গণপিটুনিতে নিহত গৃহবধূ তাসলিমার পরিবারের মামলা

নিহত মিরাজ ছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী

গণপিটুনির নামে ঘটেছে দুটি মর্মান্তিক ঘটনা। যথাক্রমে রাজধানীর বাড্ডায় ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। এরমধ্যে বাড্ডায় নিজের দুই সন্তানের ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের উসকানিতে গণপিটুনিতে প্রাণ হারান গৃহবধূ তাসলিমা বেগম রেনু আর সিদ্ধিরগঞ্জে নিজেরই কন্যা সন্তানকে আনতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত বাকপ্রতিবন্ধী দিনমজুর সিরাজ। সিরাজ হত্যা ও অপর এক ঘটনায় মানসিক ভারসাম্যহীন শারমিনকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এতে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও তিন শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

বাড্ডায় ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত গৃহবধূ তাসলিমা বেগম রেনু তার দুই সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছেলেধরা সন্দেহে তাকে আটকে রাখে। মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুল শিক্ষিকার সন্দেহে গৃহবধূ রেনু বেগমকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কিছু অপরিচিত যুবক এ হত্যাকান্ডের নেতৃত্ব দেন। স্কুলে থাকা সিসি ক্যামেরা ফুটেজেও নির্মমভাবে হত্যার ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এদিকে রেনু বেগমকে হত্যার অভিযোগ এনে নিহতের ভাগিনা নাছির উদ্দিন বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ গতকাল পর্যন্ত কাওকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে রেনু নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই নারীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে নিহতের স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে ওই নারীর লাশ শনাক্ত করেন। নির্মম এ হত্যাকান্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ভিডিওতে দেখা যায়, রেনু বেগমকে উত্তর বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে কয়েকজন যুবক। স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দাঁড়িয়ে এ নির্মম হত্যার দৃশ্য দেখছে। এ সময় কয়েকজন যুবক দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করছিল। কয়েকজন নারীও এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। রেনু বেগমকে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি তাকে রক্ষায়। এমনকি স্কুল কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে কোন ভূমিকা পালন করেনি।

নিহতের ভাগিনা সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু জানান, তার খালা তাসলিমা বেগম রেনু মহাখালীর জিপি জ ৩৩/৩ ওয়ারলেস গেট এলাকায় থাকতেন। তার দুই সন্তান রয়েছে, ১১ বছরের ছেলে তাহসিন আলমাহিদ এবং ৪ বছরের মেয়ে তাসমিন তাবা। তসলিম হোসেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের পর তাদের সংসারে ওই ২ সন্তানের জন্ম হয়। স্বামী তসলিম হোসেনের সঙ্গে রেনু বেগম উত্তর বাড্ডার আলী মোড় এলাকায় থাকতেন। ওই মোড়েই উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। দুই বছর আগে স্বামী তসলিম হোসেনের সঙ্গে পারিবারিক কলহের কারণে সংসার বিচ্ছিন্ন হয়। তালাক দিলে দুই সন্তানকে নিয়ে মহাখালী চলে যান রেনু বেগম। পূর্ব পরিচিত এলাকা হিসেবে দুই সন্তানকে উত্তর বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শনিবার কথা বলতে গিয়েছিলের রেনু বেগম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, স্কুলের শিক্ষিাকার উসকানিতে ছেলেধরা সন্দেহে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার জানান, রানু বেগমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ স্কুলে থাকা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারেনি। ওই ফুটেজে রেনু বেগমকে পিটিয়ে হত্যায় নেতৃত্ব দেয়া কয়েকজন যুবকের ছবি রয়েছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্কুল শিক্ষিকার উসকানিতে হতাকান্ড হয়েছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দাবি করেছেন, রেনু বেগমকে স্কুলে আটকে রাখার পর কলাপসিবল গেট ভেঙে তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে ছিল না।

