গণপরিবহনে লাগামহীন ভাড়া

কোন নীতিমালাই মানা হচ্ছে না যাত্রী ভোগান্তি বেড়েই চলছে

গণপরিবহনের ভাড়া এখন লাগামহীন। ঢাকা মহাগনরীর যে কোন বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া হওয়ার কথা ৫-৭ টাকা। কিন্তু এখন তা ১৫-২০ টাকা আদায় করছে বাস চালকরা কোন নীতিমালা মানছে না। সরকারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। এ সব বাসের ভাড়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোন নীতিমালা নেই বলে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র সূত্র জানায়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে গাড়ি ফিটনেসসহ বিভিন্ন অপরাধে রাজধানীর সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও বেশি ভাড়া নেয়ার অপরাধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই গণপরিবহনের এই লাগামহীন ভাড়ার কারণে চরম বিরক্ত যাত্রীরা। এছাড়াও রয়েছে নানা ভোগান্তি।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী রুটের বিরতিহীন পরিবহন ২২ নম্বর বাস (সাবেক ৮ নম্বর) ঢাকার শহরের সবচেয়ে নোংরা পরিবহন হিসেবে পরিচিত। লোকাল এই বাসের এখন সর্বনিম্ন ভাড়া নেয়া হয় ১০ টাকা। ময়লা, ছেড়া-ফাটা সিট, জানালার গ্লাস ভাঙা, লক্কড়-ঝক্কড় এই বাসে যাত্রী তোলা হয় গাদাগাদি করে। কিন্তু ভাড়া নেয়া হয় সিটিং সার্ভিসের নামে। এই বাসে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের সর্বনিম্ন নির্ধারিত ভাড়া ৫ টাকা। কিন্তু নেয়া হয় ১০ টাকা। এছাড়া যাত্রাবাড়ী থেকে ফার্মগেটের ভাড়া নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু আদায় করা হয় ২০ টাকা। একই অবস্থা যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের ট্রান্সসিলভা পরিবহন। এই বাসে যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা কিন্তু আদায় করা হয় ১০ টাকা। এই বাসে যাত্রাবাড়ী থেকে শাহবাগের নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা কিন্তু আদায় করা ২০ টাকা। যাত্রাবাড়ী থেকে সাইন্সল্যাবের নির্ধারিত ভাড়া ১৫ টাকা কিন্তু আদায় করা হয় ৩০ টাকা। যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরের ভাড়া ২০ টাকা কিন্তু আদায় করা হয় ৪০ টাকা।

এভাবে সিটিং সার্ভিস, গেটলক, ভিআইপি, ওয়েবিলসহ বিভিন্ন নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে গণপরিহন চালকরা। এছাড়া রাজধানীর মতিঝিল-রামপুর-উত্তরা রুটেসহ কিছু কিছু এসি বাস সার্ভিস চলছে। কিন্তু এসব এসি বাস সার্ভিসের কোন ভাড়ার নীতিমালা নেই বলে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানায়। তবে সিটিং সার্ভিসের নামের চিটিং করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এটা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সমর্থন করে না। এ ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র ভ্রম্যমাণ আদালতের অভিযানকে সহায়তা করা হয় বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা তাদের সহায়তা করি।

গত শনিবার সরেজমিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে সব বাস-মিনিবাসের ভাড়া এখন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ আদায় করা হচ্ছে। ঢাকায় ৯৬ শতাংশ গাড়িই ‘সিটিং সার্ভিস’ নামের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর প্রভাব পড়ছে ছোট যানবাহন রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশায়। মিটার বন্ধ রেখে চুক্তিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে সিএনজি অটোরিকশার চালকরা। এর ফলে তিন চাকার অযান্ত্রিক যানবাহন রিকশার ভাড়া কোন নিয়ম নেই। রিকশায় উঠলেই স্বল্প দূরুত্বের ভাড়া ৪০-৫০ টাকা আদায় করছে চালকরা। তাই রাজধানীর প্রতিটি যানবাহনে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে চালকরা। বিশেষ করে বাস, মিনিবাস, লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশাসহ ছোট যানবাহনেও ভাড়ার কোন তোয়াক্কা নেই।

