পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে মাদারীপুরের পরিবহন ব্যবস্থা

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বদলে গেছে মাদারীপুরের পরিবহন ব্যবস্থা। যুক্ত হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস। যাত্রীদের চাপ বাড়ায় বেড়েছে বাসের ট্রিপ সংখ্যাও। তবে যাত্রীরা বলছেন মাদারীপুর-থেকে ঢাকার ভাড়া আগের চেয়ে একশ’ টাকা বেশি বেড়েছে। যা কমিয়ে আনার দাবি করেন এই রুট ব্যবহারকারীরা। গত ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় পদ্মা সেতু। এরপর থেকেই পাল্টে যায় মাদারীপুরের পরিবহন সেবার চিত্র। মাদারীপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার কদমতলী ও সায়েদাবাদে বেড়ে গেছে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি ট্রিপ। ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতি ১৫ মিনিট পরপরই যাত্রীবাহী বাস মাদারীপুর শহর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বর্তমানে সার্বিক, সোনালী ও চন্দ্রা এই তিনটি পরিবহন কোম্পানি যাত্রীদের এসি ও নন এসি বাসে করে ঢাকা-মাদারীপুর যাত্রী সেবা দিয়ে আসছেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কম সময়ে ঢাকা যাওয়া আসা করতে পারায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।

সার্বিক পরিবহনের বাস চালক আজিজুল শিকদার বলেন, ‘আগে ফেরিঘাটে যাত্রীদের নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হইত। কিন্তু এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সেই বিড়ম্বনা নেই। এখন মাদারীপুর থেকে সোয়া দুই ঘণ্টাতেই ঢাকা পৌঁছে যেতে পারি। আমাদের গাড়ির ট্রিপ আগের চেয়ে এখন বেড়েছে।’

মাদারীপুর থেকে ঢাকাগামী ফামেতা বেগম বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ায় এখন অনেক কম সময়ের মধ্যেই আমরা ঢাকা চলে যেতে পারছি। তবে বাসের ভাড়া একটু বেশি হয়ে গেছে। আগে যেখানে আমাদের মিরপুরের বাসায় যেতে লাগত তিনশ’ টাকার মতন। এখন সেখানে কেরানীগঞ্জের কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে যেতেই লাগছে ৩২০ টাকা। তাই ভাড়া একটু কমানোর দাবি করছি।

মাদারীপুরের বাস কোম্পানিগুলোর কাউন্টারের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তারা কম ভাড়া নিচ্ছেন। চন্দ্রা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আমিরুল আহসান বলেন, ‘আমরা সকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাস চালু রেখেছি। প্রতি ২০ মিনিট পরপর একটি বাস ছেড়ে যায়। যাত্রীদের চাপও বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে নির্ধারিত ৩২৭ টাকা। আমরা ৭ টাকা কমে ৩২০ টাকা ভাড়া নেই।’-একই কথা বলেন সার্বিক ও সোনালী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টাররা।

তবে ভাড়া যা নির্ধারিত করা হয়েছে, সেটি খুব বেশি নয় বলে জানিয়েছেন মালিক কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ভাড়া যা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি খুব বেশি নয়। তারা যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে চায় আরও। এই বিষয়ে জানাতে চাইলে মাদারীপুর বাস ও মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘ভাঙ্গা-ঢাকা হাইওয়ে এক্সপ্রেসে টোল দিতে হবে। পাশাপাশি পদ্মা সেতুতেও টোল ফেরির চেয়ে বেশি। তাই ভাড়া সাদা চোখে বেশি মনে হলেও আসলেও ভাড়া খুব বেশি বাড়েনি। তবে আমরা চেষ্টা করছি মাদারীপুরবাসীকে আরও সহজ ও আরামদায়ক ভ্রমণসেবা কিভাবে দেয়া যায় সেই ব্যবস্থা করা।’

তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে বিআরটিসি’র বাসও মাদারীপুর চালানোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। খুব শীঘ্রই বিআরটিসির বাসও মাদারীপুরে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তখন যাত্রীসেবা আরও বৃদ্ধি পাবে।’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল যাতে মাদারীপুরবাসী পায়। সেজন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বুধবার, ২৯ জুন ২০২২ , ১৫ আষাড় ১৪২৮ ২৭ জিলকদ ১৪৪৩

পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে মাদারীপুরের পরিবহন ব্যবস্থা

রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বদলে গেছে মাদারীপুরের পরিবহন ব্যবস্থা। যুক্ত হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস। যাত্রীদের চাপ বাড়ায় বেড়েছে বাসের ট্রিপ সংখ্যাও। তবে যাত্রীরা বলছেন মাদারীপুর-থেকে ঢাকার ভাড়া আগের চেয়ে একশ’ টাকা বেশি বেড়েছে। যা কমিয়ে আনার দাবি করেন এই রুট ব্যবহারকারীরা। গত ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় পদ্মা সেতু। এরপর থেকেই পাল্টে যায় মাদারীপুরের পরিবহন সেবার চিত্র। মাদারীপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার কদমতলী ও সায়েদাবাদে বেড়ে গেছে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি ট্রিপ। ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতি ১৫ মিনিট পরপরই যাত্রীবাহী বাস মাদারীপুর শহর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বর্তমানে সার্বিক, সোনালী ও চন্দ্রা এই তিনটি পরিবহন কোম্পানি যাত্রীদের এসি ও নন এসি বাসে করে ঢাকা-মাদারীপুর যাত্রী সেবা দিয়ে আসছেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কম সময়ে ঢাকা যাওয়া আসা করতে পারায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।

সার্বিক পরিবহনের বাস চালক আজিজুল শিকদার বলেন, ‘আগে ফেরিঘাটে যাত্রীদের নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হইত। কিন্তু এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সেই বিড়ম্বনা নেই। এখন মাদারীপুর থেকে সোয়া দুই ঘণ্টাতেই ঢাকা পৌঁছে যেতে পারি। আমাদের গাড়ির ট্রিপ আগের চেয়ে এখন বেড়েছে।’

মাদারীপুর থেকে ঢাকাগামী ফামেতা বেগম বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ায় এখন অনেক কম সময়ের মধ্যেই আমরা ঢাকা চলে যেতে পারছি। তবে বাসের ভাড়া একটু বেশি হয়ে গেছে। আগে যেখানে আমাদের মিরপুরের বাসায় যেতে লাগত তিনশ’ টাকার মতন। এখন সেখানে কেরানীগঞ্জের কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে যেতেই লাগছে ৩২০ টাকা। তাই ভাড়া একটু কমানোর দাবি করছি।

মাদারীপুরের বাস কোম্পানিগুলোর কাউন্টারের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তারা কম ভাড়া নিচ্ছেন। চন্দ্রা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আমিরুল আহসান বলেন, ‘আমরা সকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাস চালু রেখেছি। প্রতি ২০ মিনিট পরপর একটি বাস ছেড়ে যায়। যাত্রীদের চাপও বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে নির্ধারিত ৩২৭ টাকা। আমরা ৭ টাকা কমে ৩২০ টাকা ভাড়া নেই।’-একই কথা বলেন সার্বিক ও সোনালী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টাররা।

তবে ভাড়া যা নির্ধারিত করা হয়েছে, সেটি খুব বেশি নয় বলে জানিয়েছেন মালিক কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ভাড়া যা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি খুব বেশি নয়। তারা যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে চায় আরও। এই বিষয়ে জানাতে চাইলে মাদারীপুর বাস ও মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘ভাঙ্গা-ঢাকা হাইওয়ে এক্সপ্রেসে টোল দিতে হবে। পাশাপাশি পদ্মা সেতুতেও টোল ফেরির চেয়ে বেশি। তাই ভাড়া সাদা চোখে বেশি মনে হলেও আসলেও ভাড়া খুব বেশি বাড়েনি। তবে আমরা চেষ্টা করছি মাদারীপুরবাসীকে আরও সহজ ও আরামদায়ক ভ্রমণসেবা কিভাবে দেয়া যায় সেই ব্যবস্থা করা।’

তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে বিআরটিসি’র বাসও মাদারীপুর চালানোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। খুব শীঘ্রই বিআরটিসির বাসও মাদারীপুরে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তখন যাত্রীসেবা আরও বৃদ্ধি পাবে।’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল যাতে মাদারীপুরবাসী পায়। সেজন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।