করোনা সংক্রমণ

অনেকের লড়াই দীর্ঘ হচ্ছে সংক্রমণ ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে

দেশে করোনা আক্রান্তদের দীর্ঘসময় লড়াই করতে হচ্ছে। কেউ কেউ দীর্ঘসময় করোনার সঙ্গে লড়াই করে মারা যাচ্ছেন। সর্বশেষ গতকালই এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুস শহীদ প্রায় একমাস করোনায় ভোগে মারা যান। এর আগে গত ২৫ জুলাই তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে ‘পজেটিভ’। ২৭ জুলাই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আবার অনেকের নমুনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ ফল এলেও দীর্ঘসময় ‘উপসর্গ’ নিয়েই আইসোলেশনে থাকতে হচ্ছে। কারও কারওর ক্ষেত্রে এর উল্টোটাও হয়েছে, উপসর্গ থেকে মুক্ত হওয়ার দীর্ঘসময় পরও ‘পজেটিভ’ ফল হয়েছে। তবে দীর্ঘসময় করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে পরাস্ত হওয়া রোগীদের বেশির ভাগই বয়স্ক নাগরিক। আর লম্বা লড়াইয়ে বিজয়ীদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। এভাবে করোনার সঙ্গে রোগীদের লড়াই যতোই দীর্ঘ হবে, দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতিও সেভাবে দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আক্রান্ত হবার পর একজন রোগী থেকে সাধারণত ১৪ দিন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে অনেকেই ৫/৭ দিনে জ¦র, সর্দি ও অন্য সাধারণ উপসর্গ থেকে মুক্ত হচ্ছেন, এরপর এই ধরনের রোগীদের করোনামুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে, যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত নয়। পুনরায় টেস্ট না করেই রোগীকে করোনামুক্ত বলা হচ্ছে। এর ফলে অনেকেই বাড়ি গিয়েও নানা উপসর্গে আক্রান্ত হচ্ছেন, সংক্রমণ ঝুঁকিও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

দীর্ঘ সময় করোনা পজেটিভ থাকার কারণ সম্পর্কে আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম আলমগীর গতকাল সংবাদকে বলেছেন, ‘এটা বিভিন্ন কারণে হয়। করোনা থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি গিয়েও অনেকে বিভিন্ন ধরনের কম্পিøকেশনে (রোগ জটিলতা) ভোগছেন। প্রথমত করোনাভাইরাসটা নতুন ডিজিস রোগ), এর অনেক কিছুই এখনও আমরা জানি না। তবে হাসপাতালে যা হয়, বিশেষ করে যাদের ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তাদের বেশির ভাগই ভাইরাস নেগেটিভ হয়ে যায়, কিন্তু ভাইরাস শরীরের যেসব অর্গানের ক্ষতি করে সেগুলো থেকে রিকভারি পেতে সময় লাগে। এ কারণেই কারও কারও ক্ষেত্রে করোনা সারতে দীর্ঘসময় লাগছে।’ ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া। বয়স ৬০। গত ১০ জুন থেকে হালকা জ্বর ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। ১৪ জুন তিনি পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ১৭ জুন তার পরীক্ষার রিপোর্ট আসে ‘পজেটিভ’, ওইদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ভর্তি হন। এরপর ২০ জুন পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করা হলে ২২ জুনও রিপোর্ট আসে ‘পজেটিভ’। সর্বশেষ গত ১০ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালেই মারা যান শাহজাহান মিয়া। মৃত্যুর পরদিন তার রিপোর্ট আসে ‘নেগেটিভ’। তিনি করোনার সঙ্গে একমাস লড়াই করার পর মারা যান।

এক সপ্তাহ ‘জ¦র ও সর্দি’তে ভোগে একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ‘মনছুর হোসেন’ (ডাক নাম, বয়স ৪২) নিয়ে গত ১৫ জুন রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নমুনা জমা দেন। দু’দিন পর রিপোর্ট পান ‘করোনা পজেটিভ’। এরপর জ¦র সেরে যাওয়ায় তিন দিন পর পুনরায় নমুনা জমা দিলে রিপোর্ট আসে ‘করোনা নেগেটিভ’। কিন্তু রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ এলেও সর্দি, হালকা মাথা ব্যথা ছিল আরও ২০/২২ দিন।

মনছুর হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘অসুস্থতার পুরো সময়টাই আমি বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু আমার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও সর্দি, মাথা ব্যথাসহ কিছু সমস্যা ছিল। এ কারণে নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার তিন সপ্তাহ পরও নমুনা জমা দেয়। তখন রিপোর্ট আসে ‘করোনা পজেটিভ’। এরপর ৫/৭ দিন আমি পুরোপুরি সুস্থ অনুভব করি। তখন আবারও নমুনা জমা দেয়। রিপোর্ট আসে ‘করোনা নেগেটিভ’। এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ।’ তিনি জানান, করোনা উপসর্গ থেকে তার পুরোপুরি মুক্ত হতে সময় লেগেছে ৩৫/৩৬ দিন।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেছেন, ‘রোগী যতদিন আক্রান্ত থাকবে, যতদিন তার ভাইরাস বের হতে থাকবে, ততদিন সে আরেকজনকে সংক্রমণ করতে পারে। এক্ষেত্রে যদি আইসোলেশন ঠিকমতো হয়... এবং যারা সেবা দেবে তাদের সুরক্ষা যদি ঠিকমতো হয় তাহলে সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াবে না। যে দীর্ঘদিন ভাইরাস বহন করবে তার থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকবেই। এক্ষেত্রে আইসোলেশনের বিকল্প নেই।’

