অর্থ সংকটের কারণে আটকে আছে ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালু

অর্থ সংকটের কারণে আটকে গেছে রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতির পরীক্ষামূলক চালু। দুই দফা তারিখ ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি ঘাটারচর-মতিঝিল-সাইনবোর্ড পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কপথে পরীক্ষামূলক বাস রুট ফ্যান্সাইজি পদ্ধতি। এছাড়া ভাড়া নিয়ে বাস মালিকদের দ্বিমতের কারণে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর বিষয়টি ঝুলে আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

জানা গেছে, রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ২০১৬ সালে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)’র প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। ২০১৭ সালে তার মৃত্যুতে থেমে যায় এই উদ্যোগ। এরপর ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও যানজট নিরসনের জন্য ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা’ পদ্ধতি প্রবর্তনের কার্যক্রম সমন্বয় করতে একটি কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

১০ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনকে। বর্তমানে কমিটির আহ্বায়ক ডিএসসিসি’র বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে ২০১৯ সালে অন্য একটি প্রজ্ঞাপনে ডিএনসিসির একজন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে ১২ সদস্যের কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। কমিটি সৃষ্টির পর ৩ বছর ২৫ দিন অতিক্রম হলেও রাজধানীর গণপরিবহনের শৃঙ্খলা এখনও ফেরেনি। এ পর্যন্ত ১৭ বার বৈঠক করা হলেও পরীক্ষামূলক একটি রুটও চালু করতে পারেনি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঘাটারচর থেকে মতিঝিল হয়ে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কপথে পরীক্ষামূলক বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর জন্য তিন দফা তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তা এখনও চালু করতে পারেনি।

সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর এই রুটে ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দিয়েছিল ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। কিন্তু তাও ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১ এপ্রিল ঘাটারচর-মতিঝিল পর্যন্ত রুট ফ্যান্সাইজি পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য সংবাদকে বলেন, ‘রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর পরীক্ষামূলক রুটে বাস কাউন্টার নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ শেষ করা হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে মূল কাজ শুরু করা যায়নি। তবে বার বার তারিখ ঘোষণার কারণে কমিটির অনেক কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। তা না হলে এই কাজ শেষ করা যেত না। কারণ টাকা ছাড়া কেউ কাজ করতে চায় না। কমিটি হয়েছে ঠিক কিন্তু কাজ বাস্তবায়নের অর্থ দরকার। বাজেট ছাড়া কাজের পরিকল্পনা নেয়া কঠিন বলে জানান তিনি।’

ডিএসসিসির সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পর রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া গতি পেয়েছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকা মহানগরীর সড়কগুলোকে ২২টি রুটে ভাগ করে নতুনভাবে গণপরিবহন চালানো হবে।

এই ২২ রুটে চলবে ৬ কোম্পানির ১০ হাজার বাস। প্রতিটি কোম্পানির বাসের রঙ থাকবে পৃথক। পিংক (গোলাপী), ব্লু (নীল), পেস্ট (হালকা সবুজ), অরেঞ্জ (কমলা), ইয়েলো (হলুদ) ও গ্রিন (সবুজ) এই ছয়টি রঙ দ্বারা বিভিন্ন কোম্পানির বাস চিহ্নিত করা হবে। একটি কোম্পানিতে এক রঙের বাস থাকবে।

ঢাকা আড়াই হাজার কোম্পানির পরিবর্তে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে ৯ হাজার ২৭টি বাস পরিচালিত হবে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪৫৭টি বাস ও ২ হাজার ২৭০টি মিনিবাস থাকবে। ৩ হাজার ৭৬১টি সম্পূর্ণ নতুন বাস রাখা হবে। এ সব কোম্পানিতে গণপরিবহন মালিকরা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে থাকবেন।

সঠিকভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিটি কোম্পানিতে ৫০০টির কম গণপরিবহন রাখা হবে। কোম্পানিগুলোকে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। ৫ বছরের বেশি পুরনো বাস রাখা হবে না। বর্তমানে ঢাকায় ২৯১টি রুটে গণপরিবহন চলাচল করে। ৬টি রঙের গণপরিবহন পরিচালনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবে রুটগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে- আরবান, সাব-আরবান ও ঢাকা চাকা ক্লাস্টার। বাস রুট রেশনালাইজেশনের জন্য জেলা পর্যায়ের কোন বাস রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এজন্য রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে পর্যাপ্ত টার্মিনাল ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে বাসগুলোতে টিকিটিং সিস্টেম করা হবে। ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানি মাধ্যমে বাস পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য এই সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

