প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রতিবেদন দেয়ায় শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগ

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির তদন্ত কমিটির সদস্য রাখা হয়েছিল তাকে। তদন্তে সেই দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। আর এতেই শুরু হয় ষড়যন্ত্র। বিদ্যালয়টির সভাপতিকে ম্যানেজ করে প্রধান শিক্ষক রাতে ওই শিক্ষককে ডেকে নিয়ে একটি পদত্যাগপত্রে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক সই নিয়ে নেন। এরপর থেকেই তিনি চাকরিহারা। অথচ পদত্যাগপত্র নিয়ে বিদ্যালয়টির যে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে অনুমোদন করানো হয়েছে সেই কমিটির মেয়াদও ঘটনার এক মাস আগে শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে চাকরি হারিয়ে সেই শিক্ষক সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলােতে গিয়ে লিখিত ভাবে জানিয়ে তার চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। সর্বশেষ তিনি তার এলাকার মন্ত্রীকে বিষয়টি জানালে তিনি সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু এই কর্মকর্তা মন্ত্রীর এই আদেশ আমলে না নিয়ে চুপ করে আছেন।

ঘটনাটি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের। গত ৯ জুন বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক লালমোহন দাস এই ঘটনার শিকার হন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগে লালমোহন দাস বলেন, তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাতের অনিয়মের অভিযোগ উঠলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সদস্য ছিলেন লালমোহন দাস। গত বছরের ১১ জুলাই এক লাখ ৬১ হাজার ১৮১ টাকার অনিয়ম পেয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষক তার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। একপর্যায়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেন প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী দাস চয়ন। ষড়যন্ত্র করেন কিভাবে তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ জুন রাত ১১টার দিকে মন্ত্রণালয়ে জরুরি একটি কাগজ পাঠনোর কথা বলে প্রধান শিক্ষক লালমােহনকে ডেকে পাঠান।

এরপর সেখানে গিয়ে দেখেন বিদ্যালয় সভাপতিসহ আরো কয়েকজন বসে ছিলেন। তারা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্রে সই করতে হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক তাকে মারতে উদ্যুত হলে তিনি ভয়ে পদত্যাগপত্র লিখে দেন। পরবর্তি সময়ে ২৭ জুন সেই পদত্যাগপত্র ব্যবস্থানা কমিটির সভায় অনুমোদন করা হয়। যদিও এই কমিটির মেয়াদ ১০ জুনই শেষ হয়ে যায়।

মহাপরিচালকের কাছে এই অভিযোগ দেয়ার পর তিনি পরিচালক (প্রশাসন)সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে লালমোহন দাস সুনামগঞ্জ এলাকা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের দারস্থ হন। তিনি সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেন। তবে বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছেন না এই শিক্ষা কর্মকর্তা। ফলে অসহায় হয়ে শিক্ষক লালমোহন দাস চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

যোগাযোগ করা হলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী দাস চয়ন বলেন, মেয়ে সংক্রান্ত একটি ঘটনার বিষয় নিয়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠলে লালমোহন দাস নিজের সম্মান রক্ষার্থে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।

তবে এ বিষয়ে লালমোহন দাস বলেন, তাকে বিদ্যালয়টি থেকে তাড়াতে এ ধরণের একটি ঘটনা সাজানাে হয়েছে এবং এটিই রটনা করা হচ্ছে।

এদিকে এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, মেয়ে সংক্রান্ত কারণেই ওই শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। পরীক্ষার হলে এই ঘটনা ঘটেছে। এতো শিক্ষার্থীর সামনে এ ঘটনা কি করে সম্ভব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার পক্ষে এটা সম্ভব এবং তা করেছে। শিক্ষকের পদত্যাগপত্র অনুমোদনের তারিখে আপনার কমিটি মেয়াদােত্তর্ণী ছিল এবং তা কার্যকর হয় কিভাবে- জবাবে তিনি বলেন, আমরা বৈধভাবেই সব করেছি। তা না হলে উনি আদালতে যাক, মামলা করুক।

জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত শুরু করা হবে।

শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ , ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৪

