শিক্ষাভবনে ফের টেন্ডারবাজদের দৌরাত্ম্য

  • হুমকি ভয়ভীতির ঘটনা ঘটছে
  • ঠিকাদারদের একটি পক্ষ রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছে

রাজধানীর শিক্ষা ভবনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ফের ‘টেন্ডারবাজদের’ দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। দরপত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শিক্ষা ভবনের কর্মকর্তাদের হুমকি, ভয়ভীতি ও মারধরের ঘটনাও ঘটছে। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এককভাবে নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রতিপক্ষকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) এবং বিভিন্ন প্রকল্পের অফিসের আশপাশেও যেতে দিচ্ছে না ঠিকাদারদের একটি পক্ষ। এই অবস্থায় ওই ঠিকাদার সিন্ডিকেটের প্রতিপক্ষ হিসেবে কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা একটি শক্তিশালী ফ্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছেন। এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক এক প্রভাবশালী সভাপতিও জোরালোভাবে শিক্ষা খাতের ঠিকাদারি কাজে অংশ নিচ্ছেন। কাজ পেতে তিনিও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এটি মোট খাতওয়ারি বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা খাতওয়ারি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে।

জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষা খাতে মোট বাজেট বরাদ্দের ৮০-৮৫ ভাগ অর্থ ব্যয় হয় অবকাঠামো উন্নয়নে।’ অবকাঠামো নির্মাণে ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে বর্তমান অর্থবছরে শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল অর্থ বরাদ্দও রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদার সিন্ডিকেটের টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও ভয়ভীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৫ জুলাই শিক্ষা ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন ইইডি ও মাউশির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই সমাবেশের পর ঠিকাদারদের কয়েকটি পক্ষ দলবেঁধে শিক্ষা ভবনে ঘুরাফেরা করছেন, মহড়া দিচ্ছেন। সবাই আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া। এতে শিক্ষা ভবনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কে রয়েছেন।

মাউশির কর্মকর্তারা জানান, পছন্দমতো কাজ না পাওয়ায় গত ৪ জুলাই প্রকল্পের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ভবনের একজন নারী সহকারী পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করে ওই কর্মকর্তা এবং অপর একজন উপপরিচালককে গালিগালাজ করেন কয়েকজন ঠিকাদার। এ সময় তারা ওই কর্মকর্তার কক্ষের দরজায় লাথি মারেন এবং হুমকি-ধামকি দিয়ে চলে যান। পরে মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক ঘটনাটি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে অবহিত করেন। মাউশি মহাপরিচালক সংবাদকে বলেছেন, ‘বিষয়টি আমি মন্ত্রীকে (শিক্ষামন্ত্রী) জানিয়েছি। এখন কোন সমস্যা নেই। আমরা সতর্ক রয়েছি।’ তিনি বিতর্কিত ঠিকাদারদের তালিকা প্রণয়নের জন্য মাউশির একাধিক পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি মাউশির ফাইন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট শাখার অপর এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করে ওই কর্মকর্তাকে কড়া ভাষায় গালমন্দ করেন কয়েকজন ঠিকাদার। এ জন্য ওই কর্মকর্তা শিক্ষা ভবন থেকে অন্যত্র বদলি হওয়ার জন্য তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদবির করছেন বলে জানা গেছে।

ঠিকাদারদের হুমকি পাওয়া ওই কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, বরিশাল এলাকার কয়েকটি কলেজে প্রায় চার কোটি টাকার আসবাবপত্র ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের কাজ অবৈধভাবে নিতে চায় দুটি গ্রুপের ঠিকাদার। এ জন্য তারা নিয়মিত মাউশি কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষা ভবন নির্মাণে সবচেয়ে বেশি কাজ করছেন ঠিকাদার যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লিয়াকত সিকদারও সম্প্রতি শিক্ষাসংক্রান্ত ঠিকাদারি কাজে জোরালোভাবে অংশগ্রহণ করছেন। এ ছাড়া কুমিল্লা, চাঁদপুর, ঢাকা ও আশপাশের জেলার কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতাও সঙ্ঘবদ্ধভাবে ঠিকাদারি কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। এ জন্য শিক্ষা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা মাউশি ও ইইডিতে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেছেন, ‘আমাদের লোকজন শিক্ষা ভবনের কোন কর্মকর্তাকে হুমকিও দেয়নি, ভয়ভীতিও দেখায়নি। আমরা চাই, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেয়া হোক। তবে সর্বনিম্ন দরদাতা ও পেশাদার ঠিকাদারদের বঞ্চিত করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কোন অপেশাদার ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি।’

