৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে যে কেউ প্রথম পর্যায়ে টিকা নিতে পারবেন

অনলাইনে টিকার নিবন্ধনে ধীরগতির কারণে এ কার্যক্রম সহজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধনের যে সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছিল, তাও শিথিল করা হয়েছে। টিকার নিবন্ধন চলমান থাকবে। একই সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, যাদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি তাদের জন্য টিকাদান কার্যক্রম উন্মুক্ত করা হয়েছে, তারা সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন। রাজধানীতে ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি টিকাদান কর্মসূচির বাস্তবায়ন মূল্যায়ন করে নিবন্ধন সহজ করার ব্যাপারে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দু’জন পরিচালক সংবাদকে জানিয়েছেন।

গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইটের (www.surokkha. gov.bd) মাধ্যমে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ গতকালও বুঝে পায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নিবন্ধন ছাড়া কেউ ভ্যাকসিন (টিকা) নিতে পারবে না, এই সিদ্ধান্ত এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে তা ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এই পর্যায়ে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ওইদিনই ‘সুরক্ষা’ ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত আটদিনে মাত্র ৮০ হাজার লোক টিকার নিবন্ধন করেছেন। ইতোমধ্যে সব জেলায় টিকাও পাঠানো হয়েছে। ৭ ফেব্রুযারি থেকে প্রতিদিন সারাদেশে দুই লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘বিকেল ৫টা নাগাদ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৮০ হাজারেরও কিছু বেশি মানুষ। তারা সবাই ফ্রন্টলাইন ফাইটার (সম্মুখসারির যোদ্ধা)।’

৫ ফেব্রুয়ারির পরও টিকার নিবন্ধন অব্যাহত থাকবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা চলমান প্রক্রিয়া, নিবন্ধন চলবে, ৫ তারিখে চলবে, ৭ তারিখে চলবে, ৮ তারিখেও চলবে। এই কার্যক্রম আরেকটু ইজি (সহজ) করা হচ্ছে, যাতে এনআইডি নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রে গিয়েও গ্রামাঞ্চলের লোকজন নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারে।’ বর্তমানে করোনার ভ্যাকসিনের নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) উন্মুক্ত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা-ব্যক্তিরা বলে আসছিলেন, টিকার নিবন্ধন করার জন্য একটি অ্যাপ ‘সুরক্ষা’ তৈরি করা হয়েছে, যা দিয়ে মোবাইল ফোনে ঘরে বসে টিকার নিবন্ধন করা যাবে। অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর দিয়ে এই অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। অ্যাপটি এখনও চালু হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত অগ্রাধিকার তালিকার জনগোষ্ঠীর অনেকেই নিবন্ধন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা যেত কী-না জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের’ (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব সংবাদকে বলেন, ‘নিবন্ধন কোন কঠিন কাজ ছিল না, এটিকে কঠিন করা হয়েছে। মূল কাজ হলো- যিনি টিকা নিতে চান, তার তথ্য চাওয়া বা রাখা। বিকল্প হিসেবে প্রতিটি টিকাকেন্দ্রে একজন বা দু’জন লোক রাখা হলেই এ কাজটি সহজে করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিবন্ধনের চেয়েও কঠিন কাজ হলো- টিকা দেয়া। অথচ জটিল করা হয়েছে নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে।’

দেশের অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই নিজে নিজে ওয়েবসাইট কিংবা ‘অ্যাপে’ গিয়ে নিবন্ধন করা সম্ভব হবে না- মন্তব্য করে ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলের লোকজন কীভাবে অনলাইনে নিবন্ধন করবে? বয়স্ক নাগরিকরা কি মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপে নিবন্ধন করতে পারবে? এসব বিষয় ভাবা হলো না কেন? তবে আমার মনে হয়, এখন তারা বুঝতে পারছে, কিছু উদ্যোগও নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা টিকাকেন্দ্রেই নিবন্ধনের ব্যবস্থা করছে। এটি না হলে টিকাদান কার্যক্রম সফল হবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ (এবিএম) খুরশিদ আলম গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, ‘টিকার জন্য নিবন্ধন করতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেয়া হবে। ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই অ্যাপটি মোবাইল ফোনে পাওয়া যাবে বলে আইসিটি মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে।’

‘সুরক্ষা’ অ্যাপ পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হয়েছে কী না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পরিচালক গতকাল সংবাদকে জানান, ‘আমরা এখনও অ্যাপ বুঝে পাইনি। এই অ্যাপের জন্য অপেক্ষায় থাকলে কর্মসূচিই বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে আমরা বিকল্প ও সহজ পন্থায় অর্থাৎ ম্যানুয়ালি টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছি।’

