আল-মানাহিল ফাউন্ডেশনের সেবা আড়াই মাসে ১৭২টি লাশ দাফন
করোনাভাইরাস শুধু প্রাণই কেড়ে নেয় না, কেড়ে নেয় প্রিয়জনকে ছুঁয়ে কান্না করার অধিকারও। করোনা মহামারীতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফনের সময় উপরোল্লিখিত উক্তিটি যথাযথ রয়েছে। বিশেষ করে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অবস্থা একেবারে কাহিল। করোনা আক্রান্ত কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার পাড়া-প্রতিবেশী যেমন লাশ দাফনে অনীহা, তেমনি অনীহা রয়েছে পরিবারের সদস্যদেরও। চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তিদের দাফনের এ সময় এ চিত্র দেখা গেছে। এ অবস্থায় অন্যান্য সংস্থার মত করোনায় মৃত ব্যক্তিদের আল মানাহিল ফাউন্ডেশন মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসারে লাশগুলো দাফন করে আসছে। ওই সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, গতকাল পর্যন্ত গত আড়াই মাসে ১৭২টি লাশ দাফন করেছেন তারা। সেই সঙ্গে ২৫০ রোগীকে দেয়া হয়েছে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। তবে করোনার ভয়াবহ দুর্যোগে অন্যান্য সংস্থার মতো সংকট দেখা দিয়েছে আল মানাহিলে। কেননা প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। তাই দায়িত্ব বাড়ছে। সব কিছুর সেই সঙ্গে প্রয়োজন বাড়ছে পিপিই (সুরক্ষা পোশাক), মাস্ক, গ্লাভস, অ্যাম্বুলেন্সসহ যাবতীয় সব কিছুই। সর্বশেষ বিজন বড়ুয়া (ছদ্ম নাম) নামে এক ব্যক্তির লাশ দাফন করেছেন তারা।
লাশটি পড়ে ছিল নগরীর বহদ্দারহাট পুকুর পাড় ডেপুটি রোডের নিজ বাসায়। তার লাশের শেষকৃত্যর আয়োজন তো দূরে থাক, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির লাশের কাছেই যাচ্ছিল না কেউ। সব শেষে এগিয়ে এলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আল মানাহিল। করোনার তা-বের জেরে এমনটাই করুণ প্রিয় মুখগুলোর শেষ বিদায়ের চিত্র। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের আবেগ-অনুভূতি ধরে রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং। তবে করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে পিছু হাটার সুযোগ নেই। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে জিততে হবে। এখানে হিন্দু-মুসলিম কিংবা বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আলাদা করে ভাবার সুযোগ নেই। এমন করোনা দুর্যোগে মানবসেবায় আসল কাজ। এই যুদ্ধে জয় হবে মানবতার। এমটাই ভাবছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
আল মানাহিল ফাউন্ডেশন জানায়, গত বুধবার করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান ওই বড়–য়া সম্প্রাদায়ের ব্যক্তি। প্রতিবেশী আর পরিবারের কেউ এগিয়ে না আসায় যথারীতি শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে ডাক পড়ে টিম আল মানাহিল’র। তবে সেখানে ৬ তলা থেকে লাশ নামাতে বিশেষ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় ওই টিমের। পরে সেই লাশ গোসল করানো হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে আল মানাহিল’র অ্যাম্বুলেন্সে করে কাতাগঞ্জ বৌদ্ধ মন্দিরে শেষকৃত্যে সম্পন্ন করে টিম আল মানাহিল। আল মানাহিল’র ওই টিমে কাজ করেছিল ৬ জন স্বেচ্ছাসেবক। তারমধ্যে ৫ জন মুসলিম ও ১ জন বৌদ্ধ। বৌদ্ধ রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্যের আয়োজন করতে নিহতের অনুরোধে রবিন বড়ুয়াকে যুক্ত করা হয় ওই টিমে।
সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন বলেন, সেদিনের টিমে ৬ জন কাজ করেছিল। পরিবারের অনুরোধে এদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে রবিন বড়ুয়া নামে ১ জন বৌদ্ধ ছিল। টিমের বাকিরা মুসলিম। তবে হিন্দু- মুসলিম, বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সমাজসেবার এই কাজ অব্যাহত থাকবে। তবে যে কোন পরিস্থিতিতে এই জন সেবামূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান ফরিদ উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন। তিনি বলেন, এই দুর্যোগ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমরা প্রথম থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ , ৩০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ২০ শাওয়াল ১৪৪১
