শেষ হয়েছে ২৯৪টি পাইলিংয়ের কাজ

পদ্মা সেতুর ৪২টি পিয়ারের ২৯৪টি পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে ৪২ পিয়ার নির্মাণ কাজ। ইতিমধ্যে ৩০টি পিয়ারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৭১ শতাংশ। এর মধ্যে মূলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৮১ শতাংশ, নদী শাসনের কাজ শেষ হয়েছে ৫৯ শতাংশ। স্থায়ী ১২টি ও অস্থায়ী ২টি মিলিয়ে মোট ১৪টি স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো) বসেছে। এর ফলে ২১০০ মিটার বা ২ কিলোমিটারের বেশি অংশ দৃশ্যমান হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আবদুল কাদের সংবাদকে বলেন, গত রোববার সকালে ২৬ নম্বর পিয়ারের ৭ নম্বর পাইল ড্রাইভের কাজের মাধ্যমে শেষ হয় সেতুর ২৯৪টি পাইলিংয়ের কাজ। সেতুর ২৯৪টি পাইলের ওপর ৪২টি পিয়ার তৈরি করা হচ্ছে। ২৯৪টি পাইলিংয়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। গত রোববার সকালে ২৬ নম্বর পিয়ারের ৭ নম্বর পাইল ড্রাইভের কাজ শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শেষ হয়। এর মধ্যদিয়ে শেষ হলো এই সেতুর পাইল বসানোর কাজ। পদ্মা সেতুতে মোট ২৯৪টি পাইল ড্রাইভ হবে। এর মধ্যে ২৯৩টির কাজ আগেই সম্পন্ন হয়েছিল। গত ১৪ জুলাই শেষ হলো সর্বশেষ পাইল ড্রাইভের কাজ।

প্রকল্প সূত্র জানায়, নদীর গভীর তলদেশে নরম মাটির স্তর। কিন্তু পাইল বসাতে গিয়েই দেখা দেয় বিপত্তি। তাই পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুর পরপরই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে সরানো হয় শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। এরপর ধীরগতিতে পদ্মা সেতুর কাজ চলতে থাকলেও প্রায় অর্ধেকের বেশি পিয়ারের (খুঁটি) নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। গত বছরের শেষ দিকে নকশা পুনর্বিন্যাস করার পর দ্রুতগতিতে পাইলিং কাজ শেষ করা হয়। গত ১৪ জুলাই সর্বশেষ পাইলিংয়ের মাধ্যমে শেষ হয় ২৯৪ নম্বর পাইল। এর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে পদ্মা সেতুর পাইল বসানোর কাজ। সেতু কর্তৃপক্ষের আশা, এ বছর পদ্মা সেতুর ২৯৪টি পাইলের ওপর ৪২টি পিয়ারের সব কটিই তৈরি হয়ে যাবে। নদীর দুই পাড়ে থাকা ভায়াডাক্টের ওপর ৭টি করে ১৪টি রেলওয়ে স্প্যান এবং জাজিরা প্রান্তে ২৩৪টি সুপার-টি গার্ডার ও মাওয়া প্রান্তে ২০৪টি সুপার-টি গার্ডার মিলিয়ে মোট ৪৩৮টি সুপার-টি গার্ডার বসবে। এতে মোট রোডওয়ে স্প্যান হবে ৮৩টি। রেলওয়ে গার্ডারের স্প্যান বসেছে ৭টি। তবে, রোডওয়ে সুপার-টি গার্ডারের কোন স্প্যান এখনও বসানো হয়নি।

