বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি না হলে সুফলবঞ্চিত হবে জনগণ

এমসিসিআই’র প্রতিক্রিয়া

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উপস্থাপিত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) বলেছে, বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে না পারলে সুফল বঞ্চিত হবে জনগণ। এমসিসিআই’র সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বাজেট সম্পর্কে দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া সংবাদ মাধ্যমকে জানান। এমসিসিআই’র বাজেট প্রতিক্রিয়া হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো।

১১ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার মহান জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করার জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এমপি, মহোদয়কে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকার (এমসিসিআই) পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। গত পাঁচ মাস যাবত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পুরোপুরিভাবে দেশের এবং বৈশ্বিক সামাজিক ও বিজনেস ইকোসিস্টেম পাল্টে দিয়েছে। যেহেতু এই ভাইরাসের এখনও কোন ওষুধ এবং চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি সেহেতু সামাজিক এবং কাজকর্ম সংশ্লিষ্ট মুখোমুখি যোগাযোগের নিয়মকানুনগুলো আরও কিছু সময় অপরিবর্তিত থাকবে। যেহেতু খুব তাড়াতাড়ি পুরোদমে যোগাযোগ চালু হচ্ছে না, সেহেতু অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরও সময় লাগবে। এই বছরের বাজেটটি বিগত বছরের বাজেটগুলোর মতো সাধারণ বাজেট নয়। ২০২১ অর্থবছরের এই বাজেটের মাধ্যমে যেকোন মূল্যে মানুষের জীবন ও জীবিকাকে গ্রহণযোগ্য স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বাজেট ঘাটতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। ব্যবসায়-সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই বাজেটে যথাসম্ভব জনগণের স্বাস্থ্য ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। সামগ্রিক অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। এর পরে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর চারটি মূলকৌশলের উপর ভিত্তি করে বাজেটটি তৈরি হতে পারে। মূল কৌশলগুলো হলো- ১। অত্যাবশ্যকীয় খাতগুলোতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা এবং বিলাসী পণ্যের ব্যয় নিরুৎসাহিত করা, ২। প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে ঋণ সুবিধা উন্মুক্ত করা, ৩। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিসর বৃদ্ধি করা এবং ৪। প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্যখাত, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীও অন্যান্য খাতের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধিকরণ।

২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের (৫,২৩,১৯০ কোটি টাকা) চেয়ে ৮.৫৬ শতাংশ বেশি এবং বিগত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৫,০১,৫৭৭ কোটি টাকা) তুলনায় ১৩.২৪ শতাংশ বেশি। এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটটি সম্ভাব্য জিডিপি (৩১,৭১,৮০০ কোটি টাকা) এর ১৭.৯১ শতাংশ।

কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যখাত এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলোর পরিসর বাড়ানো, এই বিষয়গুলোর প্রতি অগ্রাধিকার দেয়ায় চেম্বার মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। এমসিসিআই মনে করছে যে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হারানো কর্মসংস্থানগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এবং শ্রমবাজারের বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ থাকা জরুরি ছিল। এছাড়াও যারা বাধ্য হয়ে বিদেশ থেকে ফিরেছেন তাদের জীবিকার জন্যও প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ থাকবে বলে এমসিসিআই প্রত্যাশা করে। যদিও উপরোল্লেখিত অগ্রাধিকার খাতসমূহে যুক্তিসঙ্গত হারে আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, তবুও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতার এবং কর্মপরিবেশের বিষয়টি বিবেচনা করে বাজেটে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকা উচিত ছিল। সরকার যদি এই বরাদ্দের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন-সক্ষমতা বৃদ্ধি না করতে পারে তাহলে জনগণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এইরকম সংকটকালীন সময়ে স্বাস্থ্যখাতের সুশাসনের দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।

এমসিসিআই মনে করে, আর্থিক ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে সহজেই অনুমেয় যে, কোভিড-১৯ সৃষ্ট বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আগামী বছরটি বাংলাদেশের তথা সারাবিশ্বের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন সময় হবে। এই কঠিন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে কর ও অন্যান্য প্রশাসনিক সুবিধা প্রধান করাতে, সরকারের জন্য কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণ করার কাজটিও কঠিন হবে। চলতি অর্থবছরে এনবিআর কর্তৃক আদায়যোগ্য রাজস্ব ২৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে কমে যেতে পারে। তৎসত্ত্বেও ঘোষিত বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৮.৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা এনবিআরের পক্ষে অর্জন করা অত্যধিক কঠিন হবে। ফলশ্রুতিতে, যথাযথভাবে কর প্রদান করে আসা প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর পুনরায় এনবিআর কর্তৃক করের আদায়ে অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে কর প্রশাসন ব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য এবং রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্তে সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কোন ধরনের দিকনির্দেশনা লক্ষ্য করা যায়নি। এমসিসিআই সবসময় কর-প্রশাসনের অর্থবহ কাঠামোগত পরিবর্তনের পক্ষে পরামর্শ দিয়ে আসছে যাতে করে তারা দক্ষতার সঙ্গে রাজস্ব আহরণের কাজটি করতে পারে। বিদ্যমান কাঠামোগত ব্যবস্থায় করযোগ্য উচ্চ আয়ের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ কর-জালের বাইরে রয়েছে, অন্যদিকে যথাযথভাবে কর পরিশোধ করে আসা কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের উপর একের পর এক করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে এক লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে যা জিডিপির ৬ শতাংশ। বিগত অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এই ঘাটতি ছিল ১,৫৩,৫০৮ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫.৫ শতাংশ এবং মূলবাজেটে এই ঘাটতি ছিল ১,৪৫,৩৮০ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫ শতাংশ। যেহেতু অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের বিপত্তি ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও আরও বিপত্তি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে, সেহেতু এই বাজেট ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে। বিগত কয়েক বছরে যথাযথ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার (সধপৎড়-বপড়হড়সরপ সধহধমবসবহঃ) কারণে সরকার ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ ৫ শতাংশের কাছে রাখতে পেরেছে যা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার এবং তা বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি করার স্থান তৈরি করে দিয়েছে। একইভাবে যদি শক্ত হাতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো যায় এবং অপচয় রোধ করা যায় তাহলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।

অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আহরণের এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রার কারণে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উন্নয়নসহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণের চেষ্টা অথবা বিভিন্ন উদ্ভাবনী অর্থায়নের (যেমন বন্ড ইস্যু করা) সুযোগ থেকে সরকারের মনোযোগ সরে যেতে পারে, বা তারাও আমাদের প্রয়োজনকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিতে পারে। সরকারের কূটনৈতিক সক্ষমতা ব্যবহার করে কোভিড আক্রান্ত দেশগুলোর জন্য গঠিত ফান্ড এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য জোর যোগাযোগ শুরু করা উচিত বলে এমসিসিআই মনে করে, যাতে করে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে অর্থসংগ্রহের জন্য খুব বেশি চাপ না থাকে।

সরকার ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৪,৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করছে যা কিনা বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার (৮২,৪২১ কোটি টাকা) চেয়ে কিছুটা বেশি। ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ সংগ্রহের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে করে এর কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত না হয়। ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অর্থমন্ত্রীর কঠিন হতে পারে, যদি না ব্যাংকিং খাতে যথার্থ তারল্য বিদ্যমান থাকে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কোভিড পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকগুলোকে ১,০১,১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে এবং মন্দ-ঋণ উদ্ধারে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংক, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে যাতে করে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানসমূহের হাতে এই অর্থ সরবরাহ যথাযথভাবে নিশ্চত করা যায়।

২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বেসরকারি বিনিয়োগ এবং প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। উচ্চ প্রবৃদ্ধির একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো বেশি পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। এমসিসিআই বিশ্বাস করে যে, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলেই কেবলমাত্র বাজেটের সুফল দৃশ্যমান হবে। বিশেষ করে এই মহামারীর সময়ে যেসব বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এই বাজেটে প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, হালকা প্রকৌশলখাতসমূহে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ লক্ষ্য করা গেছে। শুধুমাত্র কর সুবিধা প্রদান করলেই অন্যান্য দেশ থেকে বিদেশি বিনিয়োগ চলে আসবে না। এই বাজেটে ব্যবসা সহজীকরণ, ব্যবসার খরচ ও জটিলতা নিরসনের নিমিত্তে বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রশংসিত হবে। এই জন্য ইওউঅ, ইঊতঅ এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাসমূহে যথাযথ অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে তারা উদ্ভাবনী কার্যক্রম পরিচালনা করে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। বর্তমান এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমরা দেখেছি যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের যথাযথ দক্ষতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের পুনর্বিন্যাসে এই অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি।

রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির অপ্রত্যাশিত নিম্নগতির কারণে বর্তমান অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ হতে কমে ৫.২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে যা আমরা বাস্তবসম্মত বলে মনে করি। যাই হোক, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ নির্ধারণ করা সম্ভবত খুবই উচ্চাভিলাষী বলে আমরা মনে করি। এমসিসিআই মনে করছে এই কঠিন সময়ে জনগণের সামাজিক এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এর পরিবর্তে উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত নয়। যদি অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধির জন্য যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে আবারো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অন্যান্য ইন্ডিকেটরগুলো দ্রুত পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে। এমসিসিআই লক্ষ্য করছে যে মুদ্রাস্ফীতির হার বর্তমানে সহনীয় পর্যায়ে (৫.৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত ৫.৩৫ শতাংশ) রয়েছে এবং প্রস্তাবিত বাজেটে তা ৫.৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। যাই হোক, মহামারী পরবর্তী অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য অভ্যস্তরীণ সামষ্টিক চাহিদা বৃদ্ধি করতে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। এমসিসিআই বিশ্বাস করে যে, এই পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি প্রণয়ন করলেও মূল্যস্ফীতি খুব একটা বাড়বে না।

২০২০-২১ অর্থবছরে ২০৫, ১৪৫ কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেয়ায় চেম্বার সাধুবাদ জানাচ্ছে, যা বর্তমান অর্থবছরে (২০২,৭২১ কোটি টাকা) প্রকৃত বরাদ্দের চেয়ে ১.২ শতাংশ বেশি এবং ২০ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (১৯২,৯২১ কোটি টাকা) চেয়ে ৬.৩৪ শতাংশ বেশি। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন, তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তহবিলের দক্ষ কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এমসিসিআই সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছে।

বর্তমান অর্থবছরে সংশোধিত বরাদ্দ ১২৩,৮৯৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে আসছে বাজেটে ১৪০,২২২ কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে মানবসম্পদ (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ) খাতে অগ্রাধিকার প্রদান করায় এমসিসিআই আনন্দিত। এমসিসিআই মনে করে, স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা তাদের সামর্থ্যরে বিচারে যৌক্তিক। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দকৃত সম্পদ ব্যবহার করার জন্য জরুরিভিত্তিতে স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করছি, যাতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব কমানো যায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের কাছে মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া যায়। এই ধরনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ব্যতিরেকে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি কাক্সিক্ষত ফলাফল আনবে না। ২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত বরাদ্দের চেয়ে প্রায় ৪,২৭৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে স্বস্থ্য, জন ও পরিবার কল্যাণ খাতে আসছে বাজেটে ২২,৮৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এমসিসিআই মনে করে, এই বরাদ্দ বর্তমান সময়ে যথেষ্ট নয়। এই তহবিল যথাযথভাবে ব্যবহারের জন্য এবং উপযুক্ত পর্যায়ে মানসম্পন্ন ও যথেষ্টমাত্রায় প্রয়োজনীয় সেবা সরবরাহ করার জন্য ব্যক্তিগত সামর্থ্য ও সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য দেশে দক্ষ জনশক্তি অবশ্যই প্রয়োজন। পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নে (শিক্ষা) ৫.১১ শতাংশ বেশি বরাদ্দকৃত অর্থ অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে, যাতে দেশের সম্ভাবনাময় বিশাল অদক্ষ বা স্বল্প-দক্ষ শ্রমশক্তি প্রশিক্ষণ পেতে পারে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা বৃদ্ধি বা রি-স্কিল্ডকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা যায়। মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতের আওতায় জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিলে অন্য উৎস থেকে বিশেষ বরাদ্দের জন্য এমসিসিআই জোর দাবি জানাচ্ছে। এই কার্যক্রমে বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।

কৃষিখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে এই খাতের বরাদ্দ বর্তমান সংশোধিত বাজেটের ১২,৯৫২ কোটি টাকা থেকে ২৬.৯১ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৬,৪৩৭ কোটি টাকা করা হয়েছে, যার জন্য এমসিসিআই সাধুবাদ জানাচ্ছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ব্যয় কমাতে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং নতুন দক্ষতা ও প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে সরকার কৃষি খাতের আধুনিকায়ন নিশ্চিত করবে।

করপোরেট করহার কমানোর সিদ্ধান্তকে সঠিক দিকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এমসিসিআই প্রশংসা করছে। এই কঠিন সময়ে এমন পদক্ষেপ বহু কাক্সিক্ষত স্বস্তি আনবে। যাহোক প্রস্তাবিত বাজেট অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির বর্তমান করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩২.৫ শতাংশ করেছে এবং পাবলিক কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখেছে। দেশের বেশির ভাগ করপোরেট স্বত্বা অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি, তাদের এই উচ্চ করহার সেই সঙ্গে ডিভিডেন্ডের উপর কর আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় করহার বিষয়ে বাংলাদেশকে অনাকর্ষী ব্যবসা গন্তব্য করে তুলেছে। আমরা আশা করি, পরবর্তী কয়েক বছরে করপোরেট করহার কমানোর এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তৈরি পোশাক খাতের গ্রিন বিল্ডিং সনদপ্রাপ্ত কারখানার জন্য বিশেষ করহার ১০ শতাংশ পরবর্তী দুই বছর বহাল রাখা প্রশংসাযোগ্য। সেই সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট খাতকেও কর অবকাশ দেয়ার জন্য এমসিসিআই ধন্যবাদ জানাচ্ছে। এটি ডিজিটালাইজেশনে সাহায্য করবে। যাহোক এই করপোরেট করহার কমানোর পূর্ণ সুবিধা পেতে হলে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে (উৎসে কর্তিত কর) কমিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অগ্রিম আয়করের প্রভাব খুব বেশি এবং মাঝে মাঝে যথাযথ করারোপের ভিত্তিতে পরিশোধিতব্য করের চেয়েও বেশি। যাহোক অগ্রিম আয়করকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত করের দায় হিসেবে মনে করা হয় যা উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবসার ব্যয় বাড়িয়ে দেয় এবং প্রায়শই স্থায়িত্ব ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এই বিষয়ে শিল্পের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ০.৬ শতাংশ কর প্রযোজ্য যেটি নতুন কোম্পানির ক্ষেত্রে আরও একটি বোঝা, এমনকি ব্যবসা শুরুর পরপরই কার্যকর হয় যা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায় না। এটি বাতিল হওয়া উচিত বা কমপক্ষে ব্যবসা শুরুর প্রথম ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়।

কর রিটার্ন ডিজিটালভাবে দাখিল করাকে উৎসাহিতকরণে পদক্ষেপ করায় এমসিসিআই ধন্যবাদ জানাচ্ছে। যারা আয়কর রিটার্ন প্রথমবারের মতো অনলাইনে দাখিল করবে সে সব করদাতা ২ হাজার টাকা কর রেয়াত পাবে মর্মে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা নিশ্চয়ই ব্যক্তি করদাতা ও ছোট প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য উৎসাহমূলক প্রণোদনা। যেটি আয়কর বিভাগের ডিজিটাল রূপান্তর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।

ব্যক্তি করদাতার ন্যূনতম করহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ এবং ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবে সরকারি সিদ্ধান্তের এমসিসিআই প্রশংসা করছে। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর কারণে করদাতাদের এই নিম্নভাগ সামান্য হলেও স্বস্তি পাবে; যাহোক এই ধাপসমূহ পুনর্বিন্যাস প্রত্যাশিত অধিক স্বস্তি নাও দিতে পারে। মোবাইলের কল চার্জ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে কর বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি ডিজিটাল বাংলাদেশ দর্শনের বিপরীত। এই সংকটকালীন সময়ে যখন মুখোমুখি বা ব্যক্তিগত সাক্ষাত মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছে, তখন এটি পরিবারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটাবে। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার খরচ আরও বাড়াবে যা তাদের টিকে থাকার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে। কমপক্ষে আগামী অর্থবছরের জন্য এই কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ধারা ৩০(পি) এর অধীন নতুন সংযোজিত বিধান অনুসারে প্রতিষ্ঠানের কোন বিজ্ঞাপন ব্যয় প্রকাশিত টার্নওভারের ০.৫ শতাংশের বেশি হলে অ-অনুমোদিত ব্যয় হিসেবে গণ্য হবে। ফলস্বরূপ কোম্পানির কার্যকর করহার ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার কমানোর সুবিধা নস্যাৎ করবে এবং তালিকাভুক্ত ও অন্যান্য কোম্পানির জন্য অতিরিক্ত করের বোঝা তৈরি করবে। কোম্পানির বিস্তারে পণ্যের বিজ্ঞাপন ব্যয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যে সব কোম্পানি এই ধরনের বিজ্ঞাপন কার্যক্রমের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল সে সব কোম্পানি ও শিল্পের ওপর এই সীমা সরাসরি ও নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলবে।

মাত্র ১০ শতাংশ কর পরিশোধের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার জন্য নির্বিচারে সুযোগ দেয়ায় এমসিসিআই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আমরা অতীতে দেখেছি যে, কালো টাকা সাদা করার এমন সুযোগ খুব বেশি ফল দেয়নি, যদিও অকারণে আমাদের আর্থিক এবং অ্যাকাউন্টিং চর্চার সততা সম্পর্কে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। লাভক্ষতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, এতে প্রায় কোন লাভই নেই। এটি নিয়মিত করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং বস্তুত তাদের শাস্তি প্রদানের শামিল। যদি এই সুযোগ দিতেই হয় কেবল তাদেরকেই দেয়া উচিত যাদের আয় বৈধ কিন্তু কোনভাবে সেটি অপ্রদর্শিত রয়ে গেছে। এই সুযোগ কেবল নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে দেয়া যেতে পারে, যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বৃদ্ধি, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি রূপান্তর, ইত্যাদি। ইতোমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়া পুঁজিবাজারে এই কালো টাকা বিনিয়োগের অনুমতি দিলে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখার অনুমতি দিলে তাতে আন্তর্জাতিক মানি-লন্ডারিং আইন ও নীতিসমূহ ভঙ্গ হতে পারে; যা বাংলাদেশি ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ব্যাংকসমূহের সঙ্গে লেনদেনে বাধা সৃষ্টি করবে, যেটি অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে। কোন ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে এই জাতীয় অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতে অবশ্যই অনুমোদন দেয়া উচিত হবে না।

লেনদেন করার সময় চালানে বেশি মূল্য দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) ও চালানে কম মূল্য দেখানোর (আন্ডার ইনভয়েসিং) জন্য বাজেটে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে যা প্রশংসাযোগ্য। অথচ, কিছু অসাধু ব্যক্তি কর্তৃক দেশের বাইরে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের প্রমাণিত ঘটনা থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না, এমনকি স্থানান্তরিত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। যাহোক, নতুন এই বিধান প্রবর্তনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রকৃত লেনদেনে এমনকি আমদানি-রপ্তানির ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হতে পারে যা কিনা যেকোন মূল্যে পরিহার করা উচিত।

এসএমই পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কিছু কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বাজেটে করহার কমানো হয়েছে। এসএমইকে সুরক্ষা দিতে আমদানির ক্ষেত্রে কিছু পণ্যের (যেমন- নেইলস, স্ক্রু, ছোট মেশিনারি যন্ত্রাংশ, ইত্যাদি) ওপর শুল্ক ও কর বাড়ানো হয়েছে। এটি প্রশংসাযোগ্য, তবে দীর্ঘমেয়াদে এই খাতের উন্নয়নে উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে নীতিমালা প্রয়োজন।

চলমান মহামারীর কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এখনও অনিশ্চিত। সুতরাং, এমসিসিআই মনে করে, ৩ মাস পর বাজেটের একটি অন্তর্বর্তীকালীন মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন এবং পরবর্তী বছরে প্রত্যেক ৩ মাসে তা হওয়া দরকার যাতে করে চলমান প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট নতুন করে সাজানো ও সংশোধন করা যায়। যেহেতু এই মহামারীর প্রভাবে সমাজে এবং অর্থনীতিতে সামনে আরও অনেক অজানা বিষয় মোকাবিলা করতে হবে, সেহেতু সময় এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই বিষয়গুলো মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় নমনীয়তাও থাকতে হবে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে এমসিসিআই আশাবাদী যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও তার পুরো দলের যথাযথ কার্যক্রমের মাধ্যমে খুব দ্রুতই বাংলাদেশ তার পূর্বের অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হবে। এমসিসিআই দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়নে এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভে বরাবরের মতোই তার পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

নিহাদ কবির, ব্যারিস্টার

সভাপতি

ঢাকা, ১৩ জুন ২০২০

সোমবার, ১৫ জুন ২০২০ , ১ আষাঢ় ১৪২৭, ২২ শাওয়াল ১৪৪১

২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট

বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি না হলে সুফলবঞ্চিত হবে জনগণ

এমসিসিআই’র প্রতিক্রিয়া

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উপস্থাপিত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) বলেছে, বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে না পারলে সুফল বঞ্চিত হবে জনগণ। এমসিসিআই’র সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বাজেট সম্পর্কে দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া সংবাদ মাধ্যমকে জানান। এমসিসিআই’র বাজেট প্রতিক্রিয়া হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো।

১১ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার মহান জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করার জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এমপি, মহোদয়কে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকার (এমসিসিআই) পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। গত পাঁচ মাস যাবত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পুরোপুরিভাবে দেশের এবং বৈশ্বিক সামাজিক ও বিজনেস ইকোসিস্টেম পাল্টে দিয়েছে। যেহেতু এই ভাইরাসের এখনও কোন ওষুধ এবং চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি সেহেতু সামাজিক এবং কাজকর্ম সংশ্লিষ্ট মুখোমুখি যোগাযোগের নিয়মকানুনগুলো আরও কিছু সময় অপরিবর্তিত থাকবে। যেহেতু খুব তাড়াতাড়ি পুরোদমে যোগাযোগ চালু হচ্ছে না, সেহেতু অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরও সময় লাগবে। এই বছরের বাজেটটি বিগত বছরের বাজেটগুলোর মতো সাধারণ বাজেট নয়। ২০২১ অর্থবছরের এই বাজেটের মাধ্যমে যেকোন মূল্যে মানুষের জীবন ও জীবিকাকে গ্রহণযোগ্য স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বাজেট ঘাটতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। ব্যবসায়-সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই বাজেটে যথাসম্ভব জনগণের স্বাস্থ্য ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। সামগ্রিক অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। এর পরে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর চারটি মূলকৌশলের উপর ভিত্তি করে বাজেটটি তৈরি হতে পারে। মূল কৌশলগুলো হলো- ১। অত্যাবশ্যকীয় খাতগুলোতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা এবং বিলাসী পণ্যের ব্যয় নিরুৎসাহিত করা, ২। প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে ঋণ সুবিধা উন্মুক্ত করা, ৩। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিসর বৃদ্ধি করা এবং ৪। প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্যখাত, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীও অন্যান্য খাতের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধিকরণ।

২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের (৫,২৩,১৯০ কোটি টাকা) চেয়ে ৮.৫৬ শতাংশ বেশি এবং বিগত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৫,০১,৫৭৭ কোটি টাকা) তুলনায় ১৩.২৪ শতাংশ বেশি। এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটটি সম্ভাব্য জিডিপি (৩১,৭১,৮০০ কোটি টাকা) এর ১৭.৯১ শতাংশ।

কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যখাত এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলোর পরিসর বাড়ানো, এই বিষয়গুলোর প্রতি অগ্রাধিকার দেয়ায় চেম্বার মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। এমসিসিআই মনে করছে যে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হারানো কর্মসংস্থানগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এবং শ্রমবাজারের বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ থাকা জরুরি ছিল। এছাড়াও যারা বাধ্য হয়ে বিদেশ থেকে ফিরেছেন তাদের জীবিকার জন্যও প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ থাকবে বলে এমসিসিআই প্রত্যাশা করে। যদিও উপরোল্লেখিত অগ্রাধিকার খাতসমূহে যুক্তিসঙ্গত হারে আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, তবুও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতার এবং কর্মপরিবেশের বিষয়টি বিবেচনা করে বাজেটে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকা উচিত ছিল। সরকার যদি এই বরাদ্দের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন-সক্ষমতা বৃদ্ধি না করতে পারে তাহলে জনগণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এইরকম সংকটকালীন সময়ে স্বাস্থ্যখাতের সুশাসনের দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।

এমসিসিআই মনে করে, আর্থিক ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে সহজেই অনুমেয় যে, কোভিড-১৯ সৃষ্ট বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আগামী বছরটি বাংলাদেশের তথা সারাবিশ্বের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন সময় হবে। এই কঠিন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে কর ও অন্যান্য প্রশাসনিক সুবিধা প্রধান করাতে, সরকারের জন্য কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণ করার কাজটিও কঠিন হবে। চলতি অর্থবছরে এনবিআর কর্তৃক আদায়যোগ্য রাজস্ব ২৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে কমে যেতে পারে। তৎসত্ত্বেও ঘোষিত বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৮.৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা এনবিআরের পক্ষে অর্জন করা অত্যধিক কঠিন হবে। ফলশ্রুতিতে, যথাযথভাবে কর প্রদান করে আসা প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর পুনরায় এনবিআর কর্তৃক করের আদায়ে অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে কর প্রশাসন ব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য এবং রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্তে সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কোন ধরনের দিকনির্দেশনা লক্ষ্য করা যায়নি। এমসিসিআই সবসময় কর-প্রশাসনের অর্থবহ কাঠামোগত পরিবর্তনের পক্ষে পরামর্শ দিয়ে আসছে যাতে করে তারা দক্ষতার সঙ্গে রাজস্ব আহরণের কাজটি করতে পারে। বিদ্যমান কাঠামোগত ব্যবস্থায় করযোগ্য উচ্চ আয়ের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ কর-জালের বাইরে রয়েছে, অন্যদিকে যথাযথভাবে কর পরিশোধ করে আসা কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের উপর একের পর এক করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে এক লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে যা জিডিপির ৬ শতাংশ। বিগত অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এই ঘাটতি ছিল ১,৫৩,৫০৮ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫.৫ শতাংশ এবং মূলবাজেটে এই ঘাটতি ছিল ১,৪৫,৩৮০ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫ শতাংশ। যেহেতু অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের বিপত্তি ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও আরও বিপত্তি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে, সেহেতু এই বাজেট ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে। বিগত কয়েক বছরে যথাযথ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার (সধপৎড়-বপড়হড়সরপ সধহধমবসবহঃ) কারণে সরকার ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ ৫ শতাংশের কাছে রাখতে পেরেছে যা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার এবং তা বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি করার স্থান তৈরি করে দিয়েছে। একইভাবে যদি শক্ত হাতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো যায় এবং অপচয় রোধ করা যায় তাহলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।

অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আহরণের এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রার কারণে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উন্নয়নসহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণের চেষ্টা অথবা বিভিন্ন উদ্ভাবনী অর্থায়নের (যেমন বন্ড ইস্যু করা) সুযোগ থেকে সরকারের মনোযোগ সরে যেতে পারে, বা তারাও আমাদের প্রয়োজনকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিতে পারে। সরকারের কূটনৈতিক সক্ষমতা ব্যবহার করে কোভিড আক্রান্ত দেশগুলোর জন্য গঠিত ফান্ড এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য জোর যোগাযোগ শুরু করা উচিত বলে এমসিসিআই মনে করে, যাতে করে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে অর্থসংগ্রহের জন্য খুব বেশি চাপ না থাকে।

সরকার ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৪,৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করছে যা কিনা বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার (৮২,৪২১ কোটি টাকা) চেয়ে কিছুটা বেশি। ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ সংগ্রহের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে করে এর কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত না হয়। ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অর্থমন্ত্রীর কঠিন হতে পারে, যদি না ব্যাংকিং খাতে যথার্থ তারল্য বিদ্যমান থাকে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কোভিড পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকগুলোকে ১,০১,১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে এবং মন্দ-ঋণ উদ্ধারে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংক, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে যাতে করে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানসমূহের হাতে এই অর্থ সরবরাহ যথাযথভাবে নিশ্চত করা যায়।

২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বেসরকারি বিনিয়োগ এবং প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। উচ্চ প্রবৃদ্ধির একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো বেশি পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। এমসিসিআই বিশ্বাস করে যে, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলেই কেবলমাত্র বাজেটের সুফল দৃশ্যমান হবে। বিশেষ করে এই মহামারীর সময়ে যেসব বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এই বাজেটে প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, হালকা প্রকৌশলখাতসমূহে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ লক্ষ্য করা গেছে। শুধুমাত্র কর সুবিধা প্রদান করলেই অন্যান্য দেশ থেকে বিদেশি বিনিয়োগ চলে আসবে না। এই বাজেটে ব্যবসা সহজীকরণ, ব্যবসার খরচ ও জটিলতা নিরসনের নিমিত্তে বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রশংসিত হবে। এই জন্য ইওউঅ, ইঊতঅ এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাসমূহে যথাযথ অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে তারা উদ্ভাবনী কার্যক্রম পরিচালনা করে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। বর্তমান এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমরা দেখেছি যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের যথাযথ দক্ষতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের পুনর্বিন্যাসে এই অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি।

রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির অপ্রত্যাশিত নিম্নগতির কারণে বর্তমান অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ হতে কমে ৫.২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে যা আমরা বাস্তবসম্মত বলে মনে করি। যাই হোক, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ নির্ধারণ করা সম্ভবত খুবই উচ্চাভিলাষী বলে আমরা মনে করি। এমসিসিআই মনে করছে এই কঠিন সময়ে জনগণের সামাজিক এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এর পরিবর্তে উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত নয়। যদি অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধির জন্য যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে আবারো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অন্যান্য ইন্ডিকেটরগুলো দ্রুত পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে। এমসিসিআই লক্ষ্য করছে যে মুদ্রাস্ফীতির হার বর্তমানে সহনীয় পর্যায়ে (৫.৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত ৫.৩৫ শতাংশ) রয়েছে এবং প্রস্তাবিত বাজেটে তা ৫.৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। যাই হোক, মহামারী পরবর্তী অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য অভ্যস্তরীণ সামষ্টিক চাহিদা বৃদ্ধি করতে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। এমসিসিআই বিশ্বাস করে যে, এই পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি প্রণয়ন করলেও মূল্যস্ফীতি খুব একটা বাড়বে না।

২০২০-২১ অর্থবছরে ২০৫, ১৪৫ কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেয়ায় চেম্বার সাধুবাদ জানাচ্ছে, যা বর্তমান অর্থবছরে (২০২,৭২১ কোটি টাকা) প্রকৃত বরাদ্দের চেয়ে ১.২ শতাংশ বেশি এবং ২০ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (১৯২,৯২১ কোটি টাকা) চেয়ে ৬.৩৪ শতাংশ বেশি। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন, তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তহবিলের দক্ষ কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এমসিসিআই সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছে।

