ফের ডুবল চট্টগ্রাম নগরী

পাহাড়ধস : মাটিচাপা থেকে দুজন উদ্ধার

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল ভোর থেকে টানা ভারি বর্ষণে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাস্তাগুলোতে হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পনিতে সয়লাব হয়ে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি, স্কুল-কলেজে পানি ওঠে ভোগান্তিতে পড়েছিল সবাই। বিশেষ করে টানা বৃষ্টির কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে এই জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গতকাল টানা বর্ষণে পাহাড়ধসে মাটিচাপা পড়া দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক শিশু। এছাড়া নগরের ষোলশহর এলাকায় রাস্তায় পানি ওঠার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গতকাল সকাল থেকে নগরীর ওয়াসা, মেহেদিবাগ, প্রবর্তক, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বাকলিয়া, হালিশহরসহ চট্টগ্রাম নগরীর বড় অংশজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর মূল সড়ক ও অলিগলি। মুরাদপুর থেকে কোথাও হঁাঁটু, কোথাও কোমরসমান পানি মাড়িয়ে নগরীর আগ্রাবাদে পৌঁছান চাকরিজীবী নাসির উদ্দিন হায়দার। তিনি বলেন, বাসা থেকে বের হয়েই পানির মধ্যে পড়ি। পানির মধ্যে কোথাও রিকশায় করে, কোথাও হেঁটে যেতে হয়েছে।

এর আগে গত ৮ জুলাই ভারি বর্ষণে নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে ডুবে যায়। এরপর থেকে বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার রাত থেকে একটানা মুষলধারের বৃষ্টিতে গতকাল সকাল থেকে আবারও জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে পুরো নগরী।

গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। মূল সড়কগুলোতে যানজট তৈরি হয়েছে। এছাড়া অলিগলিতেও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাসা- দোকান, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, অফিস, কাঁচাবাজারেও। সার্বিকভাবে বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

এদিকে নগরের বায়েজিদ থানাধীন আরেফিন নগরের একটি পাহাড়েধসের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন এ পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে। ঘটনাস্থল থেকে হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সম্রাট খীসা জানান, পাহাড়ধসের কারণে দুই ব্যক্তি আটকে পড়েন। তাদের জীবিত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ভেতরে আর কেউ আটকে নেইÑ এমনটি পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, কুসুমবাকে এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করেছি। সে আহত হয়েছে। মাটি সরানোর কাজ চলছে। সেখানে আর কেউ মাটিচাপা অবস্থায় আছে কি না সেটা আমরা দেখছি। সীতাকুন্ডের কুমিরায়ও পাহাড়ধস এবং পাহাড়ি ঢল নেমে এসেছে। তবে সেখানে বড় কোন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নেই। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, আরেফিন নগরে সকালে পাহাড়ের মাটিধসে দুজন চাপা পড়েছিল। তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

অন্যদিকে নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারে হাঁটুপানি জমে থাকার তথ্য দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি নিয়ে ফ্লাইওভার অতিক্রম করতে গিয়ে অনেকে দুর্ভোগে পড়েছেন।

এছাড়া সীতাকুন্ডু উপজেলার কুমিরায় পিইচপি স্টিল মিলের পেছনে পাহাড়ধস ও পাহাড়ি ঢলের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ষোলশহর এলাকায় রাস্তায় পানি ওঠার কারণে গতকাল সকাল থেকে কোন শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয় রুটে চলাচল করেনি। তবে গতকাল সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের তেমন ক্ষতি হয়নি। ষোলশহর স্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জাকির হোসেন বলেন, ভারি বর্ষণের কারণে ষোলশহরের বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে পানি জমেছে। তাই সকাল থেকে কোন শাটল ট্রেন চলাচল করতে পারেনি। নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত আরও দুদিন থাকতে পারে।

রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪০

ফের ডুবল চট্টগ্রাম নগরী

পাহাড়ধস : মাটিচাপা থেকে দুজন উদ্ধার

চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরী। সড়কে থৈথৈ পানি। প্রতিবছর বর্ষায় একই পরিণতি হয় নগরীর -সংবাদ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল ভোর থেকে টানা ভারি বর্ষণে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাস্তাগুলোতে হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পনিতে সয়লাব হয়ে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি, স্কুল-কলেজে পানি ওঠে ভোগান্তিতে পড়েছিল সবাই। বিশেষ করে টানা বৃষ্টির কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে এই জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গতকাল টানা বর্ষণে পাহাড়ধসে মাটিচাপা পড়া দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক শিশু। এছাড়া নগরের ষোলশহর এলাকায় রাস্তায় পানি ওঠার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গতকাল সকাল থেকে নগরীর ওয়াসা, মেহেদিবাগ, প্রবর্তক, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বাকলিয়া, হালিশহরসহ চট্টগ্রাম নগরীর বড় অংশজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর মূল সড়ক ও অলিগলি। মুরাদপুর থেকে কোথাও হঁাঁটু, কোথাও কোমরসমান পানি মাড়িয়ে নগরীর আগ্রাবাদে পৌঁছান চাকরিজীবী নাসির উদ্দিন হায়দার। তিনি বলেন, বাসা থেকে বের হয়েই পানির মধ্যে পড়ি। পানির মধ্যে কোথাও রিকশায় করে, কোথাও হেঁটে যেতে হয়েছে।

এর আগে গত ৮ জুলাই ভারি বর্ষণে নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে ডুবে যায়। এরপর থেকে বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার রাত থেকে একটানা মুষলধারের বৃষ্টিতে গতকাল সকাল থেকে আবারও জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে পুরো নগরী।

গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। মূল সড়কগুলোতে যানজট তৈরি হয়েছে। এছাড়া অলিগলিতেও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাসা- দোকান, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, অফিস, কাঁচাবাজারেও। সার্বিকভাবে বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

এদিকে নগরের বায়েজিদ থানাধীন আরেফিন নগরের একটি পাহাড়েধসের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন এ পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে। ঘটনাস্থল থেকে হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সম্রাট খীসা জানান, পাহাড়ধসের কারণে দুই ব্যক্তি আটকে পড়েন। তাদের জীবিত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ভেতরে আর কেউ আটকে নেইÑ এমনটি পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, কুসুমবাকে এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করেছি। সে আহত হয়েছে। মাটি সরানোর কাজ চলছে। সেখানে আর কেউ মাটিচাপা অবস্থায় আছে কি না সেটা আমরা দেখছি। সীতাকুন্ডের কুমিরায়ও পাহাড়ধস এবং পাহাড়ি ঢল নেমে এসেছে। তবে সেখানে বড় কোন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নেই। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, আরেফিন নগরে সকালে পাহাড়ের মাটিধসে দুজন চাপা পড়েছিল। তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

অন্যদিকে নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারে হাঁটুপানি জমে থাকার তথ্য দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি নিয়ে ফ্লাইওভার অতিক্রম করতে গিয়ে অনেকে দুর্ভোগে পড়েছেন।

এছাড়া সীতাকুন্ডু উপজেলার কুমিরায় পিইচপি স্টিল মিলের পেছনে পাহাড়ধস ও পাহাড়ি ঢলের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ষোলশহর এলাকায় রাস্তায় পানি ওঠার কারণে গতকাল সকাল থেকে কোন শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয় রুটে চলাচল করেনি। তবে গতকাল সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের তেমন ক্ষতি হয়নি। ষোলশহর স্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জাকির হোসেন বলেন, ভারি বর্ষণের কারণে ষোলশহরের বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে পানি জমেছে। তাই সকাল থেকে কোন শাটল ট্রেন চলাচল করতে পারেনি। নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত আরও দুদিন থাকতে পারে।