জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম বলেছেন, দুর্নীতি যদি প্রতিহত করতে পারি তাহলে অন্যের অধিকার সুরক্ষিত হবে। কারণ দুর্নীতিবাজ অন্যের অধিকার হরণ করেই দুর্নীতি করে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভোলপমেন্ট (ফোরাম এশিয়া)র যৌথ আয়োজনে ন্যাশনাল স্ট্যাটিজি কন্সালটেশন ফর দ্যা ইস্টাবলিস্টমেন্ট অব সাউথ এশিয়ান রিজিউনাল হিউম্যান রাইটস ম্যাকানিজম শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীল গুলশানে একটি হোটেলে গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
ড. নাসিমা বেগম বলেন, অন্যের অধিকার সুরক্ষিত করে কেউ অপরাধ করতে পারে না। সুতরাং আমরা একটা ওই ধরনের সমাজ যদি গড়তে চাই তাহলে রুট টু বটম আমাদের কাজ করতে হবে। মানবাধিকার সুরক্ষায় তৃনমূল থেকে আমাদের কাজটা শুরু করা দরকার।
এর আগে সাউথ এশিয়ান হিউম্যান রাইটস ইস্যু : দ্যা নিড ফর এ রিউনাল ম্যাকানিজম শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী প্রফেসর মো. গোলাম সারওয়ার। আলোচনা করেন আসকের এক্সিইকিউটিভ ডিরেক্টর গোলাম মনোয়ার কামাল এবং ফোরাম এশিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সামিনি দর্শনী কালিমিটু।
সেমিানারে মানবাধিকারের নানা বিষয় নিয়ে প্যানেল আলোচনা করেন মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ব্যারিস্টার সারা হোসাইন, আসকের নিবাহী কমিটির সদস্য ড. ফাস্টিনা পারিজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. ইমতিয়জ আহমেদ, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার চিফ এক্সিকিউটিভ সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহিন আনাম সঞ্জয় ডরোঞ্জ। সেমিনার পরিচালনা করেন
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধু একাট জুডিশিয়াল কিলিং নয়। মাদক যে আমাদের কৈশরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে সে জায়গাগুলোতে আমরা কি করতে পারছি? আমরা বলছি, মাদক, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস জিরো টলারেন্স সরকারের। কিন্তু আমরা এটা নিশ্চিত দেখতে চাই। এটা নিশ্চিত হলে মানবাধিকার নিয়ে এতো চেঁচামেচি করা লাগবে না।
ড. নাসিমা বলেন, আমাদের ছাত্রজীবন থেকে নৈতিকার চর্চা করতে হবে। আমি বলবো ‘আমরা অনেকেই পরিবার থেকে নৈতিকতা শিখেছি। পরিবার থেকে শিখেছি মিথ্যা কথা না বলা, খারাপ কাজ না করা’। কিন্তু এখন কি দেখি, কোন ছেলে ধর্ষণ করে বাবা বলে ছেলে এই বয়সে এমন একটু আধতু করেই থাকে। এটা কোন ধরনের সাপোর্ট, একজন পিতার কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ড. নাসিমা বলেন, আমি মনে করি মানবাধিকার নিয়ে সিভিল সোসাইটি সোচ্চার থাকুক। সিভিল সোস্যাইটির ভয়েস আসলে দরকার। আমরা এক সময় সমালোচনা শুনতে চাইতাম না। কিন্তু আমি মনে করি এ জিনিসগুলো দরকার। সমালোচনা না থাকলে আপনি কিভাবে শোধরাবেন। সুতরাং আমাদের শোধরানোর জন্য কারও কারও ওয়াচ ডগের ভূমিকা নিতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনার বলেন, রিজিউনাল হিউম্যান রাইটস ম্যাকানিজম নিয়ে অতীতেও অনেক কাজ হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কয়েক দফায় ঢাকাতে সম্মেলন হয়েছে, কোর কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সেসব কাজের প্রাতিষ্ঠানিক কোন তথ্য নেই। আমি দেখলাম তখন যে কাজগুলো হয়েছে পরবর্তীতে তা আর এগুয়নি। হয়তো ওইসব সম্মেলনের কোন তথ্য নেই অথবা হারিয়ে গেছে। আমি বলবো আজ যে সেমিনার হয়েছে এখানকার প্যানেল ডিসকাশনগুলো সংরক্ষিত রাখার।
আমরা সবাই মিলে ভিন্ন ভিন্ন পক্ষ না হয়ে যদি এক পক্ষ হই, তাহলে আমরা বৈষম্য দূর করবো, সাম্য প্রতিষ্ঠা করবো। আমরা মানবাধিকারকে সুরক্ষিত করবো। আমরা যদি সার্ককে বাধ্য করি, সার্কের মধ্যে মানবাধিকার বিষয়গুলো যুক্ত করা। আমি আশা করবো আমরা যে সিদ্ধান্ত নিবো সেটি ফরেন মিনিস্ট্রির মাধ্যমে টেক ওভার হবে। আমরা প্রপারলি নিলে এটি বাস্তবায়নে কোন সমস্যা হবে না।
