‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা’র আত্মপ্রকাশ

দেশের ক্রিয়াশীল ৭টি বামপন্থি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জোট ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা’র আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে আ ফ ম মাহবুবুল হক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংবাদ সম্মেলনে নতুন জোটের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচিসহ ১৩ দফা ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে ‘শ্রমিক কৃষক ও জনগণের’ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জোটের নেতারা। জোটের সাতটি দলগুলো হলো বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, কমিউনিস্ট ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক সংকটজনক সন্ধিক্ষণে দেশ। শোষক শাসক শ্রেণী অতীতের ধারাবাহিকতায় দেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন এবং ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতির নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ধনীকশ্রেণী অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছে। দেশে মার্কিন-রুশ-চীন-ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী-আধিপত্যবাদী হস্তক্ষেপ গভীরতর হচ্ছে। বেকারত্ব, নিত্যপণ্যের দফায় দফায় মূল্যবদ্ধি জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে দফায় দফায় গ্যাস বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি। প্রভাব পড়ছে পরিবহন ভাড়া, বাড়িভাড়াসহ সব নিত্যপণ্যের মূল্যের ওপর। অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা কাজসহ মৌলিক অধিকার থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে দেশকে বৈদেশিক ঋণের জালে জড়িয়ে মেগা দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করছে। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের পকেটে চালান করে দেয়া হচ্ছে। পাচার হচ্ছে লুটের টাকা। আবারও তামাশার নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার ও তার দুস্কর্মের সহযোগীরা। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী দুঃশাসনের অবসানের লক্ষ্যে সাতটি বামপন্থি সংগঠনের অংশগ্রহণে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার যাত্রা শুরু হলো।’

মোর্চার সমন্বয়ক নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন আহম্মেদ নাসু, কমিউনিস্ট ইউনিয়নের আহ্বায়ক ইমাম গাজ্জালী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি শহিদুল ইসলাম (মুকুল) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান।

১৩ দফা দাবি

‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা’ ১৩ দফা নিয়ে আন্দোলন করবে বলে জানায় সংবাদ সম্মেলনে। এসব দফা হলো ১. শ্রমিক কৃষক জনগণের ক্ষমতা ও অবাধ গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিবেশসহ জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ৫৪ ধারা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল, শিল্প-পুলিশ, শিল্প গোয়েন্দা-র?্যাবসহ দমনমূলক সব আইন, বাহিনী ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা। শ্রমিক কৃষক জনগণের মতপ্রকাশ, সংগঠন-সমাবেশ-আন্দোলন করার অবাধ অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

২. রাজনৈতিকসহ সব ধরনের হয়রানিমূলক মামলা-হামলা-নির্যাতন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও দায়ীদের বিচার। সমাজের সর্বস্তরে ফ্যাসিবাদী খুঁটি ও ব্যবস্থার অপসারণ এবং দায়ীদের বিচার ও শাস্তি প্রদান করা। ৩. রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ আত্মসাৎকারী, দুর্নীতিবাজ, দখলবাজ, পাচারকারীর বিচার। ব্যবসায়ী-সিন্ডিকেটসহ দুর্নীতিবাজ আড়তদার মজুদদার চক্র ভেঙে দিয়ে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি প্রদান। শেয়ারবাজার, কুইকরেন্টাল, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচারসহ ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বদৌলতে দুর্নীতি, লুণ্ঠন, পাচার, অভিশোষণ ও নিপীড়নের মতো গুরুতর অপরাধে যুক্তদের বিচার ও শাস্তি প্রদান, তাদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও রাজনৈতিক অধিকার নিষিদ্ধ করা।

৪. বিদ্যুৎ-পানি-জ্বালানি-সারসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, মজুরি ও বেতন বৃদ্ধি করাসহ শ্রমজীবী-নি¤œবিত্ত-মধ্যবিত্তদের জন্য সারা বছর সারাদেশে আর্মি রেটে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা। ৫. রাজনীতি, অর্থনীতিসহ দেশের ওপর সব বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং ফ্যাসিস্ট শাসনের অধীনে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি ও প্রকল্পসমূহ বাতিল করা। অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যবস্থা করাসহ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। ৬. শ্রমিকের অবদমিত মজুরি ও ফ্যাসিস্ট শ্রম কাঠামো অপসারণ করে সুস্থ ও সচ্ছল জীবনযাপনের উপযোগী মজুরি, ৮ ঘণ্টা শ্রম সময়, রেশন, বেকারভাতাসহ গণতান্ত্রিক শ্রম কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।