এদিকে রেনু বেগমের এমন নির্মম মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তার স্বজনরা। ছোট দুই ছেলেমেয়ে মায়ের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ। ৪ বছরের মেয়ে তাসমিন তাবা শুধু মাকে খুঁজছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পারিবারিকভাবে রেনু বেগমকে দাফন করার কথা রয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত সিরাজ (৩৫) ছেলেধরা নয়। সে তার নিজের মেয়েকে আনতে গিয়ে গণপিটুনিতে লাশ গত হয়েছে। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে সিদ্ধিরগঞ্জের বাতানপাড়া এলাকায় শনিবার সকাল ৯টায়। বাকপ্রতিবন্ধী সিরাজ তার মেয়েকে কোলে করে নিয়ে আসার পথে এলাকাবাসী ছেলেধরা সন্দেহে তাকে গণপিটুনি দেয়। এতে সে গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। শনিবার রাত ৮টায় পিবিআই তার পরিচয় নিশ্চিত করলে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় সিরাজ সিদ্ধিরগঞ্জের কলাবাগের বাসিন্দা। সে বিবাহিত ও সন্তান রয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, শনিবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি আলআমিন নগরে গনপিটুনিতে নিহত ব্যক্তির নাম সিরাজ। সে সিদ্ধিরগঞ্জের কলাবাগ পশ্চিম এলাকার মোহর চান্দের বাড়ির ভাড়াটিয়া। সে একজন বাকপ্রতিবন্ধী। তার পিতার নাম আব্দুর রশিদ, মায়ের নাম কমলা খাতুন। সে বিবাহিত ও মিঞ্জু নামে তার ৬ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। পারিবারিক ভরণপোষণ দিতে না পারায় সিরাজকে ফেলে তার স্ত্রী সামছুন্নাহার সোহেল নামে এক যুবককে বিয়ে করে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকায় বসবাস করছে। সিরাজ বাকপ্রতিবন্ধী হলেও সে একজন বাবা। মেয়ের জন্য প্রায়ই কান্নাকাটি করত। দিনমজুর সিরাজ শনিবার সকালে নিজ বাসা থেকে রাজমিস্ত্রী কাজ করতে বাতানপাড়া এলাকার আলামিন নগরে যায়। এ সময় সে মেয়েকে দেখতে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে। এক পর্যায়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় এলাকাবাসীর কাছে কোন জবাব দিতে না পারায় ছেলেধরা সন্দেহে তাকে গণপিটুনি দেয়। এতে সে গুরুতর আহত হলে হাসপাতাল নেয়ার পথে মারা যায়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মীর শাহীন শাহ পারভেজ জানায়, নিহত সিরাজের পরিচয় পাওয়ার পর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। তবে সিরাজ কোলে করে নিয়ে যাওয়া মেয়েটিই তার নিজের কিনা তদন্ত করা হচ্ছে।

সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯ , ৭ শ্রাবন ১৪২৫, ১৮ জিলকদ ১৪৪০

গণপিটুনিতে নিহত গৃহবধূ তাসলিমার পরিবারের মামলা

নিহত মিরাজ ছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

গণপিটুনির নামে ঘটেছে দুটি মর্মান্তিক ঘটনা। যথাক্রমে রাজধানীর বাড্ডায় ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। এরমধ্যে বাড্ডায় নিজের দুই সন্তানের ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের উসকানিতে গণপিটুনিতে প্রাণ হারান গৃহবধূ তাসলিমা বেগম রেনু আর সিদ্ধিরগঞ্জে নিজেরই কন্যা সন্তানকে আনতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত বাকপ্রতিবন্ধী দিনমজুর সিরাজ। সিরাজ হত্যা ও অপর এক ঘটনায় মানসিক ভারসাম্যহীন শারমিনকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এতে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও তিন শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

বাড্ডায় ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত গৃহবধূ তাসলিমা বেগম রেনু তার দুই সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছেলেধরা সন্দেহে তাকে আটকে রাখে। মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুল শিক্ষিকার সন্দেহে গৃহবধূ রেনু বেগমকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কিছু অপরিচিত যুবক এ হত্যাকান্ডের নেতৃত্ব দেন। স্কুলে থাকা সিসি ক্যামেরা ফুটেজেও নির্মমভাবে হত্যার ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এদিকে রেনু বেগমকে হত্যার অভিযোগ এনে নিহতের ভাগিনা নাছির উদ্দিন বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ গতকাল পর্যন্ত কাওকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে রেনু নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই নারীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে নিহতের স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে ওই নারীর লাশ শনাক্ত করেন। নির্মম এ হত্যাকান্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ভিডিওতে দেখা যায়, রেনু বেগমকে উত্তর বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে কয়েকজন যুবক। স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দাঁড়িয়ে এ নির্মম হত্যার দৃশ্য দেখছে। এ সময় কয়েকজন যুবক দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করছিল। কয়েকজন নারীও এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। রেনু বেগমকে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি তাকে রক্ষায়। এমনকি স্কুল কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে কোন ভূমিকা পালন করেনি।