২০১৫ ঢাকা মহানগরীর বাস-মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে যথাক্রমে ১ টাকা ৭০ পয়সা ও ১ টাকা ৬০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ৩ কিলোমিটারে ৭ টাকা ও ৫ টাকা নির্ধারণ করে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু প্রতিটি বাস-মিনিবাস ৫ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১০-১৫ টাকা। ১০ টাকার বাস ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২০-৩০ টাকা। ২০ টাকার ভাড়া নেয়া হয় ৪০-৫০ টাকা। এ নিয়ে রাজধানী বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশদের কাছে অভিযোগ করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। সাইনবোর্ড-যাত্রাবাড়ী-গাজীপুর রুটের অনাবিল পরিবহন, সদরঘাট-গাজীপুর রুটে সুপ্রভাতসহ একাধিক পরিবহন সিটিং সার্ভিস নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এছাড়া যাত্রীবাড়ী-মিরপুর রুটে শিকড়, মেসকাতসহ একাধিক পরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। গুলিস্তান থেকে মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক হয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, আদমজীসহ বিভিন্ন রুটে সিটিং সার্ভিসে ভাড়া-সন্ত্রাস চলছে। গুলিস্তান থেকে আদমজী পর্যন্ত সরকারি হারে যাত্রীপ্রতি এসব বাসে ভাড়া ২২ টাকা। অথচ আদায় করা হচ্ছে ৪০ টাকা। গুলিস্তান থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ভাড়া ১৩ টাকা, ৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এক যাত্রী। নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড ও সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ী, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে চলাচলকারী ঠিকানা, মৌমিতা, নীলাচল, লাব্বাইক, রজনীগন্ধা, মনজিল, অনাবিলসহ সব পরিবহনের বাস ‘সিটিং সার্ভিস’ নামের তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হয়।

২০১৫ সালে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি)’র দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে রাজধানীর ও চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ঢাকার আশপাশের জেলায় বড় বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন ১০ পয়সা বাড়িয়ে বড় বাসে প্রতি কিলেমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল বড় বাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৫০ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া বড় বাসের জন্য ৭ টাকা ও মিনিবাসের জন্য ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই নীতিমালা মানছে না গণপরিবহন মালিকরা। রাজধানীর পরিবহন ভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারের দুটি কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো সাব কমিটি বা ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি। অপরটি মূল কমিটি। দুটি কমিটিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি আছেন। ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি পরিবহনের যাবতীয় আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করে ভাড়া বৃদ্ধি একটি খসড়া প্রস্তাবনা মূল কমিটির কাছে পেশ করে। এরপর মূল কমিটি তা চূড়ান্ত করে। কিন্তু রাজধানীর পরিবহনগুলো ভাড়া নির্ধারণে ক্ষেত্রে কোন প্রকার বিরতিহীন, গেটলক, সিটিং সার্ভিস, কাউন্টার সার্ভিসের নাম উল্লেখ নেই। এসব নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা সম্পূর্র্ণ অবৈধ ও বেআইনি বলে বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসান সংবাদকে বলেন, ২০১৫ সালে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে ঢাকা মহানগরীর বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। এরপর আর কোন ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোন প্রস্তাব দেয়া হয়নি। কিন্তু সিটিং সার্ভিসের নামের দ্বি-তিনগুণ ভাড়া আদায়ের কোন নিয়ম নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অপরাধে বিআরটিএ’র পক্ষে মোবাইল কোট পরিচালনা করা হয়। এছাড়া সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে একটি কমিটি কাজ করছে বলে জানান তিনি।

বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার শহর ও শহরতলীর আড়াইশ’ রুটে প্রায় আট হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। এর প্রায় প্রতিটি রুটেই দেখা গেছে যাত্রীদের ভোগান্তির চিত্র। সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মতিঝিল ও সদরঘাট থেকে মহাখালী হয়ে বিমানবন্দর, আবদুল্লাহপুর, গাজীপুরের বিভিন্ন রুটে কয়েকটি পরিবহনের বাস চলে। এসব বাসের মধ্যে সায়েদাবাদ থেকে বলাকা, সদরঘাট থেকে স্কাইলাইন, গুলিস্তান থেকে গুলিস্তান-গাজীপুর পরিবহন, প্রভাতী-বনশ্রী, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এয়ারপোর্ট পরিবহন লিমিটেড এবং মতিঝিল থেকে গাজীপুর পরিবহন এবং আল মক্কা পরিবহনের বাস চলাচল করে। এছাড়া প্রগতি স্মরণি হয়ে চলাচলকারী অনাবিল, সালসাবিল, সুপ্রভাত, রাইদা, ভিক্টর, প্রচেষ্টা, তুরাগসহ প্রায় পরিবহনের বাসই হয়ে গেছে ‘সিটিং সার্ভিস’। বলাকা পরিবহনের তিনশ’ বাসের মধ্যে কিছু লোকাল, কিছু সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলাচল করত। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর এখন সব গাড়িই ‘সিটিং’ হিসেবে চলছে। গুলিস্তান-গাজীপুর পরিবহনের বাস এমনিতে ‘লোকাল’ হিসেবে যাত্রী নিলেও অফিস ছুটির সময় এ পরিবহনের বাসগুলোও ‘সিটিং সার্ভিস’ হয়ে যায়। কিন্তু যাত্রী বহন করা হয় গাদাগাদি করে।

