মহাসড়কে গাড়ির চাপ রাজধানীতে তীব্র জট

মিরপুর ১২ নম্বরে বাসা সাইদুল ইসলামের। মতিঝিলে একটা কাজে যাওয়ার জন্য বিকল্প নামের বাসে উঠেন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে। বাসটি যখন শাহবাগে তখন তার হাত ঘড়ি জানান দিচ্ছে ৪টা বেজে কুড়ি। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে সূর্য। সাইদুল ইসলাম হতাশ হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বাসের কন্ডাক্টরকে বললেন, মতিঝিল কি ৫টার মধ্যে পৌঁছাতে পারবেন। কন্ডাক্টর ছেলেটিও এতক্ষণে ত্যক্ত বিরক্ত। বিরক্তি নিয়ে ছেলেটি বলে, রাস্তা তো ১০ মিনিটের যাইতে ২ ঘণ্টাও লাগতে পারে।

গাড়ির চালকও মহা ক্ষ্যাপা। ১৪ দিন পর গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেছে। প্রথম ট্রিপেই এই অবস্থা। কয়টা ট্রিপ দিতে পারবে কে জানে। এই ট্রিপের ওপরই তাদের আর্থিক বিষয়-আসয় নির্ভর করে। কপালে তার চিন্তার ভাঁজ।

চালক তার সহযোগী ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যে টাকা জমা ছিল তা তো শেষ হইছেই, মহাজনের কাছে থিক্যা টাকা নিয়া সংসার চালাইছি। এহন এই অবস্থা হইলে কেমনে কি হইবো কে জানে।’ ঢাকায় নিজের আর দেশে মা, ভাইয়ের সংসারও তাকে চালাতে হয় বলে বোঝা গেল তাদের কথোপকোথনে।

এদিকে একে একে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আসা বাসের দু’জন ছাড়া সবাই নেমে হাঁটতে থাকেন। হাঁটা ছাড়া কোন উপায় নেই। কারণ রিকশার সারিও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। রিকশা, বাস, মোটরবাইক, নিজস্ব গাড়ির সঙ্গে গরু বহন করা বড় বড় ট্রাক। সব যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে স্টার্ট বন্ধ করে।

যানজট হবে জানা কথা। কিন্তু এত তীব্র জট কেন হবে ক্ষোভের সঙ্গে একজন আরেকজনকে বলছেন আর হাঁটছেন। ঘর থেকে বের না হওয়ার কঠোর নির্দেশ শিথিল করতে না করতেই এই অবস্থা। সামনে করোনা সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা করেন তিনি। এই প্রতিবেদক তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কেন বেরিয়েছেন? এর উত্তরে তিনি বলেন,‘ ব্যাংকে কাজ আছে।’ কিন্তু আজ আর তিনি ব্যাংক ধরতে পারবেন না সংশয় প্রকাশ করে দ্রুত হেঁটে চলে যান।

বাসের যে দু’জন যাত্রী গাড়ি থেকে নামেননি তারা নারায়ণগঞ্জ যাবেন। সঙ্গের নারী অসুস্থ হাঁটতে পারবেন না বলে বসে আছেন তারা। কখন গাড়ি পৌঁছাবে সেই ভাবনায় কপালে ভাঁজ ফেলে বসে আছেন। এরই মধ্যে কন্ডাকটর ছেলেটি জানতে পারে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে এবং ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশে এবং বেরোতে সিগন্যালে পড়তে হচ্ছে। আর এই সিগন্যালের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

সকাল থেকেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো দেখিয়ে যাচ্ছে মহাসড়কে গাড়ির চাপ। সৃষ্টি হয়েছে যানজট যা চলে গেছে মাইলের পর মাইল। আর এর প্রভাব এসে পড়েছে রাজধানীর রাস্তায়।

১৪ দিনের কঠোর লকডাউন শিথিল করায় গতকাল রাজধানীর চেহেরা একেবারেই পাল্টে গেছে। ঈদকে সামনে রেখে লকডাউন না থাকায় রাজধানীর সড়কগুলো ফিরে পেয়েছে তার পুরনো চেহারা। একদিকে ১৪ দিন পর গণপরিবহন ও মার্র্কেট চালু হওয়া অন্যদিকে ঢাকা থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও আসা মানুষের চাপ, পশু বহনকারী ট্রাক পিকাপের চাপে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ভয়াবহ যানজট দেখা দিয়েছে।

মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে শুরু হয়ে গেছে ঈদের কেনাকাটা। যে কারণে সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে ফুটপাতের দোকান থেকে শপিংমলগুলোতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টগুলো তুলে দেয়ায় শৃঙ্খলা মানছেন না কেউ। মাস্ক ছাড়াই মানুষ রাস্তায় অবাধে চলাচল করছেন। অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই করোনাভীতি দেখা যায়নি, যেন সবকিছু স্বাভাবিক।

লকডাউন শিথিল করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১ , ১ শ্রাবন ১৪২৮ ৫ জিলহজ ১৪৪২

