ঘুষ হয়রানি দালাল ছাড়া পাসপোর্ট মিলছে না

সারাদেশ থেকে অভিযোগের পাহাড় দুদকে

ঘুষ, হয়রানি আর দালাল ছাড়া নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট মিলছে না। পাসপোর্টের প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে আঞ্চলিক কার্যালয় এবং জেলা কার্যালয়গুলোতে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের অভিযোগের শেষ নেই। গত বছর পাসপোর্ট অধিদফতরে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তা বন্ধে সুপারিশ সহকারে প্রতিবেদনও দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে পাসপোর্ট অধিদফতর নিয়ে প্রতিবেদনও রয়েছে। তার পরও পাসপোর্ট পেতে হয়রানি, ঘুষ ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা পাসপোর্ট অফিসগুলোতে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অভিযোগের পাহাড় জমা হচ্ছে দুর্নীতির দমন কমিশনে।

দুদক তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, পাসপোর্ট করা নিয়ে নানা দুর্নীতি হচ্ছে। পাসপোর্ট অফিস থেকে শুরু করে তদন্তকারী সংস্থা পর্যন্ত পদে পদে হয়রানি ও ঘুষ দিতে হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নানাভাবে দুর্নীতির সুযোগ গ্রহণ করে। খোদ রোহিঙ্গারা পর্যন্ত অনিয়মের মাধ্যমে বাংলাদেশি পাসপোর্ট করে বিদেশ যাওয়ার সময় ধরা পড়ছে। এ প্রক্রিয়ায় দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট অফিসগুলোতে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য থামছে না। পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে তদন্তের ক্ষেত্রে যাচাই করার নামে পুলিশ কর্তৃক হয়রানি ও ঘুষ নেয়ার ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় তদন্তের নামে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে বা জনশক্তি স্বল্পতার অজুহাতে অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্নীতির সুযোগ গ্রহণ করছে।

দুদকের প্রতবেদনে ৭ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্তমান ব্যবস্থার সামগ্রিক বিবেচনা করে পাসপোর্ট ইস্যু পদ্ধতির উন্নয়ন ও এবং সহজীকরণের বিষয়ে কমিশনার সুপারিশ পেশ করেছেন। গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক আবেদনপত্র এবং ছবি সত্যায়ন করার প্রক্রিয়া বিলুপ্ত করা এবং পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশ পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করা। জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার স্বার্থে ডিজিটাল পাসপোর্ট ব্যবস্থা প্রচলন করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে আবেদনসমূহ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় প্রসেস করা যেতে পারে। উপাত্তভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থাপনায় জালিয়াতি করা কঠিন হবে। এক ব্যক্তির একের বেশি পাসপোর্ট পাওয়া কঠিন হবে। পাসপোর্ট অফিস দফতরে ভিড় এড়ানো এবং কাউন্টারভিত্তিক সেবা প্রদান সহজতর করার জন্য ইলেকট্রনিক কুইক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হবে।

অধিদফতরে আবেদন পদ্ধতি, ফরমের প্রাপ্যতা, ফিস দেয়ার কেন্দ্র, অফিস সময়সূচি, সেবাপ্রাপ্তির সুনির্দিষ্ট সময় পুস্তিকা আকারে সংক্ষিপ্তভাবে মুদ্রণ করে জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে বিনামূল্যে বিতরণ করা যেতে পারে। জনসাধারণের সাহায্যার্থে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা এবং হেল্পডেস্ক স্থাপন করা যেতে পারে।

