তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় বাড়ল

সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলে সাত দিন সময় চেয়েছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি? গতকাল চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল? তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে সাত দিনের সময় চেয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি? বিষয়টি নিশ্চিত করে বেলা ১২টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সবার মতো আমরাও তদন্তে কী ফলাফল আসে তা জানতে চাচ্ছি আমরাও? কমিটির লোকজন জোরালোভাবে কাজ করছেন? কিন্তু তারা জানিয়েছেন তদন্ত শেষ করতে আরও সাত দিন সময় লাগবে? সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থা থেকেও তথ্য আনা প্রয়োজন? সেজন্য সময় চেয়েছেন তারা? একটু বিলম্ব হলেও পরিপূর্ণ প্রতিবেদন আসুক সেটা আমরা চাই? তবে যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে?

তবে গত তিন দিন মাটি খোঁড়াখুঁড়ির পর তিতাস কোম্পানির পুরো লাইন উন্মুক্ত করা হলে মসজিদসংলগ্ন গ্যাস লাইনে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়? বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎসারিত আগুন এবং লিকেজগুলো থেকে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হওয়া গ্যাসের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র? তিতাসের কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে মসজিদ নির্মাণের সময় গ্যাস লাইনে লিকেজ হয়েছে? মসজিদে দুটি বৈদ্যুতিক সংযোগের মধ্যে একটি অবৈধ বলেও জানিয়েছেন তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা?

গত বুধবার পূর্ব ও উত্তর পাশের সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চালিয়ে তিতাস গ্যাসের প্রধান ও সংযোগ লাইনগুলো উন্মুক্ত করা হয়। মসজিদের উত্তর পাশের সংযোগ লাইনে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। লিকেজগুলো বন্ধ করে মসজিদের মেঝে পানি দিয়ে পূর্ণ করে গ্যাস পুনরায় সরবরাহ চালু করে পরীক্ষা করা হয়। পর্যবেক্ষণে মসজিদের ভেতরের মেঝেতে গ্যাসের কোন বুদবুদ পাওয়া যায়নি। এ সময় তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎপন্ন আগুনের ফুলকি (স্পার্ক) এবং লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতরে জমা হওয়া গ্যাস এই দুই মিলে ভয়াবহ বিস্ফোরণটি হয়েছে। মসজিদের পাশেই গ্যাস লাইনে লিকেজ খুঁজে পাওয়ার পর বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের গঠিত দুই তদন্ত কমিটিরই সদস্য নারায়ণগগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন। জানতে চাইলে সংবাদকে তিনি বলেন, ‘পুরো গ্যাস লাইন উন্মুক্ত করে ছয়টি লিকেজ পাওয়া গেছে। এই লিকেজগুলো থেকেই মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়েছিল। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট স্পার্ক এবং জমা হওয়া গ্যাসেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে।’

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজের সময় বায়তুস সালাহ জামে মসজিদের ভেতর ঘটে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই মৃত্যুকূপে পরিণত হয় মসজিদটি। ঘটনাস্থলে দগ্ধ হন ৪২ জন। গুরুতর দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ২৯ জন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। কেবল মামুন নামে এক পোশাক শ্রমিক বেঁচে ফেরেন। হাসপাতালে ভর্তি অন্যদের অবস্থাও সংকটাপন্ন। নিহত সবার আত্মার প্রতি মাগফিরাত কামনা করেছেন জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন? হতাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান তিনি?

মামলার তদন্তে সিআইডিতে

বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় থানায় দায়ের করা পুলিশের মামলাটি অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক বাবুল হোসেনের নেতৃত্বে সিআইডির একটি দল গতকাল বিস্ফোরণ সংঘটিত হওয়া মসজিদের আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মসজিদটি তালাবদ্ধ থাকায় এবং চাবি না পাওয়ায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি দলটি। তবে স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে সিআইডি কর্মকর্তাদের।

ঘটনার পরদিন শনিবার দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির পরিদর্শক বাবুল হোসেন বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। শুরু থেকেই আমরা ছায়া তদন্ত করেছি। মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তরের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্ত শেষে অপরাধী চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনব। আজ সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসবেন বলে জানান বাবুল হোসেন।

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২১ মহররম ১৪৪২, ২৩ ভাদ্র ১৪২৭

নারায়ণগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণ

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় বাড়ল

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলে সাত দিন সময় চেয়েছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি? গতকাল চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল? তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে সাত দিনের সময় চেয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি? বিষয়টি নিশ্চিত করে বেলা ১২টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সবার মতো আমরাও তদন্তে কী ফলাফল আসে তা জানতে চাচ্ছি আমরাও? কমিটির লোকজন জোরালোভাবে কাজ করছেন? কিন্তু তারা জানিয়েছেন তদন্ত শেষ করতে আরও সাত দিন সময় লাগবে? সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থা থেকেও তথ্য আনা প্রয়োজন? সেজন্য সময় চেয়েছেন তারা? একটু বিলম্ব হলেও পরিপূর্ণ প্রতিবেদন আসুক সেটা আমরা চাই? তবে যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে?

তবে গত তিন দিন মাটি খোঁড়াখুঁড়ির পর তিতাস কোম্পানির পুরো লাইন উন্মুক্ত করা হলে মসজিদসংলগ্ন গ্যাস লাইনে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়? বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎসারিত আগুন এবং লিকেজগুলো থেকে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হওয়া গ্যাসের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র? তিতাসের কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে মসজিদ নির্মাণের সময় গ্যাস লাইনে লিকেজ হয়েছে? মসজিদে দুটি বৈদ্যুতিক সংযোগের মধ্যে একটি অবৈধ বলেও জানিয়েছেন তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা?

গত বুধবার পূর্ব ও উত্তর পাশের সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চালিয়ে তিতাস গ্যাসের প্রধান ও সংযোগ লাইনগুলো উন্মুক্ত করা হয়। মসজিদের উত্তর পাশের সংযোগ লাইনে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। লিকেজগুলো বন্ধ করে মসজিদের মেঝে পানি দিয়ে পূর্ণ করে গ্যাস পুনরায় সরবরাহ চালু করে পরীক্ষা করা হয়। পর্যবেক্ষণে মসজিদের ভেতরের মেঝেতে গ্যাসের কোন বুদবুদ পাওয়া যায়নি। এ সময় তিতাসের তদন্ত কমিটির প্রধান, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎপন্ন আগুনের ফুলকি (স্পার্ক) এবং লিকেজ থেকে মসজিদের ভেতরে জমা হওয়া গ্যাস এই দুই মিলে ভয়াবহ বিস্ফোরণটি হয়েছে। মসজিদের পাশেই গ্যাস লাইনে লিকেজ খুঁজে পাওয়ার পর বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের গঠিত দুই তদন্ত কমিটিরই সদস্য নারায়ণগগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন। জানতে চাইলে সংবাদকে তিনি বলেন, ‘পুরো গ্যাস লাইন উন্মুক্ত করে ছয়টি লিকেজ পাওয়া গেছে। এই লিকেজগুলো থেকেই মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়েছিল। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট স্পার্ক এবং জমা হওয়া গ্যাসেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে।’

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজের সময় বায়তুস সালাহ জামে মসজিদের ভেতর ঘটে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই মৃত্যুকূপে পরিণত হয় মসজিদটি। ঘটনাস্থলে দগ্ধ হন ৪২ জন। গুরুতর দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ২৯ জন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। কেবল মামুন নামে এক পোশাক শ্রমিক বেঁচে ফেরেন। হাসপাতালে ভর্তি অন্যদের অবস্থাও সংকটাপন্ন। নিহত সবার আত্মার প্রতি মাগফিরাত কামনা করেছেন জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন? হতাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান তিনি?

মামলার তদন্তে সিআইডিতে

বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় থানায় দায়ের করা পুলিশের মামলাটি অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক বাবুল হোসেনের নেতৃত্বে সিআইডির একটি দল গতকাল বিস্ফোরণ সংঘটিত হওয়া মসজিদের আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মসজিদটি তালাবদ্ধ থাকায় এবং চাবি না পাওয়ায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি দলটি। তবে স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে সিআইডি কর্মকর্তাদের।

ঘটনার পরদিন শনিবার দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির পরিদর্শক বাবুল হোসেন বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। শুরু থেকেই আমরা ছায়া তদন্ত করেছি। মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তরের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্ত শেষে অপরাধী চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনব। আজ সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসবেন বলে জানান বাবুল হোসেন।