চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার চাপড়া ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় উপজেলার কোলাগাও ইউনিয়নে গড়ে উঠা বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, বেসরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো সরকারি জায়গা প্রতিযোগিতা করে দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দখলকৃত জায়গার মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রবাহমান খাল, কর্ণফুলী নদীর পাড়, ভেল্লা পাড়া খাল, বোয়ালখালী খালসহ বিভিন্ন জোয়ার ভাটার প্রবাহমান খালের জায়গাও তারা দখল করে নিয়েছে। সম্প্রতি পটিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সাব্বির আহমদ সানি মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়ে আল বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখলে রাখা একটি খালের জায়গা দখলমুক্ত করলেও পুনরায় দখলে নিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
উপজেলার চাপড়া ভূমি অফিস সূত্রে জানায় উপজেলার কোলাগাও, হাবিলাসদ্বীপ, জিরি, কুসুমপুরাসহ চারটি ইউনিয়নের ২৬টি মৌজায় ৯১২.২৫ একর সরকারি জমি রয়েছে। এরমধ্যে লিজ যোগ্য রয়েছে ১১৪ একর বাকি ৭৯৮.২৫ একর জমি বাকি থাকার কথা থাকলে লিজ দেয়া হয়েছে প্রায় ৫০০ একরেরও বেশি সরকারি জায়গা। প্রশাসনের একটি অসাধু চক্রের সঙ্গে হাত করে সরকারি জায়গার ওপর শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে অন্যদিকে এলাকাটিতে শিল্প কারখানা না করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকা শর্তেও তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন মানছে না। সরকারি জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আল বারকা পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, আকলিমা পাওয়ার প্ল্যান লিমিটেড, কর্ণফুলী পাওয়ার প্ল্যান লিমিটেড, ফোর এইচ গ্রুপ, ওয়েস্টিন মেরিন শিপ ইয়ার্ড লিমিটেডসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। পরিবেশ বিনষ্টকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো জনবসতিতে স্থাপন করায় এর প্রতিবাদে কোলাগাও এলাকার সচেতন এলাকাবাসী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। পরিবেশ নষ্ট করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি সরকারি নদী নালা, খাল বিল, তারা দখলে নিচ্ছে বলে সচেতন নাগরিক কমিটির সংগঠক মোহাম্মদ পারভেজ রানা জানান।
এছাড়াও ভূমি অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্তরা মোটা অঙ্কের টাকার সুবিধা নিয়ে সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখলে দেয়ার সহায়তা করে যাচ্ছেন। ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঠিক সময়ে অফিসেও আসে না এবং বহিরাগত কিছু লোকজন অফিসে চেয়ার টেবিল নিয়ে ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছে। অফিসের বহিরাগত মোহাম্মদ সুমন ও কেশব দাশ কেউ ২০ বছর আর কেউ ৩-৪ বছর অফিসে কাজ করে যাচ্ছেন।
কোলাগাও ইউনিয়নের চাপড়া এলাকার মৃত লাল মোহন চৌধুরীর পুত্র তপন চৌধুরী একই এলাকার তাপস চৌধুরী অবৈধভাবে সরকারি জায়গা লিজ নেয়ার ঘটনায় পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ২০১০ সালে লিজ বাতিল করেন। বাতিলকৃত সরকারি লিজের জায়গা পটিয়া ভূমি অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে গোপনে লিজ দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এছাড়া কোলাগাও চাপড়া এলাকার মৃত মদন মোহন চৌধুরীর পুত্র তাপস চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২৪ জন লিখিত অভিযোগও করেছেন। তাপস চৌধুরী বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি অফিস থেকে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পত্র চুরির অভিযোগে বিচারাধীন একটি মামলাও রয়েছে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও অভিযোগকারী তপন চৌধুরী জানায়। এ প্রসঙ্গে কোলাগাও ইউপি চেয়ারম্যান আহমদ নুর বলেন, আমার এলাকার সরকারি খাস জায়গাগুলো বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিকেরা অবৈধভাবে দখলে নেয়ার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)কে জানানোর পরও কোন কাজ হয়নি, সরকারি কিছু কর্মকর্তাও এসব কর্মকান্ডে জড়িত আছেন বলে তিনি জানান।
চাপড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রমিজ আহামদ জানান, সরকারি খাস জায়গা দখলের বিষয়টি আমরা এসিল্যান্ডকে জানিয়েছি, সম্প্রতি এসিল্যান্ড মোবাইল কোর্টের অভিযান চালিয়ে একটি কারখানার কবল থেকে সরকারি খালের জায়গা উদ্ধার করে দখলমুক্ত করেছেন।
ভূমি কর্মকর্তাদের সহায়তায় সরকারি জায়গা শিল্পকারখানায় দখলে নেয়ার প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) সাব্বির আহমদ সানি বলেন, কিছুদিন আগে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকারি জায়গা দখল করার খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করেছি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
রবিবার, ০৭ জুলাই ২০১৯ , ২৩ আষাঢ় ১৪২৫, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪০
