নিবন্ধনের নির্দেশ গণমাধ্যমকে সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা টিআইবির

দেশের সব অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণগুলো পৃথকভাবে নিবন্ধনের সরকারি নির্দেশনা সংবাদমাধ্যমের ওপর সরকারের সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, এই নির্দেশ মূলত গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের অপচেষ্টা বাস্তবায়নের পথে আরও এক আত্মঘাতী পদক্ষেপ। গতকাল এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা বিদ্যমান থাকার পরও আলাদা করে নিবন্ধনের এই নির্দেশ সাংবাদিকতার স্বার্থে নাকি গণমাধ্যমকে চাপে রেখে সরকার ও স্বার্থান্বেষী মহলকে সমালোচনা ও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা এ প্রশ্ন আসাটা অবান্তর নয়। সংবিধান স্বীকৃত অবাধ তথ্য প্রবাহ ও মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিতে যেখানে গণমাধ্যমগুলোকে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করাটাই প্রত্যাশিত, সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকার অবাধ তথ্য প্রবাহের সাংবিধানিক অধিকার হরণকে আইনি কাঠামোর অধীনে নিয়ে আসার একের পর এক উদ্যোগ নিচ্ছে। এটা কোনভাবেই আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না যে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যেখানে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করা হচ্ছে, সেখানে একই সঙ্গে কিভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সাহসী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করার মতো উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে!

করোনা মহামারীর সংকটকালে যখন গণমাধ্যমগুলো টিকে থাকার লড়াইয়ে, তখন খসড়া অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা চূড়ান্ত না করেই তাড়াহুড়ো করে নিবন্ধনের এই নির্দেশ রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রচেষ্টার নিদর্শন- এমন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা অনুযায়ী নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বা কমিশন গঠন চূড়ান্ত না করেই নতুন নিবন্ধনের এই নির্দেশ মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য কার্যকর হুমকি হয়ে উঠার আশঙ্কা অমূলক নয়। আবার নীতিমালায় কমিশন গঠনের কথা বলা হলেও সেই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করার কোন ক্ষমতা না থাকায় কার্যত কমিশনও সরকার- বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আজ্ঞাবহ কর্তৃপক্ষে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিও থেকে যাবে। তাই তাড়াহুড়ো না করে, সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে উন্মুক্ত আলাপ আলোচনার প্রেক্ষিতেই এ ধরনের স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে টিআইবি আশা করে।

সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অনলাইন গণমাধ্যমকে অবারিত ও উন্মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরে ড. জামান বলেন, অনলাইন গণমাধ্যমের নামে সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের সুযোগ রোধ করুন, পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমে মুক্ত সাংবাদিকতার পথটাও উন্মুক্ত রাখুন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের কষ্টার্জিত অধিকার ভূলুণ্ঠিত করবেন না। অন্যথায় অবাধ তথ্য প্রবাহ, স্বাধীন মত প্রকাশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ এসব শব্দমালা শুধু কাগুজে ঘোষণায় সীমাবদ্ধ থাকবে, যা কোন কল্যাণকামী ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিচয় হতে পারে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন পোর্টালগুলোর জন্য পৃথক নিবন্ধনের নির্দেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২ মহররম ১৪৪২, ১৬ ভাদ্র ১৪২৭

সংবাদপত্র টেলিভিশন অনলাইন পোর্টাল

নিবন্ধনের নির্দেশ গণমাধ্যমকে সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা টিআইবির

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

দেশের সব অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণগুলো পৃথকভাবে নিবন্ধনের সরকারি নির্দেশনা সংবাদমাধ্যমের ওপর সরকারের সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, এই নির্দেশ মূলত গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের অপচেষ্টা বাস্তবায়নের পথে আরও এক আত্মঘাতী পদক্ষেপ। গতকাল এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা বিদ্যমান থাকার পরও আলাদা করে নিবন্ধনের এই নির্দেশ সাংবাদিকতার স্বার্থে নাকি গণমাধ্যমকে চাপে রেখে সরকার ও স্বার্থান্বেষী মহলকে সমালোচনা ও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা এ প্রশ্ন আসাটা অবান্তর নয়। সংবিধান স্বীকৃত অবাধ তথ্য প্রবাহ ও মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিতে যেখানে গণমাধ্যমগুলোকে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করাটাই প্রত্যাশিত, সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকার অবাধ তথ্য প্রবাহের সাংবিধানিক অধিকার হরণকে আইনি কাঠামোর অধীনে নিয়ে আসার একের পর এক উদ্যোগ নিচ্ছে। এটা কোনভাবেই আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না যে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যেখানে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করা হচ্ছে, সেখানে একই সঙ্গে কিভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সাহসী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করার মতো উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে!

করোনা মহামারীর সংকটকালে যখন গণমাধ্যমগুলো টিকে থাকার লড়াইয়ে, তখন খসড়া অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা চূড়ান্ত না করেই তাড়াহুড়ো করে নিবন্ধনের এই নির্দেশ রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রচেষ্টার নিদর্শন- এমন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা অনুযায়ী নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বা কমিশন গঠন চূড়ান্ত না করেই নতুন নিবন্ধনের এই নির্দেশ মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য কার্যকর হুমকি হয়ে উঠার আশঙ্কা অমূলক নয়। আবার নীতিমালায় কমিশন গঠনের কথা বলা হলেও সেই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করার কোন ক্ষমতা না থাকায় কার্যত কমিশনও সরকার- বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আজ্ঞাবহ কর্তৃপক্ষে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিও থেকে যাবে। তাই তাড়াহুড়ো না করে, সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে উন্মুক্ত আলাপ আলোচনার প্রেক্ষিতেই এ ধরনের স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে টিআইবি আশা করে।

সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অনলাইন গণমাধ্যমকে অবারিত ও উন্মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরে ড. জামান বলেন, অনলাইন গণমাধ্যমের নামে সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের সুযোগ রোধ করুন, পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমে মুক্ত সাংবাদিকতার পথটাও উন্মুক্ত রাখুন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের কষ্টার্জিত অধিকার ভূলুণ্ঠিত করবেন না। অন্যথায় অবাধ তথ্য প্রবাহ, স্বাধীন মত প্রকাশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ এসব শব্দমালা শুধু কাগুজে ঘোষণায় সীমাবদ্ধ থাকবে, যা কোন কল্যাণকামী ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিচয় হতে পারে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন পোর্টালগুলোর জন্য পৃথক নিবন্ধনের নির্দেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছে টিআইবি।