৭. বন্ধ ঘোষিত পাটকল ও চিনিকল আধুনিকায়ন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা আদায়সহ সব সেক্টরে শ্রমিকদের অধিকার আদায় করা। ৮. কৃষি উপকরণের দাম কমানো, ফসলের ন্যায্য দাম ও ক্ষেতমজুরদের সারাবছরের কাজ ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা, এনজিও-মহাজনি শোষণমূলক সুদ ও মধ্যসত্ত্ব ব্যবস্থার অবসানসহ ভূমির গণতান্ত্রিক সংস্কার করা। ৯. পাহাড় ও সমতলের নিপীড়িত জাতিসত্তার স্বীকৃতি, ভাষা-সংস্কৃতির বিকাশ, সহায়সম্পদের সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুকূল সুযোগ সৃষ্টি করা।

১০. নারীর ওপর ধর্ষণ-নিপীড়ণ-বৈষম্যের অবসান, নারী-পুরুষ সমানাধিকার, যুবকদের উন্নত কর্মসংস্থান, জাতিগত-ধর্মীয়-ভাষাগত সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন-বৈষম্যের অবসান, সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ১১. রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ধর্মের সব ব্যবহার বন্ধ করা। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের অর্থনৈতিক-সামাজিক- সাংস্কৃতিক শর্ত ও ভিত্তি অপসারণ করা। ১২. শিক্ষার বাণিজ্য, সাম্প্রদায়ীকীকরণ ও নৈরাজ্যের অবসান। রাষ্ট্রের দায়িত্বে সর্বজনীন বৈষম্যহীন সেক্যুলার পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতির অবসান ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশের ব্যবস্থা করা। পর্নোগ্রাফি, মাদকাসক্তিসহ সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ করা। ১৩. চিকিৎসা-শিক্ষা-পরিবহন-আবাসনসহ জনজীবনের বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান নৈরাজ্যের অবসান করা। রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব গ্রহণ। মানসম্মত স্বাস্থ্য ও বাসস্থান, নিরাপদ সড়ক ও কর্মক্ষেত্র, দূষণমুক্ত খাদ্য ও পরিবেশসহ শ্রমিক কৃষক জনগণের জীবনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা।

প্রথম কর্মসূচি ২৪ জানুয়ারি

সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে নজরদারি ও ফোনে আঁড়িপাতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়।

আরও খবর
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা আজ
বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কমাতে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক
অপশক্তিরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় : শিক্ষামন্ত্রী
পুলিশ বলছে ‘চক্রটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ছিনতাই করে’
পাঠ্যবই সংশোধন ও দায়িত্বে অবহেলায় শাস্তির দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
সংবিধান অনুযায়ীই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে : আইনমন্ত্রী
‘স্বৈরাচার’ সরকার আপসে ক্ষমতা ছাড়ে না, গণঅভ্যুত্থানেই বিদায় নেবে
মশার প্রজাতি শনাক্তে ল্যাব স্থাপন করবে ডিএনসিসি
টাঙ্গাইলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ-চাষিরা, শিক্ষিত বেকাররা মৌ চাষ করছেন

রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৭ মাঘ ১৪২৯, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

সাত দলের নতুন জোট

‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা’র আত্মপ্রকাশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দেশের ক্রিয়াশীল ৭টি বামপন্থি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জোট ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা’র আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে আ ফ ম মাহবুবুল হক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংবাদ সম্মেলনে নতুন জোটের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচিসহ ১৩ দফা ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে ‘শ্রমিক কৃষক ও জনগণের’ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জোটের নেতারা। জোটের সাতটি দলগুলো হলো বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, কমিউনিস্ট ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক সংকটজনক সন্ধিক্ষণে দেশ। শোষক শাসক শ্রেণী অতীতের ধারাবাহিকতায় দেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন এবং ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতির নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ধনীকশ্রেণী অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছে। দেশে মার্কিন-রুশ-চীন-ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী-আধিপত্যবাদী হস্তক্ষেপ গভীরতর হচ্ছে। বেকারত্ব, নিত্যপণ্যের দফায় দফায় মূল্যবদ্ধি জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে দফায় দফায় গ্যাস বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি। প্রভাব পড়ছে পরিবহন ভাড়া, বাড়িভাড়াসহ সব নিত্যপণ্যের মূল্যের ওপর। অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা কাজসহ মৌলিক অধিকার থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে দেশকে বৈদেশিক ঋণের জালে জড়িয়ে মেগা দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করছে। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের পকেটে চালান করে দেয়া হচ্ছে। পাচার হচ্ছে লুটের টাকা। আবারও তামাশার নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার ও তার দুস্কর্মের সহযোগীরা। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী দুঃশাসনের অবসানের লক্ষ্যে সাতটি বামপন্থি সংগঠনের অংশগ্রহণে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার যাত্রা শুরু হলো।’

মোর্চার সমন্বয়ক নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন আহম্মেদ নাসু, কমিউনিস্ট ইউনিয়নের আহ্বায়ক ইমাম গাজ্জালী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি শহিদুল ইসলাম (মুকুল) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান।

১৩ দফা দাবি

‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা’ ১৩ দফা নিয়ে আন্দোলন করবে বলে জানায় সংবাদ সম্মেলনে। এসব দফা হলো ১. শ্রমিক কৃষক জনগণের ক্ষমতা ও অবাধ গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিবেশসহ জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ৫৪ ধারা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল, শিল্প-পুলিশ, শিল্প গোয়েন্দা-র?্যাবসহ দমনমূলক সব আইন, বাহিনী ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা। শ্রমিক কৃষক জনগণের মতপ্রকাশ, সংগঠন-সমাবেশ-আন্দোলন করার অবাধ অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

২. রাজনৈতিকসহ সব ধরনের হয়রানিমূলক মামলা-হামলা-নির্যাতন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও দায়ীদের বিচার। সমাজের সর্বস্তরে ফ্যাসিবাদী খুঁটি ও ব্যবস্থার অপসারণ এবং দায়ীদের বিচার ও শাস্তি প্রদান করা। ৩. রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ আত্মসাৎকারী, দুর্নীতিবাজ, দখলবাজ, পাচারকারীর বিচার। ব্যবসায়ী-সিন্ডিকেটসহ দুর্নীতিবাজ আড়তদার মজুদদার চক্র ভেঙে দিয়ে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি প্রদান। শেয়ারবাজার, কুইকরেন্টাল, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচারসহ ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বদৌলতে দুর্নীতি, লুণ্ঠন, পাচার, অভিশোষণ ও নিপীড়নের মতো গুরুতর অপরাধে যুক্তদের বিচার ও শাস্তি প্রদান, তাদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও রাজনৈতিক অধিকার নিষিদ্ধ করা।

৪. বিদ্যুৎ-পানি-জ্বালানি-সারসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, মজুরি ও বেতন বৃদ্ধি করাসহ শ্রমজীবী-নি¤œবিত্ত-মধ্যবিত্তদের জন্য সারা বছর সারাদেশে আর্মি রেটে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা। ৫. রাজনীতি, অর্থনীতিসহ দেশের ওপর সব বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং ফ্যাসিস্ট শাসনের অধীনে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি ও প্রকল্পসমূহ বাতিল করা। অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যবস্থা করাসহ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। ৬. শ্রমিকের অবদমিত মজুরি ও ফ্যাসিস্ট শ্রম কাঠামো অপসারণ করে সুস্থ ও সচ্ছল জীবনযাপনের উপযোগী মজুরি, ৮ ঘণ্টা শ্রম সময়, রেশন, বেকারভাতাসহ গণতান্ত্রিক শ্রম কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।

৭. বন্ধ ঘোষিত পাটকল ও চিনিকল আধুনিকায়ন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা আদায়সহ সব সেক্টরে শ্রমিকদের অধিকার আদায় করা। ৮. কৃষি উপকরণের দাম কমানো, ফসলের ন্যায্য দাম ও ক্ষেতমজুরদের সারাবছরের কাজ ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা, এনজিও-মহাজনি শোষণমূলক সুদ ও মধ্যসত্ত্ব ব্যবস্থার অবসানসহ ভূমির গণতান্ত্রিক সংস্কার করা। ৯. পাহাড় ও সমতলের নিপীড়িত জাতিসত্তার স্বীকৃতি, ভাষা-সংস্কৃতির বিকাশ, সহায়সম্পদের সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুকূল সুযোগ সৃষ্টি করা।

১০. নারীর ওপর ধর্ষণ-নিপীড়ণ-বৈষম্যের অবসান, নারী-পুরুষ সমানাধিকার, যুবকদের উন্নত কর্মসংস্থান, জাতিগত-ধর্মীয়-ভাষাগত সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন-বৈষম্যের অবসান, সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ১১. রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ধর্মের সব ব্যবহার বন্ধ করা। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের অর্থনৈতিক-সামাজিক- সাংস্কৃতিক শর্ত ও ভিত্তি অপসারণ করা। ১২. শিক্ষার বাণিজ্য, সাম্প্রদায়ীকীকরণ ও নৈরাজ্যের অবসান। রাষ্ট্রের দায়িত্বে সর্বজনীন বৈষম্যহীন সেক্যুলার পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতির অবসান ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশের ব্যবস্থা করা। পর্নোগ্রাফি, মাদকাসক্তিসহ সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ করা। ১৩. চিকিৎসা-শিক্ষা-পরিবহন-আবাসনসহ জনজীবনের বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান নৈরাজ্যের অবসান করা। রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব গ্রহণ। মানসম্মত স্বাস্থ্য ও বাসস্থান, নিরাপদ সড়ক ও কর্মক্ষেত্র, দূষণমুক্ত খাদ্য ও পরিবেশসহ শ্রমিক কৃষক জনগণের জীবনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা।

প্রথম কর্মসূচি ২৪ জানুয়ারি

সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে নজরদারি ও ফোনে আঁড়িপাতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়।