পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে ভাঙন আতঙ্কও কেটেছে পদ্মাপারের মানুষের

পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায় ভাঙন আতঙ্ক নেই পদ্মাপারের মানুষের। এখন তাদের চোখে মুখে নেই উৎকণ্ঠা কান্না আর আহাজারি, নেই কোন ভয় আর আতঙ্ক। সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হয় পদ্মাপারের মানুষ। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মা নদীতে আকস্মিক পানিবৃদ্ধি খুব স্বাভাবিক বিষয়। ফলে সবসময় হুমকির মুখে থাকে এখানকার মানুষজন। প্রতি বছরই ভাঙনের শিকার হওয়ায় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেকে টিনের ঘরে বসবাস করেন। তবে এবার পদ্মা সেতু বহুমুখী প্রকল্পের প্রায় ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন করতে হয়েছে। এর ফলে এসব অঞ্চলের হাজারো মানুষের বাপ-দাদার ভিটাও রক্ষা পেয়েছে।

এর মধ্যে মাওয়া এলাকায় এক দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং বাকি ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার জাজিরা এলাকায়।

পদ্মাপারে কথা হয় জাজিরা কাজিরহাট বন্দরের ওয়াজল শিকদারের সঙ্গে। বয়স ৮৫ ছুঁই-ছুঁই। পদ্মার ভাঙনে কতবার নিজের বসতভিটা এই জীবনে সরাতে হয়েছে তা আঙুলে গুণে গুণে হিসাব দিচ্ছেন বয়স্ক এই মানুষটি। খরস্রোতা পদ্মার ভাঙন যেন তার জীবনকে বিষন্ন করে তুলেছে। পদ্মা সেতুর কল্যাণে নদীশাসন কাজ যেন তার জীবনে সব থেকে বড় কল্যাণ বয়ে এনেছে।

পূর্ব নাউডোবা ইউনিয়নে চা খেতে খেতে কথা হয় জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তার কাছে সেতুর সব থেকে বড় কল্যাণকর দিক নদীশাসন। পদ্মাপারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাষিরাও অনেক লাভবান হবেন। ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে অর্থনীতির চাকাও সচল হবে। সাধারণ মানুষ কৃষিপণ্য সুলভমূল্যে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করবেন। পদ্মাপারে নানা ধরনের শাক-সবজি হয়। এসব শাক-সবজি ঢাকায় নিতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগতো। অথচ এখন স্বল্প সময়ে ঢাকায় নেয়া যাবে।

তিনি বলেন, আগে বন্যায় অনিশ্চয়তা থাকতো। এই বুঝি বাড়িঘর পদ্মা নিয়ে গেল। কিন্তু নদীশাসনের কাজ হওয়ার কারণে সেই ভয় এখন নেই। রাতে অন্তত শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। নদীশাসন শুধু সেতু রক্ষা করছে না ভাঙন আতঙ্কও দূর করেছে পদ্মা সেতুর দুই পারে নদীশাসন কাজের দৈর্ঘ্য ১৩ কিলোমিটার। এটির কাজও বহুমাত্রিক। নদীর তলদেশ খনন, ব্লক ও জিওব্যাগ ফেলা ও পাড় বাঁধাইয়ের কাজ করা হয়। এই কাজে এক কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিটের ব্লক ও ২ কোটির বেশি বালুভর্তি জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। নদীখননের ফলে ২১২ কোটি ঘনফুট বালু স্থানান্তর করতে হয়।

এই কাজ বাস্তবায়ন করছে চীনের আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কাজের ভৌত ও বাস্তব অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। এই কাজের ফলে পদ্মাপারের মানুষের ভাঙন আতঙ্ক দূর হয়েছে। বর্তমানে তারা আতঙ্ক উৎকণ্ঠা কাটিয়ে বেশ ভালো আছে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায়।

