ঢাকার হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষার হালচাল

করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে এসে হাসপাতালে সেবা পাচ্ছে না মানুষ। হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া করোনার নমুনা সংগ্রহও পরীক্ষার সুযোগ নেই। আবার দু’একটি হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া বহির্বিভাগে করোনার নমুনা পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও সেটি অপ্রতুল। রাজধানীর অধিকাংশ হাসপাতালে এমন চিত্র।

রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মিলে বহির্বিভাগে কমবেশি একশ মানুষের করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগে করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার সুযোগ নেই।

গত কয়েকদিন রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শতশত মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে সকাল থেকে হাসপাতালের সামনে ভিড় করছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছে না মানুষ। করোনার নমুনা পরীক্ষার টিকিট না পেয়ে প্রতিদিন মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কারণ হাসপাতালে করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করার মানুষের চাপ বাড়লেও যথেষ্ট সক্ষমতা নেই হাসপাতালগুলোর। নমুনা পরীক্ষায় করতে এসে স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের বচসাও হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) বহির্বিভাগ করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয় না। সেখানে শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালে টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার মানুষের দীর্ঘ লাইন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত শনিবার জ্বর, সর্দি ও মাথা ব্যথা নিয়ে সকাল ১০টায় করোনা নমুনা পরীক্ষা করাতে আসেন সেলিম রেজা। ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেলেও নমুনা পরীক্ষা করতে পারেননি। গত রোববার সকালে হাসপাতালে আসতে বলা হয়। সেলিম রেজার মতো জ্বর, সর্দি, মাথা ব্যথা কিংবা কাশি নিয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে এসেছে পরীক্ষা ছাড়াই মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। গতকাল গলা ও কানের ব্যথা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন লায়লা আক্তার। তিনি বলেন, দু’দিন হাসপাতালে ঘুরে ভর্তি হতে পেরেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই তাকে করোনার টেস্ট দেয়া হয়। টেস্টে করোনা নেগেটিভ আসায় নন-কোভিডে বেডে রাখা হয় তাকে।

জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিটে করোনা রোগীর জন্য কমবেশি ৯০০ বেড আছে। হাসপাতালে আইসিইউ ২৪টি, ভেল্টিলেটর ১৪টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার ৬২৮টি, হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা ১০টি, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৩০টি ও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন সংবাদকে বলেন, হাসপাতালে করোনা নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করতে কমবেশি ৮ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। কিছু সময় দেখা যাচ্ছে, করোনা পরীক্ষার ফলাফল দেরিতে পাচ্ছেন এছাড়া অন্য কোন ভোগান্তি নেই।

ঢামেকের পরিচালক বলেন, করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে একটি মেশিন। এই মেশিনে দিনে দু’দফায় ১৯৬ জনের নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করা যায়। যা হাসপাতালের ভর্তি রোগী এবং হাসপাতালের দুই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলেই ১৯৬ জনের করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা হয়। এ জন্য বহির্বিভাগে নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করা হয় না। তবে হাসপাতালে মেশিন ও জনবল সংকট দূর হলে বহির্বিভাগে করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

একেএম নাসির উদ্দিন আরও বলেন, কোরবানি ঈদের আগ মুহূর্তে করোনা রোগী কম ছিল, এখন রোগীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। দিন কমবেশি ৭০ জন করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছেন এবং ৪২ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। বর্তমানে করোনা রোগীর নির্ধারিত ৯শ’ বেডের কমবেশি ৬৭০ জন ভর্তি থাকেন। এখানে দৈনিক কমবেশি ২ জনের মৃত্যু হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ে কিছুটা ভিন্নচিত্র মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। এই হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য বহির্বিভাগে ৫০ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। মুগদা হাসপাতালে দিনে কমবেশি ১৫০ জন মানুষের করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। এই ১৫০ জনের মধ্যে বহির্বিভাগে ৫০ জন, ভিআইপি ৫০ জন এবং হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থকর্মী ৫০ জনের করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা প্রতিদিন করা হয়। বহির্বিভাগের ৫০টি টিকিটের জন্য সকাল ৭টা থেকে মানুষ হাসপাতালের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকাল ৯টায় বহির্বিভাগে ৫০টি টিকিট দেয়া শুরু করলে আধাঘণ্টার মধ্যেই টিকিট শেষ। এতে লাইনে দাঁড়ানো বেশিরভাগ মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই বাড়ি ফিরে যান। বহির্বিভাগে সোনার হরিণ করোনার নমুনা পরীক্ষার টিকিট যাদের ভাগ্যে মিলে তারা ফের হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের নিচ তলায় লাইনে দাঁড়িয়ে নাম ও মোবাইল নাম্বার লিখাতে হয়।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বর ও সর্দি নিয়ে লাইনে দাঁড়ান পারভেজ মোশাররফ। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পাননি। তিনি বলেন, হাসপাতালের সামনের রাস্তায় কমবেশি ১৫০ জন মানুষ লাইনে দাঁড়ান। টিকিট পাওয়ার আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ৯টার সময়ে টিকিট দেয়া শুরু হলে, ৩০ মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ। পরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অধিকাংশ মানুষ ফিরে যান।

মুগদা হাসপাতালে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে বলেন, সকাল সাড়ে ৬টার পর থেকেই মানুষ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় লাইনে দাঁড়ান। টিকিট মাত্র ৫০টি, আধাঘণ্টার মধ্যেই শেষ। শতশত মানুষ নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই চলে যান। কোরবানি ঈদের পর থেকে প্রতিদিন বহির্বিভাগে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, ৫০০ শয্যা মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য ৩১৬টি বেড নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আইসিইউ ১৪টি, ভেল্টিলেটর ১০টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার ২৪৫টি, হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা ৫টি আছে। তবে অক্সিজেন কনসেলট্রেটর ও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই।

৫০০ শয্যা মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রওশন আনোয়ার সংবাদকে বলেন, করোনাভাইরাসকে মানুষ পাত্তা না দেয়ার কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতালে বেড খালি যখন রোগী আসছেন তখনই চিকিৎসা পাচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও বহির্বিভাগ মিলে একশ’ করোনা নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা এবং হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী পঞ্চাশ জনের কিছুটা বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সবমিলে দৈনিক কমবেশি ১৮০ জনের করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা সংখ্যা বাড়াতে পারলে ভালো হতো।

তিনি আরও বলেন, মানুষ ১শ’ টাকা দিয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে। কিন্তু একজন মানুষের নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার পেছনে সরকারের কমপক্ষে দুই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সরকার এই খরচ কত করবে। সামর্থ্যরে একটা ব্যাপার রয়েছে। এই ব্যয় টানতে পারছে না। হাসপাতালে ৩শ’ বেডে বর্তমানে ১৬৩ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন।

ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা নাজুক। প্রতিদিন করোনার নমুনা দিতে মানুষের চাপ বাড়ছে, দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের চাপ সামাল দিতে গিয়ে হাপিয়ে উঠছেন কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা। হাসপাতালে মানুষের চাপ থাকলেও নমুনার পরীক্ষার সক্ষমতা দিনে ১৫০ জনের বেশি করতে পারে না। এখানে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ১১৫ জন এবং চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী ৩৫ জনের দৈনিক নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

শ্যামলী থেকে আশিকুর রহমান তার ষাটোর্ধ্ব বাবাকে নিয়ে শনিবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি জানেন না, হাসপাতালে মোবাইল নাম্বার দিয়ে আগের দিন সিরিয়াল নিয়ে পরের দিন আসতে হয়। দুপুর ১২টার দিকে এসে দীর্ঘ লাইনের ভিরে সিরিয়াল নিতে পারেননি। তাই তার বাবাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরিতে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালে কেন এসেছেন জিজ্ঞেস করতেই আশিকুর রহমান রাগান্তি কণ্ঠে বলেন, হাসপাতালে মানুষ কেন আসেন জানেন না? বাবার করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য এসেছিলাম কিন্তু সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে আজকে আর সিরিয়াল দেবে না। আগামীকাল সকালে এসে সিরিয়াল নিতে হবে।

জানা গেছে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত বেড ১৭৪টি ও অক্সিজেন সিলিন্ডার ২৮০টি থাকলেও আইসিইউ, ভেল্টিলেটর, হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা, অক্সিজেন কনসেলট্রেটর নাই। তবে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে।

করোনা নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে রোগীর ভোগান্তির বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া সংবাদকে বলেন, করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য রোগীকে আগের দিন মোবাইল নাম্বারে সিরিয়াল নিতে হবে। পরের দিন সিরিয়াল অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারবেন। ২০০ শয্যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯০ জন পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি ছিল, মাঝখানে রোগী ভর্তি কমে ৬০ জনে এসেছিল, এখন দৈনিক ১৩০ জন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতালে প্রতিদিন কমবেশি ৪০ জন ভর্তি হচ্ছেন এবং ৪০ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন।

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ২০০টি বেড নির্ধারিত রয়েছে। এই হাসপাতাল করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠায়। নিজেদের নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা না থাকায় হাসপাতালে মানুষের চাপ বাড়লেও সঠিক সময়ে রিপোর্টের ফলাফল দিতে পারছে না। হাসপাতালে মানুষের ভির বাড়লেও মাত্র ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। অধিকাংশ মানুষ নমুনা পরীক্ষা ছাড়া ফিরে যাচ্ছেন। নমুনা সংগ্রহে ভোগান্তির অভিজ্ঞতা বিষয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জয়নাল মোল্লা বলেন, উত্তরা ১০ নাম্বার সেক্টর কামারপাড়া থেকে দু’দিন সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসেও নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেননি। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগে আক্ষেপ করেই বলছেন, আর কখনও তিনি হাসপাতালে আসবেন না। অনেকে আবার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারলেও ফলাফল হাতে পেতে দেরি হচ্ছে।

জানা গেছে, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ২০০টি বেড, আইসিইউ ১৬টি, ভেল্টিলেটর ২৬টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার ১২৩টি, হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা ১২টি এবং অক্সিজেন কনসেলট্রেটর ১টি আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের কোন ব্যবস্থা নেই।

এসব বিষয়ে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. একেএম সরওয়ারুল আলম সংবাদকে বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য পরীক্ষা করানোর ক্ষেত্রে সরঞ্জামাদি হাসপাতালে নেই। বুথ থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। তাও আবার দিনে ৫০ জনের বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয় না। তবে আগের তুলনায় করোনা রোগীর ভর্তি বেড়েছে। ২০০ শয্যার মধ্যে প্রতিদিন ১৭৮ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। ১৪টি আইসিইউ সব সময় রোগী ভর্তি থাকেন।

৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি চাপ খুব। সেখানে ২৫০ বেড থাকলেও করোনা রোগী ভর্তি আছেন ২৭৭ জন। অর্থাৎ বেডের তুলনায় রোগী ভর্তির সংখ্যা বেশি। হাসপাতালটি করোনা রোগীর চাপ সামাল দিতে পারছে না। সকাল ৮টা থেকে হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা ও রোগী ভর্তির চাপ বেড়ে যায়। এখানে দিনে রোগী সুস্থতার চেয়ে ভর্তির চাপ অনেক। মানুষ নমুনা পরীক্ষা করতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে এসে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান জিহাদুল ইসলাম। তার মতে, মানুষ হাসপাতালে গিয়ে নানান রকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারের কোন বিশেষ উদ্যোগ নেই। আমার মতো শত শত মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না। এটির একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া দরকার।

৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে বহির্বিভাগে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয় না। শুধু ভর্তি রোগী ও চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী মিলে দিনে ৯৪ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কারণ হাসপাতালে একজন মাইক্রোবাইলোজিস্ট ও একটি মেশিন। সেখানে একজন মাইক্রোবাইলোজিস্ট প্রথম ধাপে ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করতে পারেন। আরেকজন মাইক্রোবাইলোজিস্ট হলে দ্বিতীয় ধাপে আরও ৯৪ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে পারতেন।

জানা গেছে, ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারর্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ২৭৫ বেডের তথ্য দিলেও বাস্তবে হাসপাতালে ২৫০ বেড আছে। এখানে আইসিইউ ১০টি, ভেল্টিলেটর ৯টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার ৪৩৯টি, হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা ২২টি থাকলেও অক্সিজেন কনসেলট্রেটর ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন নেই।

ঢাকার এসব হাসপাতালে মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সংবাদকে বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে করোনার নমুনা পরীক্ষা কখনই করা হতো না। প্রতিটি হাসপাতালে করোনার টেস্ট হচ্ছে কোন সমস্যা নেই। কোন হাসপাতালে মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে না পারলে আইইডিসিআর আসতে পারেন।

বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২ মহররম ১৪৪২, ১৬ ভাদ্র ১৪২৭

ঢাকার হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষার হালচাল

ফারুক আলম

image

করোনার নমুনা সংগ্রহ -সংবাদ

করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে এসে হাসপাতালে সেবা পাচ্ছে না মানুষ। হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া করোনার নমুনা সংগ্রহও পরীক্ষার সুযোগ নেই। আবার দু’একটি হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া বহির্বিভাগে করোনার নমুনা পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও সেটি অপ্রতুল। রাজধানীর অধিকাংশ হাসপাতালে এমন চিত্র।

রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মিলে বহির্বিভাগে কমবেশি একশ মানুষের করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগে করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার সুযোগ নেই।

গত কয়েকদিন রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শতশত মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে সকাল থেকে হাসপাতালের সামনে ভিড় করছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছে না মানুষ। করোনার নমুনা পরীক্ষার টিকিট না পেয়ে প্রতিদিন মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কারণ হাসপাতালে করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করার মানুষের চাপ বাড়লেও যথেষ্ট সক্ষমতা নেই হাসপাতালগুলোর। নমুনা পরীক্ষায় করতে এসে স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের বচসাও হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) বহির্বিভাগ করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয় না। সেখানে শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালে টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার মানুষের দীর্ঘ লাইন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত শনিবার জ্বর, সর্দি ও মাথা ব্যথা নিয়ে সকাল ১০টায় করোনা নমুনা পরীক্ষা করাতে আসেন সেলিম রেজা। ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেলেও নমুনা পরীক্ষা করতে পারেননি। গত রোববার সকালে হাসপাতালে আসতে বলা হয়। সেলিম রেজার মতো জ্বর, সর্দি, মাথা ব্যথা কিংবা কাশি নিয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে এসেছে পরীক্ষা ছাড়াই মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। গতকাল গলা ও কানের ব্যথা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন লায়লা আক্তার। তিনি বলেন, দু’দিন হাসপাতালে ঘুরে ভর্তি হতে পেরেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই তাকে করোনার টেস্ট দেয়া হয়। টেস্টে করোনা নেগেটিভ আসায় নন-কোভিডে বেডে রাখা হয় তাকে।

জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিটে করোনা রোগীর জন্য কমবেশি ৯০০ বেড আছে। হাসপাতালে আইসিইউ ২৪টি, ভেল্টিলেটর ১৪টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার ৬২৮টি, হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা ১০টি, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৩০টি ও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন সংবাদকে বলেন, হাসপাতালে করোনা নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করতে কমবেশি ৮ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। কিছু সময় দেখা যাচ্ছে, করোনা পরীক্ষার ফলাফল দেরিতে পাচ্ছেন এছাড়া অন্য কোন ভোগান্তি নেই।

ঢামেকের পরিচালক বলেন, করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে একটি মেশিন। এই মেশিনে দিনে দু’দফায় ১৯৬ জনের নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করা যায়। যা হাসপাতালের ভর্তি রোগী এবং হাসপাতালের দুই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলেই ১৯৬ জনের করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা হয়। এ জন্য বহির্বিভাগে নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করা হয় না। তবে হাসপাতালে মেশিন ও জনবল সংকট দূর হলে বহির্বিভাগে করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

একেএম নাসির উদ্দিন আরও বলেন, কোরবানি ঈদের আগ মুহূর্তে করোনা রোগী কম ছিল, এখন রোগীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। দিন কমবেশি ৭০ জন করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছেন এবং ৪২ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। বর্তমানে করোনা রোগীর নির্ধারিত ৯শ’ বেডের কমবেশি ৬৭০ জন ভর্তি থাকেন। এখানে দৈনিক কমবেশি ২ জনের মৃত্যু হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ে কিছুটা ভিন্নচিত্র মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। এই হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য বহির্বিভাগে ৫০ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। মুগদা হাসপাতালে দিনে কমবেশি ১৫০ জন মানুষের করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। এই ১৫০ জনের মধ্যে বহির্বিভাগে ৫০ জন, ভিআইপি ৫০ জন এবং হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থকর্মী ৫০ জনের করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা প্রতিদিন করা হয়। বহির্বিভাগের ৫০টি টিকিটের জন্য সকাল ৭টা থেকে মানুষ হাসপাতালের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকাল ৯টায় বহির্বিভাগে ৫০টি টিকিট দেয়া শুরু করলে আধাঘণ্টার মধ্যেই টিকিট শেষ। এতে লাইনে দাঁড়ানো বেশিরভাগ মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই বাড়ি ফিরে যান। বহির্বিভাগে সোনার হরিণ করোনার নমুনা পরীক্ষার টিকিট যাদের ভাগ্যে মিলে তারা ফের হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের নিচ তলায় লাইনে দাঁড়িয়ে নাম ও মোবাইল নাম্বার লিখাতে হয়।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বর ও সর্দি নিয়ে লাইনে দাঁড়ান পারভেজ মোশাররফ। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পাননি। তিনি বলেন, হাসপাতালের সামনের রাস্তায় কমবেশি ১৫০ জন মানুষ লাইনে দাঁড়ান। টিকিট পাওয়ার আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ৯টার সময়ে টিকিট দেয়া শুরু হলে, ৩০ মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ। পরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অধিকাংশ মানুষ ফিরে যান।

মুগদা হাসপাতালে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে বলেন, সকাল সাড়ে ৬টার পর থেকেই মানুষ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় লাইনে দাঁড়ান। টিকিট মাত্র ৫০টি, আধাঘণ্টার মধ্যেই শেষ। শতশত মানুষ নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই চলে যান। কোরবানি ঈদের পর থেকে প্রতিদিন বহির্বিভাগে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, ৫০০ শয্যা মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য ৩১৬টি বেড নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আইসিইউ ১৪টি, ভেল্টিলেটর ১০টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার ২৪৫টি, হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা ৫টি আছে। তবে অক্সিজেন কনসেলট্রেটর ও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই।

৫০০ শয্যা মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রওশন আনোয়ার সংবাদকে বলেন, করোনাভাইরাসকে মানুষ পাত্তা না দেয়ার কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতালে বেড খালি যখন রোগী আসছেন তখনই চিকিৎসা পাচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও বহির্বিভাগ মিলে একশ’ করোনা নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা এবং হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী পঞ্চাশ জনের কিছুটা বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সবমিলে দৈনিক কমবেশি ১৮০ জনের করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা সংখ্যা বাড়াতে পারলে ভালো হতো।

তিনি আরও বলেন, মানুষ ১শ’ টাকা দিয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে। কিন্তু একজন মানুষের নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষার পেছনে সরকারের কমপক্ষে দুই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সরকার এই খরচ কত করবে। সামর্থ্যরে একটা ব্যাপার রয়েছে। এই ব্যয় টানতে পারছে না। হাসপাতালে ৩শ’ বেডে বর্তমানে ১৬৩ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন।

ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা নাজুক। প্রতিদিন করোনার নমুনা দিতে মানুষের চাপ বাড়ছে, দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের চাপ সামাল দিতে গিয়ে হাপিয়ে উঠছেন কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা। হাসপাতালে মানুষের চাপ থাকলেও নমুনার পরীক্ষার সক্ষমতা দিনে ১৫০ জনের বেশি করতে পারে না। এখানে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ১১৫ জন এবং চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী ৩৫ জনের দৈনিক নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

শ্যামলী থেকে আশিকুর রহমান তার ষাটোর্ধ্ব বাবাকে নিয়ে শনিবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি জানেন না, হাসপাতালে মোবাইল নাম্বার দিয়ে আগের দিন সিরিয়াল নিয়ে পরের দিন আসতে হয়। দুপুর ১২টার দিকে এসে দীর্ঘ লাইনের ভিরে সিরিয়াল নিতে পারেননি। তাই তার বাবাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরিতে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালে কেন এসেছেন জিজ্ঞেস করতেই আশিকুর রহমান রাগান্তি কণ্ঠে বলেন, হাসপাতালে মানুষ কেন আসেন জানেন না? বাবার করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য এসেছিলাম কিন্তু সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে আজকে আর সিরিয়াল দেবে না। আগামীকাল সকালে এসে সিরিয়াল নিতে হবে।

জানা গেছে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য নির্ধারিত বেড ১৭৪টি ও অক্সিজেন সিলিন্ডার ২৮০টি থাকলেও আইসিইউ, ভেল্টিলেটর, হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা, অক্সিজেন কনসেলট্রেটর নাই। তবে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে।