কমিটির প্রতিবার বৈঠকেই পরীক্ষামূলকভাবে রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতির চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর মূল কারণ অর্থ। কারণ অর্থ ছাড়া বাসস্টপিজ তৈরি ও বাস কাউন্টার তৈরি করা সম্ভব্য নয়। এছাড়া সমন্বয়ের অভাবে অনেক কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে ডিটিসিএর সূত্র জানায়।

গত ২৪ জুন সভায় বাসের ভাড়াও নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা মহানগরীতে রুটগুলোতে প্রতি কিলোমিটারে বর্তমানে ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা। তবে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হতে যাওয়া নতুন ব্যবস্থায় এই রুটে অতিরিক্ত ৫০ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। ফলে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে ২ টাকা ২০ পয়সা। এ নিয়ে বাস মালিকদের আপত্তি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে ঘাটারচর-মতিঝিল-সাইনবোর্ড রুটে চলাচল করা রজনীগন্ধা পরিবহনের এমডি আবদুল কাদের সংবাদকে বলেন, ‘ঘাটারচর-মতিঝিল-সাইনবোর্ড রুটে তাদের ১০০-১৫০টি গাড়ি চলাচল করে। এই রুটে মেয়রের নির্দেশে রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর চিন্তা-ভাবনা চলছে। কিন্তু বাসের সিট ও ভাড়া বিষয়ে আমাদের একটি আপত্তি রয়েছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার নগর ভবনে মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে সমন্বয় কমিটির সদস্য ও প্রকল্পের কনসালট্যান্ট ড. এস এম সালেহ উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন সমস্যার সমাধানের জন্য এখন যে বাসগুলো চলে তার সবই তুলে দিতে হবে। কোম্পানির অধীনে পরিকল্পিতভাবে বাস চালানো হবে। রাজধানীর ২২টি রুটে ৬ কোম্পানির অধীনে ৮-১০ হাজার বাস চলাচল করবে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার বাস নতুন নামাতে হবে। বাকিগুলো বর্তমানে চালাচলরত বাসগুলো থেকে নেয়া হবে। প্রতিটি কোম্পানির বাস পরিচালনা হবে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক দিয়ে। ৫-৬ শতাংশ সুদে পরিবহন মালিকদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা নতুন গাড়ি ক্রয় করতে পারে। এছাড়া পুরাতন গাড়িগুলো মেরামত করে চালানো যাবে।’

মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১ , ২০ আশ্বিন ১৪২৮ ২৬ সফর ১৪৪৩

ঘাটারচর-সাইনবোর্ড রুট

অর্থ সংকটের কারণে আটকে আছে ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালু

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

অর্থ সংকটের কারণে আটকে গেছে রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতির পরীক্ষামূলক চালু। দুই দফা তারিখ ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি ঘাটারচর-মতিঝিল-সাইনবোর্ড পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কপথে পরীক্ষামূলক বাস রুট ফ্যান্সাইজি পদ্ধতি। এছাড়া ভাড়া নিয়ে বাস মালিকদের দ্বিমতের কারণে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর বিষয়টি ঝুলে আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

জানা গেছে, রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ২০১৬ সালে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)’র প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। ২০১৭ সালে তার মৃত্যুতে থেমে যায় এই উদ্যোগ। এরপর ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও যানজট নিরসনের জন্য ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা’ পদ্ধতি প্রবর্তনের কার্যক্রম সমন্বয় করতে একটি কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

১০ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনকে। বর্তমানে কমিটির আহ্বায়ক ডিএসসিসি’র বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে ২০১৯ সালে অন্য একটি প্রজ্ঞাপনে ডিএনসিসির একজন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে ১২ সদস্যের কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। কমিটি সৃষ্টির পর ৩ বছর ২৫ দিন অতিক্রম হলেও রাজধানীর গণপরিবহনের শৃঙ্খলা এখনও ফেরেনি। এ পর্যন্ত ১৭ বার বৈঠক করা হলেও পরীক্ষামূলক একটি রুটও চালু করতে পারেনি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঘাটারচর থেকে মতিঝিল হয়ে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কপথে পরীক্ষামূলক বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর জন্য তিন দফা তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তা এখনও চালু করতে পারেনি।

সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর এই রুটে ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দিয়েছিল ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। কিন্তু তাও ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১ এপ্রিল ঘাটারচর-মতিঝিল পর্যন্ত রুট ফ্যান্সাইজি পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য সংবাদকে বলেন, ‘রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর পরীক্ষামূলক রুটে বাস কাউন্টার নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ শেষ করা হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে মূল কাজ শুরু করা যায়নি। তবে বার বার তারিখ ঘোষণার কারণে কমিটির অনেক কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। তা না হলে এই কাজ শেষ করা যেত না। কারণ টাকা ছাড়া কেউ কাজ করতে চায় না। কমিটি হয়েছে ঠিক কিন্তু কাজ বাস্তবায়নের অর্থ দরকার। বাজেট ছাড়া কাজের পরিকল্পনা নেয়া কঠিন বলে জানান তিনি।’