বর্তমান অর্থবছরে সংশোধিত বরাদ্দ ১২৩,৮৯৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে আসছে বাজেটে ১৪০,২২২ কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে মানবসম্পদ (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ) খাতে অগ্রাধিকার প্রদান করায় এমসিসিআই আনন্দিত। এমসিসিআই মনে করে, স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা তাদের সামর্থ্যরে বিচারে যৌক্তিক। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দকৃত সম্পদ ব্যবহার করার জন্য জরুরিভিত্তিতে স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করছি, যাতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব কমানো যায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের কাছে মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া যায়। এই ধরনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ব্যতিরেকে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি কাক্সিক্ষত ফলাফল আনবে না। ২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত বরাদ্দের চেয়ে প্রায় ৪,২৭৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে স্বস্থ্য, জন ও পরিবার কল্যাণ খাতে আসছে বাজেটে ২২,৮৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এমসিসিআই মনে করে, এই বরাদ্দ বর্তমান সময়ে যথেষ্ট নয়। এই তহবিল যথাযথভাবে ব্যবহারের জন্য এবং উপযুক্ত পর্যায়ে মানসম্পন্ন ও যথেষ্টমাত্রায় প্রয়োজনীয় সেবা সরবরাহ করার জন্য ব্যক্তিগত সামর্থ্য ও সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য দেশে দক্ষ জনশক্তি অবশ্যই প্রয়োজন। পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নে (শিক্ষা) ৫.১১ শতাংশ বেশি বরাদ্দকৃত অর্থ অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে, যাতে দেশের সম্ভাবনাময় বিশাল অদক্ষ বা স্বল্প-দক্ষ শ্রমশক্তি প্রশিক্ষণ পেতে পারে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা বৃদ্ধি বা রি-স্কিল্ডকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা যায়। মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতের আওতায় জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিলে অন্য উৎস থেকে বিশেষ বরাদ্দের জন্য এমসিসিআই জোর দাবি জানাচ্ছে। এই কার্যক্রমে বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।

কৃষিখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে এই খাতের বরাদ্দ বর্তমান সংশোধিত বাজেটের ১২,৯৫২ কোটি টাকা থেকে ২৬.৯১ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৬,৪৩৭ কোটি টাকা করা হয়েছে, যার জন্য এমসিসিআই সাধুবাদ জানাচ্ছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ব্যয় কমাতে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং নতুন দক্ষতা ও প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে সরকার কৃষি খাতের আধুনিকায়ন নিশ্চিত করবে।

করপোরেট করহার কমানোর সিদ্ধান্তকে সঠিক দিকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এমসিসিআই প্রশংসা করছে। এই কঠিন সময়ে এমন পদক্ষেপ বহু কাক্সিক্ষত স্বস্তি আনবে। যাহোক প্রস্তাবিত বাজেট অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির বর্তমান করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩২.৫ শতাংশ করেছে এবং পাবলিক কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখেছে। দেশের বেশির ভাগ করপোরেট স্বত্বা অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি, তাদের এই উচ্চ করহার সেই সঙ্গে ডিভিডেন্ডের উপর কর আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় করহার বিষয়ে বাংলাদেশকে অনাকর্ষী ব্যবসা গন্তব্য করে তুলেছে। আমরা আশা করি, পরবর্তী কয়েক বছরে করপোরেট করহার কমানোর এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তৈরি পোশাক খাতের গ্রিন বিল্ডিং সনদপ্রাপ্ত কারখানার জন্য বিশেষ করহার ১০ শতাংশ পরবর্তী দুই বছর বহাল রাখা প্রশংসাযোগ্য। সেই সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট খাতকেও কর অবকাশ দেয়ার জন্য এমসিসিআই ধন্যবাদ জানাচ্ছে। এটি ডিজিটালাইজেশনে সাহায্য করবে। যাহোক এই করপোরেট করহার কমানোর পূর্ণ সুবিধা পেতে হলে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে (উৎসে কর্তিত কর) কমিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অগ্রিম আয়করের প্রভাব খুব বেশি এবং মাঝে মাঝে যথাযথ করারোপের ভিত্তিতে পরিশোধিতব্য করের চেয়েও বেশি। যাহোক অগ্রিম আয়করকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত করের দায় হিসেবে মনে করা হয় যা উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবসার ব্যয় বাড়িয়ে দেয় এবং প্রায়শই স্থায়িত্ব ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এই বিষয়ে শিল্পের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ০.৬ শতাংশ কর প্রযোজ্য যেটি নতুন কোম্পানির ক্ষেত্রে আরও একটি বোঝা, এমনকি ব্যবসা শুরুর পরপরই কার্যকর হয় যা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায় না। এটি বাতিল হওয়া উচিত বা কমপক্ষে ব্যবসা শুরুর প্রথম ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়।

কর রিটার্ন ডিজিটালভাবে দাখিল করাকে উৎসাহিতকরণে পদক্ষেপ করায় এমসিসিআই ধন্যবাদ জানাচ্ছে। যারা আয়কর রিটার্ন প্রথমবারের মতো অনলাইনে দাখিল করবে সে সব করদাতা ২ হাজার টাকা কর রেয়াত পাবে মর্মে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা নিশ্চয়ই ব্যক্তি করদাতা ও ছোট প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য উৎসাহমূলক প্রণোদনা। যেটি আয়কর বিভাগের ডিজিটাল রূপান্তর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।