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রতিবেদন দেয়ায় শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগ

প্রতিনিধি, সিলেট

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির তদন্ত কমিটির সদস্য রাখা হয়েছিল তাকে। তদন্তে সেই দুর্নীতি প্রমাণ হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। আর এতেই শুরু হয় ষড়যন্ত্র। বিদ্যালয়টির সভাপতিকে ম্যানেজ করে প্রধান শিক্ষক রাতে ওই শিক্ষককে ডেকে নিয়ে একটি পদত্যাগপত্রে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক সই নিয়ে নেন। এরপর থেকেই তিনি চাকরিহারা। অথচ পদত্যাগপত্র নিয়ে বিদ্যালয়টির যে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে অনুমোদন করানো হয়েছে সেই কমিটির মেয়াদও ঘটনার এক মাস আগে শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে চাকরি হারিয়ে সেই শিক্ষক সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলােতে গিয়ে লিখিত ভাবে জানিয়ে তার চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। সর্বশেষ তিনি তার এলাকার মন্ত্রীকে বিষয়টি জানালে তিনি সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু এই কর্মকর্তা মন্ত্রীর এই আদেশ আমলে না নিয়ে চুপ করে আছেন।

ঘটনাটি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের। গত ৯ জুন বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক লালমোহন দাস এই ঘটনার শিকার হন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগে লালমোহন দাস বলেন, তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাতের অনিয়মের অভিযোগ উঠলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সদস্য ছিলেন লালমোহন দাস। গত বছরের ১১ জুলাই এক লাখ ৬১ হাজার ১৮১ টাকার অনিয়ম পেয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষক তার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। একপর্যায়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেন প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী দাস চয়ন। ষড়যন্ত্র করেন কিভাবে তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ জুন রাত ১১টার দিকে মন্ত্রণালয়ে জরুরি একটি কাগজ পাঠনোর কথা বলে প্রধান শিক্ষক লালমােহনকে ডেকে পাঠান।

এরপর সেখানে গিয়ে দেখেন বিদ্যালয় সভাপতিসহ আরো কয়েকজন বসে ছিলেন। তারা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্রে সই করতে হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক তাকে মারতে উদ্যুত হলে তিনি ভয়ে পদত্যাগপত্র লিখে দেন। পরবর্তি সময়ে ২৭ জুন সেই পদত্যাগপত্র ব্যবস্থানা কমিটির সভায় অনুমোদন করা হয়। যদিও এই কমিটির মেয়াদ ১০ জুনই শেষ হয়ে যায়।

মহাপরিচালকের কাছে এই অভিযোগ দেয়ার পর তিনি পরিচালক (প্রশাসন)সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে লালমোহন দাস সুনামগঞ্জ এলাকা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের দারস্থ হন। তিনি সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেন। তবে বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছেন না এই শিক্ষা কর্মকর্তা। ফলে অসহায় হয়ে শিক্ষক লালমোহন দাস চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

যোগাযোগ করা হলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী দাস চয়ন বলেন, মেয়ে সংক্রান্ত একটি ঘটনার বিষয় নিয়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠলে লালমোহন দাস নিজের সম্মান রক্ষার্থে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।

তবে এ বিষয়ে লালমোহন দাস বলেন, তাকে বিদ্যালয়টি থেকে তাড়াতে এ ধরণের একটি ঘটনা সাজানাে হয়েছে এবং এটিই রটনা করা হচ্ছে।

এদিকে এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, মেয়ে সংক্রান্ত কারণেই ওই শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। পরীক্ষার হলে এই ঘটনা ঘটেছে। এতো শিক্ষার্থীর সামনে এ ঘটনা কি করে সম্ভব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার পক্ষে এটা সম্ভব এবং তা করেছে। শিক্ষকের পদত্যাগপত্র অনুমোদনের তারিখে আপনার কমিটি মেয়াদােত্তর্ণী ছিল এবং তা কার্যকর হয় কিভাবে- জবাবে তিনি বলেন, আমরা বৈধভাবেই সব করেছি। তা না হলে উনি আদালতে যাক, মামলা করুক।

জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত শুরু করা হবে।