রংপুরে টিসিবির ডিলারদের শর্ত

দশ কেজি পচা পিয়াজ না কিনলে অন্য পণ্য বেচবে না

গুদামে আমদানি করা অর্ধকোটি টাকার নষ্ট পিয়াজ

বিভাগীয় নগরীর রংপুরে অবস্থিত টিসিবির গুদামে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের শত শত টন বিদেশ থেকে আমদানি করা নিম্নমানের পিয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই আমদানি করা পিয়াজ রংপুরে ১৫ টাকা কেজি দরে ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করতে দেয়ায় গ্রাহকরা কিনছে না।

তবে টিসিবির ডিলাররা শর্ত জুড়ে দিয়েছে ১০ কেজি পচা পিয়াজ না কিনলে কোন গ্রাহকের কাছে ভোজ্যতেল, চিনি ও ডাল বিক্রি করবে না। টিসিবির গ্রাহকদের কাছে পচা পিয়াজ কিনতে বাধ্য করার ঘটনায় গ্রাহকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

টিসিবি অফিস ও ডিলাররা জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে রংপুর নগরীর ৮টি স্থানে ট্রাকে করে পিয়াজ, ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি করছে তারা। ভোজ্য সয়াবিন তেলের দুই লিটারের বোতল ১৬০ টাকা, চিনি ও মসুর ডাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে, অন্যদিকে পিয়াজ বিক্রি করছে ১৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু ডিলাররা একজন গ্রাহক ১০ কেজি পিয়াজ না কিনলে অন্য পণ্য বিক্রি করছে না।

সরেজমিন প্রেসক্লাব এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানে ট্রাকে করে টিসিবি ডিলার মাহাতাব উদ্দিন এসব পণ্য বিক্রি করছে। ওই ডিলার নিজেই স্বীকার করেন বিদেশ থেকে আমদানি করা এই বড় সাইজের পিয়াজগুলোর বেশিরভাগই পচা। তার পরেও প্রতিটি ডিলারকে বাধ্যতামূলকভাবে একটন পিয়াজ, দেড়শ কেজি সয়াবিন তেল এবং ১শ কেজি করে চিনি ও মসুরের ডাল বরাদ্দ দিয়েছে টিসিবি।

কিন্তু পিয়াজগুলোর বেশিরভাগই পচে যাওয়ায় এবং পিয়াজের গায়ে গাছ গজিয়ে ওঠায় গ্রাহকরা তা কিনছে না। বাধ্য হয়ে তারা পিয়াজ বিক্রি করার জন্য শর্ত জুড়ে দিয়েছেন- ১০ কেজি পিয়াজ কিনলেই অন্য পণ্য বিক্রি করা হবে। শুধু তাই নয় পিয়াজের কেজি ১৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিলেও পিয়াজ কেউ নিতে চাইছে না। ওই ডিলার আরও জানান, টিসিবি রংপুর ডিপো ইনচার্জ প্রতাপ চন্দ্র এক টন করে পিয়াজ কিনতে বাধ্য করছেন, তা নাহলে অন্য পণ্য দিচ্ছেন না।

একইভাবে নগরীর শাপলা চত্বর, সিটি বাজার, সিও বাজার, লালবাগ, মর্ডান মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে একই অবস্থা। ১০ কেজি পিয়াজ কিনলেই অন্য পণ্য দেয়া হবে বলে ডিলারদের সাফ জবাব। এদিকে টিসিবি পণ্য কিনতে আসা নগরীর গুপ্তপাড়া এলাকার গৃহিনী সালেমা বেগম ও স্বপ্না জানালেন বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, চিনি ৬৫ টাকা এবং মসুর ডাল ৭০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। আর এখন বাজারে প্রচুর দেশি পিয়াজ আছে দামও ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি।

আর টিসিবি যে বিদেশ থেকে আমদানি করে যে পিয়াজ এনেছে সেগুলো প্রথমত নিম্নমানের দ্বিতীয়ত পচা। আর এসব পিয়াজ দিয়ে রান্নাও ভালো হয় না। ফলে টিসিবি ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা বললেও ৫ টাকা কেজি দাম নির্ধারণ করলেও কেউ কিনবে না।

