যিনি প্রকৌশলী তিনিই ঠিকাদার?

যশোর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী নিজেই একজন ঠিকাদার। তিনি তার স্ত্রীর নামে কাজ করে ধাকেন। তিনিই আবার এসব কাজের তদারকিও করে থাকেন। তার নাম রফিকুজ্জামান। বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন সদর ও চৌগাছা উপজেলার।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে গোপালগঞ্জ থেকে যশোরে বদলি হয়ে আসেন রফিকুজ্জামান। এসেই তিনি ঠিকাদারী কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রথম দিকে, বিভিন্ন ঠিকাদারের সঙ্গে পার্টনারশিপে কাজ করতেন। পরে অনেক ঠিকাদারের কাছ থেকে লাইসেন্স ভাড়া করে কাজ করতে থাকেন। পরবর্তীতে নিজের স্ত্রীর নামে লাইসেন্স গ্রহণ করেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে।

উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানকালে ২১ জন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুজ্জামানের স্ত্রীর নাম মোছা. শাহনাজ আফরিন। ঠিকানা ৬৪, পুরাতন কসবা কাজীপাড়া, যশোর। শাহনাজ আফরিনের ঠিকাদারী লাইসেন্সের নাম এসএকে এন্টারপ্রাইজ।

যশোর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ঠিকাদারদের যে লাইসেন্স রেজিস্ট্রার রয়েছে তার ৫৫ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে এসএকে এন্টারপ্রাইজের নাম। এই অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চার-পাঁচ বছর ধরে এসএকে এন্টারপ্রাইজের নামে ঠিকাদারি কাজ করছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুজ্জামান।

শুধু তাই না, কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে তার পার্টনারশিপে কয়েকটি কাজ চলমান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসএকে এন্টারপ্রাইজের নামে রফিকুজ্জামান চৌগাছার পাতিবিলার শিশুতলা স্কুল ও অভয়নগরের ধোপাদী স্কুলে তিন হাজার স্কুল প্রজেক্টের ভার্টিকেল এক্সটেনশনের কাজ করছেন। স্ত্রীর নামের লাইসেন্সে কাজ চলছে মণিরামপুরের পাঁচাকড়ি স্কুলেও। এখানেও হচ্ছে ভার্টিকেল এক্সটেনশনের কাজ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে তিনি রাফিদ ট্রেডার্স, শেখ এন্টারপ্রাইজ ও ডেভলপমেন্ট প্লানিং কন্সট্রাকশন-ডিপিসির নামে পার্টনারশিপে কাজ করছেন। সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, সদর ও চৌগাছা উপজেলায় কোনো ঠিকাদার কাজ বিক্রি করতে চাইলে সেটি রফিকুজ্জামানকে দেয়া এক প্রকার অলিখিত বাধ্যতামূলক।

বর্তমানে তিনি সনেক্সের নামে সদর উপজেলার কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজেও কাজ করছেন। কাজ করছেন কেশবপুরে ইসমাত আরা সাদেক অডিটোরিয়ামে। রাফিদ ট্রেডার্সের নামে রফিকুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে সেসিপ প্রজেক্টের কাজ চলছে ঝিকরগাছার গদখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

আবদুল ওয়াহেদ নামে তার একজন ম্যানেজার রয়েছেন। তিনিই তার সমস্ত কাজ দেখাশুনা করেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তার কাজের অন্যতম পার্টনার যশোর ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরীফ। ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতির সঙ্গে গাঠছড়া বাধার কারণে সাধারণ ঠিকাদারদের সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হয়।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, যশোর জেলার মধ্যে উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুজ্জামানের লোকজনের কাজ সবচেয়ে নিম্নমানের। ঠিকাদারী ব্যবসার কারণে তিনি সাধারণ ঠিকাদারদের প্রতিপক্ষ করছেন। কোন সময় যদি তিনি কাজ না পান তখনই তার রোষানলে পড়ছেন কাজ পাওয়া ঠিকাদার।

এসব বিষয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ঠিকাদারী করি না। যার লাইসেন্স সেই কাজ করে।’ স্ত্রীর নামে লাইসেন্স থাকার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

যশোর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি অনৈতিক কাজ করেন তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তার মা অসুস্থ বলে লাইন কেটে দেন।

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০ , ১৩ মাঘ ১৪২৬, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪১

যিনি প্রকৌশলী তিনিই ঠিকাদার?

