মার্কিন-রুশ সেনা প্রধান ও দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরল ফোনালাপ

কৃষ্ণ সাগরে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর ওয়াশিংটন ও মস্কোর শীর্ষ কর্মকর্তারা এক বিরল ফোনালাপে অংশ নিয়েছেন। ফোন কলে ওয়াশিংটন মস্কোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী আচরণের অভিযোগ তোলে আর মস্কো ক্রিমিয়ার কাছে মার্কিন ড্রোনের উপস্থিতিকে উসকানিমূলক হিসেবে অভিহিত করে। টেলিফোনে দেশ দুটির সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে বিরল এ মতবিনিময় হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর এ মুহূর্তে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মাঝে সবচেয়ে তলানিতে পৌঁছিয়েছে। তাই দুই দেশের সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের টেলিফোনে মতবিনিময় বিরল ঘটনা।

ক্রিমিয়া উপদ্বীপে মার্কিন ড্রোন পরিচালনাকে যুক্তরাষ্ট্রের উসকানিমূলক আচরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেন তিনি। ২০১৪ সালে মস্কো জোরপূর্বক ক্রিমিয়া দখলের আগে উপদ্বীপটি ইউক্রেনের অংশ ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

বিবৃতিতে মস্কো বলে, ‘এ ধরনের কর্মকা-ে রাশিয়ার কোন স্বার্থ নেই। তবে ভবিষ্যতে এমন কিছু ঘটলে রাশিয়া উপযুক্ত জবাব দেবে।’ দেশ দুটির মধ্যে চলমান সংকটপূর্ণ অবস্থায় সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে যেকোন পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান শোইগু।

ফোনালাপের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি অস্টিন। তবে পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আছে এমন যেকোন সীমানায় মার্কিন আকাশযান পরিচালনা করা হবে। রুশ সামরিক যুদ্ধবিমানগুলোকে আরও নিরাপদ ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচালনা করতে বলেছেন তিনি। মার্কিন সেনাপ্রধান মার্ক মিলে আলাদা একটি ফোন কলে রুশ সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, তাদের এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনটি এসইউ-২৭ নামক দুটি রুশ যুদ্ধবিমানের ধাক্কায় কৃষ্ণ সাগরের আন্তর্জাতিক সীমানায় নিমজ্জিত হয়। বিধ্বস্তের আগে ড্রোনটির ওপর জ্বালানি ছিটিয়ে দেয় যুদ্ধবিমান দুটি।

এদিকে রাশিয়া বলছে ভিন্ন কথা। রাশিয়ার মতে, মার্কিন ড্রোনের সংস্পর্শেই যায়নি তাদের যুদ্ধবিমান। মস্কো বলছে, উসকানিমূলকভাবে ইচ্ছাকৃত রুশ আকাশসীমার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বিধ্বস্ত হয় মার্কিন ড্রোনটি।

সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন সেনাপ্রধান মার্ক মিলে বলেন, ‘সম্প্রতি রুশ আচরণ আগের চেয়ে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে।’ তবে রুশ পাইলটদের দ্বারা মার্কিন ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়টিকে স্পষ্টত ইচ্ছাকৃত বলতে নারাজ তিনি। এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইসও এই ঘটনাটিকে রাশিয়ার অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

রাশিয়ার দাবি, মার্কিন ড্রোনটি ইউক্রেনকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে ক্রিমিয়ার উপদ্বীপে চালানো হয়েছিল। ক্রেমলিনের নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেন, ‘মার্কিনিরা বলছে তাদের ড্রোন সামরিক অভিযানে অংশ নেয় না। তবে সর্বশেষ এই ঘটনা সামরিক অভিযানে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণের প্রমাণ।’ ইউক্রেন বলছে, ড্রোন বিধ্বস্তের মাধ্যমে রাশিয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তারা চলমান যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত করতে চায়।

শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩ , ০৩ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

মার্কিন-রুশ সেনা প্রধান ও দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরল ফোনালাপ

সংবাদ ডেস্ক

কৃষ্ণ সাগরে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর ওয়াশিংটন ও মস্কোর শীর্ষ কর্মকর্তারা এক বিরল ফোনালাপে অংশ নিয়েছেন। ফোন কলে ওয়াশিংটন মস্কোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী আচরণের অভিযোগ তোলে আর মস্কো ক্রিমিয়ার কাছে মার্কিন ড্রোনের উপস্থিতিকে উসকানিমূলক হিসেবে অভিহিত করে। টেলিফোনে দেশ দুটির সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে বিরল এ মতবিনিময় হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর এ মুহূর্তে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মাঝে সবচেয়ে তলানিতে পৌঁছিয়েছে। তাই দুই দেশের সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের টেলিফোনে মতবিনিময় বিরল ঘটনা।

ক্রিমিয়া উপদ্বীপে মার্কিন ড্রোন পরিচালনাকে যুক্তরাষ্ট্রের উসকানিমূলক আচরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেন তিনি। ২০১৪ সালে মস্কো জোরপূর্বক ক্রিমিয়া দখলের আগে উপদ্বীপটি ইউক্রেনের অংশ ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

বিবৃতিতে মস্কো বলে, ‘এ ধরনের কর্মকা-ে রাশিয়ার কোন স্বার্থ নেই। তবে ভবিষ্যতে এমন কিছু ঘটলে রাশিয়া উপযুক্ত জবাব দেবে।’ দেশ দুটির মধ্যে চলমান সংকটপূর্ণ অবস্থায় সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে যেকোন পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান শোইগু।

ফোনালাপের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি অস্টিন। তবে পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আছে এমন যেকোন সীমানায় মার্কিন আকাশযান পরিচালনা করা হবে। রুশ সামরিক যুদ্ধবিমানগুলোকে আরও নিরাপদ ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচালনা করতে বলেছেন তিনি। মার্কিন সেনাপ্রধান মার্ক মিলে আলাদা একটি ফোন কলে রুশ সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, তাদের এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনটি এসইউ-২৭ নামক দুটি রুশ যুদ্ধবিমানের ধাক্কায় কৃষ্ণ সাগরের আন্তর্জাতিক সীমানায় নিমজ্জিত হয়। বিধ্বস্তের আগে ড্রোনটির ওপর জ্বালানি ছিটিয়ে দেয় যুদ্ধবিমান দুটি।

এদিকে রাশিয়া বলছে ভিন্ন কথা। রাশিয়ার মতে, মার্কিন ড্রোনের সংস্পর্শেই যায়নি তাদের যুদ্ধবিমান। মস্কো বলছে, উসকানিমূলকভাবে ইচ্ছাকৃত রুশ আকাশসীমার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বিধ্বস্ত হয় মার্কিন ড্রোনটি।

সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন সেনাপ্রধান মার্ক মিলে বলেন, ‘সম্প্রতি রুশ আচরণ আগের চেয়ে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে।’ তবে রুশ পাইলটদের দ্বারা মার্কিন ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়টিকে স্পষ্টত ইচ্ছাকৃত বলতে নারাজ তিনি। এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইসও এই ঘটনাটিকে রাশিয়ার অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

রাশিয়ার দাবি, মার্কিন ড্রোনটি ইউক্রেনকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে ক্রিমিয়ার উপদ্বীপে চালানো হয়েছিল। ক্রেমলিনের নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেন, ‘মার্কিনিরা বলছে তাদের ড্রোন সামরিক অভিযানে অংশ নেয় না। তবে সর্বশেষ এই ঘটনা সামরিক অভিযানে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণের প্রমাণ।’ ইউক্রেন বলছে, ড্রোন বিধ্বস্তের মাধ্যমে রাশিয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তারা চলমান যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত করতে চায়।