শিক্ষা প্রশাসনে সবচেয়ে বেশি ঠিকাদারি কাজ করছেন শফিকুল ইসলাম। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে বর্তমানে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর সরকারি কলেজ, ধানমন্ডি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও নায়েমসহ (জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি) রাজধানীতে ২০-২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ তলা ও দশম তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। একই ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান বেশিসংখ্যক কাজ পাওয়ায় যথাসময়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মাউশির একাধিক পরিচালক।

এদিকে টেন্ডারবাজদের বেপরোয়া কর্মকান্ডের কারণে ‘সেসিপ’ প্রকল্পের কেনাকাটার একটি দরপত্রের শিডিউল জমাদানের শেষ দিন গত ৯ জুলাই শিক্ষা ভবনে প্রকল্প অফিসের সামনে প্রায় অর্ধশত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। সাধারণত এই ধরনের শিডিউল জমাদানের দিন ৫-৭ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু ওইদিন বেশিসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করায় ‘সেসিপ’ প্রকল্পের একজন কর্মকর্তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে ওই প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন।

সম্প্রতি একই সিন্ডিকেটের ৪-৫ জন যুবক নিজেরা কাজ পেতে শিক্ষা ভবনে অপর একটি প্রকল্পের অফিসে গিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তাকে সতর্ক করেন, তিনি (পিডি) যেন ওই যুবকদের নিয়মিত কাজ দেন। ওই প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘এভাবে ঠিকাদাররা ভয়ভীতি দেখালে তো এখানে চাকরিই করা যাবে না। বদলি হয়ে কলেজেই চলে যাব। মানসম্মান ও নীতি-আদর্শ বির্সজন দেব না।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গত ১০ বছরে (২০০৯-১৮) শিক্ষা খাতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এই সময়ে ১১ হাজার ৩০৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও ১২ হাজার ৬৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণকাজ ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হবে।

এছাড়াও ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে পুরনো জরাজীর্ণ ভবনগুলোয়। সব মিলিয়ে ১০ বছরে সারাদেশে ২৩ হাজার ৯৭৯টি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) মাধ্যমে। এই সময়ে জরাজীর্ণ আরও সাত হাজার ৬৪১টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সংস্কার করা হয়েছে।

সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯ , ৭ শ্রাবন ১৪২৫, ১৮ জিলকদ ১৪৪০

শিক্ষাভবনে ফের টেন্ডারবাজদের দৌরাত্ম্য

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

  • হুমকি ভয়ভীতির ঘটনা ঘটছে
  • ঠিকাদারদের একটি পক্ষ রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছে

রাজধানীর শিক্ষা ভবনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ফের ‘টেন্ডারবাজদের’ দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। দরপত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শিক্ষা ভবনের কর্মকর্তাদের হুমকি, ভয়ভীতি ও মারধরের ঘটনাও ঘটছে। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এককভাবে নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রতিপক্ষকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) এবং বিভিন্ন প্রকল্পের অফিসের আশপাশেও যেতে দিচ্ছে না ঠিকাদারদের একটি পক্ষ। এই অবস্থায় ওই ঠিকাদার সিন্ডিকেটের প্রতিপক্ষ হিসেবে কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা একটি শক্তিশালী ফ্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছেন। এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক এক প্রভাবশালী সভাপতিও জোরালোভাবে শিক্ষা খাতের ঠিকাদারি কাজে অংশ নিচ্ছেন। কাজ পেতে তিনিও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এটি মোট খাতওয়ারি বাজেটের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা খাতওয়ারি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে।

জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষা খাতে মোট বাজেট বরাদ্দের ৮০-৮৫ ভাগ অর্থ ব্যয় হয় অবকাঠামো উন্নয়নে।’ অবকাঠামো নির্মাণে ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে বর্তমান অর্থবছরে শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল অর্থ বরাদ্দও রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদার সিন্ডিকেটের টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও ভয়ভীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৫ জুলাই শিক্ষা ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন ইইডি ও মাউশির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই সমাবেশের পর ঠিকাদারদের কয়েকটি পক্ষ দলবেঁধে শিক্ষা ভবনে ঘুরাফেরা করছেন, মহড়া দিচ্ছেন। সবাই আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া। এতে শিক্ষা ভবনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কে রয়েছেন।

