কী করেছি, তা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন

আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন তার সরকার কী কী করেছে, তা জনগণই মূল্যায়ন করবেন। তবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, স্বাধীনতাবিরোধীরা ষড়যন্ত্র করছে, বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে মন্তব্য করে এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি ও চতুর্থবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে গতকাল জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার পর টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভাষণে তিনি বলেন, ‘জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গত ১৩ বছরে আমরা আপনাদের জন্য কী কী করেছি, তা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি আমরা যেসব ওয়াদা দিয়েছিলাম, আমরা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক বেয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা অনেকেরই সহ্য হবে না বা হচ্ছে না। দেশ-বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নানা ষড়যন্ত্র করছে এই অগ্রযাত্রাকে রুখে দেয়ার জন্য। মিথ্যা-বানোয়াট-কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বিদেশে আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে।’

জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যাতে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে কোনভাবেই ব্যাহত হতে দেয়া যাবে না। জনগণই ক্ষমতার উৎস। আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। তাই জনগণের সঙ্গেই আমাদের অবস্থান।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে না এবং হবে না। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তবে এই ব্যাধি দূর করতে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।’

আমরা কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদের উত্থানকে প্রতিহত করেছি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ পারস্পরিক সহনশীলতা বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।’

সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ভাষণে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সন্ত্রাস, জঙ্গি নির্মূল করে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। ২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের একটি মাইলফলক বছর মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জুন মাসে আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু। অনেক ষড়যন্ত্রের জাল আর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এর নির্মাণ কাজ শেষ করতে যাচ্ছি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে সরাসরি রাজধানীসহ অন্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে এই সেতু। আশা করা হচ্ছে, এটি জিডিপিতে এক দশমিক দুই শতাংশ হারে অবদান রাখবে।’

অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন, ‘এ বছরের শেষ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি আমরা। ইতোমধ্যে এই অংশে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এ ছাড়া আগামী অক্টোবরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।’

অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পের কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের এপ্রিল নাগাদ চালু হবে।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন সাকল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ৪২০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি আমরা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেছি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পায়রাতে ইতোমধ্যে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী, মহেষখালী এবং মাতারবাড়িতে আরও মোট সাত হাজার ৮০০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।’

বঙ্গোপসাগরে ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস হাইড্রেটের সন্ধান পাওয়ার সুখবর জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে জাতীয় গ্রিডে এক হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো, বর্তমানে যা দুই হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের অব্যাহত চাহিদা মেটাতে ২০১৮ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে।’

২০২৫ সালে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আট দশমিক ৫১ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ছয় শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার সাত দশমিক চার শতাংশে নেমে আসবে। সরকরের এ মেয়াদে এক কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ১০টি উদ্যোগ বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।’

২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধশালী দেশ হবে- এই আশা প্রকাশ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘রূপকল্প-২০৪১ এর কৌশলগত দলিল হিসেবে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, করোনার মধ্যেও অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত এক লাখ ছয় হাজার ৫২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের ৫৬.৭৬ শতাংশ। এতে প্রায় ছয় কোটি ৭৪ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার।

করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলা করে গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি ৫.৪৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১-এ মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে। দ্য ইকোনমিস্ট ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।’

খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে উন্নীত হয়েছে। অব্যাহত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে এই বিপ্লব সাধিত হয়েছে।’

স্বাস্থ্য খাতে দেশে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ এবং গুণগত মানোন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু ২০১৯-২০ বছরে ৭২ দশমিক আট বছরে উন্নীত হয়েছে। পাঁচ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৮ ও অনূর্ধ্ব-১ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ১৫-তে হ্রাস পেয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে।’

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হলেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়নি বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই হাজার ৯৫৮ কোটি টাকার বৃত্তি-উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট্রের আওতায় স্নাতক ও সমমানের শ্রেণীর আরও দুই লাখ ১০ হাজার ৪৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১১১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘দেশের সাত হাজার ৬২৪টি এমপিও-ভুক্ত মাদ্রাসায় এক লাখ ৪৮ হাজার ৬১ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে মাসে ২৭৬ কোটি টাকা বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে। ২০২০ সালে নতুন ৪৯৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার ৫১৯টি এবতেদায়ী মাদ্রাসার চার হাজার ৫২৯ জন শিক্ষককে ত্রৈমাসিক তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হচ্ছে। দাওয়ারে হাদিস পর্যায়কে মাস্টার্স সমমান দেয়ার কথাও তিনি বলেন।’

আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই এই ক্রান্তিকালে ডিজিটাল প্রযুক্তি ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দেশের ১৮ হাজার ৪৩৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও তিন হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। বিশ্বের নবম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গত মাসে ৫জি নেটওয়ার্কের যুগে প্রবেশ করেছে।’

করোনাভাইরাসের সময় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লেনদেন সুবিধা গ্রহণ করে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছেন। আমাদের প্রায় ছয় লাখ তরুণ-তরুণী আজ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আমরা এ খাতের উদ্যোক্তাদের সহজশর্তে পুঁজি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েছি।’

স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে দেশের ৩১টি দ্বীপে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হচ্ছে জানিয়েয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার ছাড়াও প্রত্যন্ত ৩১টি দ্বীপে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কয়েকটি ব্যাংক এবং সেনাবাহিনী স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর সেবা গ্রহণ করছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের বর্তমান এবং আগামী দিনের সব কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ। অফুরন্ত জীবনীশক্তিতে বলীয়ান তরুণ প্রজন্মই পারে সব কূপম-ুকতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। তারুণ্যের শক্তিই পারবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এগিয়ে যাবে মাথা উঁচু করে ভবিষ্যতের পানে’-এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

শনিবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২২ , ২৪ পৌষ ১৪২৮ ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

কী করেছি, তা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন তার সরকার কী কী করেছে, তা জনগণই মূল্যায়ন করবেন। তবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, স্বাধীনতাবিরোধীরা ষড়যন্ত্র করছে, বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে মন্তব্য করে এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি ও চতুর্থবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে গতকাল জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার পর টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভাষণে তিনি বলেন, ‘জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গত ১৩ বছরে আমরা আপনাদের জন্য কী কী করেছি, তা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি আমরা যেসব ওয়াদা দিয়েছিলাম, আমরা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক বেয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা অনেকেরই সহ্য হবে না বা হচ্ছে না। দেশ-বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নানা ষড়যন্ত্র করছে এই অগ্রযাত্রাকে রুখে দেয়ার জন্য। মিথ্যা-বানোয়াট-কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বিদেশে আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে।’

জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যাতে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে কোনভাবেই ব্যাহত হতে দেয়া যাবে না। জনগণই ক্ষমতার উৎস। আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। তাই জনগণের সঙ্গেই আমাদের অবস্থান।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে না এবং হবে না। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তবে এই ব্যাধি দূর করতে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।’

আমরা কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদের উত্থানকে প্রতিহত করেছি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ পারস্পরিক সহনশীলতা বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।’

সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ভাষণে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সন্ত্রাস, জঙ্গি নির্মূল করে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। ২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের একটি মাইলফলক বছর মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জুন মাসে আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু। অনেক ষড়যন্ত্রের জাল আর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এর নির্মাণ কাজ শেষ করতে যাচ্ছি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে সরাসরি রাজধানীসহ অন্য অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে এই সেতু। আশা করা হচ্ছে, এটি জিডিপিতে এক দশমিক দুই শতাংশ হারে অবদান রাখবে।’

অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন, ‘এ বছরের শেষ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি আমরা। ইতোমধ্যে এই অংশে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এ ছাড়া আগামী অক্টোবরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।’

অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পের কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের এপ্রিল নাগাদ চালু হবে।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন সাকল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ৪২০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি আমরা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেছি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পায়রাতে ইতোমধ্যে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী, মহেষখালী এবং মাতারবাড়িতে আরও মোট সাত হাজার ৮০০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।’

বঙ্গোপসাগরে ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস হাইড্রেটের সন্ধান পাওয়ার সুখবর জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে জাতীয় গ্রিডে এক হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো, বর্তমানে যা দুই হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের অব্যাহত চাহিদা মেটাতে ২০১৮ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে।’

২০২৫ সালে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আট দশমিক ৫১ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ছয় শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার সাত দশমিক চার শতাংশে নেমে আসবে। সরকরের এ মেয়াদে এক কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ১০টি উদ্যোগ বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।’

২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধশালী দেশ হবে- এই আশা প্রকাশ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘রূপকল্প-২০৪১ এর কৌশলগত দলিল হিসেবে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, করোনার মধ্যেও অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত এক লাখ ছয় হাজার ৫২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের ৫৬.৭৬ শতাংশ। এতে প্রায় ছয় কোটি ৭৪ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার।

করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলা করে গত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি ৫.৪৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১-এ মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে। দ্য ইকোনমিস্ট ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।’

খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে উন্নীত হয়েছে। অব্যাহত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে এই বিপ্লব সাধিত হয়েছে।’

স্বাস্থ্য খাতে দেশে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ এবং গুণগত মানোন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু ২০১৯-২০ বছরে ৭২ দশমিক আট বছরে উন্নীত হয়েছে। পাঁচ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৮ ও অনূর্ধ্ব-১ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ১৫-তে হ্রাস পেয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে।’

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হলেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়নি বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই হাজার ৯৫৮ কোটি টাকার বৃত্তি-উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট্রের আওতায় স্নাতক ও সমমানের শ্রেণীর আরও দুই লাখ ১০ হাজার ৪৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১১১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘দেশের সাত হাজার ৬২৪টি এমপিও-ভুক্ত মাদ্রাসায় এক লাখ ৪৮ হাজার ৬১ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে মাসে ২৭৬ কোটি টাকা বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে। ২০২০ সালে নতুন ৪৯৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার ৫১৯টি এবতেদায়ী মাদ্রাসার চার হাজার ৫২৯ জন শিক্ষককে ত্রৈমাসিক তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হচ্ছে। দাওয়ারে হাদিস পর্যায়কে মাস্টার্স সমমান দেয়ার কথাও তিনি বলেন।’

আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই এই ক্রান্তিকালে ডিজিটাল প্রযুক্তি ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দেশের ১৮ হাজার ৪৩৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও তিন হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। বিশ্বের নবম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গত মাসে ৫জি নেটওয়ার্কের যুগে প্রবেশ করেছে।’

করোনাভাইরাসের সময় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লেনদেন সুবিধা গ্রহণ করে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছেন। আমাদের প্রায় ছয় লাখ তরুণ-তরুণী আজ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আমরা এ খাতের উদ্যোক্তাদের সহজশর্তে পুঁজি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েছি।’

স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে দেশের ৩১টি দ্বীপে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হচ্ছে জানিয়েয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার ছাড়াও প্রত্যন্ত ৩১টি দ্বীপে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কয়েকটি ব্যাংক এবং সেনাবাহিনী স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর সেবা গ্রহণ করছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের বর্তমান এবং আগামী দিনের সব কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ। অফুরন্ত জীবনীশক্তিতে বলীয়ান তরুণ প্রজন্মই পারে সব কূপম-ুকতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। তারুণ্যের শক্তিই পারবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এগিয়ে যাবে মাথা উঁচু করে ভবিষ্যতের পানে’-এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।