রবিবার, ২৬ জুন ২০২২ , ১২ আষাড় ১৪২৮ ২৬ জিলকদ ১৪৪৩

পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে ভাঙন আতঙ্কও কেটেছে পদ্মাপারের মানুষের

প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ

image

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনীতে শিবচর সমাবেশে জনতার ঢল

পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায় ভাঙন আতঙ্ক নেই পদ্মাপারের মানুষের। এখন তাদের চোখে মুখে নেই উৎকণ্ঠা কান্না আর আহাজারি, নেই কোন ভয় আর আতঙ্ক। সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হয় পদ্মাপারের মানুষ। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মা নদীতে আকস্মিক পানিবৃদ্ধি খুব স্বাভাবিক বিষয়। ফলে সবসময় হুমকির মুখে থাকে এখানকার মানুষজন। প্রতি বছরই ভাঙনের শিকার হওয়ায় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেকে টিনের ঘরে বসবাস করেন। তবে এবার পদ্মা সেতু বহুমুখী প্রকল্পের প্রায় ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন করতে হয়েছে। এর ফলে এসব অঞ্চলের হাজারো মানুষের বাপ-দাদার ভিটাও রক্ষা পেয়েছে।

এর মধ্যে মাওয়া এলাকায় এক দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং বাকি ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার জাজিরা এলাকায়।

পদ্মাপারে কথা হয় জাজিরা কাজিরহাট বন্দরের ওয়াজল শিকদারের সঙ্গে। বয়স ৮৫ ছুঁই-ছুঁই। পদ্মার ভাঙনে কতবার নিজের বসতভিটা এই জীবনে সরাতে হয়েছে তা আঙুলে গুণে গুণে হিসাব দিচ্ছেন বয়স্ক এই মানুষটি। খরস্রোতা পদ্মার ভাঙন যেন তার জীবনকে বিষন্ন করে তুলেছে। পদ্মা সেতুর কল্যাণে নদীশাসন কাজ যেন তার জীবনে সব থেকে বড় কল্যাণ বয়ে এনেছে।

পূর্ব নাউডোবা ইউনিয়নে চা খেতে খেতে কথা হয় জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তার কাছে সেতুর সব থেকে বড় কল্যাণকর দিক নদীশাসন। পদ্মাপারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাষিরাও অনেক লাভবান হবেন। ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে অর্থনীতির চাকাও সচল হবে। সাধারণ মানুষ কৃষিপণ্য সুলভমূল্যে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করবেন। পদ্মাপারে নানা ধরনের শাক-সবজি হয়। এসব শাক-সবজি ঢাকায় নিতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগতো। অথচ এখন স্বল্প সময়ে ঢাকায় নেয়া যাবে।

তিনি বলেন, আগে বন্যায় অনিশ্চয়তা থাকতো। এই বুঝি বাড়িঘর পদ্মা নিয়ে গেল। কিন্তু নদীশাসনের কাজ হওয়ার কারণে সেই ভয় এখন নেই। রাতে অন্তত শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। নদীশাসন শুধু সেতু রক্ষা করছে না ভাঙন আতঙ্কও দূর করেছে পদ্মা সেতুর দুই পারে নদীশাসন কাজের দৈর্ঘ্য ১৩ কিলোমিটার। এটির কাজও বহুমাত্রিক। নদীর তলদেশ খনন, ব্লক ও জিওব্যাগ ফেলা ও পাড় বাঁধাইয়ের কাজ করা হয়। এই কাজে এক কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিটের ব্লক ও ২ কোটির বেশি বালুভর্তি জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। নদীখননের ফলে ২১২ কোটি ঘনফুট বালু স্থানান্তর করতে হয়।

এই কাজ বাস্তবায়ন করছে চীনের আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কাজের ভৌত ও বাস্তব অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। এই কাজের ফলে পদ্মাপারের মানুষের ভাঙন আতঙ্ক দূর হয়েছে। বর্তমানে তারা আতঙ্ক উৎকণ্ঠা কাটিয়ে বেশ ভালো আছে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায়।