মামলার রায় ও পর্যবেক্ষণে ‘অসঙ্গতি’, রাষ্ট্রপক্ষের আপিল দাবি

জনউদ্যোগের সংবাদ সম্মেলন

যশোরের দ্বিতীয় শ্রেণী ছাত্রী তৃষা আফরিন কথা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে আসামিদের খালাস ও রায়ের পর্যবেক্ষণে অসঙ্গতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘জনউদ্যোগ’। গতকাল সংগঠনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তৃষা আফরিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল দাবি করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ শহরতলীর খোলাডাঙ্গা এলাকায় আট বছরের শিশু তৃষা আফরিন কথাকে ধর্ষণ শেষে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেছে জনউদ্যোগ। সংবাদসম্মেলনে সূচনা বক্তর‌্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জনউদ্যোগ যশোরের সদস্য সচিব কিশোর কুমার কাজল বলেন, চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামিরা বেকসুর খালাস পান। সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আমাদের হাতে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। রায়ে বর্ণনা ও পর্যবেক্ষণে বেশকিছু অসঙ্গতি থাকায় তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ১৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের বর্ণনায় রায় এবং পর্যবেক্ষণে বেশ কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

আইনজীবীদের মতে, মামলার ভিকটিম তৃষাকে ডেকে নিয়ে আসামি শামীমের ঘরে ধর্ষণ ও হত্যা এবং শামীমের বাড়ির পেছনে পুঁতে রাখা হয়। ফলে এই মামলার কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নেই। কিন্তু আসামি সাইফুল ইসলামের স্বীকারোক্তি, ভিকটিমের পরিধেয় জামা ও প্যান্টের ছেড়া অংশ সাইফুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার ঘর থেকে উদ্ধার, লাশ উদ্ধারসহ পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও রায়ে আসামিদের খালাস দেয়া হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি সাইফুলের রিমান্ড শেষে প্রদত্ত প্রতিবেদনে দুটি মেডিকেল টিকিট দিয়েছেন। টিকিটে ট্রমাটিক পেইন ও ফিভার (জ্বর) লেখা আছে। ফলে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে মারপিট করে দোষ স্বীকার (১৬৪ ধারায়) করানো হয়েছে। কিন্তু আইনজীবীদের মতে, এই পর্যবেক্ষণ যথার্থ নয়। কারণ ট্রমাটিক পেইন অর্থ শারীরিক আঘাত নয়, এটা মানসিক আঘাতকে বুঝায়। তৃষার মতো একটি শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা করার কারণে আসামি সাইফুল ট্রমাটিক পেইনে ভুগছিলেন, এমন পর্যবেক্ষণ আসাই প্রাসঙ্গিক ও আইনানুগ ছিল। আর ফিভার বা জ্বর, সেটা যে শারীরিক আঘাতের কারণেই হয়েছে, এমন পর্যবেক্ষণও মোটেই আইনানুগ নয়।

আসামি সাইফুল ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে, ‘সে তৃষার পায়ুপথে ধর্ষণ করে চলে যায়। তখন তৃষা অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিল।’ অথচ রায়ের ১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আসামি সাইফুলের স্বীকারোক্তি মতে ‘এই আসামি কর্তৃক শামীমের ঘরে ঢুকার আগেই ভিকটিমের হাত পা বাঁধা ও মুখে কাপড় গুজে ধর্ষণসহ হত্যা করা হয়েছিল দেখা যায়।’ অর্থাৎ জবানবন্দিতে সাইফুল বলেছে, তৃষা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল, সাইফুলের বয়ান উদৃত করে রায়ে বলা হয়েছে, ‘ধর্ষণসহ হত্যা করা হয়েছিল দেখা যায়’।

এছাড়া আসামি সাইফুলের স্বীকারোক্তি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত এবং সত্য বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিম। অথচ রায়ে স্বীকারোক্তি সত্য নয় বলে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। আইনজীবীদের মতে, এই পর্যবেক্ষণ আইনসিদ্ধ নয় বরং যদি বলা হতো, প্রমাণিত হয়নি, সেটিও যুক্তিযুক্ত হতো।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এই মামলা নিয়ে যারা লড়ছিলেন বিশেষ করে পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) ও আইন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ব্লাস্টের কার্যকর ভূমিকা ছিল বলে আমরা মনে করি না। তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল বলে আমাদের ধারণা। আমরা জনউদ্যোগের পক্ষ থেকে দাবি করছি মামলার স্পষ্ট বিচারের স্বার্থে অবিলম্বে সরকার পক্ষের আপিল করা উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জনউদ্যোগ সদস্য মাহবুবুর রহমান মজনু, অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার কণা, আইইডির যশোর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বীথিকা সরকার।

আরও খবর
আওয়ামী লীগ গঠনের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে : তোফায়েল
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
টিকা কিনতে ৯৪ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি
সিদ্ধান্ত যথার্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তবে আলোচনা চান সিইসি
ভারতের সেরা পাঁচ রপ্তানি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে আল্টিমেটাম সিপিবির
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঢাকা দখল ও দূষণমুক্ত রাখা হবে মেয়র আতিক
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে অনুরোধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
মাদকবিরোধী অভিযানে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ
বৃষ্টির কারণে এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে
মাকে বাঁচাতে গিয়ে বাবার অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারালো ছেলে

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১ , ১০ আষাঢ় ১৪২৮ ১২ জিলকদ ১৪৪২

যশোরে তৃষা ধর্ষণ ও হত্যা

মামলার রায় ও পর্যবেক্ষণে ‘অসঙ্গতি’, রাষ্ট্রপক্ষের আপিল দাবি

জনউদ্যোগের সংবাদ সম্মেলন

যশোরের দ্বিতীয় শ্রেণী ছাত্রী তৃষা আফরিন কথা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে আসামিদের খালাস ও রায়ের পর্যবেক্ষণে অসঙ্গতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘জনউদ্যোগ’। গতকাল সংগঠনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তৃষা আফরিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল দাবি করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ শহরতলীর খোলাডাঙ্গা এলাকায় আট বছরের শিশু তৃষা আফরিন কথাকে ধর্ষণ শেষে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেছে জনউদ্যোগ। সংবাদসম্মেলনে সূচনা বক্তর‌্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জনউদ্যোগ যশোরের সদস্য সচিব কিশোর কুমার কাজল বলেন, চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামিরা বেকসুর খালাস পান। সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আমাদের হাতে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। রায়ে বর্ণনা ও পর্যবেক্ষণে বেশকিছু অসঙ্গতি থাকায় তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ১৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের বর্ণনায় রায় এবং পর্যবেক্ষণে বেশ কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

আইনজীবীদের মতে, মামলার ভিকটিম তৃষাকে ডেকে নিয়ে আসামি শামীমের ঘরে ধর্ষণ ও হত্যা এবং শামীমের বাড়ির পেছনে পুঁতে রাখা হয়। ফলে এই মামলার কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নেই। কিন্তু আসামি সাইফুল ইসলামের স্বীকারোক্তি, ভিকটিমের পরিধেয় জামা ও প্যান্টের ছেড়া অংশ সাইফুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার ঘর থেকে উদ্ধার, লাশ উদ্ধারসহ পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও রায়ে আসামিদের খালাস দেয়া হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি সাইফুলের রিমান্ড শেষে প্রদত্ত প্রতিবেদনে দুটি মেডিকেল টিকিট দিয়েছেন। টিকিটে ট্রমাটিক পেইন ও ফিভার (জ্বর) লেখা আছে। ফলে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে মারপিট করে দোষ স্বীকার (১৬৪ ধারায়) করানো হয়েছে। কিন্তু আইনজীবীদের মতে, এই পর্যবেক্ষণ যথার্থ নয়। কারণ ট্রমাটিক পেইন অর্থ শারীরিক আঘাত নয়, এটা মানসিক আঘাতকে বুঝায়। তৃষার মতো একটি শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা করার কারণে আসামি সাইফুল ট্রমাটিক পেইনে ভুগছিলেন, এমন পর্যবেক্ষণ আসাই প্রাসঙ্গিক ও আইনানুগ ছিল। আর ফিভার বা জ্বর, সেটা যে শারীরিক আঘাতের কারণেই হয়েছে, এমন পর্যবেক্ষণও মোটেই আইনানুগ নয়।

আসামি সাইফুল ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে, ‘সে তৃষার পায়ুপথে ধর্ষণ করে চলে যায়। তখন তৃষা অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিল।’ অথচ রায়ের ১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আসামি সাইফুলের স্বীকারোক্তি মতে ‘এই আসামি কর্তৃক শামীমের ঘরে ঢুকার আগেই ভিকটিমের হাত পা বাঁধা ও মুখে কাপড় গুজে ধর্ষণসহ হত্যা করা হয়েছিল দেখা যায়।’ অর্থাৎ জবানবন্দিতে সাইফুল বলেছে, তৃষা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল, সাইফুলের বয়ান উদৃত করে রায়ে বলা হয়েছে, ‘ধর্ষণসহ হত্যা করা হয়েছিল দেখা যায়’।

এছাড়া আসামি সাইফুলের স্বীকারোক্তি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত এবং সত্য বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিম। অথচ রায়ে স্বীকারোক্তি সত্য নয় বলে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। আইনজীবীদের মতে, এই পর্যবেক্ষণ আইনসিদ্ধ নয় বরং যদি বলা হতো, প্রমাণিত হয়নি, সেটিও যুক্তিযুক্ত হতো।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এই মামলা নিয়ে যারা লড়ছিলেন বিশেষ করে পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) ও আইন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ব্লাস্টের কার্যকর ভূমিকা ছিল বলে আমরা মনে করি না। তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল বলে আমাদের ধারণা। আমরা জনউদ্যোগের পক্ষ থেকে দাবি করছি মামলার স্পষ্ট বিচারের স্বার্থে অবিলম্বে সরকার পক্ষের আপিল করা উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জনউদ্যোগ সদস্য মাহবুবুর রহমান মজনু, অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার কণা, আইইডির যশোর কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বীথিকা সরকার।