সেতু প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন নকশা চূড়ান্ত করার পর মূল সেতুর নির্মাতা চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে পাইল বসানোর কাজ শেষ করতে চলতি বছরের ৩১ জুলাইয়ের পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়েছিল। নকশা রি-ডিজাইনের পর এবারই প্রথম নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে পাইল বসানোর কাজ সম্পন্ন হবে। নকশা জটিলতার কারণে এর আগে পদ্মা সেতু কোন কাজই সময়মতো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মাওয়া থেকে শুরু হয় পদ্মার সেতুর নির্মাণকাজ। কাজের শুরুতেই নদীর তলদেশের গভীরে পাওয়া যায় নরম মাটির স্তর। তাই হ্যামার দিয়ে পাইল বসাতে গিয়ে ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারের কাজে সমস্যা দেখা যায়। এ কারণে ১৪টি পিয়ারের নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই (সিওডব্লিউআই) ইউকে লিমিটেড। কাউই ইউকের বিশেষজ্ঞরা মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের কয়েক দফা বৈঠক হয়। কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ২২টি পিয়ারে একটি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এসব খুঁটিতে ছয়টি পাইল অন্যান্য পিয়ারের মতোই রেকিং বা কিছুটা বাঁকা করে বসানো হবে। এই ছয়টি পাইলের মধ্যে ৭ নম্বর পাইল ভার্টিক্যাল বা সরাসরি সোজাভাবে বসানো হয়। ৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যানে গড়ে উঠবে পুরো পদ্মা সেতু। মূল নদীতে ৪০টি পিয়ার। নির্মাণকাজের শুরুতে মূল নদীর প্রতিটি পিয়ারে পাইলের সংখ্যা ছিল ছয়। আর দুই প্রান্তে ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল। সব মিলিয়ে ৪২টি পিয়ারে পাইল ছিল ২৬৪টি। কিন্তু নদীর গভীর তলদেশে কাদামাটির স্তর থাকায় নতুন নকশা করতে হয়। নতুন এই নকশায় ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারের ১৬টি করে মোট ৩২টি পাইল করা হয়। আর ২২টি পিয়ারে সাতটি করে পাইল ১৫৪টি এবং ১৮টি পিয়ারে ছয়টি করে মোট ১০৮টি পাইল রাখা হয়। সব মিলিয়ে ২৯৪টি পাইলে ৪২টি পিয়ার থাকবে পদ্মা সেতু। ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ১৪টি স্প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার এখন দৃশ্যমান।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ভালো। পাইলগুলো বসানোর কাজ শেষ হলে এ বছরের মধ্যে চেষ্টা করা হবে সব কটি পিয়ারের নির্মাণকাজ শেষ করতে। একই সঙ্গে স্প্যান বসানোর কাজও চলবে।

বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯ , ৩ শ্রাবন ১৪২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪০

পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ৭১ শতাংশ

শেষ হয়েছে ২৯৪টি পাইলিংয়ের কাজ

মাহমুদ আকাশ

পদ্মা সেতুর ৪২টি পিয়ারের ২৯৪টি পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে ৪২ পিয়ার নির্মাণ কাজ। ইতিমধ্যে ৩০টি পিয়ারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৭১ শতাংশ। এর মধ্যে মূলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৮১ শতাংশ, নদী শাসনের কাজ শেষ হয়েছে ৫৯ শতাংশ। স্থায়ী ১২টি ও অস্থায়ী ২টি মিলিয়ে মোট ১৪টি স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো) বসেছে। এর ফলে ২১০০ মিটার বা ২ কিলোমিটারের বেশি অংশ দৃশ্যমান হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আবদুল কাদের সংবাদকে বলেন, গত রোববার সকালে ২৬ নম্বর পিয়ারের ৭ নম্বর পাইল ড্রাইভের কাজের মাধ্যমে শেষ হয় সেতুর ২৯৪টি পাইলিংয়ের কাজ। সেতুর ২৯৪টি পাইলের ওপর ৪২টি পিয়ার তৈরি করা হচ্ছে। ২৯৪টি পাইলিংয়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। গত রোববার সকালে ২৬ নম্বর পিয়ারের ৭ নম্বর পাইল ড্রাইভের কাজ শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শেষ হয়। এর মধ্যদিয়ে শেষ হলো এই সেতুর পাইল বসানোর কাজ। পদ্মা সেতুতে মোট ২৯৪টি পাইল ড্রাইভ হবে। এর মধ্যে ২৯৩টির কাজ আগেই সম্পন্ন হয়েছিল। গত ১৪ জুলাই শেষ হলো সর্বশেষ পাইল ড্রাইভের কাজ।