আরও বেশি সংখ্যক ব্যাংকে ফি জমা দেয়ার তালিকা প্রদর্শন করতে হবে। এছাড়াও অধিদফতরের এক স্থানে সব সেবা দেয়ার ওয়ানস্টপ-সার্ভিস ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে অর্থ জমা দেয়ার জন্য দফতরে ব্যাংকের শাখা ও কাউন্টারে বা বুথ স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে দুদক সুপারিশ করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, পাসপোর্টে হয়রানি, ঘুষের বিনিময়ে পাসপোর্ট পাওয়া, জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত ফি দিয়েও সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়া, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ আসছে দুদকে। বিশেষ করে আঞ্চলিক ও জেলা পাসপোর্ট অফিসগুলোতে অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সেবাপ্রার্থীরা পাসপোর্টের জন্য গিয়ে টেবিলে টেবিলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাসপোর্ট অফিসে হয়রানি, ঘুষ-দুর্নীতি এবং দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধে জেলা প্রশাসকদের কাছে দুদকের পক্ষ থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট গ্রহণ করছে। আর এসব পাসপোর্ট ব্যবহার করে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন লোকজন বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। বিদেশে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে আটক বা গ্রেফতার হচ্ছে। তাদের পাসপোর্ট জব্দ করার পর তাদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক মায়ানমার নাগরিককে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পাসপোর্ট অধিফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই মায়ানমারের নাগরিকরা বাংলাদেশি পরিচয়ে পাসপোর্ট পেয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, পাসপোর্ট অফিসগুলোতে নানা ধরনের হয়রানি, ঘুষ ও দুর্নীতি এবং টাকার বিনিময়ে মায়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশি সাজিয়ে পাসপোর্ট দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সচ্ছতা নিশ্চিত করে অনিয়ম, হয়রানি ও ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে কিছু সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রতিবেদন দিয়েছে। গত বছর রাষ্ট্রপতির কাছে দুদকের যে বার্ষিক প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে সেখানেও পাসপোর্টের বিষয়ে প্রতিবেদন রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুখঃজনক ব্যাপার হচ্ছে পাসপোর্টে ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। বরং হয়রানির বিষয়ে দিন দিন অভিযোগ বাড়ছে। চলতি বছর একাধিক পাসপোর্ট অফিসে দুদক অভিযান চালিয়েছে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য, অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়াসহ নানা অনিয়ম পেয়েছে দুদক। দুদক এসব বিষয়ে সুপারিশ করে যাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অনিয়ম হচ্ছে মায়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রাখাইন রাজ্যের নাগরিকরা বাংলাদেশি পরিচয়ে অবাধে পাসপোর্ট নিচ্ছে। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে পাসপোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে মনে হচ্ছে। পাসপোর্টেও এসব দুর্নীতি বন্ধ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বাংলাদেশের ভাবর্মূতিও সংকটে পড়বে।

রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪০

ঘুষ হয়রানি দালাল ছাড়া পাসপোর্ট মিলছে না

সারাদেশ থেকে অভিযোগের পাহাড় দুদকে

বাকী বিল্লাহ ও সাইফ বাবলু

ঘুষ, হয়রানি আর দালাল ছাড়া নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট মিলছে না। পাসপোর্টের প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে আঞ্চলিক কার্যালয় এবং জেলা কার্যালয়গুলোতে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের অভিযোগের শেষ নেই। গত বছর পাসপোর্ট অধিদফতরে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তা বন্ধে সুপারিশ সহকারে প্রতিবেদনও দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে পাসপোর্ট অধিদফতর নিয়ে প্রতিবেদনও রয়েছে। তার পরও পাসপোর্ট পেতে হয়রানি, ঘুষ ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা পাসপোর্ট অফিসগুলোতে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অভিযোগের পাহাড় জমা হচ্ছে দুর্নীতির দমন কমিশনে।

দুদক তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, পাসপোর্ট করা নিয়ে নানা দুর্নীতি হচ্ছে। পাসপোর্ট অফিস থেকে শুরু করে তদন্তকারী সংস্থা পর্যন্ত পদে পদে হয়রানি ও ঘুষ দিতে হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নানাভাবে দুর্নীতির সুযোগ গ্রহণ করে। খোদ রোহিঙ্গারা পর্যন্ত অনিয়মের মাধ্যমে বাংলাদেশি পাসপোর্ট করে বিদেশ যাওয়ার সময় ধরা পড়ছে। এ প্রক্রিয়ায় দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট অফিসগুলোতে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য থামছে না। পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে তদন্তের ক্ষেত্রে যাচাই করার নামে পুলিশ কর্তৃক হয়রানি ও ঘুষ নেয়ার ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় তদন্তের নামে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে বা জনশক্তি স্বল্পতার অজুহাতে অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্নীতির সুযোগ গ্রহণ করছে।