ডিএসসিসির সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পর রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া গতি পেয়েছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকা মহানগরীর সড়কগুলোকে ২২টি রুটে ভাগ করে নতুনভাবে গণপরিবহন চালানো হবে।

এই ২২ রুটে চলবে ৬ কোম্পানির ১০ হাজার বাস। প্রতিটি কোম্পানির বাসের রঙ থাকবে পৃথক। পিংক (গোলাপী), ব্লু (নীল), পেস্ট (হালকা সবুজ), অরেঞ্জ (কমলা), ইয়েলো (হলুদ) ও গ্রিন (সবুজ) এই ছয়টি রঙ দ্বারা বিভিন্ন কোম্পানির বাস চিহ্নিত করা হবে। একটি কোম্পানিতে এক রঙের বাস থাকবে।

ঢাকা আড়াই হাজার কোম্পানির পরিবর্তে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে ৯ হাজার ২৭টি বাস পরিচালিত হবে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪৫৭টি বাস ও ২ হাজার ২৭০টি মিনিবাস থাকবে। ৩ হাজার ৭৬১টি সম্পূর্ণ নতুন বাস রাখা হবে। এ সব কোম্পানিতে গণপরিবহন মালিকরা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে থাকবেন।

সঠিকভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিটি কোম্পানিতে ৫০০টির কম গণপরিবহন রাখা হবে। কোম্পানিগুলোকে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। ৫ বছরের বেশি পুরনো বাস রাখা হবে না। বর্তমানে ঢাকায় ২৯১টি রুটে গণপরিবহন চলাচল করে। ৬টি রঙের গণপরিবহন পরিচালনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবে রুটগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে- আরবান, সাব-আরবান ও ঢাকা চাকা ক্লাস্টার। বাস রুট রেশনালাইজেশনের জন্য জেলা পর্যায়ের কোন বাস রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এজন্য রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে পর্যাপ্ত টার্মিনাল ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে বাসগুলোতে টিকিটিং সিস্টেম করা হবে। ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানি মাধ্যমে বাস পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য এই সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

কমিটির প্রতিবার বৈঠকেই পরীক্ষামূলকভাবে রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতির চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর মূল কারণ অর্থ। কারণ অর্থ ছাড়া বাসস্টপিজ তৈরি ও বাস কাউন্টার তৈরি করা সম্ভব্য নয়। এছাড়া সমন্বয়ের অভাবে অনেক কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে ডিটিসিএর সূত্র জানায়।

গত ২৪ জুন সভায় বাসের ভাড়াও নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা মহানগরীতে রুটগুলোতে প্রতি কিলোমিটারে বর্তমানে ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা। তবে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হতে যাওয়া নতুন ব্যবস্থায় এই রুটে অতিরিক্ত ৫০ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। ফলে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে ২ টাকা ২০ পয়সা। এ নিয়ে বাস মালিকদের আপত্তি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে ঘাটারচর-মতিঝিল-সাইনবোর্ড রুটে চলাচল করা রজনীগন্ধা পরিবহনের এমডি আবদুল কাদের সংবাদকে বলেন, ‘ঘাটারচর-মতিঝিল-সাইনবোর্ড রুটে তাদের ১০০-১৫০টি গাড়ি চলাচল করে। এই রুটে মেয়রের নির্দেশে রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর চিন্তা-ভাবনা চলছে। কিন্তু বাসের সিট ও ভাড়া বিষয়ে আমাদের একটি আপত্তি রয়েছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার নগর ভবনে মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে সমন্বয় কমিটির সদস্য ও প্রকল্পের কনসালট্যান্ট ড. এস এম সালেহ উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন সমস্যার সমাধানের জন্য এখন যে বাসগুলো চলে তার সবই তুলে দিতে হবে। কোম্পানির অধীনে পরিকল্পিতভাবে বাস চালানো হবে। রাজধানীর ২২টি রুটে ৬ কোম্পানির অধীনে ৮-১০ হাজার বাস চলাচল করবে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার বাস নতুন নামাতে হবে। বাকিগুলো বর্তমানে চালাচলরত বাসগুলো থেকে নেয়া হবে। প্রতিটি কোম্পানির বাস পরিচালনা হবে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক দিয়ে। ৫-৬ শতাংশ সুদে পরিবহন মালিকদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা নতুন গাড়ি ক্রয় করতে পারে। এছাড়া পুরাতন গাড়িগুলো মেরামত করে চালানো যাবে।’