ব্যক্তি করদাতার ন্যূনতম করহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ এবং ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবে সরকারি সিদ্ধান্তের এমসিসিআই প্রশংসা করছে। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর কারণে করদাতাদের এই নিম্নভাগ সামান্য হলেও স্বস্তি পাবে; যাহোক এই ধাপসমূহ পুনর্বিন্যাস প্রত্যাশিত অধিক স্বস্তি নাও দিতে পারে। মোবাইলের কল চার্জ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে কর বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি ডিজিটাল বাংলাদেশ দর্শনের বিপরীত। এই সংকটকালীন সময়ে যখন মুখোমুখি বা ব্যক্তিগত সাক্ষাত মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছে, তখন এটি পরিবারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটাবে। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার খরচ আরও বাড়াবে যা তাদের টিকে থাকার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে। কমপক্ষে আগামী অর্থবছরের জন্য এই কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ধারা ৩০(পি) এর অধীন নতুন সংযোজিত বিধান অনুসারে প্রতিষ্ঠানের কোন বিজ্ঞাপন ব্যয় প্রকাশিত টার্নওভারের ০.৫ শতাংশের বেশি হলে অ-অনুমোদিত ব্যয় হিসেবে গণ্য হবে। ফলস্বরূপ কোম্পানির কার্যকর করহার ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার কমানোর সুবিধা নস্যাৎ করবে এবং তালিকাভুক্ত ও অন্যান্য কোম্পানির জন্য অতিরিক্ত করের বোঝা তৈরি করবে। কোম্পানির বিস্তারে পণ্যের বিজ্ঞাপন ব্যয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যে সব কোম্পানি এই ধরনের বিজ্ঞাপন কার্যক্রমের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল সে সব কোম্পানি ও শিল্পের ওপর এই সীমা সরাসরি ও নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলবে।

মাত্র ১০ শতাংশ কর পরিশোধের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার জন্য নির্বিচারে সুযোগ দেয়ায় এমসিসিআই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আমরা অতীতে দেখেছি যে, কালো টাকা সাদা করার এমন সুযোগ খুব বেশি ফল দেয়নি, যদিও অকারণে আমাদের আর্থিক এবং অ্যাকাউন্টিং চর্চার সততা সম্পর্কে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। লাভক্ষতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, এতে প্রায় কোন লাভই নেই। এটি নিয়মিত করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং বস্তুত তাদের শাস্তি প্রদানের শামিল। যদি এই সুযোগ দিতেই হয় কেবল তাদেরকেই দেয়া উচিত যাদের আয় বৈধ কিন্তু কোনভাবে সেটি অপ্রদর্শিত রয়ে গেছে। এই সুযোগ কেবল নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে দেয়া যেতে পারে, যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বৃদ্ধি, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি রূপান্তর, ইত্যাদি। ইতোমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়া পুঁজিবাজারে এই কালো টাকা বিনিয়োগের অনুমতি দিলে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখার অনুমতি দিলে তাতে আন্তর্জাতিক মানি-লন্ডারিং আইন ও নীতিসমূহ ভঙ্গ হতে পারে; যা বাংলাদেশি ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ব্যাংকসমূহের সঙ্গে লেনদেনে বাধা সৃষ্টি করবে, যেটি অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে। কোন ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে এই জাতীয় অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতে অবশ্যই অনুমোদন দেয়া উচিত হবে না।

লেনদেন করার সময় চালানে বেশি মূল্য দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) ও চালানে কম মূল্য দেখানোর (আন্ডার ইনভয়েসিং) জন্য বাজেটে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে যা প্রশংসাযোগ্য। অথচ, কিছু অসাধু ব্যক্তি কর্তৃক দেশের বাইরে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের প্রমাণিত ঘটনা থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না, এমনকি স্থানান্তরিত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। যাহোক, নতুন এই বিধান প্রবর্তনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রকৃত লেনদেনে এমনকি আমদানি-রপ্তানির ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হতে পারে যা কিনা যেকোন মূল্যে পরিহার করা উচিত।

এসএমই পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কিছু কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বাজেটে করহার কমানো হয়েছে। এসএমইকে সুরক্ষা দিতে আমদানির ক্ষেত্রে কিছু পণ্যের (যেমন- নেইলস, স্ক্রু, ছোট মেশিনারি যন্ত্রাংশ, ইত্যাদি) ওপর শুল্ক ও কর বাড়ানো হয়েছে। এটি প্রশংসাযোগ্য, তবে দীর্ঘমেয়াদে এই খাতের উন্নয়নে উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে নীতিমালা প্রয়োজন।

চলমান মহামারীর কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এখনও অনিশ্চিত। সুতরাং, এমসিসিআই মনে করে, ৩ মাস পর বাজেটের একটি অন্তর্বর্তীকালীন মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন এবং পরবর্তী বছরে প্রত্যেক ৩ মাসে তা হওয়া দরকার যাতে করে চলমান প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট নতুন করে সাজানো ও সংশোধন করা যায়। যেহেতু এই মহামারীর প্রভাবে সমাজে এবং অর্থনীতিতে সামনে আরও অনেক অজানা বিষয় মোকাবিলা করতে হবে, সেহেতু সময় এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই বিষয়গুলো মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় নমনীয়তাও থাকতে হবে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে এমসিসিআই আশাবাদী যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও তার পুরো দলের যথাযথ কার্যক্রমের মাধ্যমে খুব দ্রুতই বাংলাদেশ তার পূর্বের অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হবে। এমসিসিআই দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়নে এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভে বরাবরের মতোই তার পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

নিহাদ কবির, ব্যারিস্টার

সভাপতি

ঢাকা, ১৩ জুন ২০২০