যুক্তরাষ্ট্রে এক মাসেরও কম সময়ে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন আরও এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ। এ ঘটনার পর আটলান্টাজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। নগরীর পুলিশপ্রধান পদত্যাগ করেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। ডেইলি মেইল, রয়টার্স, বিবিসি।

সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইলের শনিবারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, গত ২৫ মে দেশটির মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনেপোলিসে ডেরেক শভিন নামের এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ৪৬ বছর বয়সী নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে ১৮ দিনের মাথায় গত শুক্রবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ -পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য জর্জিয়ার রাজধানী আটলান্টায় ওয়েন্ডি শহরের একটি ফাস্টফুডের দোকানের সামনের গাড়ি পার্কিং লটে ২৭ বছরের কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের রাইশার্ড ব্রুকসকে গুলি করে হত্যা করেন পুলিশ কর্মকর্তা গেরেট রুলফ।

এদিকে পুলিশের গুলিতে ব্রুকসের মৃত্যুর ঘটনা ভিডিওতে ধরা পড়েছে এবং এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে আরও ইন্ধন যোগাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় নতুন করে আটলান্টাজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এর জেরে পরদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নগরীর পুলিশপ্রধান এরিকা শ্লিডস পদত্যাগ করেন এবং এ ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা গেরেট রুল্ফকে আটলান্টার পুলিশ বিভাগ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ সময় তারা পাশে থাকা পুলিশ সদস্য ডেভিন ব্রনসনকে পুলিশের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দাফতরিক কাজে দেয়া হয়েছে। ব্রুকসের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করছে জর্জিয়া ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন্স (জিবিআই)। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আটলান্টার ওয়েন্ডি শহরের একটি ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁর কাছে শুক্রবার রাতে পুলিশের গুলিতে ২৭ বছর বয়সী রাইশার্ড ব্রুকস নিহত হন। জর্জিয়া ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন জানিয়েছে, ওয়েন্ডির রেস্তোরাঁর সামনে গাড়ির লাইনে অপেক্ষা করার সময় গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ব্রুকস। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। অ্যালকোহল (অথবা মাদক) পরীক্ষায় উৎরাতে ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রুকসকে হেফাজতে নেয়ার উদ্যোগ নেয় তারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজনের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, রেস্তোরাঁর সামনের রাস্তায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তি করছেন ব্রুকস এরপর মুক্ত হয়ে পার্কিং লট দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছেন, এ সময় তার হাতে পুলিশের একটি টেইজার গান ছিল বলে মনে হয়েছে।

রেস্তোরাঁর সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা দ্বিতীয় আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, দৌড়ানো অবস্থায় ঘুরে পেছনে আসা দুই পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে একজনের দিকে সম্ভবত টেইজার গান তাক করেছিলেন ব্রুকস। এ সময় ওই দুই পুলিশের মধ্যে কোন একজনের গুলিতে তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়ছেন। সেখান থেকে ব্রুকসকে হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় সামান্য আঘাত পাওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তাকেও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছ বিবিসি।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পরদিন শনিবার আটলান্টাজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এদিন আটলান্টার প্রধান একটি মহাসড়ক ‘ইন্টারস্টেট-৭৫’ বন্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা ও ফাস্টফুড চেইন ওয়েন্ডিসের ওই রেস্তোরাঁটিতে আগুন ধরিয়ে দেন।

স্থানীয় টেলিভিশনে প্রদর্শিত ছবিতে ওয়েন্ডির ওই রেস্তোরাঁয় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে, কিন্তু ঘটনাস্থলে কোন দমকল কর্মীকে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এ সময় অন্য বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে ইন্টারস্টেট-৭৫ মহাসড়কে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে পুলিশও অবস্থান করছে।

রাতে এসব ঘটনা ঘটার আগে বিকালে আটলান্টার মেয়র কেইশা লান্স বটমস জানান, ব্রুকসের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীর পুলিশ প্রধান এরিকা শিল্ডস তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি (মেয়র) তা মেনে নিয়েছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন মেয়র বটমস বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রাণঘাতী শক্তির ন্যায্য ব্যবহার হয়েছে বলে আমি মনে করি না এবং ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে বরখাস্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ ২০১৬ সাল থেকে এ নগরীর পুলিশপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন এরিকা। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আটলান্টা পুলিশ বিভাগে কাজ করছেন। এবার পুলিশ বিভাগেই অন্য দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

এদিকে নিহত ব্রুকসের আইনজীবী জানিয়েছেন, ব্রুকস এক শিশু কন্যার জনক ছিলেন। শনিবার শিশুটি তার জন্মদিন উদযাপন করছিল। ব্রুকসের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেছেন, ব্রুকস পুলিশের বিরুদ্ধে টেইজার গান ব্যবহার করলেও আটলান্টা পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার কোন অধিকার ছিল না, কারণ টেইজার প্রাণঘাতী অস্ত্র নয়।

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনের বরাতে শেষ খবর পর্যন্ত ওই গুলির ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় জানা গেছে। রাইশার্ড ব্রুকসকে গুলি করা পুলিশ কর্মকর্তার নাম গেরেট রুল্ফ। এ সময় তারা পাশে থাকা পুলিশ সদস্যের নাম ডেভিন ব্রনসন।

প্রসঙ্গত, ২৫ মে মিনিয়াপোলিস শহরে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাঁটু চাপায় ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। তারপর থেকে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পুলিশি বর্বরতা ও বর্ণবাদবিরোধী তীব্র প্রতিবাদ চলছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আটলান্টায় পুলিশের গুলিতে আরেক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হলো।