৭ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রথম পর্যায়ে শুক্রবার ছাড়া দুই সপ্তাহে ১২ দিন টিকা দেয়ার কথা। এ হিসাবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হবে। প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হবে।

বর্তমানে ধীরগতিতে যেভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে তাতে নির্ধারিত সময়ে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেয়া সম্ভব হবে কী-না জানতে চাইলে সরকারের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কোর কমিটির সদস্য এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘কেন হবে না? নিবন্ধন নিয়ে মানুষজন ভুল বুঝছে, এটা এখন ইজিই আছে। যাদের বয়স ৫০ এর উপর তারা করবে, যারা হাই রিস্ক গ্রুপে আছে তারা করবে, যারা ফ্রন্টলাইনার তারা করবে, কিন্তু সবাই মিলে একসঙ্গে চেষ্টা করলে তো হবে না।’

গ্রামাঞ্চলের লোকজনের জন্য টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত রাখা হবে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে যাদের বয়স ৫০-এর বেশি, সে যে পেশারই হোক তারা সরাসরি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিতে পারবে। আমাদের কর্মীরাই তাদের নিবন্ধনে সহযোগিতা করবে।’

‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট ছাড়াও বিকল্প উপায়ে নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘প্রত্যেকটি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে নিবন্ধন বুথ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২ ফেব্রেুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। গতকাল থেকেই এই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন শুরু হয়েছে।’

দু’একদিনের মধ্যে টিকার নিবন্ধনে ব্যাপক সাড়া মিলবে-আশাবাদ ব্যক্ত করে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনে উদ্বুদ্ধ করতে সারাদেশেই প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মাইকিং করা হবে। গণমাধ্যমে প্রচার ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এ অনুষ্ঠানে জানান, করোনার টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করতে না পারলে টিকাদান কেন্দ্রেও সেই ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, ‘টিকার জন্য সবাই আমাদের অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। অ্যাপে না পারলে সাহায্য নিন। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে সাহায্য নিতে পারেন। টিকাদান কেন্দ্রে এলেও আপনি ফরম ফিলাপ করে দিলে তারাই নিবন্ধন করে দেবে। কাজেই সব ব্যবস্থা আছে।’

বর্তমানে সরকারের কাছে মোট ৭০ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত সরকার। আর দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস’র ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় কেনা সাড়ে তিন কোটি ডোজের প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ পেয়েছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২১ মাঘ ১৪২৭, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত

৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে যে কেউ প্রথম পর্যায়ে টিকা নিতে পারবেন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

অনলাইনে টিকার নিবন্ধনে ধীরগতির কারণে এ কার্যক্রম সহজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধনের যে সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছিল, তাও শিথিল করা হয়েছে। টিকার নিবন্ধন চলমান থাকবে। একই সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, যাদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি তাদের জন্য টিকাদান কার্যক্রম উন্মুক্ত করা হয়েছে, তারা সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন। রাজধানীতে ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি টিকাদান কর্মসূচির বাস্তবায়ন মূল্যায়ন করে নিবন্ধন সহজ করার ব্যাপারে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দু’জন পরিচালক সংবাদকে জানিয়েছেন।

গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইটের (www.surokkha. gov.bd) মাধ্যমে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ গতকালও বুঝে পায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নিবন্ধন ছাড়া কেউ ভ্যাকসিন (টিকা) নিতে পারবে না, এই সিদ্ধান্ত এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে তা ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এই পর্যায়ে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ওইদিনই ‘সুরক্ষা’ ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত আটদিনে মাত্র ৮০ হাজার লোক টিকার নিবন্ধন করেছেন। ইতোমধ্যে সব জেলায় টিকাও পাঠানো হয়েছে। ৭ ফেব্রুযারি থেকে প্রতিদিন সারাদেশে দুই লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘বিকেল ৫টা নাগাদ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৮০ হাজারেরও কিছু বেশি মানুষ। তারা সবাই ফ্রন্টলাইন ফাইটার (সম্মুখসারির যোদ্ধা)।’