তার ওপর ১০ কেজির স্থলে ৩/৪ কেজি হলে এবং সেই পিয়াজ ভালো হলে কেনা যেত। কিন্তু পচা এবং নষ্ট হওয়া পিয়াজ কেনা সম্ভব না। আর এভাবে আমাদের গ্রাহকদের জিম্মি করে পচা পিয়াজ কিনতে বাধ্য করাটা অমানবিক। একই কথা জানালেন মর্ডান মোড় এলাকার বাসিন্দা মাহাতাব উদ্দিন, অটোচালক সফিয়ার রহমানসহ অনেকেই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিলার স্বীকার করেছে- রংপুর নগরীর স্টেশন এলাকায় টিসিবি গোডাউনে শত শত টন বিদেশ থেকে আমদানি করা পিয়াজ পড়ে আছে। আর ২/৪ দিন পর সবগুলো পিয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে সরকারের গচ্চা যাবে লাখ লাখ টাকা। তারা আরও জানান, যখন পিয়াজের বাজার মূল্য ছিল ১শ টাকার উপরে কেজি তখন রংপুরস্থ টিসিবি ডিপো ইনচার্জ ডিলারদের বরাদ্দ দেন অনেক কম। ওই কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে শত শত টন পিয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে।

সার্বিক বিষয় জানতে টিসিবির রংপুরের ডিপো ইনচার্জ প্রতাপ চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিপুল পরিমাণ পিয়াজ তাদের গোডাউনে পড়ে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব বিক্রির স্বার্থে শর্ত দেয়া হয়েছে বলে জানান। তবে গ্রাহকদের জিম্মি করে পচা পিয়াজ বিক্রি করার আদেশ কে দিয়েছে এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।

বুধবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২০ মাঘ ১৪২৭, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

রংপুরে টিসিবির ডিলারদের শর্ত

দশ কেজি পচা পিয়াজ না কিনলে অন্য পণ্য বেচবে না

গুদামে আমদানি করা অর্ধকোটি টাকার নষ্ট পিয়াজ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

image

রংপুর : টিসিবির ট্রাক -সংবাদ

বিভাগীয় নগরীর রংপুরে অবস্থিত টিসিবির গুদামে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের শত শত টন বিদেশ থেকে আমদানি করা নিম্নমানের পিয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই আমদানি করা পিয়াজ রংপুরে ১৫ টাকা কেজি দরে ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করতে দেয়ায় গ্রাহকরা কিনছে না।

তবে টিসিবির ডিলাররা শর্ত জুড়ে দিয়েছে ১০ কেজি পচা পিয়াজ না কিনলে কোন গ্রাহকের কাছে ভোজ্যতেল, চিনি ও ডাল বিক্রি করবে না। টিসিবির গ্রাহকদের কাছে পচা পিয়াজ কিনতে বাধ্য করার ঘটনায় গ্রাহকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

টিসিবি অফিস ও ডিলাররা জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে রংপুর নগরীর ৮টি স্থানে ট্রাকে করে পিয়াজ, ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি করছে তারা। ভোজ্য সয়াবিন তেলের দুই লিটারের বোতল ১৬০ টাকা, চিনি ও মসুর ডাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে, অন্যদিকে পিয়াজ বিক্রি করছে ১৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু ডিলাররা একজন গ্রাহক ১০ কেজি পিয়াজ না কিনলে অন্য পণ্য বিক্রি করছে না।

সরেজমিন প্রেসক্লাব এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানে ট্রাকে করে টিসিবি ডিলার মাহাতাব উদ্দিন এসব পণ্য বিক্রি করছে। ওই ডিলার নিজেই স্বীকার করেন বিদেশ থেকে আমদানি করা এই বড় সাইজের পিয়াজগুলোর বেশিরভাগই পচা। তার পরেও প্রতিটি ডিলারকে বাধ্যতামূলকভাবে একটন পিয়াজ, দেড়শ কেজি সয়াবিন তেল এবং ১শ কেজি করে চিনি ও মসুরের ডাল বরাদ্দ দিয়েছে টিসিবি।