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় পাভেল নামের যাত্রী বলেন, প্রতিদিনই তাকে দীর্ঘসময় বাসের জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়। বেশিরভাগ গাড়ির দরজা বন্ধ রাখে। গাড়িতে ওঠা যায় না। অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশকে অনুরোধ করি বাসে তুলে দেয়ার জন্য। আমাদের দুর্দশা দেখে অনেক সময় ট্রাফিক সার্জেন্টরা গাড়ি থামিয়ে আমাদের তুলে দেন। বেশি কষ্ট হয় নারীদের। তারা উঠতেই পারে না। তারা বাসে উঠলে ভাড়া আদায় করা হয় দ্বিগুণ। গুলিস্তান থেকে রামপুরার ১০ টাকা ভাড়া নেয়া হয় ২০ টাকা।

মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর এবং সাভার থেকে কালশী রোড সেনানিবাস ফ্লাইওভার হয়ে চলাচলকারী প্রজাপতি, তেঁতুলিয়া, মিরপুর লিংক, পরিস্থান, রবরব, বসুমতি, নূরে মক্কা, অছিম, আকিকসহ সব পরিবহনের বাসই ‘সিটিং সার্ভিস’ নামে চলছে। এ সব বাসে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। তবে কালশী পার হলেই দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হয় প্রায় প্রতিটি বাসে। বাড়তি ভাড়া নেয়াসহ যাত্রী হয়রানির নানা অভিযোগের কারণে বাস মালিকরা ২০১৭ সালের এপ্রিলে ‘সিটিং সার্ভিসে’ বাস চালানো বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর মে মাসে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান শুরু করলে অনেক মালিক সড়কে বাস নামানো বন্ধ করে দেন। ওই অচলাবস্থার মধ্যে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে বেশ কয়েক জায়গায়। পরে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় বিআরটিএ। ঢাকায় ‘সিটিং সার্ভিস’ বাস চলবে কি-না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে তখন আট সদস্যের একটি কমিটি করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ওই বছর সেপ্টেম্বরে ওই কমিটির প্রতিবেদনে ‘সীমিত আকারে’ সিটিং সার্ভিসের বাস রাখার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ২৬টি সুপারিশ করা হয় সেখানে। তা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি।

২০১৮ সালের মে মাসে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি’। সেখানে বলা হয়, ঢাকার ২১টি রুটের এক হাজার ৫৩টি বাসের ওপর জরিপ চালিয়ে তারা দেখেছে, ৯৬ শতাংশ গাড়িই ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে চলাচল করে। এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদকে বলেন, সরকার বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করে। কিন্তু তদারকি নেই। সারাদেশে গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। কোন নিয়ম নীতিমালা মানছে না পরিবহন মালিকরা। কোন পরিবহন কত টাকা ভাড়া আদায় করবে, কতদিন পর পর ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে। এই বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই সরকারের। এছাড়া ভাড়া নির্ধারণের যে কমিটি রয়েছে সেখানে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের প্রাধান্য বেশি। তাই গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে কোন সুষ্ঠু সমাধান কখনও হয়নি।

আরও খবর
বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এখনও অনিশ্চিত
সড়ক দুর্ঘটনা ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে
বোনের মৃত্যু শোককে শক্তিতে পরিণত করে বিশ্বকাপ ছিনিয়ে এনেছে আকবর
আনন্দে মেতেছে সারাদেশ
আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় মুজিববর্ষে জাতির জন্য উপহার প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারদের প্লট ও সম্মানি দেয়ার দাবি সংসদে
বিশ্বসেরা আরচার রোমান সানা
আনসার আল ইসলামের ৫ জঙ্গি গ্রেফতার
ফিরতি টিকিট ৫০ শতাংশ করার দাবি
চীন থেকে আর কাউকে আনবে না সরকার
ভোট পুনর্যাচাই ঘুড়ি নয়, ঝুড়ি জিতেছে
চীন থেকে আসা একজনকে রংপুর থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে স্থানান্তর
দুই কিশোরী ধর্ষণ
তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়েই রয়ে গেছে
কলকাতা বইমেলা ২০২১ বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করা হবে
ক্ষণগণনা : আর ৩৪ দিন
আ-মরি বাংলা ভাষা