করোনা নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে রোগীর ভোগান্তির বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া সংবাদকে বলেন, করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য রোগীকে আগের দিন মোবাইল নাম্বারে সিরিয়াল নিতে হবে। পরের দিন সিরিয়াল অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারবেন। ২০০ শয্যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯০ জন পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি ছিল, মাঝখানে রোগী ভর্তি কমে ৬০ জনে এসেছিল, এখন দৈনিক ১৩০ জন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতালে প্রতিদিন কমবেশি ৪০ জন ভর্তি হচ্ছেন এবং ৪০ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন।

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ২০০টি বেড নির্ধারিত রয়েছে। এই হাসপাতাল করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠায়। নিজেদের নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা না থাকায় হাসপাতালে মানুষের চাপ বাড়লেও সঠিক সময়ে রিপোর্টের ফলাফল দিতে পারছে না। হাসপাতালে মানুষের ভির বাড়লেও মাত্র ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। অধিকাংশ মানুষ নমুনা পরীক্ষা ছাড়া ফিরে যাচ্ছেন। নমুনা সংগ্রহে ভোগান্তির অভিজ্ঞতা বিষয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জয়নাল মোল্লা বলেন, উত্তরা ১০ নাম্বার সেক্টর কামারপাড়া থেকে দু’দিন সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসেও নমুনা পরীক্ষা করাতে পারেননি। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগে আক্ষেপ করেই বলছেন, আর কখনও তিনি হাসপাতালে আসবেন না। অনেকে আবার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারলেও ফলাফল হাতে পেতে দেরি হচ্ছে।

জানা গেছে, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ২০০টি বেড, আইসিইউ ১৬টি, ভেল্টিলেটর ২৬টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার ১২৩টি, হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা ১২টি এবং অক্সিজেন কনসেলট্রেটর ১টি আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের কোন ব্যবস্থা নেই।

এসব বিষয়ে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. একেএম সরওয়ারুল আলম সংবাদকে বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য পরীক্ষা করানোর ক্ষেত্রে সরঞ্জামাদি হাসপাতালে নেই। বুথ থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। তাও আবার দিনে ৫০ জনের বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয় না। তবে আগের তুলনায় করোনা রোগীর ভর্তি বেড়েছে। ২০০ শয্যার মধ্যে প্রতিদিন ১৭৮ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। ১৪টি আইসিইউ সব সময় রোগী ভর্তি থাকেন।

৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি চাপ খুব। সেখানে ২৫০ বেড থাকলেও করোনা রোগী ভর্তি আছেন ২৭৭ জন। অর্থাৎ বেডের তুলনায় রোগী ভর্তির সংখ্যা বেশি। হাসপাতালটি করোনা রোগীর চাপ সামাল দিতে পারছে না। সকাল ৮টা থেকে হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা ও রোগী ভর্তির চাপ বেড়ে যায়। এখানে দিনে রোগী সুস্থতার চেয়ে ভর্তির চাপ অনেক। মানুষ নমুনা পরীক্ষা করতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে এসে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান জিহাদুল ইসলাম। তার মতে, মানুষ হাসপাতালে গিয়ে নানান রকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারের কোন বিশেষ উদ্যোগ নেই। আমার মতো শত শত মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না। এটির একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া দরকার।

৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে বহির্বিভাগে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয় না। শুধু ভর্তি রোগী ও চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী মিলে দিনে ৯৪ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কারণ হাসপাতালে একজন মাইক্রোবাইলোজিস্ট ও একটি মেশিন। সেখানে একজন মাইক্রোবাইলোজিস্ট প্রথম ধাপে ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করতে পারেন। আরেকজন মাইক্রোবাইলোজিস্ট হলে দ্বিতীয় ধাপে আরও ৯৪ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে পারতেন।

জানা গেছে, ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারর্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ২৭৫ বেডের তথ্য দিলেও বাস্তবে হাসপাতালে ২৫০ বেড আছে। এখানে আইসিইউ ১০টি, ভেল্টিলেটর ৯টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার ৪৩৯টি, হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা ২২টি থাকলেও অক্সিজেন কনসেলট্রেটর ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন নেই।

ঢাকার এসব হাসপাতালে মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন না এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সংবাদকে বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে করোনার নমুনা পরীক্ষা কখনই করা হতো না। প্রতিটি হাসপাতালে করোনার টেস্ট হচ্ছে কোন সমস্যা নেই। কোন হাসপাতালে মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে না পারলে আইইডিসিআর আসতে পারেন।