ঈদুল আজহা উপলক্ষে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। চলবে আগামী ২ আগস্ট পর্যন্ত। গতকাল প্রথমদিন আগামী ৭ আগস্টের যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টায় রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ পাঁচটি স্থান থেকে এই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তবে ধীরগতির কারণে কাউন্টারের সামনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে টিকিট প্রত্যাশীরা জানায়। কিন্তু কাক্সিক্ষত টিকিট পাওয়ার আনন্দে ভোগান্তি অনেকটা ম্লান হয়ে যায় বলে জানান তারা। ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন কাউন্টার থেকে ৬৯ হাজার ৭৫৩টি টিকিট বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
সরেজমিনে কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৯টায় টিকিট বিক্রি শুরু হলেও অনেকে গত রোববার রাত থেকে কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষায় ছিলেন। অনেককে আবার প্রত্যাশিত টিকিটের জন্য ভোররাত থেকে কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান করতে দেখা গেছে। গত রোববার রাত ৩টায় কমলাপুরে এসে গতকাল দুপুর ১২টায় কাক্সিক্ষত টিকিট পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন সাইদুর রহমান নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, সোমবার তেমন ভিড় ছিল না। তারপরও টিকিট পাওয়া নিশ্চিত করতে রাত ৩টায় কমলাপুরে আসি। ভাগ্য ভালো চাঁপাইনবাবগঞ্জের টিকিট পেয়েছি। এখন বাড়ি যাওয়া নিয়ে কোন টেনশন থাকল না।’
তবে কাউন্টারে টিকিট বিক্রির ধীরগতির কারণে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সারোয়ার হোসেন নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, সকাল ৭টায় এসেছি কিন্তু বেলা ১২টা পর্যন্ত টিকিট কিনতে পারিনি। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭০ জনের মতো টিকিট কিনতে পেরেছেন।
এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন কমলাপুর স্টেশনের টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন। এ সময় রেলের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহানসহ রেলের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এবার অনলাইনে টিকিট বিক্রির পরিস্থিতি সন্তোষজনক। গত ঈদে একটা অভিযোগ ছিল মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইনে টিকিট কাটা যাচ্ছিল না। এবার পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে। ঈদের সময় ট্রেনে যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকে। সেজন্য আন্তঃনগর ট্রেনে আসনের অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হবে। বিশেষ ট্রেনের দুই হাজার ৬৫৩টি টিকিট বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ঢাকা থেকে বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের ২৬ হাজার ৫০০ টিকিট বিক্রি হবে। মোট টিকিটের ৫০ শতাংশ কাউন্টারে, বাকি ৫০ শতাংশ মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদের সময় মেইল, এক্সপ্রেস এবং লোকাল ট্রেন মিলিয়ে প্রতিদিন ৬৯ হাজার ৭৫৩টি টিকেট বিক্রি করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
শিডিউল বিপর্যয় বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ঈদের সময় যাত্রী ওঠা-নামায় সময় বেশি লাগায় ট্রেন বিলম্ব হয়। এছাড়া একই লাইনে ট্রেন চলায় অন্য ট্রেনকে সাইড দিতে গিয়ে বেশি সময় লাগে। কাজেই ডাবল রেললাইন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত শিডিউল পুরাপুরি রক্ষা করা কঠিন। ঈদে শিডিউল রক্ষায় রেলপথ মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। মহিলা কাউন্টার বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মহিলাদের জন্য ২টি কাউন্টারে টিকেট দেয়া হচ্ছে।
গতবারের মতো এবারও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের টিকিট পাচ্ছে না যাত্রীদের এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ৫ লাখ লোক যদি একসঙ্গে টিকিটের জন্য অ্যাপসে হিট করে, তাহলে টিকিট দেয়া সম্ভব নয়। কারণ আমরা অ্যাপের টিকিট দিচ্ছি ১০ হাজার (দিনে)। এর মানে আমি চার লাখ ৯০ হাজার লোককে টিকিট দিতে পারছি না। কাজেই তাদের ভয়েস বেশি হবে। একই সঙ্গে আমরা কাউন্টারের যদি টিকিট বিক্রি করি ১০ হাজার, আর লাইন ধরে যদি এক লাখ, তাহলে ৯০ হাজার লোককে টিকিট না নিয়ে ফিরে যেতে হবে। আমাদের সাধ্যের মধ্যে যা আছে আমরা তাই দিচ্ছি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৩০ জুলাই বিক্রি করা হবে ৮ অগাস্টের টিকিট। ৩১ শে জুলাই বিক্রি হবে ৯ অগস্টের টিকিট। ১ অগাস্ট বিক্রি হবে ১০ অগাস্টের টিকিট ও ২ অগাস্ট বিক্রি হবে ১১ অগাস্টের অগ্রিম টিকিট। রাজধানী ঢাকার পাঁচটি স্থান থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে রাজশাহী খুলনা ও রংপুর বিভাগের টিকিট কমলাপুর থেকে দেয়া হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে দেয়া হচ্ছে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের টিকিট। তেজগাঁও থেকে দেয়া হচ্ছে ময়মনসিংহ জামালপুরগামী ট্রেনের টিকিট। বনানী থেকে দেয়া হচ্ছে নেত্রকোনাগামী ট্রেনের টিকিট এবং পুরাতন ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকে দেয়া হচ্ছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জের টিকিট।
মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৯ , ১৫ শ্রাবন ১৪২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ঈদুল আজহা উপলক্ষে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। চলবে আগামী ২ আগস্ট পর্যন্ত। গতকাল প্রথমদিন আগামী ৭ আগস্টের যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টায় রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ পাঁচটি স্থান থেকে এই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তবে ধীরগতির কারণে কাউন্টারের সামনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে টিকিট প্রত্যাশীরা জানায়। কিন্তু কাক্সিক্ষত টিকিট পাওয়ার আনন্দে ভোগান্তি অনেকটা ম্লান হয়ে যায় বলে জানান তারা। ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন কাউন্টার থেকে ৬৯ হাজার ৭৫৩টি টিকিট বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
সরেজমিনে কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৯টায় টিকিট বিক্রি শুরু হলেও অনেকে গত রোববার রাত থেকে কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষায় ছিলেন। অনেককে আবার প্রত্যাশিত টিকিটের জন্য ভোররাত থেকে কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান করতে দেখা গেছে। গত রোববার রাত ৩টায় কমলাপুরে এসে গতকাল দুপুর ১২টায় কাক্সিক্ষত টিকিট পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন সাইদুর রহমান নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, সোমবার তেমন ভিড় ছিল না। তারপরও টিকিট পাওয়া নিশ্চিত করতে রাত ৩টায় কমলাপুরে আসি। ভাগ্য ভালো চাঁপাইনবাবগঞ্জের টিকিট পেয়েছি। এখন বাড়ি যাওয়া নিয়ে কোন টেনশন থাকল না।’
তবে কাউন্টারে টিকিট বিক্রির ধীরগতির কারণে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সারোয়ার হোসেন নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, সকাল ৭টায় এসেছি কিন্তু বেলা ১২টা পর্যন্ত টিকিট কিনতে পারিনি। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭০ জনের মতো টিকিট কিনতে পেরেছেন।
এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন কমলাপুর স্টেশনের টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন। এ সময় রেলের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহানসহ রেলের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এবার অনলাইনে টিকিট বিক্রির পরিস্থিতি সন্তোষজনক। গত ঈদে একটা অভিযোগ ছিল মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইনে টিকিট কাটা যাচ্ছিল না। এবার পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে। ঈদের সময় ট্রেনে যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকে। সেজন্য আন্তঃনগর ট্রেনে আসনের অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করা হবে। বিশেষ ট্রেনের দুই হাজার ৬৫৩টি টিকিট বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ঢাকা থেকে বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের ২৬ হাজার ৫০০ টিকিট বিক্রি হবে। মোট টিকিটের ৫০ শতাংশ কাউন্টারে, বাকি ৫০ শতাংশ মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদের সময় মেইল, এক্সপ্রেস এবং লোকাল ট্রেন মিলিয়ে প্রতিদিন ৬৯ হাজার ৭৫৩টি টিকেট বিক্রি করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
শিডিউল বিপর্যয় বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ঈদের সময় যাত্রী ওঠা-নামায় সময় বেশি লাগায় ট্রেন বিলম্ব হয়। এছাড়া একই লাইনে ট্রেন চলায় অন্য ট্রেনকে সাইড দিতে গিয়ে বেশি সময় লাগে। কাজেই ডাবল রেললাইন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত শিডিউল পুরাপুরি রক্ষা করা কঠিন। ঈদে শিডিউল রক্ষায় রেলপথ মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। মহিলা কাউন্টার বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মহিলাদের জন্য ২টি কাউন্টারে টিকেট দেয়া হচ্ছে।
গতবারের মতো এবারও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের টিকিট পাচ্ছে না যাত্রীদের এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ৫ লাখ লোক যদি একসঙ্গে টিকিটের জন্য অ্যাপসে হিট করে, তাহলে টিকিট দেয়া সম্ভব নয়। কারণ আমরা অ্যাপের টিকিট দিচ্ছি ১০ হাজার (দিনে)। এর মানে আমি চার লাখ ৯০ হাজার লোককে টিকিট দিতে পারছি না। কাজেই তাদের ভয়েস বেশি হবে। একই সঙ্গে আমরা কাউন্টারের যদি টিকিট বিক্রি করি ১০ হাজার, আর লাইন ধরে যদি এক লাখ, তাহলে ৯০ হাজার লোককে টিকিট না নিয়ে ফিরে যেতে হবে। আমাদের সাধ্যের মধ্যে যা আছে আমরা তাই দিচ্ছি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৩০ জুলাই বিক্রি করা হবে ৮ অগাস্টের টিকিট। ৩১ শে জুলাই বিক্রি হবে ৯ অগস্টের টিকিট। ১ অগাস্ট বিক্রি হবে ১০ অগাস্টের টিকিট ও ২ অগাস্ট বিক্রি হবে ১১ অগাস্টের অগ্রিম টিকিট। রাজধানী ঢাকার পাঁচটি স্থান থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে রাজশাহী খুলনা ও রংপুর বিভাগের টিকিট কমলাপুর থেকে দেয়া হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে দেয়া হচ্ছে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের টিকিট। তেজগাঁও থেকে দেয়া হচ্ছে ময়মনসিংহ জামালপুরগামী ট্রেনের টিকিট। বনানী থেকে দেয়া হচ্ছে নেত্রকোনাগামী ট্রেনের টিকিট এবং পুরাতন ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকে দেয়া হচ্ছে সিলেট ও কিশোরগঞ্জের টিকিট।