ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ

আজ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে রেললাইনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রেলওয়ে। প্রতিনিয়ত পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় আহত হচ্ছেন ট্রেনের যাত্রীরা। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে রেলওয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সচেতনতার বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হলেও বন্ধ হয়নি পাথর নিক্ষেপ।

গত এক বছরে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে শতাধিক পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় রেলকর্মকর্তা, কর্মচারী এবং যাত্রীসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ট্রেনে চুরি, ছিনতাই, লাগেজ খোয়া, পকেট মার, অজ্ঞানপার্টি দৌরাত্ম, ট্রেনের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা ও ট্রেনে কাটাপড়াসহ নানারকম অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে রেলপথে। তাই ট্রেনভ্রমণে নিরাপত্তাহীন রেলপথের যাত্রীরা।

১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের শাস্তি যাবজ্জীবন বা ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদ-। পাথরে রেলযাত্রীর মৃত্যু হলে ৩০২ ধারায় ফাঁসির বিধান রয়েছে। এ ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের অপরাধে অভিভাবকের শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন নেই।

তাই সারাদেশের রেললাইন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিট্রেনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বৃদ্ধি ও জনসচেতনা বৃদ্ধির পাশপাশি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আজ জরুরি বৈঠক করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক(অপারেশন) সরদাত শাহদাত আলী সংবাদকে বলেন, ‘চলন্ত ট্রেনের পাথর নিক্ষেপের প্রতিরোধ বিষয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’ রোববারের (আজ) বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সারাদেশের ২ হাজার ৯২৯ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ৩০৭ কিলোমিটার এবং পচিশ্চম অঞ্চল ১ হাজার ৫৬৯ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে দুইশতাধিক স্থানে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। তবে খুবেই ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি স্থান চিহ্নিত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এগুলো হলো, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকু--বাড়বকুন্ড, ফেনীর ফাজিলপুর-কালীদহ এলাকায়, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ-মাইজগাঁও এলাকায়, নরসিংদীর পলাশের জিনারদী ও ঘোড়াশাল এলাকায় প্রতিনিয়ত চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে।

এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলে চুয়াডাঙ্গার আউটার এলাকা, নাটোরের লালপুরের আবদুুলপুর স্টেশন এলাকায়, সিরাজগঞ্জ শহীদ এস মনসুর আলী স্টেশন, উল্লাপাড়া স্টেশন, সলপ স্টেশন, কামারখন্দের জামতৈল ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে, পাবনার ঈশ^রদীর মুলাডুলি ও ভাঙ্গুরা স্টেশন এলাকা, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী ও ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়ার কিসমত-রুহিয়া এলাকা, বগুড়ার সোনাতলার বামনডাঙ্গা স্টেশনে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর স্টেশনে ও খুলনার ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিনিয়ত ঘটছে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকাগামী আন্তঃনগর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভৈরব পৌরশহরের লক্ষ্মীপুর লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় জানালার কাচ ভেঙে সহকারী চালক কাউসার আহমেদের দুচোখ জখম হয়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিআরপি পুলিশ সন্দেহভাজন ১৫ শিশু-কিশোরকে আটক করলেও শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেয়। এভাবে প্রতি মাসের রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ট্রেনের কর্মচারীসহ ৪০ থেকে ৪৫ জন যাত্রী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল ফুলতরা স্টেশনে খুলনায় কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্বরত টিকিট চেকার (টিআইসি) সিকদার বায়েজিত গুরুতর আহত হন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতালে (পিজি) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

২০১৩ সালের ১০ আগস্ট চট্টগ্রামের সীতাকু-ে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় নিহত হয় প্রকৌশলী প্রীতি দাস। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২৩ মে সীতাকু- স্টেশনের কাছে একই ঘটনায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের জুনিয়র কর্মকর্তা অরূপ চক্রবর্তীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এ পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপকারী দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। রেলওয়ে আইনের ১২৭-১২৮ এবং ১৩০ ধারায় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৫০ টাকা আর্থিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে এই আইনে পাথর নিক্ষেপে অভিযুক্তের অভিভাবককেই জরিমানা শোধ করতে হয় বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

রবিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২১ , ১৮ আশ্বিন ১৪২৮ ২৪ সফর ১৪৪৩

