ইশরাকের পিএস অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতার

রাজধানীর গোপীবাগে নির্বাচনী প্রচারণায় সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় অস্ত্রসহ আরিফুল ইসলাম (৪৭) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্ট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে পয়েন্ট ২২ বোরের একটি বিদেশি পিস্তল ও ৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, গ্রেফতার আরিফুল ইসলামের বাড়ি বরিশালে। তিনি ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাকের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস)। ইশরাকের বাবা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকারও ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন আরিফুল। তবে, নিজের কোন পিএস নেই, আরিফুল বিএনপির একজন সমর্থক বলে দাবি করেছেন ইশরাক।

গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, গত রোববার গোপীবাগ এলাকায় নির্বাচনের প্রচারকালে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগও ছায়াতদন্ত শুরু করে। ওই ঘটনায় নানা ধরনের তথ্যের অবতারণা হয়। যে কারণে অস্ত্রধারীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসাটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ফলে গুলিবর্ষণকারী অস্ত্রধারীকে শনাক্তে স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রধারীর মুখম-ল, পরিহিত জামা-কাপড়, জুতা, হেলমেট ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে গুলিবর্ষণের কিছুক্ষণ আগে ধারণকৃত স্থিরচিত্রের সঙ্গে মেলানো হয়। এতে গুলিবর্ষণের আগে আরিফুলকে হেলমেট ছাড়া ইশরাকের সঙ্গে দাড়ানো দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরে সংঘর্ষ শুরু হলে হেলমেট পরে গুলি করতে শুরু করেন তিনি। পরে অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্ট এলাকা থেকে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে ওই সময় গুলি করার কথা স্বীকার করার পাশাপাশি নিজেকে ইশরাকের পিএস হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন আরিফুল।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে আমরা গুলির খোসা পেয়েছি। সেই গুলির খোসার সঙ্গে আরিফুলের কাছ থেকে জব্দ করা গুলির মিল পাওয়া গেছে। গুলি ও গুলির খোসা একই কোম্পানির। তার ব্যবহৃত অস্ত্রটি বৈধ নাকি অবৈধ, তা তদন্ত করে দেখা হবে। তবে বৈধ অস্ত্র যদি কেউ অবৈধভাবেও ব্যবহার করেন, তাহলেও তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে ইশরাকের মিডিয়া টিমের সদস্য খুরশীদ আলম বলেন, ইশরাক হোসেন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, তার কোন ব্যক্তিগত সহকারী বা একান্ত সচিব নেই। আরিফুল ইসলাম দলের একজন সমর্থক মাত্র। সে হিসেবে নির্বাচনের বিভিন্ন কর্মকা-ে তিনি অন্যদের মতোই নিজ উদ্যোগে অংশ নিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত রোববার গোপীবাগ সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের মোড়ে ডিএসসিসি নির্বাচনের গণসংযোগে নেমেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ও বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। প্রচারণায় তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। ওই সময় হেলমেট পরিহিত একজনকে পিস্তল দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়। এ ঘটনায় ওই রাতেই ৫ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, গোপীবাগ এলাকায় সংঘর্ষের সময় ৮ থেকে ১০ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে। আরিফুল সেদিন বিএনপির ইশরাক হোসেনের অনুসারী হয়ে গণসংযোগে অংশ নিয়েছিলেন। সংঘর্ষ শুরু হলে পিস্তল বের করে গুলিবর্ষণ করেন তিনি। ডিবি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার দিন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। ওই সময় আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মীকে সংঘর্ষের স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা এ কাজ করেছে।

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০ , ১৭ মাঘ ১৪২৬, ৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ইশরাকের পিএস অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রাজধানীর গোপীবাগে নির্বাচনী প্রচারণায় সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় অস্ত্রসহ আরিফুল ইসলাম (৪৭) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্ট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে পয়েন্ট ২২ বোরের একটি বিদেশি পিস্তল ও ৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, গ্রেফতার আরিফুল ইসলামের বাড়ি বরিশালে। তিনি ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাকের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস)। ইশরাকের বাবা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকারও ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন আরিফুল। তবে, নিজের কোন পিএস নেই, আরিফুল বিএনপির একজন সমর্থক বলে দাবি করেছেন ইশরাক।

গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, গত রোববার গোপীবাগ এলাকায় নির্বাচনের প্রচারকালে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগও ছায়াতদন্ত শুরু করে। ওই ঘটনায় নানা ধরনের তথ্যের অবতারণা হয়। যে কারণে অস্ত্রধারীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসাটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ফলে গুলিবর্ষণকারী অস্ত্রধারীকে শনাক্তে স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রধারীর মুখম-ল, পরিহিত জামা-কাপড়, জুতা, হেলমেট ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে গুলিবর্ষণের কিছুক্ষণ আগে ধারণকৃত স্থিরচিত্রের সঙ্গে মেলানো হয়। এতে গুলিবর্ষণের আগে আরিফুলকে হেলমেট ছাড়া ইশরাকের সঙ্গে দাড়ানো দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরে সংঘর্ষ শুরু হলে হেলমেট পরে গুলি করতে শুরু করেন তিনি। পরে অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্ট এলাকা থেকে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে ওই সময় গুলি করার কথা স্বীকার করার পাশাপাশি নিজেকে ইশরাকের পিএস হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন আরিফুল।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে আমরা গুলির খোসা পেয়েছি। সেই গুলির খোসার সঙ্গে আরিফুলের কাছ থেকে জব্দ করা গুলির মিল পাওয়া গেছে। গুলি ও গুলির খোসা একই কোম্পানির। তার ব্যবহৃত অস্ত্রটি বৈধ নাকি অবৈধ, তা তদন্ত করে দেখা হবে। তবে বৈধ অস্ত্র যদি কেউ অবৈধভাবেও ব্যবহার করেন, তাহলেও তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে ইশরাকের মিডিয়া টিমের সদস্য খুরশীদ আলম বলেন, ইশরাক হোসেন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, তার কোন ব্যক্তিগত সহকারী বা একান্ত সচিব নেই। আরিফুল ইসলাম দলের একজন সমর্থক মাত্র। সে হিসেবে নির্বাচনের বিভিন্ন কর্মকা-ে তিনি অন্যদের মতোই নিজ উদ্যোগে অংশ নিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত রোববার গোপীবাগ সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের মোড়ে ডিএসসিসি নির্বাচনের গণসংযোগে নেমেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ও বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। প্রচারণায় তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। ওই সময় হেলমেট পরিহিত একজনকে পিস্তল দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়। এ ঘটনায় ওই রাতেই ৫ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, গোপীবাগ এলাকায় সংঘর্ষের সময় ৮ থেকে ১০ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে। আরিফুল সেদিন বিএনপির ইশরাক হোসেনের অনুসারী হয়ে গণসংযোগে অংশ নিয়েছিলেন। সংঘর্ষ শুরু হলে পিস্তল বের করে গুলিবর্ষণ করেন তিনি। ডিবি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার দিন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। ওই সময় আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মীকে সংঘর্ষের স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা এ কাজ করেছে।