জড়িতদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে

হাইকোর্ট

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্পের কেনাকাটা নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে মামলার শুনানি অবকাশকালীন ছুটির পরও এক সপ্তাহ পর্যন্ত মুলতবি রেখেছেন আদালত। রূপপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতির ঘটনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন দাখিলের পর গতকাল বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম।

এর আগে ২ জুলাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের করা দুটি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল এবং ওই প্রতিবেদন অনুসারে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্র বিশ্বস্ততার সঙ্গে (গুড ফেইথ) কেনা ও উত্তোলনের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছিলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্র কেনায় যাদের বিশ্বস্ততা দেখানোর কথা ছিল, তারা সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যর্থ হওয়াটা কেন অবৈধ বলে বিবেচনা করা হবে না, এ মর্মে আদালত রুল জারি করেন। এছাড়া আদালত সরকারপক্ষকে বলেছেন দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা কী প্রতিবেদন নিয়ে আসবেন, তা জমা দেয়ার জন্য এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাও দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতকে জানাতে।

রিটের বিবাদীরা হচ্ছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকোশলী, রাজশাহীর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। ওইসব প্রতিবেদনে রূপপুর ‘বালিশকা-’-এর ঘটনায় ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকার গরমিল এবং পাবনা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

প্রসঙ্গত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিনসিটি প্রকল্পের ১১০টি ফ্ল্যাটের জন্য অস্বাভাবিক দামে আসবাবপত্র কেনা ও ভবনে ওঠানোর ঘটনা অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ ঘটনা তদন্তের জন্য গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দুদককে দেয়া হবে। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিনসিটি প্রকল্পে ২০ ও ১৬ তলা ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা এবং ভবনে ওঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা করা হয়। পরে গত ১৯ মে এ ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯ , ৭ শ্রাবন ১৪২৫, ১৮ জিলকদ ১৪৪০

রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে দুর্নীতি

জড়িতদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে

হাইকোর্ট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্পের কেনাকাটা নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে মামলার শুনানি অবকাশকালীন ছুটির পরও এক সপ্তাহ পর্যন্ত মুলতবি রেখেছেন আদালত। রূপপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতির ঘটনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন দাখিলের পর গতকাল বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম।

এর আগে ২ জুলাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের করা দুটি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল এবং ওই প্রতিবেদন অনুসারে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্র বিশ্বস্ততার সঙ্গে (গুড ফেইথ) কেনা ও উত্তোলনের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছিলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্র কেনায় যাদের বিশ্বস্ততা দেখানোর কথা ছিল, তারা সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যর্থ হওয়াটা কেন অবৈধ বলে বিবেচনা করা হবে না, এ মর্মে আদালত রুল জারি করেন। এছাড়া আদালত সরকারপক্ষকে বলেছেন দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা কী প্রতিবেদন নিয়ে আসবেন, তা জমা দেয়ার জন্য এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাও দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতকে জানাতে।

রিটের বিবাদীরা হচ্ছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকোশলী, রাজশাহীর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। ওইসব প্রতিবেদনে রূপপুর ‘বালিশকা-’-এর ঘটনায় ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকার গরমিল এবং পাবনা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

প্রসঙ্গত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিনসিটি প্রকল্পের ১১০টি ফ্ল্যাটের জন্য অস্বাভাবিক দামে আসবাবপত্র কেনা ও ভবনে ওঠানোর ঘটনা অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ ঘটনা তদন্তের জন্য গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দুদককে দেয়া হবে। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিনসিটি প্রকল্পে ২০ ও ১৬ তলা ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা এবং ভবনে ওঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা করা হয়। পরে গত ১৯ মে এ ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।