থানা হেফাজতে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

এসআই জাহিদসহ ৩ পুলিশের যাবজ্জীবন

২০১৩ সালের হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে প্রথম রায়

রাজধানীর পল্লবী থানা হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার দায়ের করা মামলায় পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদসহ তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। আর পুলিশের দুই সোর্স রাশেদ ও সুমনকে সাত বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। কড়া নিরাপত্তায় গতকাল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ আলোচিত এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ আইনে দেশে এটাই প্রথম ঐতিহাসিক রায়।

আদালতে রায়ে বলা হয়েছে, পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান খান, এএসআই রাশেদুল ইসলাম, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টুকে যাবজ্জীবন সাজা খাটার পাশাপাশি ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দিতে হবে। না দিলে অনাদায়ে আরও ৬ মাস জেল খাটতে হবে তাদের। অর্থদণ্ড ছাড়াও নিহতের পরিবারকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে আসামিদের প্রত্যেককে। ক্ষতিপূরণের এই টাকা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিবারকে দিতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে কোন আপিল চলবে না। আলোচিত এ মামলার অন্য আসামি (দুইজন) পুলিশের ‘সোর্স’ রাসেল ও সুমনকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

বিচারক বলেছেন, ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে কোন মামলায় দেশে এটাই প্রথম রায়। আর তিন পুলিশ সদস্যকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে, এ আইনে সেটাই সর্বোচ্চ সাজা।

রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ বলেন, ভিকটিম জনির তিনজন বন্ধু এ মামলার চাক্ষুষ সাক্ষী। তারা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, নির্যাতনের সময় ভিকটিম জনি পানি চাইলে তার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা কেবল আইনের বরখেলাপ নয়, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। জনির ভাই এ মামলার বাদী ইমতিয়াজ হোসেন রকি আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার রায় শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, তারা জজ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

আসামিদের মধ্যে রাজধানীর পল্লবী থানার তখনকার এসআই জাহিদুর রহমান খান ও পুলিশের সোর্স সুমন কারাগারে আছেন। এএসআই রাশেদুল জামিনে ছিলেন, রায়ের পর তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু এবং পুলিশের সোর্স রাসেল জামিনে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তাদের পলাতক ঘোষণা করে এই রায় দেয়া হয়েছে। বাদীপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবী আবু তৈয়ব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেএম সাজ্জাদুল হক শিহাব ও তাপস পাল।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১১ নম্বর সেক্টরে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় জনি ও তার ভাই সুমনকে চলে যেতে বললে সুমন চলে যান। তবে পরদিন এসে সে আগের মতো আচরণ করলে জনি ও তার ভাই তাকে চলে যেতে বলেন। পরে সুমন পুলিশকে ফোন করে তাদের ধরে নিয়ে যান। তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার লোকজন ধাওয়া দিলে পুলিশ গুলি ছোড়ে। পরে থানায় নিয়ে জনিকে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে জনির অবস্থার অবনতি হলে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পল্লবী থানার ওসি জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি।

সেখানে বলা হয়, ওই বছর ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুর-১১ নম্বর সেক্টরে ইরানি ক্যাম্পে বিল্লাল নামে এক ব্যক্তির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান গিয়েছিলেন জনি। মামলার বাদী রকি নিজেও ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন। অভিযোগে বলা হয়, পুলিশের সোর্স সুমন মাতাল অবস্থায় ওই অনুষ্ঠানে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করলে জনি তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন। তখন ঝগড়ার এক পর্যায়ে জনি চড় মারলে সুমন ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দিয়ে চলে যান। আধা ঘণ্টা পর এসআই জাহিদসহ কয়েকজন পুলিশ এসে ওই অনুষ্ঠান থেকে জনিকে থানায় নিয়ে যান। সেখানে তার ওপর নির্যাতন চলে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। জনিকে পল্লবী থানার হাজতে নিয়ে এসআই জাহিদসহ অন্য আসামিরা হকিস্টিক, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে এবং জনির বুকের ওপর উঠে লাফায়।