প্রতিনিধি, পটিয়া (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার চাপড়া ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় উপজেলার কোলাগাও ইউনিয়নে গড়ে উঠা বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, বেসরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো সরকারি জায়গা প্রতিযোগিতা করে দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দখলকৃত জায়গার মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রবাহমান খাল, কর্ণফুলী নদীর পাড়, ভেল্লা পাড়া খাল, বোয়ালখালী খালসহ বিভিন্ন জোয়ার ভাটার প্রবাহমান খালের জায়গাও তারা দখল করে নিয়েছে। সম্প্রতি পটিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সাব্বির আহমদ সানি মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়ে আল বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখলে রাখা একটি খালের জায়গা দখলমুক্ত করলেও পুনরায় দখলে নিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
উপজেলার চাপড়া ভূমি অফিস সূত্রে জানায় উপজেলার কোলাগাও, হাবিলাসদ্বীপ, জিরি, কুসুমপুরাসহ চারটি ইউনিয়নের ২৬টি মৌজায় ৯১২.২৫ একর সরকারি জমি রয়েছে। এরমধ্যে লিজ যোগ্য রয়েছে ১১৪ একর বাকি ৭৯৮.২৫ একর জমি বাকি থাকার কথা থাকলে লিজ দেয়া হয়েছে প্রায় ৫০০ একরেরও বেশি সরকারি জায়গা। প্রশাসনের একটি অসাধু চক্রের সঙ্গে হাত করে সরকারি জায়গার ওপর শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে অন্যদিকে এলাকাটিতে শিল্প কারখানা না করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকা শর্তেও তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন মানছে না। সরকারি জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আল বারকা পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, আকলিমা পাওয়ার প্ল্যান লিমিটেড, কর্ণফুলী পাওয়ার প্ল্যান লিমিটেড, ফোর এইচ গ্রুপ, ওয়েস্টিন মেরিন শিপ ইয়ার্ড লিমিটেডসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। পরিবেশ বিনষ্টকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো জনবসতিতে স্থাপন করায় এর প্রতিবাদে কোলাগাও এলাকার সচেতন এলাকাবাসী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। পরিবেশ নষ্ট করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি সরকারি নদী নালা, খাল বিল, তারা দখলে নিচ্ছে বলে সচেতন নাগরিক কমিটির সংগঠক মোহাম্মদ পারভেজ রানা জানান।
এছাড়াও ভূমি অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্তরা মোটা অঙ্কের টাকার সুবিধা নিয়ে সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখলে দেয়ার সহায়তা করে যাচ্ছেন। ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঠিক সময়ে অফিসেও আসে না এবং বহিরাগত কিছু লোকজন অফিসে চেয়ার টেবিল নিয়ে ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছে। অফিসের বহিরাগত মোহাম্মদ সুমন ও কেশব দাশ কেউ ২০ বছর আর কেউ ৩-৪ বছর অফিসে কাজ করে যাচ্ছেন।
কোলাগাও ইউনিয়নের চাপড়া এলাকার মৃত লাল মোহন চৌধুরীর পুত্র তপন চৌধুরী একই এলাকার তাপস চৌধুরী অবৈধভাবে সরকারি জায়গা লিজ নেয়ার ঘটনায় পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ২০১০ সালে লিজ বাতিল করেন। বাতিলকৃত সরকারি লিজের জায়গা পটিয়া ভূমি অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে গোপনে লিজ দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এছাড়া কোলাগাও চাপড়া এলাকার মৃত মদন মোহন চৌধুরীর পুত্র তাপস চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২৪ জন লিখিত অভিযোগও করেছেন। তাপস চৌধুরী বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি অফিস থেকে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পত্র চুরির অভিযোগে বিচারাধীন একটি মামলাও রয়েছে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও অভিযোগকারী তপন চৌধুরী জানায়। এ প্রসঙ্গে কোলাগাও ইউপি চেয়ারম্যান আহমদ নুর বলেন, আমার এলাকার সরকারি খাস জায়গাগুলো বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিকেরা অবৈধভাবে দখলে নেয়ার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)কে জানানোর পরও কোন কাজ হয়নি, সরকারি কিছু কর্মকর্তাও এসব কর্মকান্ডে জড়িত আছেন বলে তিনি জানান।
চাপড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রমিজ আহামদ জানান, সরকারি খাস জায়গা দখলের বিষয়টি আমরা এসিল্যান্ডকে জানিয়েছি, সম্প্রতি এসিল্যান্ড মোবাইল কোর্টের অভিযান চালিয়ে একটি কারখানার কবল থেকে সরকারি খালের জায়গা উদ্ধার করে দখলমুক্ত করেছেন।
ভূমি কর্মকর্তাদের সহায়তায় সরকারি জায়গা শিল্পকারখানায় দখলে নেয়ার প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) সাব্বির আহমদ সানি বলেন, কিছুদিন আগে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকারি জায়গা দখল করার খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করেছি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।