দুদকের প্রতবেদনে ৭ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্তমান ব্যবস্থার সামগ্রিক বিবেচনা করে পাসপোর্ট ইস্যু পদ্ধতির উন্নয়ন ও এবং সহজীকরণের বিষয়ে কমিশনার সুপারিশ পেশ করেছেন। গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক আবেদনপত্র এবং ছবি সত্যায়ন করার প্রক্রিয়া বিলুপ্ত করা এবং পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশ পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করা। জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার স্বার্থে ডিজিটাল পাসপোর্ট ব্যবস্থা প্রচলন করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে আবেদনসমূহ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় প্রসেস করা যেতে পারে। উপাত্তভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থাপনায় জালিয়াতি করা কঠিন হবে। এক ব্যক্তির একের বেশি পাসপোর্ট পাওয়া কঠিন হবে। পাসপোর্ট অফিস দফতরে ভিড় এড়ানো এবং কাউন্টারভিত্তিক সেবা প্রদান সহজতর করার জন্য ইলেকট্রনিক কুইক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হবে।

অধিদফতরে আবেদন পদ্ধতি, ফরমের প্রাপ্যতা, ফিস দেয়ার কেন্দ্র, অফিস সময়সূচি, সেবাপ্রাপ্তির সুনির্দিষ্ট সময় পুস্তিকা আকারে সংক্ষিপ্তভাবে মুদ্রণ করে জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে বিনামূল্যে বিতরণ করা যেতে পারে। জনসাধারণের সাহায্যার্থে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা এবং হেল্পডেস্ক স্থাপন করা যেতে পারে।

আরও বেশি সংখ্যক ব্যাংকে ফি জমা দেয়ার তালিকা প্রদর্শন করতে হবে। এছাড়াও অধিদফতরের এক স্থানে সব সেবা দেয়ার ওয়ানস্টপ-সার্ভিস ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে অর্থ জমা দেয়ার জন্য দফতরে ব্যাংকের শাখা ও কাউন্টারে বা বুথ স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে দুদক সুপারিশ করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, পাসপোর্টে হয়রানি, ঘুষের বিনিময়ে পাসপোর্ট পাওয়া, জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত ফি দিয়েও সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়া, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ আসছে দুদকে। বিশেষ করে আঞ্চলিক ও জেলা পাসপোর্ট অফিসগুলোতে অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সেবাপ্রার্থীরা পাসপোর্টের জন্য গিয়ে টেবিলে টেবিলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাসপোর্ট অফিসে হয়রানি, ঘুষ-দুর্নীতি এবং দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধে জেলা প্রশাসকদের কাছে দুদকের পক্ষ থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট গ্রহণ করছে। আর এসব পাসপোর্ট ব্যবহার করে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন লোকজন বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। বিদেশে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে আটক বা গ্রেফতার হচ্ছে। তাদের পাসপোর্ট জব্দ করার পর তাদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক মায়ানমার নাগরিককে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পাসপোর্ট অধিফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই মায়ানমারের নাগরিকরা বাংলাদেশি পরিচয়ে পাসপোর্ট পেয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, পাসপোর্ট অফিসগুলোতে নানা ধরনের হয়রানি, ঘুষ ও দুর্নীতি এবং টাকার বিনিময়ে মায়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশি সাজিয়ে পাসপোর্ট দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সচ্ছতা নিশ্চিত করে অনিয়ম, হয়রানি ও ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে কিছু সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রতিবেদন দিয়েছে। গত বছর রাষ্ট্রপতির কাছে দুদকের যে বার্ষিক প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে সেখানেও পাসপোর্টের বিষয়ে প্রতিবেদন রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুখঃজনক ব্যাপার হচ্ছে পাসপোর্টে ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। বরং হয়রানির বিষয়ে দিন দিন অভিযোগ বাড়ছে। চলতি বছর একাধিক পাসপোর্ট অফিসে দুদক অভিযান চালিয়েছে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য, অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়াসহ নানা অনিয়ম পেয়েছে দুদক। দুদক এসব বিষয়ে সুপারিশ করে যাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অনিয়ম হচ্ছে মায়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রাখাইন রাজ্যের নাগরিকরা বাংলাদেশি পরিচয়ে অবাধে পাসপোর্ট নিচ্ছে। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে পাসপোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে মনে হচ্ছে। পাসপোর্টেও এসব দুর্নীতি বন্ধ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বাংলাদেশের ভাবর্মূতিও সংকটে পড়বে।