প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘বোন নবান্ন উৎসব’

প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বাংলা সংস্কৃতির নবপালক ‘বোন নবান্ন উৎসব ১৪২৯’। ব্যতিক্রমধর্মী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠন ‘আমরা একাত্তর’।

নারীদের প্রতি অসম্মান, নির্যাতন, অবহেলা দিন দিন বাড়ছে। এর থেকে মুক্তি পেতে, নারীদের সম্মানের জায়গায় দেখতে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান সংগঠনের সমন্বয়ক মাহফুজা জেসমিন।

গতকাল বিকেলে বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান। আমন্ত্রীত নারীদের ফুল ও উপহার দিয়ে বরণ করে নেন সংগঠনের পুরষ সদস্যরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ সংবাদকে বলেন, ‘একটি অভিনব, শুভ, ভাইবোনদের যুক্ত চমৎকার অনুষ্ঠান। আমাকে আপ্লুত করেছে। আমাদের সংস্কৃতিতে এর একটা চমৎকার প্রভাব পড়বে বলে মনে করি।’

একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সালমা আক্তার। তিনি বলেন, এককথায় বলবো অপূর্ব। নারীদের জন্য একটা সম্মানের শুভ সূচনা হলো। এভাবেই একটু একটু করে আমরা এগিয়ে যাবো। এমন অনুষ্ঠান থেকে একজন মানুষও যদি নিজেকে বদলাতে পারে, নারীদের প্রতি সম্মান বাড়াতে পারে তাহলে সমাজ বদলাতে বেশি সময় লাগবে না।

সমন্বয়ক মাহফুজা জেসমিন সংবাদকে বলেন, আসলে ভাইরা আমাদের কাছে মানে বোনদের কাছে প্রিয় তা আমরা নানাভাবে জানাই। কিন্তু বোনদেরকেও যে ভাইরা ভালোবাসে তার প্রকাশ হয় খুব কম। ভাইদের মঙ্গল কামনায় হিন্দুদের মধ্যে একটা উৎসব আছে ‘ভাঁইফোটা’। কিন্তু বোনদের জন্য কি এমন কোনো আয়োজন আছে (?)। আসলে পরিবারে, সমাজে, প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীদের সম্মান, মূল্যায়ন বৃদ্ধি করতেই এমন আয়োজন’। তবে, এটাই একমাত্র নাম নয়। অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নাম আছে। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাইফোঁটাকে ডাকা হয় ‘ভাইদুজ’ নামে। এসব জায়গায় ভ্রাতৃদ্বিতীয় পাঁচ দিনের দীপাবলি উৎসবের শেষ দিন। আবার গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাইবিজ’। নেপাল ও দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাইটিকা’। যা আসলে বিজয়াদশমীর পর সবচেয়ে বড় উৎসব। আবার কোন কোন অঞ্চলে এর নাম ‘যমদ্বিতীয়া’।

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোটা,

যমের দুয়ারে পরলো কাঁটা,

যমুনা দেন যমকে ফোঁটা,

আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা

হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসবের একটি ভাইফোঁটা। কার্তিক মাসের শুক্লায় এই ফোঁটা শুরু হয়। ভাইফোঁটার দিন ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোনেরা তাদের কপালে কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে তিনবার চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দেন। ধান, দুর্বা দিয়ে ভাইয়ের মাথায় আশীর্বাদ করেন, শঙ্খ বাজান, উলু দেন। তারা ফোঁটা দেয়ার সময় বলেন, ‘প্রতিপদে দিয়ে ফোঁটা দ্বিতীয়াতে নীতা, আজ হতে আমার ভাই যম দুয়ারে তিতা’ যার অর্থ, ভাইকে প্রতিপদে ফোঁটা দিয়ে দ্বিতীয়াতে নীতা বা নিমন্ত্রণ করা হচ্ছে।’

ভাইদের নিয়ে বোনদের এমন উৎসব থাকলেও বোনদের নিয়ে এই প্রথম এমন উৎসবের আয়োজন করলো আমরা একাত্তর নামের একটা সংগঠন।এক্ষেত্রে দ্বিতীয়াতে আমন্ত্রণ পালনের সময় দুপুরে খাওয়ার শুরুতে ঘি আর গরম ভাত মেখে ভাইয়ের হাতে তুলে দেন বোন। সেই সময় বোনেরা বলেন, ‘ভ্রাতস্তবানুজাতাহং ভুঙক্ষভক্তমিদং শুভম্। প্রীতয়ে যমরাজস?্য যমুনায়া বিশেষতঃ।’ আর দিদি হলে ভাইয়ের শুভকামনায় বলতে হয়, ‘ভ্রাতস্তবাগ্রজাতাহং।’

রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২ , ১২ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ৩১ রবিউস সানি ১৪৪৪