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৮ মাঘ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল সানি ১৪৪১

গণপরিবহনে লাগামহীন ভাড়া

কোন নীতিমালাই মানা হচ্ছে না যাত্রী ভোগান্তি বেড়েই চলছে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

গণপরিবহনের ভাড়া এখন লাগামহীন। ঢাকা মহাগনরীর যে কোন বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া হওয়ার কথা ৫-৭ টাকা। কিন্তু এখন তা ১৫-২০ টাকা আদায় করছে বাস চালকরা কোন নীতিমালা মানছে না। সরকারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। এ সব বাসের ভাড়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোন নীতিমালা নেই বলে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র সূত্র জানায়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে গাড়ি ফিটনেসসহ বিভিন্ন অপরাধে রাজধানীর সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও বেশি ভাড়া নেয়ার অপরাধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই গণপরিবহনের এই লাগামহীন ভাড়ার কারণে চরম বিরক্ত যাত্রীরা। এছাড়াও রয়েছে নানা ভোগান্তি।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী রুটের বিরতিহীন পরিবহন ২২ নম্বর বাস (সাবেক ৮ নম্বর) ঢাকার শহরের সবচেয়ে নোংরা পরিবহন হিসেবে পরিচিত। লোকাল এই বাসের এখন সর্বনিম্ন ভাড়া নেয়া হয় ১০ টাকা। ময়লা, ছেড়া-ফাটা সিট, জানালার গ্লাস ভাঙা, লক্কড়-ঝক্কড় এই বাসে যাত্রী তোলা হয় গাদাগাদি করে। কিন্তু ভাড়া নেয়া হয় সিটিং সার্ভিসের নামে। এই বাসে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের সর্বনিম্ন নির্ধারিত ভাড়া ৫ টাকা। কিন্তু নেয়া হয় ১০ টাকা। এছাড়া যাত্রাবাড়ী থেকে ফার্মগেটের ভাড়া নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু আদায় করা হয় ২০ টাকা। একই অবস্থা যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের ট্রান্সসিলভা পরিবহন। এই বাসে যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানের নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা কিন্তু আদায় করা হয় ১০ টাকা। এই বাসে যাত্রাবাড়ী থেকে শাহবাগের নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা কিন্তু আদায় করা ২০ টাকা। যাত্রাবাড়ী থেকে সাইন্সল্যাবের নির্ধারিত ভাড়া ১৫ টাকা কিন্তু আদায় করা হয় ৩০ টাকা। যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরের ভাড়া ২০ টাকা কিন্তু আদায় করা হয় ৪০ টাকা।

এভাবে সিটিং সার্ভিস, গেটলক, ভিআইপি, ওয়েবিলসহ বিভিন্ন নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে গণপরিহন চালকরা। এছাড়া রাজধানীর মতিঝিল-রামপুর-উত্তরা রুটেসহ কিছু কিছু এসি বাস সার্ভিস চলছে। কিন্তু এসব এসি বাস সার্ভিসের কোন ভাড়ার নীতিমালা নেই বলে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানায়। তবে সিটিং সার্ভিসের নামের চিটিং করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এটা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সমর্থন করে না। এ ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র ভ্রম্যমাণ আদালতের অভিযানকে সহায়তা করা হয় বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা তাদের সহায়তা করি।

গত শনিবার সরেজমিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে সব বাস-মিনিবাসের ভাড়া এখন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ আদায় করা হচ্ছে। ঢাকায় ৯৬ শতাংশ গাড়িই ‘সিটিং সার্ভিস’ নামের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর প্রভাব পড়ছে ছোট যানবাহন রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশায়। মিটার বন্ধ রেখে চুক্তিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে সিএনজি অটোরিকশার চালকরা। এর ফলে তিন চাকার অযান্ত্রিক যানবাহন রিকশার ভাড়া কোন নিয়ম নেই। রিকশায় উঠলেই স্বল্প দূরুত্বের ভাড়া ৪০-৫০ টাকা আদায় করছে চালকরা। তাই রাজধানীর প্রতিটি যানবাহনে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে চালকরা। বিশেষ করে বাস, মিনিবাস, লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশাসহ ছোট যানবাহনেও ভাড়ার কোন তোয়াক্কা নেই।