মানবাধিকার চেয়ারম্যান বলেন, কিছু সীমাবন্ধতা নিয়ে মানবাধিকার কমিশন কাজ করে। সেটি সিভিল সোসাইটির সবাই জানে। কিন্তু বিচার বর্হিভূূত হত্যকা-ের ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশন কেন কোন এ্যকশনে নেই সেগুলো এ নিয়ে কথা হয়। কিন্তু আপনার সবাই জানেন, আইনের মধ্যে পরিষ্কার বলা আছে এখানে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ক্ষেত্রে বিশেষ বিধান আছে যে আমরা সরকারের কাছে প্রতিবেদন চাইবো। এবং তার পরে ওনারা প্রতিবেদন দেয়ার পর আমি যদি প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না-ই হই তাহলে আমি আবার সুপারিশ দিবো। এখানে যোগদান করার পর দুর্ভাগ্য হলেও সত্ত্বেও করোনা পরিস্থিতির কারণে কমিশন কোন কাজ করতে পারেনি। মানবাধিকার কমিশনের যেভাবে রোল প্লে করা দরকার সেভাবে কাজ করতে না পারলেও কিন্তু কমিশন একেবারে বসেও থাকেনি।
আমরা কমিশন থেকে এ আইনটা সংশোধন করার জন্য প্রস্তাব রেখেছি। যাতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন নিজে উদ্যোগ নিয়ে তদন্ত করতে পারে বা নিজের ব্যবস্থাপনায় তদন্তগুলো করাতে পারে। কিন্তু এ জায়গাগুলোতে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করতে পারতেন। কিন্তু অনেকেই বলছে করি নাই, পারি নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। হিউম্যান রাইটস কমিশনকে সফল করে সিভিল সোসাইটির যে ভূমিকা থাকার কথা আমি সেটি প্রত্যাশাও করেছিলাম সেটি আমি দেখি নাই। আমি চেষ্টা করেছি কমিশন এবং এর কাজ বুঝতে। আইনমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি সেই প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করবেন। সেটি হলে আজকে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি সে জায়গাটাকে সুরক্ষার জায়গা থেকে দেখার চেষ্টা হয়তো করবো। যাতে আমরা সুরক্ষিত রাখতে পারি সবাইকে।
মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১ , ৩১ কার্তিক ১৪২৮ ১০ রবিউস সানি ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম বলেছেন, দুর্নীতি যদি প্রতিহত করতে পারি তাহলে অন্যের অধিকার সুরক্ষিত হবে। কারণ দুর্নীতিবাজ অন্যের অধিকার হরণ করেই দুর্নীতি করে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভোলপমেন্ট (ফোরাম এশিয়া)র যৌথ আয়োজনে ন্যাশনাল স্ট্যাটিজি কন্সালটেশন ফর দ্যা ইস্টাবলিস্টমেন্ট অব সাউথ এশিয়ান রিজিউনাল হিউম্যান রাইটস ম্যাকানিজম শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীল গুলশানে একটি হোটেলে গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
ড. নাসিমা বেগম বলেন, অন্যের অধিকার সুরক্ষিত করে কেউ অপরাধ করতে পারে না। সুতরাং আমরা একটা ওই ধরনের সমাজ যদি গড়তে চাই তাহলে রুট টু বটম আমাদের কাজ করতে হবে। মানবাধিকার সুরক্ষায় তৃনমূল থেকে আমাদের কাজটা শুরু করা দরকার।
এর আগে সাউথ এশিয়ান হিউম্যান রাইটস ইস্যু : দ্যা নিড ফর এ রিউনাল ম্যাকানিজম শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী প্রফেসর মো. গোলাম সারওয়ার। আলোচনা করেন আসকের এক্সিইকিউটিভ ডিরেক্টর গোলাম মনোয়ার কামাল এবং ফোরাম এশিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সামিনি দর্শনী কালিমিটু।
সেমিানারে মানবাধিকারের নানা বিষয় নিয়ে প্যানেল আলোচনা করেন মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ব্যারিস্টার সারা হোসাইন, আসকের নিবাহী কমিটির সদস্য ড. ফাস্টিনা পারিজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. ইমতিয়জ আহমেদ, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার চিফ এক্সিকিউটিভ সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহিন আনাম সঞ্জয় ডরোঞ্জ। সেমিনার পরিচালনা করেন