নিহতের ভাগিনা সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু জানান, তার খালা তাসলিমা বেগম রেনু মহাখালীর জিপি জ ৩৩/৩ ওয়ারলেস গেট এলাকায় থাকতেন। তার দুই সন্তান রয়েছে, ১১ বছরের ছেলে তাহসিন আলমাহিদ এবং ৪ বছরের মেয়ে তাসমিন তাবা। তসলিম হোসেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের পর তাদের সংসারে ওই ২ সন্তানের জন্ম হয়। স্বামী তসলিম হোসেনের সঙ্গে রেনু বেগম উত্তর বাড্ডার আলী মোড় এলাকায় থাকতেন। ওই মোড়েই উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। দুই বছর আগে স্বামী তসলিম হোসেনের সঙ্গে পারিবারিক কলহের কারণে সংসার বিচ্ছিন্ন হয়। তালাক দিলে দুই সন্তানকে নিয়ে মহাখালী চলে যান রেনু বেগম। পূর্ব পরিচিত এলাকা হিসেবে দুই সন্তানকে উত্তর বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শনিবার কথা বলতে গিয়েছিলের রেনু বেগম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, স্কুলের শিক্ষিাকার উসকানিতে ছেলেধরা সন্দেহে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার জানান, রানু বেগমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ স্কুলে থাকা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারেনি। ওই ফুটেজে রেনু বেগমকে পিটিয়ে হত্যায় নেতৃত্ব দেয়া কয়েকজন যুবকের ছবি রয়েছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্কুল শিক্ষিকার উসকানিতে হতাকান্ড হয়েছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দাবি করেছেন, রেনু বেগমকে স্কুলে আটকে রাখার পর কলাপসিবল গেট ভেঙে তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে ছিল না।

এদিকে রেনু বেগমের এমন নির্মম মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তার স্বজনরা। ছোট দুই ছেলেমেয়ে মায়ের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ। ৪ বছরের মেয়ে তাসমিন তাবা শুধু মাকে খুঁজছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পারিবারিকভাবে রেনু বেগমকে দাফন করার কথা রয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত সিরাজ (৩৫) ছেলেধরা নয়। সে তার নিজের মেয়েকে আনতে গিয়ে গণপিটুনিতে লাশ গত হয়েছে। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে সিদ্ধিরগঞ্জের বাতানপাড়া এলাকায় শনিবার সকাল ৯টায়। বাকপ্রতিবন্ধী সিরাজ তার মেয়েকে কোলে করে নিয়ে আসার পথে এলাকাবাসী ছেলেধরা সন্দেহে তাকে গণপিটুনি দেয়। এতে সে গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। শনিবার রাত ৮টায় পিবিআই তার পরিচয় নিশ্চিত করলে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় সিরাজ সিদ্ধিরগঞ্জের কলাবাগের বাসিন্দা। সে বিবাহিত ও সন্তান রয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, শনিবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি আলআমিন নগরে গনপিটুনিতে নিহত ব্যক্তির নাম সিরাজ। সে সিদ্ধিরগঞ্জের কলাবাগ পশ্চিম এলাকার মোহর চান্দের বাড়ির ভাড়াটিয়া। সে একজন বাকপ্রতিবন্ধী। তার পিতার নাম আব্দুর রশিদ, মায়ের নাম কমলা খাতুন। সে বিবাহিত ও মিঞ্জু নামে তার ৬ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। পারিবারিক ভরণপোষণ দিতে না পারায় সিরাজকে ফেলে তার স্ত্রী সামছুন্নাহার সোহেল নামে এক যুবককে বিয়ে করে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকায় বসবাস করছে। সিরাজ বাকপ্রতিবন্ধী হলেও সে একজন বাবা। মেয়ের জন্য প্রায়ই কান্নাকাটি করত। দিনমজুর সিরাজ শনিবার সকালে নিজ বাসা থেকে রাজমিস্ত্রী কাজ করতে বাতানপাড়া এলাকার আলামিন নগরে যায়। এ সময় সে মেয়েকে দেখতে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে। এক পর্যায়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় এলাকাবাসীর কাছে কোন জবাব দিতে না পারায় ছেলেধরা সন্দেহে তাকে গণপিটুনি দেয়। এতে সে গুরুতর আহত হলে হাসপাতাল নেয়ার পথে মারা যায়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মীর শাহীন শাহ পারভেজ জানায়, নিহত সিরাজের পরিচয় পাওয়ার পর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। তবে সিরাজ কোলে করে নিয়ে যাওয়া মেয়েটিই তার নিজের কিনা তদন্ত করা হচ্ছে।