শেষ হয়নি বিচার কার্যক্রম

সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ কিবরিয়াপুত্রের

আজ ২৭ জানুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর। ২০০৫ সালের ওই দিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন কিবরিয়াসহ পাঁচজন নেতাকর্মী এবং আহত হন কমপক্ষে ৭০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। হত্যা মামলাটি এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৪টি বছর। কিন্তু শেষ হয়নি বিচার কার্যক্রম। বারবার পেছাচ্ছে মামলার তারিখ। হচ্ছে না সাক্ষী গ্রহণ। আর কবে শেষ হবে এর বিচার কার্যক্রম এর কোন হদিস নেই। ফলে আশাহত হয়ে পড়েছেন কিবরিয়াসহ নিহত ও আহতদের পরিবার। কিন্তু কিবরিয়ার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া দাবি করেন মামলার তদন্তই সুষ্ঠু হয়নি। সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

এই ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার একটিতে তিনদফা তদন্ত শেষে চার্জশিট গঠনের মাধ্যমে সিলেট দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। এরপর থেকেই চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ। বিচারপ্রক্রিয়ার এ দীর্ঘসূত্রতায় কিবরিয়া পরিবারের সদস্যরা হারিয়েছেন বিচার পাওয়ার আশা। তাছাড়া তদন্তপ্রক্রিয়ার প্রথম থেকেই অনাস্থা জানিয়ে এসেছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এ সংসদের পরিবারের সদস্যরা। তবে এখনও আশাবাদী মামলার বাদী ও আইনজীবীরা।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী-লীগ। যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন শাহ এএমএস কিবরিয়া।

বক্তব্য শেষে মঞ্চ থেকে নেমে বৈদ্যের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটে আসলে তাদের উপর গ্রেনেড হামলা চালায় আঁততায়ীরা।

এ হামলায় কিবরিয়া ছাড়াও নিহত হন তার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী।

সে রাতেই হবিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান।

কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘এই মামলায় এই মুহূর্তে আমরা আশাবাদী না। কারণ আমরা এখনও বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে মামলাটা পরিচালিত হচ্ছে না। এবং আমরা বারবার যেটা বলছি, তদন্ত যদি ঠিকমতো না হয় তাহলে মামলা পরিচালনা সুষ্ঠু করা সম্ভব না’। যে চার্জশিটগুলো করা হয়েছে সেগুলো একটার সঙ্গে আরেকটার কোন মিল নেই। যে যার মতো করে তদন্ত করছে। কারও শেখানো কথাগুলো চার্জশিটে লিখে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘যেটা করছে তাদের মতো, যারা মামলা পরিচালনা করছেন। বিচার বিভাগের এবং পুলিশের ওদের ইচ্ছামতো করা হচ্ছে। কিন্তু আসল তথ্য এই মামলার মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো না। সে জন্যেই এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদী না’। ভবিষ্যতের আসায় আছি। বর্তমান সরকারের আমলে আমার পিতাসহ বাকিদের হত্যার বিচার আমরা পাব না।

তবে মামলার বাদী ও হবিগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল মজিদ খান বলেন, ‘দীর্ঘসূত্রিতা বিভিন্ন আইনগত জটিলতার কারণেই হচ্ছিল। ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তো কোন তদন্তই হচ্ছিল না।

তিনি বলেন, ‘নানা আইনি জটিলতার কারণে মামলা দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়। আমি বাদী, তাড়াতাড়ি শেষ হোক চাই। আমি সরকারি দলের এমপি, সরকারের লোক এবং আমার লোক নিহত হয়েছেন। তাই আমি চাই এ মামলা কার্যক্রম দ্রুত শেষ হউক।

সিলেট দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর জানান, মামলার আগামী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি। এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক মামলার আসামি থাকায় তাদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় প্রতিনিয়ত যেতে হয় আর এ কারণে সব সময় উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না। আর আসামির অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণও হয় না বলে বারবার তারিখ পেছাতে হয়। তিনি আরও বলেন- এ মামলায় ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ৩২ আসামির মধ্যে ৩ জন মৃত্যু বরণ করেছেন। ১২ জন আসামি জামিনে আছেন। ১০ জন আসামি হাজতে আর বাকি ৭ আসামি পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা অপর মামলাও ২০১৬ সালে হবিগঞ্জ থেকে সিলেট দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। কিবরিয়াসহ আরও ৪ জনকে গ্রেনেড হামলায় হত্যা মামলার মোট ৩২ জন আসামির মধ্যে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনকে ইতোমধ্যে অন্য মামলায় মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।

বাকি ২৯ আসামির মধ্যে বিএনপি সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ ১০ জন জেলে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জিকে গউছসহ ১২ জন জামিনে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীসহ ৭ জন এখনও পলাতক রয়েছেন।

এদিকে, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়ে থাকে। এবারও ঢাকার বনানীতে মরহুমের সমাধিতে সকালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কিবরিয়া পরিবার। হত্যা মামলার বিচারের দাবিতে কিবরিয়া স্ত্রী মরহুম আসমা কিবরিয়ার শান্তির পক্ষে নীলিমা কর্মসূচিটি শুরু হবে।

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০ , ১৩ মাঘ ১৪২৬, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪১

কিবরিয়া হত্যা মামলার ১৫ বছর আজ

শেষ হয়নি বিচার কার্যক্রম

সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ কিবরিয়াপুত্রের

মোহাম্মদ শাহ আলম, হবিগঞ্জ

আজ ২৭ জানুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর। ২০০৫ সালের ওই দিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন কিবরিয়াসহ পাঁচজন নেতাকর্মী এবং আহত হন কমপক্ষে ৭০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। হত্যা মামলাটি এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৪টি বছর। কিন্তু শেষ হয়নি বিচার কার্যক্রম। বারবার পেছাচ্ছে মামলার তারিখ। হচ্ছে না সাক্ষী গ্রহণ। আর কবে শেষ হবে এর বিচার কার্যক্রম এর কোন হদিস নেই। ফলে আশাহত হয়ে পড়েছেন কিবরিয়াসহ নিহত ও আহতদের পরিবার। কিন্তু কিবরিয়ার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া দাবি করেন মামলার তদন্তই সুষ্ঠু হয়নি। সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

এই ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার একটিতে তিনদফা তদন্ত শেষে চার্জশিট গঠনের মাধ্যমে সিলেট দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। এরপর থেকেই চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ। বিচারপ্রক্রিয়ার এ দীর্ঘসূত্রতায় কিবরিয়া পরিবারের সদস্যরা হারিয়েছেন বিচার পাওয়ার আশা। তাছাড়া তদন্তপ্রক্রিয়ার প্রথম থেকেই অনাস্থা জানিয়ে এসেছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এ সংসদের পরিবারের সদস্যরা। তবে এখনও আশাবাদী মামলার বাদী ও আইনজীবীরা।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী-লীগ। যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন শাহ এএমএস কিবরিয়া।

বক্তব্য শেষে মঞ্চ থেকে নেমে বৈদ্যের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটে আসলে তাদের উপর গ্রেনেড হামলা চালায় আঁততায়ীরা।

এ হামলায় কিবরিয়া ছাড়াও নিহত হন তার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী।

সে রাতেই হবিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান।

কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘এই মামলায় এই মুহূর্তে আমরা আশাবাদী না। কারণ আমরা এখনও বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে মামলাটা পরিচালিত হচ্ছে না। এবং আমরা বারবার যেটা বলছি, তদন্ত যদি ঠিকমতো না হয় তাহলে মামলা পরিচালনা সুষ্ঠু করা সম্ভব না’। যে চার্জশিটগুলো করা হয়েছে সেগুলো একটার সঙ্গে আরেকটার কোন মিল নেই। যে যার মতো করে তদন্ত করছে। কারও শেখানো কথাগুলো চার্জশিটে লিখে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘যেটা করছে তাদের মতো, যারা মামলা পরিচালনা করছেন। বিচার বিভাগের এবং পুলিশের ওদের ইচ্ছামতো করা হচ্ছে। কিন্তু আসল তথ্য এই মামলার মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো না। সে জন্যেই এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদী না’। ভবিষ্যতের আসায় আছি। বর্তমান সরকারের আমলে আমার পিতাসহ বাকিদের হত্যার বিচার আমরা পাব না।

তবে মামলার বাদী ও হবিগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল মজিদ খান বলেন, ‘দীর্ঘসূত্রিতা বিভিন্ন আইনগত জটিলতার কারণেই হচ্ছিল। ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তো কোন তদন্তই হচ্ছিল না।

তিনি বলেন, ‘নানা আইনি জটিলতার কারণে মামলা দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়। আমি বাদী, তাড়াতাড়ি শেষ হোক চাই। আমি সরকারি দলের এমপি, সরকারের লোক এবং আমার লোক নিহত হয়েছেন। তাই আমি চাই এ মামলা কার্যক্রম দ্রুত শেষ হউক।

সিলেট দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর জানান, মামলার আগামী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি। এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক মামলার আসামি থাকায় তাদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় প্রতিনিয়ত যেতে হয় আর এ কারণে সব সময় উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না। আর আসামির অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণও হয় না বলে বারবার তারিখ পেছাতে হয়। তিনি আরও বলেন- এ মামলায় ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ৩২ আসামির মধ্যে ৩ জন মৃত্যু বরণ করেছেন। ১২ জন আসামি জামিনে আছেন। ১০ জন আসামি হাজতে আর বাকি ৭ আসামি পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা অপর মামলাও ২০১৬ সালে হবিগঞ্জ থেকে সিলেট দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। কিবরিয়াসহ আরও ৪ জনকে গ্রেনেড হামলায় হত্যা মামলার মোট ৩২ জন আসামির মধ্যে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনকে ইতোমধ্যে অন্য মামলায় মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।

বাকি ২৯ আসামির মধ্যে বিএনপি সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ ১০ জন জেলে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জিকে গউছসহ ১২ জন জামিনে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীসহ ৭ জন এখনও পলাতক রয়েছেন।

এদিকে, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়ে থাকে। এবারও ঢাকার বনানীতে মরহুমের সমাধিতে সকালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কিবরিয়া পরিবার। হত্যা মামলার বিচারের দাবিতে কিবরিয়া স্ত্রী মরহুম আসমা কিবরিয়ার শান্তির পক্ষে নীলিমা কর্মসূচিটি শুরু হবে।