মহাসড়কে গাড়ির চাপ রাজধানীতে তীব্র জট

জাহিদা পারভেজ

image

সড়কের বেহাল দশা, লকডাউন শিথিল হওয়ায় মানুষ, যানবাহন রাজধানীর রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। গতকাল প্রায় সারাদিনই যানজটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা -সংবাদ

মিরপুর ১২ নম্বরে বাসা সাইদুল ইসলামের। মতিঝিলে একটা কাজে যাওয়ার জন্য বিকল্প নামের বাসে উঠেন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে। বাসটি যখন শাহবাগে তখন তার হাত ঘড়ি জানান দিচ্ছে ৪টা বেজে কুড়ি। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে সূর্য। সাইদুল ইসলাম হতাশ হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বাসের কন্ডাক্টরকে বললেন, মতিঝিল কি ৫টার মধ্যে পৌঁছাতে পারবেন। কন্ডাক্টর ছেলেটিও এতক্ষণে ত্যক্ত বিরক্ত। বিরক্তি নিয়ে ছেলেটি বলে, রাস্তা তো ১০ মিনিটের যাইতে ২ ঘণ্টাও লাগতে পারে।

গাড়ির চালকও মহা ক্ষ্যাপা। ১৪ দিন পর গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেছে। প্রথম ট্রিপেই এই অবস্থা। কয়টা ট্রিপ দিতে পারবে কে জানে। এই ট্রিপের ওপরই তাদের আর্থিক বিষয়-আসয় নির্ভর করে। কপালে তার চিন্তার ভাঁজ।

চালক তার সহযোগী ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যে টাকা জমা ছিল তা তো শেষ হইছেই, মহাজনের কাছে থিক্যা টাকা নিয়া সংসার চালাইছি। এহন এই অবস্থা হইলে কেমনে কি হইবো কে জানে।’ ঢাকায় নিজের আর দেশে মা, ভাইয়ের সংসারও তাকে চালাতে হয় বলে বোঝা গেল তাদের কথোপকোথনে।

এদিকে একে একে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আসা বাসের দু’জন ছাড়া সবাই নেমে হাঁটতে থাকেন। হাঁটা ছাড়া কোন উপায় নেই। কারণ রিকশার সারিও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। রিকশা, বাস, মোটরবাইক, নিজস্ব গাড়ির সঙ্গে গরু বহন করা বড় বড় ট্রাক। সব যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে স্টার্ট বন্ধ করে।

যানজট হবে জানা কথা। কিন্তু এত তীব্র জট কেন হবে ক্ষোভের সঙ্গে একজন আরেকজনকে বলছেন আর হাঁটছেন। ঘর থেকে বের না হওয়ার কঠোর নির্দেশ শিথিল করতে না করতেই এই অবস্থা। সামনে করোনা সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা করেন তিনি। এই প্রতিবেদক তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কেন বেরিয়েছেন? এর উত্তরে তিনি বলেন,‘ ব্যাংকে কাজ আছে।’ কিন্তু আজ আর তিনি ব্যাংক ধরতে পারবেন না সংশয় প্রকাশ করে দ্রুত হেঁটে চলে যান।

বাসের যে দু’জন যাত্রী গাড়ি থেকে নামেননি তারা নারায়ণগঞ্জ যাবেন। সঙ্গের নারী অসুস্থ হাঁটতে পারবেন না বলে বসে আছেন তারা। কখন গাড়ি পৌঁছাবে সেই ভাবনায় কপালে ভাঁজ ফেলে বসে আছেন। এরই মধ্যে কন্ডাকটর ছেলেটি জানতে পারে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে এবং ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশে এবং বেরোতে সিগন্যালে পড়তে হচ্ছে। আর এই সিগন্যালের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

সকাল থেকেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো দেখিয়ে যাচ্ছে মহাসড়কে গাড়ির চাপ। সৃষ্টি হয়েছে যানজট যা চলে গেছে মাইলের পর মাইল। আর এর প্রভাব এসে পড়েছে রাজধানীর রাস্তায়।

১৪ দিনের কঠোর লকডাউন শিথিল করায় গতকাল রাজধানীর চেহেরা একেবারেই পাল্টে গেছে। ঈদকে সামনে রেখে লকডাউন না থাকায় রাজধানীর সড়কগুলো ফিরে পেয়েছে তার পুরনো চেহারা। একদিকে ১৪ দিন পর গণপরিবহন ও মার্র্কেট চালু হওয়া অন্যদিকে ঢাকা থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও আসা মানুষের চাপ, পশু বহনকারী ট্রাক পিকাপের চাপে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ভয়াবহ যানজট দেখা দিয়েছে।

মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে শুরু হয়ে গেছে ঈদের কেনাকাটা। যে কারণে সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে ফুটপাতের দোকান থেকে শপিংমলগুলোতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টগুলো তুলে দেয়ায় শৃঙ্খলা মানছেন না কেউ। মাস্ক ছাড়াই মানুষ রাস্তায় অবাধে চলাচল করছেন। অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই করোনাভীতি দেখা যায়নি, যেন সবকিছু স্বাভাবিক।

লকডাউন শিথিল করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।