ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

দশদিনের যুদ্ধে আড়াইশ’ প্রাণ ক্ষয়

গাজায় দশ দিনের যুদ্ধে আড়াইশ প্রাণক্ষয়ের পর মিসরের মধ্যস্থতায় সংঘাত অবসানে রাজি হয়েছে ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনি দল হামাস। উভয় পক্ষ থেকেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে। বিবিসি ও রয়টার্স।

মিসরের প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠকে বসেছিল। বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা মিসরের প্রস্তাবিত চুক্তিতে রাজি হয়ে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, এই যুদ্ধবিরতি হবে সমঝোতার ভিত্তিতে এবং নিঃশর্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এটাই বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধ দেখতে চায় না।

ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও কখন থেকে তা কার্যকর হবে, সেটা বলেনি। তবে রয়টার্স জানিয়েছে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় বলে হামাস জানিয়েছে।

ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়াকে নিজেদের ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছে হামাস। দলটির এক নেতাকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানিয়েছে, এটা প্যালেস্টাইনি জনগণের ‘বিজয়’ এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘পরাজয়’। হামাস নেতারা এটাও বলেছেন, ঘোষণা এলেও যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুটিনাটি চূড়ান্ত না হওয়া অবধি তারা সতর্ক অবস্থায় থাকবেন।

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবুল ফাত্তাহ সিসিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি দুই পক্ষ প্রতিপালন করছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণের জন্য মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন যাচ্ছেন।

মিসরের পাশাপাশি কাতার ও জাতিসংঘ দুই পক্ষকে যুদ্ধবিরতি রাজি করানোর ভূমিকায় ছিল বলে বিবিসি জানিয়েছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও তা কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সাবেক দূত ডেনিস রোস।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, এই ধরনের যুদ্ধবিরতি স্বল্প সময়ের জন্য শান্তি আনতে পারবে হয়তো।

তার ভাষ্য, যতক্ষণ পর্যন্ত গাজার নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের হাতে রকেট থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী শান্তি সুদূরপরাহত।

তার কথার প্রতিধ্বনি পাওয়ার কথাও জানিয়েছে বিবিসি। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও গাজা থেকে রকেট হামলার খবর দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে প্যালেস্টাইনি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলার খবর।

বিধ্বস্ত গাজা : ইসরায়েলের নতুন আরব বন্ধুরা কী ভাবছে

এবার সংঘাতের শুরুটা হয়েছে ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা কয়েকটি প্যালেস্টাইনি পরিবারকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে। এরপর ইসরায়েলের ‘জেরুজালেম দিবস’ পালনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।

পূর্ব জেরুজালেমের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্যালেস্টাইনের বিভক্ত দুই অংশের একটি গাজায় দেখা দেয় বিক্ষোভ।

গত ১০ মে গাজাবাসী প্যালেস্টাইনিরা বিশেষ করে হামাস রকেট হামলার পর তার জবাবে সামরিক অভিযান শুরুর কথা জানায় ইসরায়েল।

গাজার উত্তরে হামাসের স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েল শতাধিক বিমান হামলা চালায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এর মধ্যেই প্রতিবেশী দেশ মিসর দুই পক্ষকে যুদ্ধ বন্ধে রাজি করানোর উদ্যোগ নিয়ে আসে।

ইসরায়েল সামরিক অভিযান বন্ধ করতে রাজি হচ্ছেন বলেও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

মিসরের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এর আগে রয়টার্সকে বলেছিলেন, মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার পর দুই পক্ষই নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরতি করতে রাজি হয়েছে। তবে আলোচনা এখনও চলছে। এরপর রাতে দুই পক্ষেরই রাজি হওয়ার ঘোষণা আসে।

এদিকে, দখলদারদের হামলার কারণে এবারের ঈদুল ফিতর ঠিকভাবে উদযাপন করতে পারেনি প্যালেস্টাইনি মুসলিমরা। তারপরও প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে গেছে তারা। তাই বিজয়ের সমান এই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত প্যালেস্টাইনের জনগণ। গতকাল থেকেই সেখানে চলছে বিজয়োল্লাস। আজকের দিনটি হয়ে উঠেছে তাদের ঈদের দিন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরপরই গাজা, পূর্ব জেরুজালেমসহ প্যালেস্টাইনের বিভিন্ন শহরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নানা স্লোগান দেন তারা। খুশির আতশবাজিতে আলোকিত হয়ে উঠে প্যালেস্টাইনের আকাশ।

বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, যুদ্ধবিরতির পর হামাসের নেতারা ‘বিজয় ভাষণ’ শুরু করেন ঈদের খুতবা দিয়ে। তখন মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জনতাকেও ঈদের তাকবির দিতে শোনা যায়।

ইরানি সংবাদমাধ্যম পার্স টুডের খবর অনুসারে, গাজায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা খলিল আল-হাইয়া তার ভাষণের শুরুতেই তাকবির দেন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’।

এরপর সমাবেত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ আমাদের বিজয়ের ঈদ। হে সৃষ্টিকর্তা, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনি আমাদের শত্রুদের পরাজিত করে জনগণকে বিজয় দিয়েছেন। আল কুদসকে বিজয়ী করেছেন, শেখ জাররাহকে বিজয়ী করেছেন, সব স্থানের জনগণকে বিজয় দান করেছেন।

গাজা থেকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সংবাদদাতা ইয়ুমনা আল-সায়িদও জানান, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকেই ঈদের দিনের মতো আনন্দ-উদযাপন শুরু করেছে প্যালেস্টাইনিরা।

এর আগে টানা ১১ দিন প্রাণঘাতী লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দখলদার ইসরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি হিসাব করলে প্যালেস্টাইনিদের ক্ষয়ক্ষতি কয়েকগুণ বেশি হলেও পশ্চিমা মদদপুষ্ট পরাক্রমশালী ইসরায়েলি বাহিনীকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা হামাসের জন্য বিজয়ের শামিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

হামাসের বৈদেশিক রাজনীতিবিষয়ক প্রধান খালেদ মিশ’আল বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজাভিত্তিক প্যালেস্টাইনের প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দম্ভ এবং মর্যাদা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে।

শনিবার, ২২ মে ২০২১ , ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ৯ শাওয়াল ১৪৪২

ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

দশদিনের যুদ্ধে আড়াইশ’ প্রাণ ক্ষয়

সংবাদ ডেস্ক

image

প্যালেস্টাইন ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গাজার বাসিন্দাদের অনেকে রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করে। গভীর রাতে সেøাগানে মুখোর করে তোলে চারদিক

গাজায় দশ দিনের যুদ্ধে আড়াইশ প্রাণক্ষয়ের পর মিসরের মধ্যস্থতায় সংঘাত অবসানে রাজি হয়েছে ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনি দল হামাস। উভয় পক্ষ থেকেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে। বিবিসি ও রয়টার্স।

মিসরের প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠকে বসেছিল। বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা মিসরের প্রস্তাবিত চুক্তিতে রাজি হয়ে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, এই যুদ্ধবিরতি হবে সমঝোতার ভিত্তিতে এবং নিঃশর্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এটাই বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধ দেখতে চায় না।

ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও কখন থেকে তা কার্যকর হবে, সেটা বলেনি। তবে রয়টার্স জানিয়েছে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় বলে হামাস জানিয়েছে।

ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়াকে নিজেদের ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছে হামাস। দলটির এক নেতাকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানিয়েছে, এটা প্যালেস্টাইনি জনগণের ‘বিজয়’ এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘পরাজয়’। হামাস নেতারা এটাও বলেছেন, ঘোষণা এলেও যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুটিনাটি চূড়ান্ত না হওয়া অবধি তারা সতর্ক অবস্থায় থাকবেন।

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবুল ফাত্তাহ সিসিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি দুই পক্ষ প্রতিপালন করছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণের জন্য মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন যাচ্ছেন।

মিসরের পাশাপাশি কাতার ও জাতিসংঘ দুই পক্ষকে যুদ্ধবিরতি রাজি করানোর ভূমিকায় ছিল বলে বিবিসি জানিয়েছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও তা কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সাবেক দূত ডেনিস রোস।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, এই ধরনের যুদ্ধবিরতি স্বল্প সময়ের জন্য শান্তি আনতে পারবে হয়তো।

তার ভাষ্য, যতক্ষণ পর্যন্ত গাজার নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের হাতে রকেট থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী শান্তি সুদূরপরাহত।

তার কথার প্রতিধ্বনি পাওয়ার কথাও জানিয়েছে বিবিসি। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও গাজা থেকে রকেট হামলার খবর দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে প্যালেস্টাইনি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলার খবর।

বিধ্বস্ত গাজা : ইসরায়েলের নতুন আরব বন্ধুরা কী ভাবছে

এবার সংঘাতের শুরুটা হয়েছে ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা কয়েকটি প্যালেস্টাইনি পরিবারকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে। এরপর ইসরায়েলের ‘জেরুজালেম দিবস’ পালনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।

পূর্ব জেরুজালেমের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্যালেস্টাইনের বিভক্ত দুই অংশের একটি গাজায় দেখা দেয় বিক্ষোভ।

গত ১০ মে গাজাবাসী প্যালেস্টাইনিরা বিশেষ করে হামাস রকেট হামলার পর তার জবাবে সামরিক অভিযান শুরুর কথা জানায় ইসরায়েল।

গাজার উত্তরে হামাসের স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েল শতাধিক বিমান হামলা চালায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এর মধ্যেই প্রতিবেশী দেশ মিসর দুই পক্ষকে যুদ্ধ বন্ধে রাজি করানোর উদ্যোগ নিয়ে আসে।

ইসরায়েল সামরিক অভিযান বন্ধ করতে রাজি হচ্ছেন বলেও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

মিসরের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এর আগে রয়টার্সকে বলেছিলেন, মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার পর দুই পক্ষই নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরতি করতে রাজি হয়েছে। তবে আলোচনা এখনও চলছে। এরপর রাতে দুই পক্ষেরই রাজি হওয়ার ঘোষণা আসে।

এদিকে, দখলদারদের হামলার কারণে এবারের ঈদুল ফিতর ঠিকভাবে উদযাপন করতে পারেনি প্যালেস্টাইনি মুসলিমরা। তারপরও প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে গেছে তারা। তাই বিজয়ের সমান এই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত প্যালেস্টাইনের জনগণ। গতকাল থেকেই সেখানে চলছে বিজয়োল্লাস। আজকের দিনটি হয়ে উঠেছে তাদের ঈদের দিন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরপরই গাজা, পূর্ব জেরুজালেমসহ প্যালেস্টাইনের বিভিন্ন শহরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নানা স্লোগান দেন তারা। খুশির আতশবাজিতে আলোকিত হয়ে উঠে প্যালেস্টাইনের আকাশ।

বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, যুদ্ধবিরতির পর হামাসের নেতারা ‘বিজয় ভাষণ’ শুরু করেন ঈদের খুতবা দিয়ে। তখন মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জনতাকেও ঈদের তাকবির দিতে শোনা যায়।

ইরানি সংবাদমাধ্যম পার্স টুডের খবর অনুসারে, গাজায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা খলিল আল-হাইয়া তার ভাষণের শুরুতেই তাকবির দেন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’।

এরপর সমাবেত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ আমাদের বিজয়ের ঈদ। হে সৃষ্টিকর্তা, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনি আমাদের শত্রুদের পরাজিত করে জনগণকে বিজয় দিয়েছেন। আল কুদসকে বিজয়ী করেছেন, শেখ জাররাহকে বিজয়ী করেছেন, সব স্থানের জনগণকে বিজয় দান করেছেন।

গাজা থেকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সংবাদদাতা ইয়ুমনা আল-সায়িদও জানান, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকেই ঈদের দিনের মতো আনন্দ-উদযাপন শুরু করেছে প্যালেস্টাইনিরা।

এর আগে টানা ১১ দিন প্রাণঘাতী লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দখলদার ইসরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি হিসাব করলে প্যালেস্টাইনিদের ক্ষয়ক্ষতি কয়েকগুণ বেশি হলেও পশ্চিমা মদদপুষ্ট পরাক্রমশালী ইসরায়েলি বাহিনীকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা হামাসের জন্য বিজয়ের শামিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

হামাসের বৈদেশিক রাজনীতিবিষয়ক প্রধান খালেদ মিশ’আল বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজাভিত্তিক প্যালেস্টাইনের প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দম্ভ এবং মর্যাদা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে।