কিস্তি পরিশোধের চাপে দিশেহারা উপকূলের মানুষ

বিশ্ব আতঙ্কিত মহামারী করোনাকালীন ও উপকূলের জেলেপাড়ায় চলমান ৬৫ দিনের অবোরোধ চলাকালীন উপকূলে বিভিন্ন এনজিও আদায় করছে কিস্তির টাকা। মোবাইল ফোনে চাপ সৃষ্টি করাসহ কর্মচারী পাঠিয়ে টাকা আদায় করছে। সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্তৃপক্ষ বলছে তারা কোথাও চাপ সৃষ্টি করছে না। কেউ স্বেচ্ছায় কিস্তির টাকা দিলে তা নিচ্ছেন।

উপজেলার মিশ্রিপাড়া গ্রামের হনুফা বেগম জানান, তিনি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিস্তি দিতে চাননি বলে তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি এনজিওর মাঠকর্মী। মহিপুর থানার আলীপুরের ফাতেমা বেগম জানান, তিনি উদ্দীপনাসহ কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে বাসায় এসে মাঠকর্মী বলে গেছেন আগামী সপ্তাহ থেকে টাকা দিতে হবে। আলীপুরের সাইদুল ইসলাম, সরকার জুন মাস পর্যন্ত এনজিও ঋণ পরিশোধ করা লাগবে না বলে ঘোষণা দিলেও এনজিও তা মানছে না কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় এনজিওগুলো যেখানে কিস্তির টাকা আদায় করছে সেখানে আমাদের মতো ছোট সংস্থা বসে থাকতে পারে না।

উপকূলীয় এলাকায় কাজ করা একাধিক এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার জুন পর্যন্ত কিস্তি আদায় বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ কারণে তারা কাউকে চাপ প্রয়োগ করেন না। যেহেতু তাদের অফিস খোলা সে কারণে কিস্তির টাকা গ্রহণ করছেন।

কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা, কোডেক, কারিতাস, বুরো বাংলাদেশ, উদ্দীপন, পদক্ষেপ, সংগ্রাম’র মতো বড় বড় এনজিওর পাশাপাশি প্রায় অর্ধশত এনজিওর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব এনজিওগুলোর প্রতি জনপ্রতিনিধি, সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে চলমান করোনাকালে এ অঞ্চলের এনজিওগুলো কোন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত হয়নি। এই প্রান্তিক জনপদের গরিব-দুঃখী মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এনজিওগুলোর তেমন কোন ভূমিকা চোখে পড়েনি। অবশ্য বেসরকারি এনজিও সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টিয়ারি অ্যাকশন সোসাইটি (আভাস)‘র উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেককে নগত ৩ হাজার টাকাসহ করোনাভাইরাস প্রতিরোধক উপকারণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। এনজিওগুলো শুধুমাত্র উপকূলীয় জনপদের জেলেপাড়াসহ অতি দরিদ্র পরিবারগুলোকে জিম্মি করে ব্যবসা করছে। বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাস কালীন (কোভিড-১৯) কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা না করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি এএম মিজানুর রহমান বলেন, এই প্রান্তিক জনপদে সাধারণ মানুষের দারিদ্র্যতাকে পুঁজি করে এনজিওগুলো ব্যবসা করবে অথচ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে না, আবার দূর্যোগকালে কিস্তির টাকা আদায় করবে তা হতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

করোনার প্রাদুর্ভাবে স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য। তার ওপর এনজিওর কিস্তি পরিশোধের তাগাদায় দিশাহারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ঋণ পরিশোধে গ্রহীতাদের বাধ্য না করতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এর তোয়াক্কা করছে না তারা। সূত্র জানায়, উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় অর্ধশত এনজিও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এনজিওকর্মীরা প্রতিদিন ঋণগ্রহীতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কিস্তি পরিশোধে তাগাদা দিচ্ছে। কিস্তি আদায়ে মানসিক চাপের পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশলও অবলম্বন করছে তারা। এক এনজিওকর্মী জানান, অফিসের নির্দেশনা মেনে তাদের কাজ করতে হয়।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক বলেন, আপাতত কিস্তির টাকা আদায় কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কোন এনজিও কারও কাছ থেকে জোর করে কিস্তির টাকা আদায়ের সুযোগ নেই। কেউ অভিযোগ করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

আরও খবর
নিত্যপণ্যের বাজারে বাজেটের প্রভাব পড়েনি
অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম শীঘ্রই বাজারে আসছে
সৌদি আরবে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে দূতাবাসের উদ্যোগ
ভার্চুয়াল কোর্টে ৪৮৯ শিশুর জামিন
করোনা কেড়ে নেয় প্রিয়জনকে ছুঁয়ে কান্না করার অধিকারও
মোহাম্মদ নাসিমের জীবন এখন ‘সংকটাপন্ন’
দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি বিশিষ্টজনের
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী করোনা আক্রান্ত
অ্যাডিস মশা নিয়ন্ত্রণে চিরনি অভিযান : সাত দিনে ১০ লাখ টাকা জরিমানা
ব্রিফকেস হান্নান বাহিনীর কাহিনী, স্ত্রী পারভীনেরও রয়েছে নিজস্ব গ্রুপ
না’গঞ্জ বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের ১৬শ’ শিক্ষার্থীর দু’মাসের বেতন মওকুফ
করোনায় আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরও ২ চিকিৎসকের মৃত্যু
সরকারি হাসপাতালে করোনায় কাবু অর্ধশত নার্স
খাবারের সন্ধানে এসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেল বন্য হাতি

শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ , ৩০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ২০ শাওয়াল ১৪৪১

এনজিওগুলোর

কিস্তি পরিশোধের চাপে দিশেহারা উপকূলের মানুষ

কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা

বিশ্ব আতঙ্কিত মহামারী করোনাকালীন ও উপকূলের জেলেপাড়ায় চলমান ৬৫ দিনের অবোরোধ চলাকালীন উপকূলে বিভিন্ন এনজিও আদায় করছে কিস্তির টাকা। মোবাইল ফোনে চাপ সৃষ্টি করাসহ কর্মচারী পাঠিয়ে টাকা আদায় করছে। সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্তৃপক্ষ বলছে তারা কোথাও চাপ সৃষ্টি করছে না। কেউ স্বেচ্ছায় কিস্তির টাকা দিলে তা নিচ্ছেন।

উপজেলার মিশ্রিপাড়া গ্রামের হনুফা বেগম জানান, তিনি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিস্তি দিতে চাননি বলে তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি এনজিওর মাঠকর্মী। মহিপুর থানার আলীপুরের ফাতেমা বেগম জানান, তিনি উদ্দীপনাসহ কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে বাসায় এসে মাঠকর্মী বলে গেছেন আগামী সপ্তাহ থেকে টাকা দিতে হবে। আলীপুরের সাইদুল ইসলাম, সরকার জুন মাস পর্যন্ত এনজিও ঋণ পরিশোধ করা লাগবে না বলে ঘোষণা দিলেও এনজিও তা মানছে না কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় এনজিওগুলো যেখানে কিস্তির টাকা আদায় করছে সেখানে আমাদের মতো ছোট সংস্থা বসে থাকতে পারে না।

উপকূলীয় এলাকায় কাজ করা একাধিক এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার জুন পর্যন্ত কিস্তি আদায় বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ কারণে তারা কাউকে চাপ প্রয়োগ করেন না। যেহেতু তাদের অফিস খোলা সে কারণে কিস্তির টাকা গ্রহণ করছেন।

কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা, কোডেক, কারিতাস, বুরো বাংলাদেশ, উদ্দীপন, পদক্ষেপ, সংগ্রাম’র মতো বড় বড় এনজিওর পাশাপাশি প্রায় অর্ধশত এনজিওর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব এনজিওগুলোর প্রতি জনপ্রতিনিধি, সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে চলমান করোনাকালে এ অঞ্চলের এনজিওগুলো কোন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত হয়নি। এই প্রান্তিক জনপদের গরিব-দুঃখী মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এনজিওগুলোর তেমন কোন ভূমিকা চোখে পড়েনি। অবশ্য বেসরকারি এনজিও সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টিয়ারি অ্যাকশন সোসাইটি (আভাস)‘র উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেককে নগত ৩ হাজার টাকাসহ করোনাভাইরাস প্রতিরোধক উপকারণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। এনজিওগুলো শুধুমাত্র উপকূলীয় জনপদের জেলেপাড়াসহ অতি দরিদ্র পরিবারগুলোকে জিম্মি করে ব্যবসা করছে। বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাস কালীন (কোভিড-১৯) কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা না করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি এএম মিজানুর রহমান বলেন, এই প্রান্তিক জনপদে সাধারণ মানুষের দারিদ্র্যতাকে পুঁজি করে এনজিওগুলো ব্যবসা করবে অথচ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে না, আবার দূর্যোগকালে কিস্তির টাকা আদায় করবে তা হতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

করোনার প্রাদুর্ভাবে স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য। তার ওপর এনজিওর কিস্তি পরিশোধের তাগাদায় দিশাহারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ঋণ পরিশোধে গ্রহীতাদের বাধ্য না করতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এর তোয়াক্কা করছে না তারা। সূত্র জানায়, উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় অর্ধশত এনজিও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এনজিওকর্মীরা প্রতিদিন ঋণগ্রহীতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কিস্তি পরিশোধে তাগাদা দিচ্ছে। কিস্তি আদায়ে মানসিক চাপের পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশলও অবলম্বন করছে তারা। এক এনজিওকর্মী জানান, অফিসের নির্দেশনা মেনে তাদের কাজ করতে হয়।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক বলেন, আপাতত কিস্তির টাকা আদায় কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কোন এনজিও কারও কাছ থেকে জোর করে কিস্তির টাকা আদায়ের সুযোগ নেই। কেউ অভিযোগ করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।