যশোর অফিস

যশোর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী নিজেই একজন ঠিকাদার। তিনি তার স্ত্রীর নামে কাজ করে ধাকেন। তিনিই আবার এসব কাজের তদারকিও করে থাকেন। তার নাম রফিকুজ্জামান। বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন সদর ও চৌগাছা উপজেলার।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে গোপালগঞ্জ থেকে যশোরে বদলি হয়ে আসেন রফিকুজ্জামান। এসেই তিনি ঠিকাদারী কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রথম দিকে, বিভিন্ন ঠিকাদারের সঙ্গে পার্টনারশিপে কাজ করতেন। পরে অনেক ঠিকাদারের কাছ থেকে লাইসেন্স ভাড়া করে কাজ করতে থাকেন। পরবর্তীতে নিজের স্ত্রীর নামে লাইসেন্স গ্রহণ করেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে।

উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানকালে ২১ জন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুজ্জামানের স্ত্রীর নাম মোছা. শাহনাজ আফরিন। ঠিকানা ৬৪, পুরাতন কসবা কাজীপাড়া, যশোর। শাহনাজ আফরিনের ঠিকাদারী লাইসেন্সের নাম এসএকে এন্টারপ্রাইজ।

যশোর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ঠিকাদারদের যে লাইসেন্স রেজিস্ট্রার রয়েছে তার ৫৫ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে এসএকে এন্টারপ্রাইজের নাম। এই অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চার-পাঁচ বছর ধরে এসএকে এন্টারপ্রাইজের নামে ঠিকাদারি কাজ করছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুজ্জামান।

শুধু তাই না, কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে তার পার্টনারশিপে কয়েকটি কাজ চলমান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসএকে এন্টারপ্রাইজের নামে রফিকুজ্জামান চৌগাছার পাতিবিলার শিশুতলা স্কুল ও অভয়নগরের ধোপাদী স্কুলে তিন হাজার স্কুল প্রজেক্টের ভার্টিকেল এক্সটেনশনের কাজ করছেন। স্ত্রীর নামের লাইসেন্সে কাজ চলছে মণিরামপুরের পাঁচাকড়ি স্কুলেও। এখানেও হচ্ছে ভার্টিকেল এক্সটেনশনের কাজ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে তিনি রাফিদ ট্রেডার্স, শেখ এন্টারপ্রাইজ ও ডেভলপমেন্ট প্লানিং কন্সট্রাকশন-ডিপিসির নামে পার্টনারশিপে কাজ করছেন। সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, সদর ও চৌগাছা উপজেলায় কোনো ঠিকাদার কাজ বিক্রি করতে চাইলে সেটি রফিকুজ্জামানকে দেয়া এক প্রকার অলিখিত বাধ্যতামূলক।

বর্তমানে তিনি সনেক্সের নামে সদর উপজেলার কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজেও কাজ করছেন। কাজ করছেন কেশবপুরে ইসমাত আরা সাদেক অডিটোরিয়ামে। রাফিদ ট্রেডার্সের নামে রফিকুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে সেসিপ প্রজেক্টের কাজ চলছে ঝিকরগাছার গদখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

আবদুল ওয়াহেদ নামে তার একজন ম্যানেজার রয়েছেন। তিনিই তার সমস্ত কাজ দেখাশুনা করেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তার কাজের অন্যতম পার্টনার যশোর ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরীফ। ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতির সঙ্গে গাঠছড়া বাধার কারণে সাধারণ ঠিকাদারদের সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হয়।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, যশোর জেলার মধ্যে উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুজ্জামানের লোকজনের কাজ সবচেয়ে নিম্নমানের। ঠিকাদারী ব্যবসার কারণে তিনি সাধারণ ঠিকাদারদের প্রতিপক্ষ করছেন। কোন সময় যদি তিনি কাজ না পান তখনই তার রোষানলে পড়ছেন কাজ পাওয়া ঠিকাদার।

এসব বিষয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ঠিকাদারী করি না। যার লাইসেন্স সেই কাজ করে।’ স্ত্রীর নামে লাইসেন্স থাকার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

যশোর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি অনৈতিক কাজ করেন তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তার মা অসুস্থ বলে লাইন কেটে দেন।