নির্যাতনে জনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, আগেই মৃত্যু হয়েছে জনির। মামলায় বলা হয়, নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে আসামিরা পল্লবীর ইরানি ক্যাম্প ও রহমত ক্যাম্পের মধ্যে মারাপিটের মিথ্যা কাহিনী তৈরি করেছিল। ওই ঘটনায়ই রকিসহ কয়েকজন গুরুতর আহত ও জনি নিহত হন দাবি করে এসআই শোভন কুমার সাহা (আসামি) পল্লবী থানায় একটি মামলাও করেছিলেন।

পল্লবী থানার তৎকালীন ওসি জিয়াউর রহমান ওই মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যান বলে বাদীর আর্জিতে উল্লেখ করা হয়। সে সময় আদালত রকির আর্জি শুনে এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই সোর্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। রকির করা মামলায় পল্লবী থানার তৎকালীন ওসি জিয়াউর রহমান, এসআই আবদুল বাতেন, রাশেদ, শোভন কুমার সাহা, কনস্টেবল নজরুলকেও আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু বিচার বিভাগীয় তদন্তে তারা অব্যাহতি পান। তদন্তকালে পুলিশের এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা। এ মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৪ জন সাক্ষীর বক্তব্য শুনেছে আদালত। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেয়ার পর গত সোমবার যুক্তিতর্ক শুনানিও শেষ হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য গতকাল দিন রাখেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এর আগে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজনকে মিরপুর থানায় নিয়ে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন জনি হত্যা মামলার মূল আসামি এসআই জাহিদ। তার ওই মামলা এখন উচ্চ আদালতে স্থগিত বলে জানা গেছে।

image

থানা হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর রায় শোনার পর সন্তোষ প্রকাশ জনির মা ও ভাইয়ের -সংবাদ

আরও খবর
গ্যাস লিকেজ থেকে মসজিদে বিস্ফোরণ
ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলায় জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি হবে প্রধানমন্ত্রী
দেশে করোনায় একদিনে আরও ৪১ জনের মৃত্যু
অনুমতি ছাড়া কোন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না
একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সময় ২ দিন বেড়েছে
বিস্ফোরণে হতাহতদের প্রতি পরিবারকে ৫ লাখ করে টাকা দেয়ার নির্দেশ
ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ, লেনদেন বন্ধ নয়
অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বিরতি
সিনহা হত্যা তদন্তকে প্রভাবিত করুক এটা চাই না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে বিভ্রান্তি
জাহিদের নির্যাতনে মৃত্যু হয় ঝুট ব্যবসায়ী সুজনের
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৮ জন
নেত্রকোনায় ট্রলারডুবি : ১০ লাশ উদ্ধার, শিশুই বেশি
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্প মনোনীত

বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২০ মহররম ১৪৪২, ২২ ভাদ্র ১৪২৭

থানা হেফাজতে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

এসআই জাহিদসহ ৩ পুলিশের যাবজ্জীবন

২০১৩ সালের হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে প্রথম রায়

আদালত বার্তা পরিবেশক

image

থানা হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর রায় শোনার পর সন্তোষ প্রকাশ জনির মা ও ভাইয়ের -সংবাদ

রাজধানীর পল্লবী থানা হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার দায়ের করা মামলায় পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদসহ তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। আর পুলিশের দুই সোর্স রাশেদ ও সুমনকে সাত বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। কড়া নিরাপত্তায় গতকাল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ আলোচিত এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ আইনে দেশে এটাই প্রথম ঐতিহাসিক রায়।

আদালতে রায়ে বলা হয়েছে, পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান খান, এএসআই রাশেদুল ইসলাম, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টুকে যাবজ্জীবন সাজা খাটার পাশাপাশি ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দিতে হবে। না দিলে অনাদায়ে আরও ৬ মাস জেল খাটতে হবে তাদের। অর্থদণ্ড ছাড়াও নিহতের পরিবারকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে আসামিদের প্রত্যেককে। ক্ষতিপূরণের এই টাকা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিবারকে দিতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে কোন আপিল চলবে না। আলোচিত এ মামলার অন্য আসামি (দুইজন) পুলিশের ‘সোর্স’ রাসেল ও সুমনকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

বিচারক বলেছেন, ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে কোন মামলায় দেশে এটাই প্রথম রায়। আর তিন পুলিশ সদস্যকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে, এ আইনে সেটাই সর্বোচ্চ সাজা।

রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ বলেন, ভিকটিম জনির তিনজন বন্ধু এ মামলার চাক্ষুষ সাক্ষী। তারা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, নির্যাতনের সময় ভিকটিম জনি পানি চাইলে তার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা কেবল আইনের বরখেলাপ নয়, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। জনির ভাই এ মামলার বাদী ইমতিয়াজ হোসেন রকি আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার রায় শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, তারা জজ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

আসামিদের মধ্যে রাজধানীর পল্লবী থানার তখনকার এসআই জাহিদুর রহমান খান ও পুলিশের সোর্স সুমন কারাগারে আছেন। এএসআই রাশেদুল জামিনে ছিলেন, রায়ের পর তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু এবং পুলিশের সোর্স রাসেল জামিনে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তাদের পলাতক ঘোষণা করে এই রায় দেয়া হয়েছে। বাদীপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবী আবু তৈয়ব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেএম সাজ্জাদুল হক শিহাব ও তাপস পাল।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১১ নম্বর সেক্টরে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় জনি ও তার ভাই সুমনকে চলে যেতে বললে সুমন চলে যান। তবে পরদিন এসে সে আগের মতো আচরণ করলে জনি ও তার ভাই তাকে চলে যেতে বলেন। পরে সুমন পুলিশকে ফোন করে তাদের ধরে নিয়ে যান। তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার লোকজন ধাওয়া দিলে পুলিশ গুলি ছোড়ে। পরে থানায় নিয়ে জনিকে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে জনির অবস্থার অবনতি হলে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পল্লবী থানার ওসি জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি।

সেখানে বলা হয়, ওই বছর ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুর-১১ নম্বর সেক্টরে ইরানি ক্যাম্পে বিল্লাল নামে এক ব্যক্তির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান গিয়েছিলেন জনি। মামলার বাদী রকি নিজেও ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন। অভিযোগে বলা হয়, পুলিশের সোর্স সুমন মাতাল অবস্থায় ওই অনুষ্ঠানে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করলে জনি তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন। তখন ঝগড়ার এক পর্যায়ে জনি চড় মারলে সুমন ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দিয়ে চলে যান। আধা ঘণ্টা পর এসআই জাহিদসহ কয়েকজন পুলিশ এসে ওই অনুষ্ঠান থেকে জনিকে থানায় নিয়ে যান। সেখানে তার ওপর নির্যাতন চলে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। জনিকে পল্লবী থানার হাজতে নিয়ে এসআই জাহিদসহ অন্য আসামিরা হকিস্টিক, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে এবং জনির বুকের ওপর উঠে লাফায়।

নির্যাতনে জনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, আগেই মৃত্যু হয়েছে জনির। মামলায় বলা হয়, নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে আসামিরা পল্লবীর ইরানি ক্যাম্প ও রহমত ক্যাম্পের মধ্যে মারাপিটের মিথ্যা কাহিনী তৈরি করেছিল। ওই ঘটনায়ই রকিসহ কয়েকজন গুরুতর আহত ও জনি নিহত হন দাবি করে এসআই শোভন কুমার সাহা (আসামি) পল্লবী থানায় একটি মামলাও করেছিলেন।

পল্লবী থানার তৎকালীন ওসি জিয়াউর রহমান ওই মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিয়ে যান বলে বাদীর আর্জিতে উল্লেখ করা হয়। সে সময় আদালত রকির আর্জি শুনে এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই সোর্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। রকির করা মামলায় পল্লবী থানার তৎকালীন ওসি জিয়াউর রহমান, এসআই আবদুল বাতেন, রাশেদ, শোভন কুমার সাহা, কনস্টেবল নজরুলকেও আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু বিচার বিভাগীয় তদন্তে তারা অব্যাহতি পান। তদন্তকালে পুলিশের এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা। এ মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৪ জন সাক্ষীর বক্তব্য শুনেছে আদালত। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেয়ার পর গত সোমবার যুক্তিতর্ক শুনানিও শেষ হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য গতকাল দিন রাখেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এর আগে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজনকে মিরপুর থানায় নিয়ে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন জনি হত্যা মামলার মূল আসামি এসআই জাহিদ। তার ওই মামলা এখন উচ্চ আদালতে স্থগিত বলে জানা গেছে।