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধু একাট জুডিশিয়াল কিলিং নয়। মাদক যে আমাদের কৈশরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে সে জায়গাগুলোতে আমরা কি করতে পারছি? আমরা বলছি, মাদক, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস জিরো টলারেন্স সরকারের। কিন্তু আমরা এটা নিশ্চিত দেখতে চাই। এটা নিশ্চিত হলে মানবাধিকার নিয়ে এতো চেঁচামেচি করা লাগবে না।
ড. নাসিমা বলেন, আমাদের ছাত্রজীবন থেকে নৈতিকার চর্চা করতে হবে। আমি বলবো ‘আমরা অনেকেই পরিবার থেকে নৈতিকতা শিখেছি। পরিবার থেকে শিখেছি মিথ্যা কথা না বলা, খারাপ কাজ না করা’। কিন্তু এখন কি দেখি, কোন ছেলে ধর্ষণ করে বাবা বলে ছেলে এই বয়সে এমন একটু আধতু করেই থাকে। এটা কোন ধরনের সাপোর্ট, একজন পিতার কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ড. নাসিমা বলেন, আমি মনে করি মানবাধিকার নিয়ে সিভিল সোসাইটি সোচ্চার থাকুক। সিভিল সোস্যাইটির ভয়েস আসলে দরকার। আমরা এক সময় সমালোচনা শুনতে চাইতাম না। কিন্তু আমি মনে করি এ জিনিসগুলো দরকার। সমালোচনা না থাকলে আপনি কিভাবে শোধরাবেন। সুতরাং আমাদের শোধরানোর জন্য কারও কারও ওয়াচ ডগের ভূমিকা নিতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনার বলেন, রিজিউনাল হিউম্যান রাইটস ম্যাকানিজম নিয়ে অতীতেও অনেক কাজ হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কয়েক দফায় ঢাকাতে সম্মেলন হয়েছে, কোর কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সেসব কাজের প্রাতিষ্ঠানিক কোন তথ্য নেই। আমি দেখলাম তখন যে কাজগুলো হয়েছে পরবর্তীতে তা আর এগুয়নি। হয়তো ওইসব সম্মেলনের কোন তথ্য নেই অথবা হারিয়ে গেছে। আমি বলবো আজ যে সেমিনার হয়েছে এখানকার প্যানেল ডিসকাশনগুলো সংরক্ষিত রাখার।
আমরা সবাই মিলে ভিন্ন ভিন্ন পক্ষ না হয়ে যদি এক পক্ষ হই, তাহলে আমরা বৈষম্য দূর করবো, সাম্য প্রতিষ্ঠা করবো। আমরা মানবাধিকারকে সুরক্ষিত করবো। আমরা যদি সার্ককে বাধ্য করি, সার্কের মধ্যে মানবাধিকার বিষয়গুলো যুক্ত করা। আমি আশা করবো আমরা যে সিদ্ধান্ত নিবো সেটি ফরেন মিনিস্ট্রির মাধ্যমে টেক ওভার হবে। আমরা প্রপারলি নিলে এটি বাস্তবায়নে কোন সমস্যা হবে না।
মানবাধিকার চেয়ারম্যান বলেন, কিছু সীমাবন্ধতা নিয়ে মানবাধিকার কমিশন কাজ করে। সেটি সিভিল সোসাইটির সবাই জানে। কিন্তু বিচার বর্হিভূূত হত্যকা-ের ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশন কেন কোন এ্যকশনে নেই সেগুলো এ নিয়ে কথা হয়। কিন্তু আপনার সবাই জানেন, আইনের মধ্যে পরিষ্কার বলা আছে এখানে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ক্ষেত্রে বিশেষ বিধান আছে যে আমরা সরকারের কাছে প্রতিবেদন চাইবো। এবং তার পরে ওনারা প্রতিবেদন দেয়ার পর আমি যদি প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না-ই হই তাহলে আমি আবার সুপারিশ দিবো। এখানে যোগদান করার পর দুর্ভাগ্য হলেও সত্ত্বেও করোনা পরিস্থিতির কারণে কমিশন কোন কাজ করতে পারেনি। মানবাধিকার কমিশনের যেভাবে রোল প্লে করা দরকার সেভাবে কাজ করতে না পারলেও কিন্তু কমিশন একেবারে বসেও থাকেনি।
আমরা কমিশন থেকে এ আইনটা সংশোধন করার জন্য প্রস্তাব রেখেছি। যাতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন নিজে উদ্যোগ নিয়ে তদন্ত করতে পারে বা নিজের ব্যবস্থাপনায় তদন্তগুলো করাতে পারে। কিন্তু এ জায়গাগুলোতে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করতে পারতেন। কিন্তু অনেকেই বলছে করি নাই, পারি নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। হিউম্যান রাইটস কমিশনকে সফল করে সিভিল সোসাইটির যে ভূমিকা থাকার কথা আমি সেটি প্রত্যাশাও করেছিলাম সেটি আমি দেখি নাই। আমি চেষ্টা করেছি কমিশন এবং এর কাজ বুঝতে। আইনমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি সেই প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করবেন। সেটি হলে আজকে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি সে জায়গাটাকে সুরক্ষার জায়গা থেকে দেখার চেষ্টা হয়তো করবো। যাতে আমরা সুরক্ষিত রাখতে পারি সবাইকে।