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে

ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ

আজ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে রেললাইনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রেলওয়ে। প্রতিনিয়ত পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় আহত হচ্ছেন ট্রেনের যাত্রীরা। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে রেলওয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সচেতনতার বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হলেও বন্ধ হয়নি পাথর নিক্ষেপ।

গত এক বছরে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে শতাধিক পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় রেলকর্মকর্তা, কর্মচারী এবং যাত্রীসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ট্রেনে চুরি, ছিনতাই, লাগেজ খোয়া, পকেট মার, অজ্ঞানপার্টি দৌরাত্ম, ট্রেনের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা ও ট্রেনে কাটাপড়াসহ নানারকম অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে রেলপথে। তাই ট্রেনভ্রমণে নিরাপত্তাহীন রেলপথের যাত্রীরা।

১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের শাস্তি যাবজ্জীবন বা ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদ-। পাথরে রেলযাত্রীর মৃত্যু হলে ৩০২ ধারায় ফাঁসির বিধান রয়েছে। এ ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের অপরাধে অভিভাবকের শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন নেই।

তাই সারাদেশের রেললাইন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিট্রেনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বৃদ্ধি ও জনসচেতনা বৃদ্ধির পাশপাশি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আজ জরুরি বৈঠক করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক(অপারেশন) সরদাত শাহদাত আলী সংবাদকে বলেন, ‘চলন্ত ট্রেনের পাথর নিক্ষেপের প্রতিরোধ বিষয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’ রোববারের (আজ) বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সারাদেশের ২ হাজার ৯২৯ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ৩০৭ কিলোমিটার এবং পচিশ্চম অঞ্চল ১ হাজার ৫৬৯ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে দুইশতাধিক স্থানে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। তবে খুবেই ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি স্থান চিহ্নিত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এগুলো হলো, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকু--বাড়বকুন্ড, ফেনীর ফাজিলপুর-কালীদহ এলাকায়, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ-মাইজগাঁও এলাকায়, নরসিংদীর পলাশের জিনারদী ও ঘোড়াশাল এলাকায় প্রতিনিয়ত চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে।

এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলে চুয়াডাঙ্গার আউটার এলাকা, নাটোরের লালপুরের আবদুুলপুর স্টেশন এলাকায়, সিরাজগঞ্জ শহীদ এস মনসুর আলী স্টেশন, উল্লাপাড়া স্টেশন, সলপ স্টেশন, কামারখন্দের জামতৈল ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে, পাবনার ঈশ^রদীর মুলাডুলি ও ভাঙ্গুরা স্টেশন এলাকা, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী ও ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়ার কিসমত-রুহিয়া এলাকা, বগুড়ার সোনাতলার বামনডাঙ্গা স্টেশনে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর স্টেশনে ও খুলনার ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিনিয়ত ঘটছে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকাগামী আন্তঃনগর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভৈরব পৌরশহরের লক্ষ্মীপুর লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় জানালার কাচ ভেঙে সহকারী চালক কাউসার আহমেদের দুচোখ জখম হয়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিআরপি পুলিশ সন্দেহভাজন ১৫ শিশু-কিশোরকে আটক করলেও শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেয়। এভাবে প্রতি মাসের রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ট্রেনের কর্মচারীসহ ৪০ থেকে ৪৫ জন যাত্রী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল ফুলতরা স্টেশনে খুলনায় কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্বরত টিকিট চেকার (টিআইসি) সিকদার বায়েজিত গুরুতর আহত হন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতালে (পিজি) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

২০১৩ সালের ১০ আগস্ট চট্টগ্রামের সীতাকু-ে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় নিহত হয় প্রকৌশলী প্রীতি দাস। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২৩ মে সীতাকু- স্টেশনের কাছে একই ঘটনায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের জুনিয়র কর্মকর্তা অরূপ চক্রবর্তীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এ পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপকারী দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। রেলওয়ে আইনের ১২৭-১২৮ এবং ১৩০ ধারায় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৫০ টাকা আর্থিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে এই আইনে পাথর নিক্ষেপে অভিযুক্তের অভিভাবককেই জরিমানা শোধ করতে হয় বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।