২০১৫ ঢাকা মহানগরীর বাস-মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে যথাক্রমে ১ টাকা ৭০ পয়সা ও ১ টাকা ৬০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ৩ কিলোমিটারে ৭ টাকা ও ৫ টাকা নির্ধারণ করে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু প্রতিটি বাস-মিনিবাস ৫ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১০-১৫ টাকা। ১০ টাকার বাস ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২০-৩০ টাকা। ২০ টাকার ভাড়া নেয়া হয় ৪০-৫০ টাকা। এ নিয়ে রাজধানী বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশদের কাছে অভিযোগ করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। সাইনবোর্ড-যাত্রাবাড়ী-গাজীপুর রুটের অনাবিল পরিবহন, সদরঘাট-গাজীপুর রুটে সুপ্রভাতসহ একাধিক পরিবহন সিটিং সার্ভিস নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এছাড়া যাত্রীবাড়ী-মিরপুর রুটে শিকড়, মেসকাতসহ একাধিক পরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। গুলিস্তান থেকে মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক হয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, আদমজীসহ বিভিন্ন রুটে সিটিং সার্ভিসে ভাড়া-সন্ত্রাস চলছে। গুলিস্তান থেকে আদমজী পর্যন্ত সরকারি হারে যাত্রীপ্রতি এসব বাসে ভাড়া ২২ টাকা। অথচ আদায় করা হচ্ছে ৪০ টাকা। গুলিস্তান থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ভাড়া ১৩ টাকা, ৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এক যাত্রী। নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড ও সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ী, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে চলাচলকারী ঠিকানা, মৌমিতা, নীলাচল, লাব্বাইক, রজনীগন্ধা, মনজিল, অনাবিলসহ সব পরিবহনের বাস ‘সিটিং সার্ভিস’ নামের তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হয়।

২০১৫ সালে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি)’র দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে রাজধানীর ও চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ঢাকার আশপাশের জেলায় বড় বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন ১০ পয়সা বাড়িয়ে বড় বাসে প্রতি কিলেমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল বড় বাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৫০ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া বড় বাসের জন্য ৭ টাকা ও মিনিবাসের জন্য ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই নীতিমালা মানছে না গণপরিবহন মালিকরা। রাজধানীর পরিবহন ভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারের দুটি কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো সাব কমিটি বা ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি। অপরটি মূল কমিটি। দুটি কমিটিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি আছেন। ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি পরিবহনের যাবতীয় আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করে ভাড়া বৃদ্ধি একটি খসড়া প্রস্তাবনা মূল কমিটির কাছে পেশ করে। এরপর মূল কমিটি তা চূড়ান্ত করে। কিন্তু রাজধানীর পরিবহনগুলো ভাড়া নির্ধারণে ক্ষেত্রে কোন প্রকার বিরতিহীন, গেটলক, সিটিং সার্ভিস, কাউন্টার সার্ভিসের নাম উল্লেখ নেই। এসব নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা সম্পূর্র্ণ অবৈধ ও বেআইনি বলে বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসান সংবাদকে বলেন, ২০১৫ সালে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে ঢাকা মহানগরীর বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। এরপর আর কোন ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোন প্রস্তাব দেয়া হয়নি। কিন্তু সিটিং সার্ভিসের নামের দ্বি-তিনগুণ ভাড়া আদায়ের কোন নিয়ম নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অপরাধে বিআরটিএ’র পক্ষে মোবাইল কোট পরিচালনা করা হয়। এছাড়া সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে একটি কমিটি কাজ করছে বলে জানান তিনি।

বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার শহর ও শহরতলীর আড়াইশ’ রুটে প্রায় আট হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। এর প্রায় প্রতিটি রুটেই দেখা গেছে যাত্রীদের ভোগান্তির চিত্র। সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মতিঝিল ও সদরঘাট থেকে মহাখালী হয়ে বিমানবন্দর, আবদুল্লাহপুর, গাজীপুরের বিভিন্ন রুটে কয়েকটি পরিবহনের বাস চলে। এসব বাসের মধ্যে সায়েদাবাদ থেকে বলাকা, সদরঘাট থেকে স্কাইলাইন, গুলিস্তান থেকে গুলিস্তান-গাজীপুর পরিবহন, প্রভাতী-বনশ্রী, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এয়ারপোর্ট পরিবহন লিমিটেড এবং মতিঝিল থেকে গাজীপুর পরিবহন এবং আল মক্কা পরিবহনের বাস চলাচল করে। এছাড়া প্রগতি স্মরণি হয়ে চলাচলকারী অনাবিল, সালসাবিল, সুপ্রভাত, রাইদা, ভিক্টর, প্রচেষ্টা, তুরাগসহ প্রায় পরিবহনের বাসই হয়ে গেছে ‘সিটিং সার্ভিস’। বলাকা পরিবহনের তিনশ’ বাসের মধ্যে কিছু লোকাল, কিছু সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলাচল করত। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর এখন সব গাড়িই ‘সিটিং’ হিসেবে চলছে। গুলিস্তান-গাজীপুর পরিবহনের বাস এমনিতে ‘লোকাল’ হিসেবে যাত্রী নিলেও অফিস ছুটির সময় এ পরিবহনের বাসগুলোও ‘সিটিং সার্ভিস’ হয়ে যায়। কিন্তু যাত্রী বহন করা হয় গাদাগাদি করে।

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় পাভেল নামের যাত্রী বলেন, প্রতিদিনই তাকে দীর্ঘসময় বাসের জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়। বেশিরভাগ গাড়ির দরজা বন্ধ রাখে। গাড়িতে ওঠা যায় না। অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশকে অনুরোধ করি বাসে তুলে দেয়ার জন্য। আমাদের দুর্দশা দেখে অনেক সময় ট্রাফিক সার্জেন্টরা গাড়ি থামিয়ে আমাদের তুলে দেন। বেশি কষ্ট হয় নারীদের। তারা উঠতেই পারে না। তারা বাসে উঠলে ভাড়া আদায় করা হয় দ্বিগুণ। গুলিস্তান থেকে রামপুরার ১০ টাকা ভাড়া নেয়া হয় ২০ টাকা।

মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর এবং সাভার থেকে কালশী রোড সেনানিবাস ফ্লাইওভার হয়ে চলাচলকারী প্রজাপতি, তেঁতুলিয়া, মিরপুর লিংক, পরিস্থান, রবরব, বসুমতি, নূরে মক্কা, অছিম, আকিকসহ সব পরিবহনের বাসই ‘সিটিং সার্ভিস’ নামে চলছে। এ সব বাসে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। তবে কালশী পার হলেই দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হয় প্রায় প্রতিটি বাসে। বাড়তি ভাড়া নেয়াসহ যাত্রী হয়রানির নানা অভিযোগের কারণে বাস মালিকরা ২০১৭ সালের এপ্রিলে ‘সিটিং সার্ভিসে’ বাস চালানো বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর মে মাসে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান শুরু করলে অনেক মালিক সড়কে বাস নামানো বন্ধ করে দেন। ওই অচলাবস্থার মধ্যে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে বেশ কয়েক জায়গায়। পরে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় বিআরটিএ। ঢাকায় ‘সিটিং সার্ভিস’ বাস চলবে কি-না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে তখন আট সদস্যের একটি কমিটি করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ওই বছর সেপ্টেম্বরে ওই কমিটির প্রতিবেদনে ‘সীমিত আকারে’ সিটিং সার্ভিসের বাস রাখার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ২৬টি সুপারিশ করা হয় সেখানে। তা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি।

২০১৮ সালের মে মাসে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি’। সেখানে বলা হয়, ঢাকার ২১টি রুটের এক হাজার ৫৩টি বাসের ওপর জরিপ চালিয়ে তারা দেখেছে, ৯৬ শতাংশ গাড়িই ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে চলাচল করে। এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদকে বলেন, সরকার বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করে। কিন্তু তদারকি নেই। সারাদেশে গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। কোন নিয়ম নীতিমালা মানছে না পরিবহন মালিকরা। কোন পরিবহন কত টাকা ভাড়া আদায় করবে, কতদিন পর পর ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে। এই বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই সরকারের। এছাড়া ভাড়া নির্ধারণের যে কমিটি রয়েছে সেখানে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের প্রাধান্য বেশি। তাই গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে কোন সুষ্ঠু সমাধান কখনও হয়নি।