আজ শুনানি
আলোচিত সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল ও মো. শাহ আলম আদালতে উপস্থিত হয়ে আসামিদের সার্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- চেয়ে ৮২২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণে আজ শুনানির দিন ধার্য করেন।
পরে বেলা ৩টার দিকে এ বিষয়ে সংবাদ কর্মীদের ব্রিফ করেন পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল। তিনি বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ ১৬ জনের নামে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে মামলার এজহারনামীয় ৮ ও এজহারবহিভূত তদন্তে প্রাপ্ত ৮ জন রয়েছে। আমরা সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চেয়ে সুপারিশ করেছি।
মো. ইকবাল বলেন, গত ১০ এপ্রিল থেকে মোট ৫০ দিনে ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। এ মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্য সাক্ষীরা হলেন বিশেষজ্ঞ, বাদী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিজারলিস্টের সাক্ষী। এ মামলায় ৭ সাক্ষী ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া ১২ আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওসি মোয়াজ্জেমকে এ মামলার অভিযোগপত্রে কেন আনা হয়নি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মো. ইকবাল বলেন, তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দফতর থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তার সংশ্লিষ্টতা বা কর্মে কী অবহেলা, পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি ওই রিপোর্ট দিয়েছে এবং তা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
নুসরাতের মায়ের করা (হত্যা মামলার আগে করা) শ্লীলতাহানির মামলাটিও পিবিআই তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে ওই মামলার অভিযোগপত্র অল্প সময়ের মধ্যে আদালতের দাখিল করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহ আলমসহ পিবিআইয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
চার্জশিটে অভিযুক্ত ১৬ জন হলো সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নূর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মণি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি ওরফে চম্পা/শম্পা ওরফে তুহিন (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাদ্রাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
এদিকে নুসরাত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত গ্রেফতার সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলামকে অভিযোগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এর আগে এ মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ, নূর উদ্দিন, শামীম, পপি, মণি, জাবেদ, শরীফ, কাদের, জোবায়ের, মামুন, রানা ও শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনা তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজহারভুক্ত ৮ আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।
বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০১৯ , ১৬ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৪ রমজান ১৪৪০
আজ শুনানি
প্রতিনিধি, ফেনী
আলোচিত সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল ও মো. শাহ আলম আদালতে উপস্থিত হয়ে আসামিদের সার্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- চেয়ে ৮২২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণে আজ শুনানির দিন ধার্য করেন।
পরে বেলা ৩টার দিকে এ বিষয়ে সংবাদ কর্মীদের ব্রিফ করেন পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল। তিনি বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ ১৬ জনের নামে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে মামলার এজহারনামীয় ৮ ও এজহারবহিভূত তদন্তে প্রাপ্ত ৮ জন রয়েছে। আমরা সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চেয়ে সুপারিশ করেছি।
মো. ইকবাল বলেন, গত ১০ এপ্রিল থেকে মোট ৫০ দিনে ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। এ মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্য সাক্ষীরা হলেন বিশেষজ্ঞ, বাদী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিজারলিস্টের সাক্ষী। এ মামলায় ৭ সাক্ষী ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া ১২ আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওসি মোয়াজ্জেমকে এ মামলার অভিযোগপত্রে কেন আনা হয়নি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মো. ইকবাল বলেন, তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দফতর থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তার সংশ্লিষ্টতা বা কর্মে কী অবহেলা, পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি ওই রিপোর্ট দিয়েছে এবং তা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
নুসরাতের মায়ের করা (হত্যা মামলার আগে করা) শ্লীলতাহানির মামলাটিও পিবিআই তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে ওই মামলার অভিযোগপত্র অল্প সময়ের মধ্যে আদালতের দাখিল করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহ আলমসহ পিবিআইয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
চার্জশিটে অভিযুক্ত ১৬ জন হলো সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নূর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মণি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি ওরফে চম্পা/শম্পা ওরফে তুহিন (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাদ্রাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
এদিকে নুসরাত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত গ্রেফতার সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলামকে অভিযোগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এর আগে এ মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ, নূর উদ্দিন, শামীম, পপি, মণি, জাবেদ, শরীফ, কাদের, জোবায়ের, মামুন, রানা ও শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনা তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজহারভুক্ত ৮ আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।