প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘বোন নবান্ন উৎসব’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বাংলা সংস্কৃতির নবপালক ‘বোন নবান্ন উৎসব ১৪২৯’। ব্যতিক্রমধর্মী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠন ‘আমরা একাত্তর’।

নারীদের প্রতি অসম্মান, নির্যাতন, অবহেলা দিন দিন বাড়ছে। এর থেকে মুক্তি পেতে, নারীদের সম্মানের জায়গায় দেখতে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান সংগঠনের সমন্বয়ক মাহফুজা জেসমিন।

গতকাল বিকেলে বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান। আমন্ত্রীত নারীদের ফুল ও উপহার দিয়ে বরণ করে নেন সংগঠনের পুরষ সদস্যরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ সংবাদকে বলেন, ‘একটি অভিনব, শুভ, ভাইবোনদের যুক্ত চমৎকার অনুষ্ঠান। আমাকে আপ্লুত করেছে। আমাদের সংস্কৃতিতে এর একটা চমৎকার প্রভাব পড়বে বলে মনে করি।’

একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সালমা আক্তার। তিনি বলেন, এককথায় বলবো অপূর্ব। নারীদের জন্য একটা সম্মানের শুভ সূচনা হলো। এভাবেই একটু একটু করে আমরা এগিয়ে যাবো। এমন অনুষ্ঠান থেকে একজন মানুষও যদি নিজেকে বদলাতে পারে, নারীদের প্রতি সম্মান বাড়াতে পারে তাহলে সমাজ বদলাতে বেশি সময় লাগবে না।

সমন্বয়ক মাহফুজা জেসমিন সংবাদকে বলেন, আসলে ভাইরা আমাদের কাছে মানে বোনদের কাছে প্রিয় তা আমরা নানাভাবে জানাই। কিন্তু বোনদেরকেও যে ভাইরা ভালোবাসে তার প্রকাশ হয় খুব কম। ভাইদের মঙ্গল কামনায় হিন্দুদের মধ্যে একটা উৎসব আছে ‘ভাঁইফোটা’। কিন্তু বোনদের জন্য কি এমন কোনো আয়োজন আছে (?)। আসলে পরিবারে, সমাজে, প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীদের সম্মান, মূল্যায়ন বৃদ্ধি করতেই এমন আয়োজন’। তবে, এটাই একমাত্র নাম নয়। অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নাম আছে। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাইফোঁটাকে ডাকা হয় ‘ভাইদুজ’ নামে। এসব জায়গায় ভ্রাতৃদ্বিতীয় পাঁচ দিনের দীপাবলি উৎসবের শেষ দিন। আবার গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাইবিজ’। নেপাল ও দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে ভাইফোঁটাকে বলে ‘ভাইটিকা’। যা আসলে বিজয়াদশমীর পর সবচেয়ে বড় উৎসব। আবার কোন কোন অঞ্চলে এর নাম ‘যমদ্বিতীয়া’।

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোটা,

যমের দুয়ারে পরলো কাঁটা,

যমুনা দেন যমকে ফোঁটা,

আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা

হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসবের একটি ভাইফোঁটা। কার্তিক মাসের শুক্লায় এই ফোঁটা শুরু হয়। ভাইফোঁটার দিন ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোনেরা তাদের কপালে কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে তিনবার চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দেন। ধান, দুর্বা দিয়ে ভাইয়ের মাথায় আশীর্বাদ করেন, শঙ্খ বাজান, উলু দেন। তারা ফোঁটা দেয়ার সময় বলেন, ‘প্রতিপদে দিয়ে ফোঁটা দ্বিতীয়াতে নীতা, আজ হতে আমার ভাই যম দুয়ারে তিতা’ যার অর্থ, ভাইকে প্রতিপদে ফোঁটা দিয়ে দ্বিতীয়াতে নীতা বা নিমন্ত্রণ করা হচ্ছে।’

ভাইদের নিয়ে বোনদের এমন উৎসব থাকলেও বোনদের নিয়ে এই প্রথম এমন উৎসবের আয়োজন করলো আমরা একাত্তর নামের একটা সংগঠন।এক্ষেত্রে দ্বিতীয়াতে আমন্ত্রণ পালনের সময় দুপুরে খাওয়ার শুরুতে ঘি আর গরম ভাত মেখে ভাইয়ের হাতে তুলে দেন বোন। সেই সময় বোনেরা বলেন, ‘ভ্রাতস্তবানুজাতাহং ভুঙক্ষভক্তমিদং শুভম্। প্রীতয়ে যমরাজস?্য যমুনায়া বিশেষতঃ।’ আর দিদি হলে ভাইয়ের শুভকামনায় বলতে হয়, ‘ভ্রাতস্তবাগ্রজাতাহং।’