প্রকল্প সূত্র জানায়, নদীর গভীর তলদেশে নরম মাটির স্তর। কিন্তু পাইল বসাতে গিয়েই দেখা দেয় বিপত্তি। তাই পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুর পরপরই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে সরানো হয় শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। এরপর ধীরগতিতে পদ্মা সেতুর কাজ চলতে থাকলেও প্রায় অর্ধেকের বেশি পিয়ারের (খুঁটি) নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। গত বছরের শেষ দিকে নকশা পুনর্বিন্যাস করার পর দ্রুতগতিতে পাইলিং কাজ শেষ করা হয়। গত ১৪ জুলাই সর্বশেষ পাইলিংয়ের মাধ্যমে শেষ হয় ২৯৪ নম্বর পাইল। এর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে পদ্মা সেতুর পাইল বসানোর কাজ। সেতু কর্তৃপক্ষের আশা, এ বছর পদ্মা সেতুর ২৯৪টি পাইলের ওপর ৪২টি পিয়ারের সব কটিই তৈরি হয়ে যাবে। নদীর দুই পাড়ে থাকা ভায়াডাক্টের ওপর ৭টি করে ১৪টি রেলওয়ে স্প্যান এবং জাজিরা প্রান্তে ২৩৪টি সুপার-টি গার্ডার ও মাওয়া প্রান্তে ২০৪টি সুপার-টি গার্ডার মিলিয়ে মোট ৪৩৮টি সুপার-টি গার্ডার বসবে। এতে মোট রোডওয়ে স্প্যান হবে ৮৩টি। রেলওয়ে গার্ডারের স্প্যান বসেছে ৭টি। তবে, রোডওয়ে সুপার-টি গার্ডারের কোন স্প্যান এখনও বসানো হয়নি।

সেতু প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন নকশা চূড়ান্ত করার পর মূল সেতুর নির্মাতা চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে পাইল বসানোর কাজ শেষ করতে চলতি বছরের ৩১ জুলাইয়ের পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়েছিল। নকশা রি-ডিজাইনের পর এবারই প্রথম নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে পাইল বসানোর কাজ সম্পন্ন হবে। নকশা জটিলতার কারণে এর আগে পদ্মা সেতু কোন কাজই সময়মতো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মাওয়া থেকে শুরু হয় পদ্মার সেতুর নির্মাণকাজ। কাজের শুরুতেই নদীর তলদেশের গভীরে পাওয়া যায় নরম মাটির স্তর। তাই হ্যামার দিয়ে পাইল বসাতে গিয়ে ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারের কাজে সমস্যা দেখা যায়। এ কারণে ১৪টি পিয়ারের নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই (সিওডব্লিউআই) ইউকে লিমিটেড। কাউই ইউকের বিশেষজ্ঞরা মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের কয়েক দফা বৈঠক হয়। কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ২২টি পিয়ারে একটি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এসব খুঁটিতে ছয়টি পাইল অন্যান্য পিয়ারের মতোই রেকিং বা কিছুটা বাঁকা করে বসানো হবে। এই ছয়টি পাইলের মধ্যে ৭ নম্বর পাইল ভার্টিক্যাল বা সরাসরি সোজাভাবে বসানো হয়। ৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যানে গড়ে উঠবে পুরো পদ্মা সেতু। মূল নদীতে ৪০টি পিয়ার। নির্মাণকাজের শুরুতে মূল নদীর প্রতিটি পিয়ারে পাইলের সংখ্যা ছিল ছয়। আর দুই প্রান্তে ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল। সব মিলিয়ে ৪২টি পিয়ারে পাইল ছিল ২৬৪টি। কিন্তু নদীর গভীর তলদেশে কাদামাটির স্তর থাকায় নতুন নকশা করতে হয়। নতুন এই নকশায় ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারের ১৬টি করে মোট ৩২টি পাইল করা হয়। আর ২২টি পিয়ারে সাতটি করে পাইল ১৫৪টি এবং ১৮টি পিয়ারে ছয়টি করে মোট ১০৮টি পাইল রাখা হয়। সব মিলিয়ে ২৯৪টি পাইলে ৪২টি পিয়ার থাকবে পদ্মা সেতু। ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ১৪টি স্প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার এখন দৃশ্যমান।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ভালো। পাইলগুলো বসানোর কাজ শেষ হলে এ বছরের মধ্যে চেষ্টা করা হবে সব কটি পিয়ারের নির্মাণকাজ শেষ করতে। একই সঙ্গে স্প্যান বসানোর কাজও চলবে।