নারায়ণগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণ

আরও ৩ জনসহ একে একে ঝরে গেল ৩১ প্রাণ

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে বিস্ফোরণে ঘটনায় দগ্ধ আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেনÑ মো. নজরুল (৫০), শেখ ফরিদ (২১) ও আবদুস ছাত্তার (৪০)। তারা তিনজনই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এ নিয়ে ওই ঘটনায় ৩১ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল এসব তথ্য জানান। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নিহত নজরুলের শরীরের ৯৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। তার পিতার নাম মো. আবদুর রাজ্জাক। বরিশালের রাঙ্গাবালী তাদের বাড়ি। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকায় থাকতেন। তিনি শ্রমিক ছিলেন। দুই ছেলে এক মেয়ের জনক ছিলেন নজরুল।

এ ঘটনায় দগ্ধ আরও ৫ জন এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। নিহত শেখ ফরিদের শরীরের ৯৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চড়ালদী গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে তিনি। মায়ের নাম খদেজা খাতুন। তিনি গফরগাঁও সরকারি ডিগ্রি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের ডিসি অফিসে মাস্টার রোলে চাকরি করতেন। বাবা কৃষি কাজ করেন। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। তার বাবা জানান, এ মাসের ১৩ তারিখে তার চাকরি স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল। লাইফ সাপোর্টে নেয়ার আগে দগ্ধ ফরিদ তার বাবাকে বলেছিলেন, বাবা আমি তো আর বাঁচব না। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই মারা যান তিনি। শুরুর দিন থেকে বাবাকে সাহস দিয়ে আসছিলেন ছেলে। এতদিন বারবারই বাবাকে বলেছেন, বাবা আমার কিছু হবে না। চিন্তা করো না। বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আজ লাইফ সাপোর্টে নেয়ার আগে আমার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন বলে কিনা বাবা আর বাঁচব না।

এদিকে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় আবদুস ছাত্তার (৪০) নামের আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় মারা যান তিনি। ভর্তির পর ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছিলেন, এ পর্যন্ত ৩৭ মুসল্লিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবারই ডিপবার্ন রয়েছে। শতাংশের হিসেবে কোন রোগীর কতটুকু বার্ন হয়েছে তা তাৎক্ষণিক বলা যাচ্ছে না। কেউ শঙ্কামুক্ত নন। এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিস একটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ একটি ও জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

গত শুক্রবার রাতে এশার নামাজের সময় ফতুল্ল­ার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে এ বিস্ফোরণ ঘটে। ফরজ নামাজের মোনাজাত শেষে অনেকে সুন্নত ও অন্য নামাজ পড়ছিলেন। তখন ছয়টি এসি বিস্ফোরিত হয়। এ সময় মসজিদের ভেতরে প্রায় ৪০ জনের মতো মুসল্লি ছিলেন। বিস্ফোরণে তাদের প্রায় সবাই দগ্ধ হন। এ ঘটনায় পাঁচজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২১ মহররম ১৪৪২, ২৩ ভাদ্র ১৪২৭

নারায়ণগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণ

আরও ৩ জনসহ একে একে ঝরে গেল ৩১ প্রাণ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে বিস্ফোরণে ঘটনায় দগ্ধ আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেনÑ মো. নজরুল (৫০), শেখ ফরিদ (২১) ও আবদুস ছাত্তার (৪০)। তারা তিনজনই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এ নিয়ে ওই ঘটনায় ৩১ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল এসব তথ্য জানান। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নিহত নজরুলের শরীরের ৯৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। তার পিতার নাম মো. আবদুর রাজ্জাক। বরিশালের রাঙ্গাবালী তাদের বাড়ি। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকায় থাকতেন। তিনি শ্রমিক ছিলেন। দুই ছেলে এক মেয়ের জনক ছিলেন নজরুল।

এ ঘটনায় দগ্ধ আরও ৫ জন এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। নিহত শেখ ফরিদের শরীরের ৯৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চড়ালদী গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে তিনি। মায়ের নাম খদেজা খাতুন। তিনি গফরগাঁও সরকারি ডিগ্রি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের ডিসি অফিসে মাস্টার রোলে চাকরি করতেন। বাবা কৃষি কাজ করেন। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। তার বাবা জানান, এ মাসের ১৩ তারিখে তার চাকরি স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল। লাইফ সাপোর্টে নেয়ার আগে দগ্ধ ফরিদ তার বাবাকে বলেছিলেন, বাবা আমি তো আর বাঁচব না। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই মারা যান তিনি। শুরুর দিন থেকে বাবাকে সাহস দিয়ে আসছিলেন ছেলে। এতদিন বারবারই বাবাকে বলেছেন, বাবা আমার কিছু হবে না। চিন্তা করো না। বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আজ লাইফ সাপোর্টে নেয়ার আগে আমার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন বলে কিনা বাবা আর বাঁচব না।

এদিকে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় আবদুস ছাত্তার (৪০) নামের আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় মারা যান তিনি। ভর্তির পর ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছিলেন, এ পর্যন্ত ৩৭ মুসল্লিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবারই ডিপবার্ন রয়েছে। শতাংশের হিসেবে কোন রোগীর কতটুকু বার্ন হয়েছে তা তাৎক্ষণিক বলা যাচ্ছে না। কেউ শঙ্কামুক্ত নন। এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিস একটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ একটি ও জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

গত শুক্রবার রাতে এশার নামাজের সময় ফতুল্ল­ার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে এ বিস্ফোরণ ঘটে। ফরজ নামাজের মোনাজাত শেষে অনেকে সুন্নত ও অন্য নামাজ পড়ছিলেন। তখন ছয়টি এসি বিস্ফোরিত হয়। এ সময় মসজিদের ভেতরে প্রায় ৪০ জনের মতো মুসল্লি ছিলেন। বিস্ফোরণে তাদের প্রায় সবাই দগ্ধ হন। এ ঘটনায় পাঁচজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।