দুই জেলায় ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া

বরগুনায় মৃত্যু ২ আক্রান্ত ৫১৭০

ডায়রিয়া ওষুধের মজুদ শেষ

দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে বরগুনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডায়রিয়া। ইতোমধ্যে দু’জনের মৃত্যু হলেও আক্রান্ত হয়েছে ৫১৭০ জন। বিগত ২০ বছরের মধ্যে ডায়রিয়ার আক্রমণে স্বাস্থ্য বিভাগ দিশেহারা। ৬টি হাসপাতাল ও কমিউনিটি সেন্টারে রোগী ঠাঁই দেয়া যাচ্ছে না।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত’ পুরো দেশ। টানা লকডাউনে দেশের মানুষ। এরমধ্যে ডায়রিয়ার আক্রমণ এলাকাবাসীর ঘুম কেড়ে নিয়েছে। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে রোগী ধরে না। ঠাঁই নিয়েছে বারান্দা, করিডোরেও। এলাকাবাসী জানান, গত ২০ বেশি সময়ের মধ্যে এ বছর বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ডায়রিয়ায় ইতোমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে চিকিৎসকদেরও। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীতে ভরে গেছে। বিপুল পরিমাণ রোগীর কারণে দেখা দিয়েছে ওষুধ সঙ্কট। পরিস্থিতি সামাল দিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজের সামর্থবানরা। এক প্রকার দয়ায় চলছে বিপুল পরিমাণ ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা। বরগুনার সিভিল সার্জন ডা.মারিয়া হাসান বলেন,বরগুনার কয়েকটি এলাকায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহের অভাবে পানি দূষিত হয়ে পড়ায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভব বেড়েছে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার থেকেও বরগুনায় ডায়রিয়ার ভয়াবহতা বেশি। অনাবৃষ্টির ফলে পানি দূষণের কারণে জেলায় বিপুল পরিমাণ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীতে ভরে গেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ জেলিয়া ইয়াসমিন বলেন, ইতোমধ্যেই বরগুনায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুজন মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়াও জেলায় ২০২১ সালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ১৭০ জন। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ২৯২ জন। তার মধ্যে সদর উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৭৪ জন, বেতাগীতে ৩৪৮ জন, আমতলীতে ২৩১ জন, বামনায় ১০৭ জন এবং পাথরঘাটা উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ১৩২ জন। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৩২১ জন।

বরগুনা সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ আল-আমিন বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৯ জন। এছাড়াও গত সাতদিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে ৩২০ জন। আর গত এক মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে চিকিৎসা নিয়েছে ৯২৮ জন। বর্তমানে নয়টি বেডের অনুকূলে বরগুনা সদর হাসপাতালে ৮০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে বলেও জানান তিনি।

বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্ববধায়ক খান সালামাত উল্লাহ্ বলেন, এখন পর্যন্ত বরগুনায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ১৮১ জন। আর বরগুনায় এই পরিমাণ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে গত এক সপ্তাহে। এছাড়াও করোনার চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে বরগুনা এখন পর্যন্ত কোন প্রাণহানি না হলেও ডায়রিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সবুজ (২৫) নামে এক যুবক জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার মতো কোন খাবার তিনি খাননি। তবে খালের পানিতে গোসল করেছিলেন। এরপর গতকাল রাত থেকে তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। বরগুনা সদর হাসপাতালের স্টোর কিপার জসিম উদ্দিন বলেন, বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ এতটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যে রোগীর চাপে সব ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আত্রান্ত রোগীদের জন্য কোনো ওষুধ এখন আর মজুদ নেই। তাই বিভিন্ন দফতর ও মানুষের কাছ থেকে এক প্রকার ভিক্ষা করে আমরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি।

বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের স্টোর কিপার আমিনুর রহমান বলেন, বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ করোনার থেকেও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যেই হাসপাতালসহ কয়েকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডায়রিয়া রোগীদের জন্য মজুদ ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, গতকাল বরগুনায় এক হাজার মিলি লিটারের তিন হাজার ও পাঁচশ মিলিলিটারের চার হাজার ব্যাগ স্যালাইন বরাদ্দ এসেছে। বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজে যোগাযোগ করে এই স্যালাইনের বরাদ্দ এনেছেন। তাই সেই স্যালাইন তার সংসদীয় আসনের বামনা, বেতাগী ও পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে বরগুনা জেলার জন্য পাঁচ হাজার মিলিলিটার স্যালাইন বরাদ্দ দেয়া হবে বলে শুনেছেন। তবে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারিনি।

দশমিনায় স্যালাইন সঙ্কট

পটুয়াখালীর দশমিনায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য স্যালাইন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। স্যালাইন না পেয়ে রোগীর স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবিকাসহ ৬৯ জন ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক রোগী। উপজেলায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণসহ তীব্র স্যালাইন সঙ্কটে। চড়া দামে ফার্মেসি থেকে স্যালাইন কিনে নিচ্ছে এমন অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, গত সাতদিনে প্রায় তিন শতাধিক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্য সেবিকাসহ ৬৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে দেড় শতাধিক মানুষ। আসন না থাকায় হাসপাতালের বারান্দায় রোগীরা বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীদের সামাল দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালে স্যালাইন সঙ্কটও রয়েছে। রোগীর স্বজনা জানান, বাহিরের ফার্মেসি থেকে চড়া দামেও স্যালাইন মিলছে না।

শহরের পাইকারি ওষুধ বিক্রেতা শামিম মোল্লা জানান, গত ৪-৫ দিন ধরে আইভি স্যালাইনের তীব্র সঙ্কট চলছে। স্যালাইনের জন্য মানুষ রাস্তায় ঘুরছে। ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চাহিদাপত্র দিয়েও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষ এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। স্যালাইনের সঙ্কট থাকায় যার পাঁচটি দরকার ছিল, তাকে একটি দিয়ে বিদায় করে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সিনিয়র নার্স মোসা. হোসনেয়ারা বেগম ও কৃষ্ণা রানী বলেন, আইভি স্যালাইন ছাড়া হাসপাতালে কোন ওষুধের সঙ্কট নেই আর গত কয়েকদিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, কোন ওষুধপত্রসহ আইভি স্যালাইনের সঙ্কট নেই। গত মঙ্গলবার দুই শ’ ও গত বুধবার এ্যাম্বুলেন্স এ যোগে পটুয়াখালী থেকে দেড় শতাধিক আইভি স্যালাইন আনা হয়।

শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১ , ১০ বৈশাখ ১৪২৮ ১০ রমজান ১৪৪২

দুই জেলায় ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া

বরগুনায় মৃত্যু ২ আক্রান্ত ৫১৭০

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরগুনা, প্রতিনিধি, দশমিনা (পটুয়াখালী)

image

বরগুনা : প্রতিদিন বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী। শয্যা না পেয়ে করিডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা -সংবাদ

ডায়রিয়া ওষুধের মজুদ শেষ

দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে বরগুনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডায়রিয়া। ইতোমধ্যে দু’জনের মৃত্যু হলেও আক্রান্ত হয়েছে ৫১৭০ জন। বিগত ২০ বছরের মধ্যে ডায়রিয়ার আক্রমণে স্বাস্থ্য বিভাগ দিশেহারা। ৬টি হাসপাতাল ও কমিউনিটি সেন্টারে রোগী ঠাঁই দেয়া যাচ্ছে না।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত’ পুরো দেশ। টানা লকডাউনে দেশের মানুষ। এরমধ্যে ডায়রিয়ার আক্রমণ এলাকাবাসীর ঘুম কেড়ে নিয়েছে। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে রোগী ধরে না। ঠাঁই নিয়েছে বারান্দা, করিডোরেও। এলাকাবাসী জানান, গত ২০ বেশি সময়ের মধ্যে এ বছর বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ডায়রিয়ায় ইতোমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে চিকিৎসকদেরও। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীতে ভরে গেছে। বিপুল পরিমাণ রোগীর কারণে দেখা দিয়েছে ওষুধ সঙ্কট। পরিস্থিতি সামাল দিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজের সামর্থবানরা। এক প্রকার দয়ায় চলছে বিপুল পরিমাণ ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা। বরগুনার সিভিল সার্জন ডা.মারিয়া হাসান বলেন,বরগুনার কয়েকটি এলাকায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহের অভাবে পানি দূষিত হয়ে পড়ায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভব বেড়েছে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার থেকেও বরগুনায় ডায়রিয়ার ভয়াবহতা বেশি। অনাবৃষ্টির ফলে পানি দূষণের কারণে জেলায় বিপুল পরিমাণ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীতে ভরে গেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ জেলিয়া ইয়াসমিন বলেন, ইতোমধ্যেই বরগুনায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুজন মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়াও জেলায় ২০২১ সালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ১৭০ জন। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ২৯২ জন। তার মধ্যে সদর উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৭৪ জন, বেতাগীতে ৩৪৮ জন, আমতলীতে ২৩১ জন, বামনায় ১০৭ জন এবং পাথরঘাটা উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ১৩২ জন। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৩২১ জন।

বরগুনা সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ আল-আমিন বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৯ জন। এছাড়াও গত সাতদিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে ৩২০ জন। আর গত এক মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে চিকিৎসা নিয়েছে ৯২৮ জন। বর্তমানে নয়টি বেডের অনুকূলে বরগুনা সদর হাসপাতালে ৮০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে বলেও জানান তিনি।

বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্ববধায়ক খান সালামাত উল্লাহ্ বলেন, এখন পর্যন্ত বরগুনায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ১৮১ জন। আর বরগুনায় এই পরিমাণ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে গত এক সপ্তাহে। এছাড়াও করোনার চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে বরগুনা এখন পর্যন্ত কোন প্রাণহানি না হলেও ডায়রিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সবুজ (২৫) নামে এক যুবক জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার মতো কোন খাবার তিনি খাননি। তবে খালের পানিতে গোসল করেছিলেন। এরপর গতকাল রাত থেকে তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। বরগুনা সদর হাসপাতালের স্টোর কিপার জসিম উদ্দিন বলেন, বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ এতটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যে রোগীর চাপে সব ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আত্রান্ত রোগীদের জন্য কোনো ওষুধ এখন আর মজুদ নেই। তাই বিভিন্ন দফতর ও মানুষের কাছ থেকে এক প্রকার ভিক্ষা করে আমরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি।

বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের স্টোর কিপার আমিনুর রহমান বলেন, বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ করোনার থেকেও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যেই হাসপাতালসহ কয়েকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডায়রিয়া রোগীদের জন্য মজুদ ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, গতকাল বরগুনায় এক হাজার মিলি লিটারের তিন হাজার ও পাঁচশ মিলিলিটারের চার হাজার ব্যাগ স্যালাইন বরাদ্দ এসেছে। বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজে যোগাযোগ করে এই স্যালাইনের বরাদ্দ এনেছেন। তাই সেই স্যালাইন তার সংসদীয় আসনের বামনা, বেতাগী ও পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে বরগুনা জেলার জন্য পাঁচ হাজার মিলিলিটার স্যালাইন বরাদ্দ দেয়া হবে বলে শুনেছেন। তবে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারিনি।

দশমিনায় স্যালাইন সঙ্কট

পটুয়াখালীর দশমিনায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য স্যালাইন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। স্যালাইন না পেয়ে রোগীর স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবিকাসহ ৬৯ জন ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক রোগী। উপজেলায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণসহ তীব্র স্যালাইন সঙ্কটে। চড়া দামে ফার্মেসি থেকে স্যালাইন কিনে নিচ্ছে এমন অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, গত সাতদিনে প্রায় তিন শতাধিক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্য সেবিকাসহ ৬৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে দেড় শতাধিক মানুষ। আসন না থাকায় হাসপাতালের বারান্দায় রোগীরা বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীদের সামাল দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালে স্যালাইন সঙ্কটও রয়েছে। রোগীর স্বজনা জানান, বাহিরের ফার্মেসি থেকে চড়া দামেও স্যালাইন মিলছে না।

শহরের পাইকারি ওষুধ বিক্রেতা শামিম মোল্লা জানান, গত ৪-৫ দিন ধরে আইভি স্যালাইনের তীব্র সঙ্কট চলছে। স্যালাইনের জন্য মানুষ রাস্তায় ঘুরছে। ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চাহিদাপত্র দিয়েও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষ এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। স্যালাইনের সঙ্কট থাকায় যার পাঁচটি দরকার ছিল, তাকে একটি দিয়ে বিদায় করে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সিনিয়র নার্স মোসা. হোসনেয়ারা বেগম ও কৃষ্ণা রানী বলেন, আইভি স্যালাইন ছাড়া হাসপাতালে কোন ওষুধের সঙ্কট নেই আর গত কয়েকদিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, কোন ওষুধপত্রসহ আইভি স্যালাইনের সঙ্কট নেই। গত মঙ্গলবার দুই শ’ ও গত বুধবার এ্যাম্বুলেন্স এ যোগে পটুয়াখালী থেকে দেড় শতাধিক আইভি স্যালাইন আনা হয়।