মাউশির কর্মকর্তারা জানান, পছন্দমতো কাজ না পাওয়ায় গত ৪ জুলাই প্রকল্পের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ভবনের একজন নারী সহকারী পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করে ওই কর্মকর্তা এবং অপর একজন উপপরিচালককে গালিগালাজ করেন কয়েকজন ঠিকাদার। এ সময় তারা ওই কর্মকর্তার কক্ষের দরজায় লাথি মারেন এবং হুমকি-ধামকি দিয়ে চলে যান। পরে মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক ঘটনাটি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে অবহিত করেন। মাউশি মহাপরিচালক সংবাদকে বলেছেন, ‘বিষয়টি আমি মন্ত্রীকে (শিক্ষামন্ত্রী) জানিয়েছি। এখন কোন সমস্যা নেই। আমরা সতর্ক রয়েছি।’ তিনি বিতর্কিত ঠিকাদারদের তালিকা প্রণয়নের জন্য মাউশির একাধিক পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি মাউশির ফাইন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট শাখার অপর এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করে ওই কর্মকর্তাকে কড়া ভাষায় গালমন্দ করেন কয়েকজন ঠিকাদার। এ জন্য ওই কর্মকর্তা শিক্ষা ভবন থেকে অন্যত্র বদলি হওয়ার জন্য তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদবির করছেন বলে জানা গেছে।

ঠিকাদারদের হুমকি পাওয়া ওই কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, বরিশাল এলাকার কয়েকটি কলেজে প্রায় চার কোটি টাকার আসবাবপত্র ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের কাজ অবৈধভাবে নিতে চায় দুটি গ্রুপের ঠিকাদার। এ জন্য তারা নিয়মিত মাউশি কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষা ভবন নির্মাণে সবচেয়ে বেশি কাজ করছেন ঠিকাদার যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লিয়াকত সিকদারও সম্প্রতি শিক্ষাসংক্রান্ত ঠিকাদারি কাজে জোরালোভাবে অংশগ্রহণ করছেন। এ ছাড়া কুমিল্লা, চাঁদপুর, ঢাকা ও আশপাশের জেলার কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতাও সঙ্ঘবদ্ধভাবে ঠিকাদারি কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। এ জন্য শিক্ষা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা মাউশি ও ইইডিতে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেছেন, ‘আমাদের লোকজন শিক্ষা ভবনের কোন কর্মকর্তাকে হুমকিও দেয়নি, ভয়ভীতিও দেখায়নি। আমরা চাই, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেয়া হোক। তবে সর্বনিম্ন দরদাতা ও পেশাদার ঠিকাদারদের বঞ্চিত করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কোন অপেশাদার ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি।’

শিক্ষা প্রশাসনে সবচেয়ে বেশি ঠিকাদারি কাজ করছেন শফিকুল ইসলাম। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে বর্তমানে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর সরকারি কলেজ, ধানমন্ডি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও নায়েমসহ (জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি) রাজধানীতে ২০-২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ তলা ও দশম তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। একই ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান বেশিসংখ্যক কাজ পাওয়ায় যথাসময়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মাউশির একাধিক পরিচালক।

এদিকে টেন্ডারবাজদের বেপরোয়া কর্মকান্ডের কারণে ‘সেসিপ’ প্রকল্পের কেনাকাটার একটি দরপত্রের শিডিউল জমাদানের শেষ দিন গত ৯ জুলাই শিক্ষা ভবনে প্রকল্প অফিসের সামনে প্রায় অর্ধশত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। সাধারণত এই ধরনের শিডিউল জমাদানের দিন ৫-৭ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু ওইদিন বেশিসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করায় ‘সেসিপ’ প্রকল্পের একজন কর্মকর্তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে ওই প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন।

সম্প্রতি একই সিন্ডিকেটের ৪-৫ জন যুবক নিজেরা কাজ পেতে শিক্ষা ভবনে অপর একটি প্রকল্পের অফিসে গিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তাকে সতর্ক করেন, তিনি (পিডি) যেন ওই যুবকদের নিয়মিত কাজ দেন। ওই প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘এভাবে ঠিকাদাররা ভয়ভীতি দেখালে তো এখানে চাকরিই করা যাবে না। বদলি হয়ে কলেজেই চলে যাব। মানসম্মান ও নীতি-আদর্শ বির্সজন দেব না।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গত ১০ বছরে (২০০৯-১৮) শিক্ষা খাতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এই সময়ে ১১ হাজার ৩০৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও ১২ হাজার ৬৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণকাজ ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হবে।

এছাড়াও ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে পুরনো জরাজীর্ণ ভবনগুলোয়। সব মিলিয়ে ১০ বছরে সারাদেশে ২৩ হাজার ৯৭৯টি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) মাধ্যমে। এই সময়ে জরাজীর্ণ আরও সাত হাজার ৬৪১টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সংস্কার করা হয়েছে।