরেক সহযোগী গাড়িচালক ফরহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঘটনায় ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আরিয়ান আহমেদ জয়কে। এছাড়া আল মোমেন ও মো. ফরহাদ হোসেনও মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার ৩ জনকে গতকাল আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করেছে।

পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার মধ্যরাতে ভুক্তভোগীরা বিমানবন্দর এলাকা থেকে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে একটি গাড়ি তাদের পিছু নেয়। মহাখালী ফ্লাইওভারের উপর উঠলে পেছনে থাকা গাড়িটি সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। এ সময় তাদের পিস্তল দেখিয়ে গাড়ি থেকে নামানো হয় এবং হাতে হ্যান্ডকাপ পরানো হয়। ওই সময় ভুক্তভোগীরা চিৎকার শুরু করলে অনেকেই সড়ক ধরে চলে গেলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে ওই পথ ধরে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্য যাচ্ছিলেন। তারা এমন দৃশ্য দেখে থেমে যান এবং র‌্যাবের জ্যাকেট পরিহিত সদস্যদের এমন কা- দেখে তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। পরে ওই পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রা এক দুষ্কৃতকারীকে আটক করে বনানী থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

বনানী থানার একজন পুলিশ সদস্য ভুক্তভোগী রিয়াজ ও শহীদুলের বরাত দিয়ে জানান, ভুক্তভোগী দু’জন বিমানবন্দর থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি তাদের ফলো করে এবং ঘটনাস্থলে গাড়ি থামিয়ে মারধর শুরু করে। পুরো গাড়ি চেক করবে বলে জানায়। এ সময় তাদের গুলি করে মেরে ফেলবে বলেও তারা হুমকি দেয়।

পুলিশ বলছে, মূলত ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মূলত ভুক্তভোগীদের ভাড়া করা প্রাইভেটকারের চালকও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তার সহযোগিতায় র‌্যাবের পোশাক পড়ে ভুক্তভোগীদের আটক করে তাদের কাছ থেকে টাকাসহ মূলব্যান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিতে। কারণ ভুক্তভোগী শহিদুল ও রিয়াজ ব্যবসায়ী। তাদের ধারণা ছিল তাদের কাছে অনেক টাকা-পয়সা থাকতে পারে। সে কারণে টার্গেট করে তাদের আটক করা হয়েছে।

চক্রটি এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই কাজে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে টার্গেট ব্যক্তিকে থামিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর মারধর করে টাকা পয়সা রেখে নির্জন স্থানে ফেলে চলে যায়। মূলত গাড়ি চালকদের সহযোগিতায় এরা র‌্যাব- পুলিশ পরিচয়ে এ ধরনের কাজ করে থাকে। গ্রেপ্তার মমিনুল র‌্যাবের সদস্য বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার কাছে যে আইডি কার্ড ছিল সেটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তার নাম জয়। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। তিনি টঙ্গীতে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন।

বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া জানান, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বনানী থানায় একটি মামলা করেন। ঘটনার সময় আটক হওয়া একজনের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযানে নেমে মমিনুল ইসলাম এবং এক গাড়ি চালকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। যে গাড়ি চালককে আটক করা হয়েছে ওই গাড়ি চালকই ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলামকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে গাড়ি চালকের সহযোগিতায় ঘটনানি ঘটেছে। গ্রেপ্তার অন্যজন মমিনুলের আত্মীয়।

পুলিশ জানিয়েছে আটক মমিনুল ইসলাম নিজেকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলামকে তুলে নিতে চেয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে মমিনুল ইসলামই চক্রের মূল হোতা। এ চক্রে একাধিক সদস্য থাকতে পারে। গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তার জয় পুলিশকে জানিয়েছেন, মমিন নামে এক র‌্যাব সদস্যের সঙ্গে মাদক সংক্রান্ত্র কাজ করতে গিয়ে তার পরিচয় হয়। শুক্রবার রাতে একটি অপারেশন আছে বলে তাকে মহাখালীতে নিয়ে আসেন। তিনিও ওই সময় ভুক্তভোগীদের মারধর করেন বলে স্বীকার করেছেন।