কিন্তু পিয়াজগুলোর বেশিরভাগই পচে যাওয়ায় এবং পিয়াজের গায়ে গাছ গজিয়ে ওঠায় গ্রাহকরা তা কিনছে না। বাধ্য হয়ে তারা পিয়াজ বিক্রি করার জন্য শর্ত জুড়ে দিয়েছেন- ১০ কেজি পিয়াজ কিনলেই অন্য পণ্য বিক্রি করা হবে। শুধু তাই নয় পিয়াজের কেজি ১৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিলেও পিয়াজ কেউ নিতে চাইছে না। ওই ডিলার আরও জানান, টিসিবি রংপুর ডিপো ইনচার্জ প্রতাপ চন্দ্র এক টন করে পিয়াজ কিনতে বাধ্য করছেন, তা নাহলে অন্য পণ্য দিচ্ছেন না।

একইভাবে নগরীর শাপলা চত্বর, সিটি বাজার, সিও বাজার, লালবাগ, মর্ডান মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে একই অবস্থা। ১০ কেজি পিয়াজ কিনলেই অন্য পণ্য দেয়া হবে বলে ডিলারদের সাফ জবাব। এদিকে টিসিবি পণ্য কিনতে আসা নগরীর গুপ্তপাড়া এলাকার গৃহিনী সালেমা বেগম ও স্বপ্না জানালেন বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, চিনি ৬৫ টাকা এবং মসুর ডাল ৭০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। আর এখন বাজারে প্রচুর দেশি পিয়াজ আছে দামও ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি।

আর টিসিবি যে বিদেশ থেকে আমদানি করে যে পিয়াজ এনেছে সেগুলো প্রথমত নিম্নমানের দ্বিতীয়ত পচা। আর এসব পিয়াজ দিয়ে রান্নাও ভালো হয় না। ফলে টিসিবি ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা বললেও ৫ টাকা কেজি দাম নির্ধারণ করলেও কেউ কিনবে না।

তার ওপর ১০ কেজির স্থলে ৩/৪ কেজি হলে এবং সেই পিয়াজ ভালো হলে কেনা যেত। কিন্তু পচা এবং নষ্ট হওয়া পিয়াজ কেনা সম্ভব না। আর এভাবে আমাদের গ্রাহকদের জিম্মি করে পচা পিয়াজ কিনতে বাধ্য করাটা অমানবিক। একই কথা জানালেন মর্ডান মোড় এলাকার বাসিন্দা মাহাতাব উদ্দিন, অটোচালক সফিয়ার রহমানসহ অনেকেই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিলার স্বীকার করেছে- রংপুর নগরীর স্টেশন এলাকায় টিসিবি গোডাউনে শত শত টন বিদেশ থেকে আমদানি করা পিয়াজ পড়ে আছে। আর ২/৪ দিন পর সবগুলো পিয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে সরকারের গচ্চা যাবে লাখ লাখ টাকা। তারা আরও জানান, যখন পিয়াজের বাজার মূল্য ছিল ১শ টাকার উপরে কেজি তখন রংপুরস্থ টিসিবি ডিপো ইনচার্জ ডিলারদের বরাদ্দ দেন অনেক কম। ওই কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে শত শত টন পিয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে।

সার্বিক বিষয় জানতে টিসিবির রংপুরের ডিপো ইনচার্জ প্রতাপ চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিপুল পরিমাণ পিয়াজ তাদের গোডাউনে পড়ে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব বিক্রির স্বার্থে শর্ত দেয়া হয়েছে বলে জানান। তবে গ্রাহকদের জিম্মি করে পচা পিয়াজ বিক্রি করার আদেশ কে দিয়েছে এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।