আল-মানাহিল ফাউন্ডেশনের সেবা আড়াই মাসে ১৭২টি লাশ দাফন
চট্টগ্রাম ব্যুরো
করোনাভাইরাস শুধু প্রাণই কেড়ে নেয় না, কেড়ে নেয় প্রিয়জনকে ছুঁয়ে কান্না করার অধিকারও। করোনা মহামারীতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফনের সময় উপরোল্লিখিত উক্তিটি যথাযথ রয়েছে। বিশেষ করে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অবস্থা একেবারে কাহিল। করোনা আক্রান্ত কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার পাড়া-প্রতিবেশী যেমন লাশ দাফনে অনীহা, তেমনি অনীহা রয়েছে পরিবারের সদস্যদেরও। চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তিদের দাফনের এ সময় এ চিত্র দেখা গেছে। এ অবস্থায় অন্যান্য সংস্থার মত করোনায় মৃত ব্যক্তিদের আল মানাহিল ফাউন্ডেশন মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসারে লাশগুলো দাফন করে আসছে। ওই সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, গতকাল পর্যন্ত গত আড়াই মাসে ১৭২টি লাশ দাফন করেছেন তারা। সেই সঙ্গে ২৫০ রোগীকে দেয়া হয়েছে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। তবে করোনার ভয়াবহ দুর্যোগে অন্যান্য সংস্থার মতো সংকট দেখা দিয়েছে আল মানাহিলে। কেননা প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। তাই দায়িত্ব বাড়ছে। সব কিছুর সেই সঙ্গে প্রয়োজন বাড়ছে পিপিই (সুরক্ষা পোশাক), মাস্ক, গ্লাভস, অ্যাম্বুলেন্সসহ যাবতীয় সব কিছুই। সর্বশেষ বিজন বড়ুয়া (ছদ্ম নাম) নামে এক ব্যক্তির লাশ দাফন করেছেন তারা।
লাশটি পড়ে ছিল নগরীর বহদ্দারহাট পুকুর পাড় ডেপুটি রোডের নিজ বাসায়। তার লাশের শেষকৃত্যর আয়োজন তো দূরে থাক, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির লাশের কাছেই যাচ্ছিল না কেউ। সব শেষে এগিয়ে এলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আল মানাহিল। করোনার তা-বের জেরে এমনটাই করুণ প্রিয় মুখগুলোর শেষ বিদায়ের চিত্র। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের আবেগ-অনুভূতি ধরে রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং। তবে করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে পিছু হাটার সুযোগ নেই। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে জিততে হবে। এখানে হিন্দু-মুসলিম কিংবা বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আলাদা করে ভাবার সুযোগ নেই। এমন করোনা দুর্যোগে মানবসেবায় আসল কাজ। এই যুদ্ধে জয় হবে মানবতার। এমটাই ভাবছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
আল মানাহিল ফাউন্ডেশন জানায়, গত বুধবার করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান ওই বড়–য়া সম্প্রাদায়ের ব্যক্তি। প্রতিবেশী আর পরিবারের কেউ এগিয়ে না আসায় যথারীতি শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে ডাক পড়ে টিম আল মানাহিল’র। তবে সেখানে ৬ তলা থেকে লাশ নামাতে বিশেষ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় ওই টিমের। পরে সেই লাশ গোসল করানো হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে আল মানাহিল’র অ্যাম্বুলেন্সে করে কাতাগঞ্জ বৌদ্ধ মন্দিরে শেষকৃত্যে সম্পন্ন করে টিম আল মানাহিল। আল মানাহিল’র ওই টিমে কাজ করেছিল ৬ জন স্বেচ্ছাসেবক। তারমধ্যে ৫ জন মুসলিম ও ১ জন বৌদ্ধ। বৌদ্ধ রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্যের আয়োজন করতে নিহতের অনুরোধে রবিন বড়ুয়াকে যুক্ত করা হয় ওই টিমে।
সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাওলানা ফরিদ উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন বলেন, সেদিনের টিমে ৬ জন কাজ করেছিল। পরিবারের অনুরোধে এদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে রবিন বড়ুয়া নামে ১ জন বৌদ্ধ ছিল। টিমের বাকিরা মুসলিম। তবে হিন্দু- মুসলিম, বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সমাজসেবার এই কাজ অব্যাহত থাকবে। তবে যে কোন পরিস্থিতিতে এই জন সেবামূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান ফরিদ উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন। তিনি বলেন, এই দুর্যোগ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমরা প্রথম থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি।