বৃহত্তম মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদায় ডিম সংগ্রহকারীরা শঙ্কায় রয়েছেন। হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়ের আভাসে নতুন করে এমন শঙ্কায় মধ্যে পড়েছে ডিম সংগ্রহকারীরা। এ সময় ঘূর্ণিঝড় হলে ডিম না দেয়ার আশঙ্কা থাকবে বেশি। বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা জানায়, অন্য বছর মার্চ-এপ্রিলে কিছু কিছু বৃষ্টি হলেও এবার দেখা নেই। বৃষ্টি নামলে হালদায় মাছের আনাগোনা বাড়ে এবং মাছের পেটে ডিমের পরিপক্বতা হয়। অনুকূল পরিবেশ পেলে দ্রুত ডিম ছাড়ে মা মাছ। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এবার চলতি মে মাসের শেষ সময়েও ডিম মিলছে না।
জানা গেছে, ২৪ মে থেকে ২৮ মে পূর্ণিমা ‘জো’। এ সময় হালদাতে রুই জাতীয় মাছের ডিম দেয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ডিম সংগ্রহকারীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি ও প্রবল পাহাড়ি ঢলের। এ দুটি বিষয় এক হলেই নদীতে ডিম ছাড়বে রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছ।
জানা যায়, বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী হালদা। যেখান থেকে রুই জাতীয় মাছের সরাসরি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। চট্টগ্রামের রাউজান-হাটহাজারী উপজেলা সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীতে স্মরণাতীত কাল থেকে প্রতি বছর বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে ডিম ছাড়ে মা মাছ। হ্যাচারি পোনার চেয়ে হালদার পোনা দ্রুত বর্ধনশীল বলে এ পোনার কদর সারাদেশে। ডিম সংগ্রহকারীরা স্থানীয়ভাবে মাটির কুয়া তৈরি করে অপেক্ষায় থাকে, মা মাছ কখন ডিম ছাড়বে সে আশায়। নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে তা থেকে রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করে তারা। রেণুর আয় দিয়ে পুরো বছর জীবিকা নির্বাহ করে আহরণকারীরা।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল আমীন বলেন, ডিম দেয়া মওসুমকে সামনে রেখে হালদায় আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমি প্রতিদিন একবার হলেও হালদায় যাচ্ছি। আশা করছি এবার হালদায় বেশি ডিম মিলবে।
এদিকে অনেকটা শঙ্কার মধ্যে পড়েছে ডিম সংগ্রহকারীরা। সাধারণত এপ্রিল এবং মে মাসে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তাই ডিম সংগ্রহকারীরা খুব দ্রুততার সঙ্গে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মাটির কুয়া তৈরি, নৌকা সংগ্রহ, ডিম সংগ্রহকারী জোগাড় এবং ডিম ধরার অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছেন আহরণকারীরা। একই সঙ্গে সংস্কার করা হয়েছে সরকারি হ্যাচারিগুলো।
ডিম সংগ্রহকারী হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। ডিম সংগ্রহের জন্য এখন আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তৈরি করা হয়েছে মাটির কুয়া। নৌকা, জাল, বড় পাতিলসহ ডিম ধরার বিভিন্ন সরঞ্জামও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মে মাসের ২৪ থেকে ২৮ মে পূর্ণিমা ‘জো’তে হালদায় ডিম ছাড়তে পারে রুই জাতীয় মাছ। তবে হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়ের আভাসে নতুন করে শঙ্কার মধ্যে পড়েছে ডিম সংগ্রহকারীরা। ঘূর্ণিঝড় সংকেতে ডিম দেয় না মা মাছ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও হালদা গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, এবার হালদার পরিবেশ খুব ভালো। তুলনামূলক দূষণের পরিমাণ কম, নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। এলাকার মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তবে এ বছর এখনও কাক্সিক্ষত বৃষ্টি হয়নি। আশা করছি বৃষ্টি নামার পর অনুকূল পরিবেশ পেলে হালদায় ডিম ছাড়বে মা মাছ।
সোমবার, ২৪ মে ২০২১ , ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১১ শাওয়াল ১৪৪২
নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম
বৃহত্তম মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদায় ডিম সংগ্রহকারীরা শঙ্কায় রয়েছেন। হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়ের আভাসে নতুন করে এমন শঙ্কায় মধ্যে পড়েছে ডিম সংগ্রহকারীরা। এ সময় ঘূর্ণিঝড় হলে ডিম না দেয়ার আশঙ্কা থাকবে বেশি। বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা জানায়, অন্য বছর মার্চ-এপ্রিলে কিছু কিছু বৃষ্টি হলেও এবার দেখা নেই। বৃষ্টি নামলে হালদায় মাছের আনাগোনা বাড়ে এবং মাছের পেটে ডিমের পরিপক্বতা হয়। অনুকূল পরিবেশ পেলে দ্রুত ডিম ছাড়ে মা মাছ। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এবার চলতি মে মাসের শেষ সময়েও ডিম মিলছে না।
জানা গেছে, ২৪ মে থেকে ২৮ মে পূর্ণিমা ‘জো’। এ সময় হালদাতে রুই জাতীয় মাছের ডিম দেয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ডিম সংগ্রহকারীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি ও প্রবল পাহাড়ি ঢলের। এ দুটি বিষয় এক হলেই নদীতে ডিম ছাড়বে রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছ।
জানা যায়, বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী হালদা। যেখান থেকে রুই জাতীয় মাছের সরাসরি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। চট্টগ্রামের রাউজান-হাটহাজারী উপজেলা সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীতে স্মরণাতীত কাল থেকে প্রতি বছর বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে ডিম ছাড়ে মা মাছ। হ্যাচারি পোনার চেয়ে হালদার পোনা দ্রুত বর্ধনশীল বলে এ পোনার কদর সারাদেশে। ডিম সংগ্রহকারীরা স্থানীয়ভাবে মাটির কুয়া তৈরি করে অপেক্ষায় থাকে, মা মাছ কখন ডিম ছাড়বে সে আশায়। নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে তা থেকে রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করে তারা। রেণুর আয় দিয়ে পুরো বছর জীবিকা নির্বাহ করে আহরণকারীরা।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল আমীন বলেন, ডিম দেয়া মওসুমকে সামনে রেখে হালদায় আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমি প্রতিদিন একবার হলেও হালদায় যাচ্ছি। আশা করছি এবার হালদায় বেশি ডিম মিলবে।
এদিকে অনেকটা শঙ্কার মধ্যে পড়েছে ডিম সংগ্রহকারীরা। সাধারণত এপ্রিল এবং মে মাসে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তাই ডিম সংগ্রহকারীরা খুব দ্রুততার সঙ্গে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মাটির কুয়া তৈরি, নৌকা সংগ্রহ, ডিম সংগ্রহকারী জোগাড় এবং ডিম ধরার অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছেন আহরণকারীরা। একই সঙ্গে সংস্কার করা হয়েছে সরকারি হ্যাচারিগুলো।
ডিম সংগ্রহকারী হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। ডিম সংগ্রহের জন্য এখন আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তৈরি করা হয়েছে মাটির কুয়া। নৌকা, জাল, বড় পাতিলসহ ডিম ধরার বিভিন্ন সরঞ্জামও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মে মাসের ২৪ থেকে ২৮ মে পূর্ণিমা ‘জো’তে হালদায় ডিম ছাড়তে পারে রুই জাতীয় মাছ। তবে হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়ের আভাসে নতুন করে শঙ্কার মধ্যে পড়েছে ডিম সংগ্রহকারীরা। ঘূর্ণিঝড় সংকেতে ডিম দেয় না মা মাছ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও হালদা গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, এবার হালদার পরিবেশ খুব ভালো। তুলনামূলক দূষণের পরিমাণ কম, নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। এলাকার মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তবে এ বছর এখনও কাক্সিক্ষত বৃষ্টি হয়নি। আশা করছি বৃষ্টি নামার পর অনুকূল পরিবেশ পেলে হালদায় ডিম ছাড়বে মা মাছ।