বিশ্বসমাদৃত কুমিল্লার খাদি

কুমিল্লার খাদি বা খদ্দর পণ্য বাঙালির ঐতিহ্য ও চেতনাকে লালন করছে। খদ্দর শব্দটি গুজরাটি, খদ্দর থেকে খাদি। শব্দটির আভিধানিক অর্থ কার্পাস তুলা থেকে হাতে কাটা সুতা দিয়ে হাতে বোনা কাপড়। তবে এটা শুধু হাতে তৈরি কাপড় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারত বর্ষের স্বাধিকার আন্দোলন ও বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে ভারতবর্ষের সবাই বিদেশি পণ্য বর্জন করে। সে সময় খদ্দর জনপ্রিয়তা লাভ করে। তখন খাদি কাপড় তৈরি হতো রাঙ্গামাটির তুলা থেকে। গান্ধীজী প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লার অভয় আশ্রম খাদি শিল্প প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৩০ সালে কুমিল্লার বরকামতায় (বর্তমানে চান্দিনা) চরকায় কাটা সুতা ও তকলীতে কাপড় তৈরির কাজ চলতো। তৎকালে সেখানে ডায়িং মাস্টার হিসাবে কাজ করতেন চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা শৈলেন্দ্রনাথ গুহ। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর কুমিল্লা শাখা থেকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করা হলে খাদি শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসে। তবে খাদি শিল্পের এ বিপর্যয় বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৫২ সালে সমবায় আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ড. আখতার হামিদ খানের চেষ্টায় এবং তৎকালীন গভর্নর ফিরোজ খান নুনের সহযোগিতায় কুমিল্লার অভয়াশ্রমে দি খাদি অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

খাদি কাপড়ের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। দেশের চাহিদা পূরণ করে খাদি কাপড় রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে। খাদিকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতিও দেয়া হয়েছে। খাদির পোশাক যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি পরতেও আরামদায়ক।

ওসমান গনি

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৫ পৌষ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

বিশ্বসমাদৃত কুমিল্লার খাদি

image

কুমিল্লার খাদি বা খদ্দর পণ্য বাঙালির ঐতিহ্য ও চেতনাকে লালন করছে। খদ্দর শব্দটি গুজরাটি, খদ্দর থেকে খাদি। শব্দটির আভিধানিক অর্থ কার্পাস তুলা থেকে হাতে কাটা সুতা দিয়ে হাতে বোনা কাপড়। তবে এটা শুধু হাতে তৈরি কাপড় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারত বর্ষের স্বাধিকার আন্দোলন ও বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে ভারতবর্ষের সবাই বিদেশি পণ্য বর্জন করে। সে সময় খদ্দর জনপ্রিয়তা লাভ করে। তখন খাদি কাপড় তৈরি হতো রাঙ্গামাটির তুলা থেকে। গান্ধীজী প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লার অভয় আশ্রম খাদি শিল্প প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৩০ সালে কুমিল্লার বরকামতায় (বর্তমানে চান্দিনা) চরকায় কাটা সুতা ও তকলীতে কাপড় তৈরির কাজ চলতো। তৎকালে সেখানে ডায়িং মাস্টার হিসাবে কাজ করতেন চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা শৈলেন্দ্রনাথ গুহ। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর কুমিল্লা শাখা থেকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করা হলে খাদি শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসে। তবে খাদি শিল্পের এ বিপর্যয় বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৫২ সালে সমবায় আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ড. আখতার হামিদ খানের চেষ্টায় এবং তৎকালীন গভর্নর ফিরোজ খান নুনের সহযোগিতায় কুমিল্লার অভয়াশ্রমে দি খাদি অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

খাদি কাপড়ের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। দেশের চাহিদা পূরণ করে খাদি কাপড় রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে। খাদিকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতিও দেয়া হয়েছে। খাদির পোশাক যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি পরতেও আরামদায়ক।

ওসমান গনি