৫ ফেব্রুয়ারির পরও টিকার নিবন্ধন অব্যাহত থাকবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা চলমান প্রক্রিয়া, নিবন্ধন চলবে, ৫ তারিখে চলবে, ৭ তারিখে চলবে, ৮ তারিখেও চলবে। এই কার্যক্রম আরেকটু ইজি (সহজ) করা হচ্ছে, যাতে এনআইডি নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রে গিয়েও গ্রামাঞ্চলের লোকজন নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারে।’ বর্তমানে করোনার ভ্যাকসিনের নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) উন্মুক্ত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা-ব্যক্তিরা বলে আসছিলেন, টিকার নিবন্ধন করার জন্য একটি অ্যাপ ‘সুরক্ষা’ তৈরি করা হয়েছে, যা দিয়ে মোবাইল ফোনে ঘরে বসে টিকার নিবন্ধন করা যাবে। অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর দিয়ে এই অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। অ্যাপটি এখনও চালু হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত অগ্রাধিকার তালিকার জনগোষ্ঠীর অনেকেই নিবন্ধন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা যেত কী-না জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের’ (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব সংবাদকে বলেন, ‘নিবন্ধন কোন কঠিন কাজ ছিল না, এটিকে কঠিন করা হয়েছে। মূল কাজ হলো- যিনি টিকা নিতে চান, তার তথ্য চাওয়া বা রাখা। বিকল্প হিসেবে প্রতিটি টিকাকেন্দ্রে একজন বা দু’জন লোক রাখা হলেই এ কাজটি সহজে করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিবন্ধনের চেয়েও কঠিন কাজ হলো- টিকা দেয়া। অথচ জটিল করা হয়েছে নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে।’

দেশের অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই নিজে নিজে ওয়েবসাইট কিংবা ‘অ্যাপে’ গিয়ে নিবন্ধন করা সম্ভব হবে না- মন্তব্য করে ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলের লোকজন কীভাবে অনলাইনে নিবন্ধন করবে? বয়স্ক নাগরিকরা কি মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপে নিবন্ধন করতে পারবে? এসব বিষয় ভাবা হলো না কেন? তবে আমার মনে হয়, এখন তারা বুঝতে পারছে, কিছু উদ্যোগও নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা টিকাকেন্দ্রেই নিবন্ধনের ব্যবস্থা করছে। এটি না হলে টিকাদান কার্যক্রম সফল হবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ (এবিএম) খুরশিদ আলম গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, ‘টিকার জন্য নিবন্ধন করতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেয়া হবে। ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই অ্যাপটি মোবাইল ফোনে পাওয়া যাবে বলে আইসিটি মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে।’

‘সুরক্ষা’ অ্যাপ পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হয়েছে কী না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পরিচালক গতকাল সংবাদকে জানান, ‘আমরা এখনও অ্যাপ বুঝে পাইনি। এই অ্যাপের জন্য অপেক্ষায় থাকলে কর্মসূচিই বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে আমরা বিকল্প ও সহজ পন্থায় অর্থাৎ ম্যানুয়ালি টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছি।’

৭ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রথম পর্যায়ে শুক্রবার ছাড়া দুই সপ্তাহে ১২ দিন টিকা দেয়ার কথা। এ হিসাবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হবে। প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হবে।

বর্তমানে ধীরগতিতে যেভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে তাতে নির্ধারিত সময়ে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেয়া সম্ভব হবে কী-না জানতে চাইলে সরকারের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কোর কমিটির সদস্য এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘কেন হবে না? নিবন্ধন নিয়ে মানুষজন ভুল বুঝছে, এটা এখন ইজিই আছে। যাদের বয়স ৫০ এর উপর তারা করবে, যারা হাই রিস্ক গ্রুপে আছে তারা করবে, যারা ফ্রন্টলাইনার তারা করবে, কিন্তু সবাই মিলে একসঙ্গে চেষ্টা করলে তো হবে না।’

গ্রামাঞ্চলের লোকজনের জন্য টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত রাখা হবে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে যাদের বয়স ৫০-এর বেশি, সে যে পেশারই হোক তারা সরাসরি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিতে পারবে। আমাদের কর্মীরাই তাদের নিবন্ধনে সহযোগিতা করবে।’

‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট ছাড়াও বিকল্প উপায়ে নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘প্রত্যেকটি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে নিবন্ধন বুথ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২ ফেব্রেুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। গতকাল থেকেই এই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন শুরু হয়েছে।’

দু’একদিনের মধ্যে টিকার নিবন্ধনে ব্যাপক সাড়া মিলবে-আশাবাদ ব্যক্ত করে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনে উদ্বুদ্ধ করতে সারাদেশেই প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মাইকিং করা হবে। গণমাধ্যমে প্রচার ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এ অনুষ্ঠানে জানান, করোনার টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করতে না পারলে টিকাদান কেন্দ্রেও সেই ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, ‘টিকার জন্য সবাই আমাদের অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। অ্যাপে না পারলে সাহায্য নিন। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে সাহায্য নিতে পারেন। টিকাদান কেন্দ্রে এলেও আপনি ফরম ফিলাপ করে দিলে তারাই নিবন্ধন করে দেবে। কাজেই সব ব্যবস্থা আছে।’

বর্তমানে সরকারের কাছে মোট ৭০ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত সরকার। আর দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস’র ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় কেনা সাড়ে তিন কোটি ডোজের প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ পেয়েছে বাংলাদেশ।