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণদের সংখ্যা বেশি। কিন্তু করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যা বেশি।

গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীদের ৫৫ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এরমধ্যে আবার ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৮ শতাংশ এবং ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২৭ শতাংশ।

অন্যদিকে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ৬০ বছর ও এর বেশি বয়সী ৩৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

করোনায় বয়স্ক ব্যক্তিদের বেশি মৃত্যু হওয়ার কারণ সম্পর্কে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম আলমগীর বলেন, ‘এটা এলে সারাবিশে^ই হচ্ছে, করোনায় বয়স্ক নাগরিকদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। কারণ বয়স্ক ব্যক্তিরা এমনিতেই নানা কম্পি্লকেশনে ভোগেন। এই অবস্থায় করোভাইরাস শরীরে ঢোকার পর শরীরের অন্য অর্গানের ক্ষতি করে, এতে এক পর্যায়ে ভাইরাস বের হলেও শরীরের অন্য অর্গানের রিকভারি হয় না। এ কারণে বয়স্ক নাগরিকদের বেশি মৃত্যু হচ্ছে।’

সম্প্রতি করোনায় মৃত্যুর হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ সম্পর্কে ডা. এসএম আলমগীর বলেন, ‘এখন যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই গত ছয় সপ্তাহ ধরে অসুস্থ ছিল, হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এই মৃত্যুর হারটাও কমে আসছে। খুব শীঘ্রই সংক্রমণও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।’

এদিকে রাজশাহীর সাংবাদিক আসাদুজ্জামান নূরের করোনা পজেটিভ থেকে নেগেটিভ হতে সময় লেগেছে ৫৭ দিন। মৃদু জ্বরে আক্রান্ত হবার পর গত ১৮ জুন তিনি ‘করোনা পজেটিভ’ রিপোর্ট পান। এরপর টানা চারবার নমুনা পরীক্ষায় রেজাল্ট ‘পজেটিভ’ আসে। গত ১৪ আগস্ট দেয়া নমুনা পরীক্ষায় ‘করোনা নেগেটিভ’ আসে। এই সময়ে দু’দিন জ্বর ছাড়া আর কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু বারবার তার রিপোর্ট পজেটিভ আসছিল।’

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত ৩১ ডিসেম্বর প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর বিশ^ব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পরে করোনা সংক্রমণ। আর বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর গত ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

গতকাল পর্যন্ত দেশে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে দেশে করোনায় মোট ৩ হাজার ৯৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের শীর্ষ দেশের তালিকায় ১৫তম স্থানে রয়েছে। বিশে^র ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

image

স্বাস্থ্য ঝুঁকির কোন তোয়াক্কা করছে না সাধারণ মানুষ। হাটে-মাঠে-ঘাটে এবং সড়ক-বাজারে লোক সমাগম বেড়েই চলেছে। মাস্ক পরেন না অনেকে, দূরত্ব মেনে চলেন না। গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে তোলা ছবি -সংবাদ

আরও খবর
সংসদীয় ৩টি আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা
১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের ‘আসল খলনায়ক’ জিয়া : প্রধানমন্ত্রী
মা-মেয়েকে নির্যাতন
পাঁচটি সংসদীয় আসনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৪১ জন
ঢাকা মেডিকেলে করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে
করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা অঘোষিতভাবে বন্ধ
২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৯৭৩
তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
সংসদীয় ৩টি আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা
পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস
আশুরায় উন্মুক্তস্থানে তাজিয়া মিছিল করা যাবে না
ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সোমবার, ২৪ আগস্ট ২০২০ , ৪ মহররম ১৪৪২, ২৪ আগস্ট ২০২০

করোনা সংক্রমণ

অনেকের লড়াই দীর্ঘ হচ্ছে সংক্রমণ ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে

রাকিব উদ্দিন

image

স্বাস্থ্য ঝুঁকির কোন তোয়াক্কা করছে না সাধারণ মানুষ। হাটে-মাঠে-ঘাটে এবং সড়ক-বাজারে লোক সমাগম বেড়েই চলেছে। মাস্ক পরেন না অনেকে, দূরত্ব মেনে চলেন না। গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে তোলা ছবি -সংবাদ

দেশে করোনা আক্রান্তদের দীর্ঘসময় লড়াই করতে হচ্ছে। কেউ কেউ দীর্ঘসময় করোনার সঙ্গে লড়াই করে মারা যাচ্ছেন। সর্বশেষ গতকালই এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুস শহীদ প্রায় একমাস করোনায় ভোগে মারা যান। এর আগে গত ২৫ জুলাই তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে ‘পজেটিভ’। ২৭ জুলাই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আবার অনেকের নমুনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ ফল এলেও দীর্ঘসময় ‘উপসর্গ’ নিয়েই আইসোলেশনে থাকতে হচ্ছে। কারও কারওর ক্ষেত্রে এর উল্টোটাও হয়েছে, উপসর্গ থেকে মুক্ত হওয়ার দীর্ঘসময় পরও ‘পজেটিভ’ ফল হয়েছে। তবে দীর্ঘসময় করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে পরাস্ত হওয়া রোগীদের বেশির ভাগই বয়স্ক নাগরিক। আর লম্বা লড়াইয়ে বিজয়ীদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। এভাবে করোনার সঙ্গে রোগীদের লড়াই যতোই দীর্ঘ হবে, দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতিও সেভাবে দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আক্রান্ত হবার পর একজন রোগী থেকে সাধারণত ১৪ দিন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে অনেকেই ৫/৭ দিনে জ¦র, সর্দি ও অন্য সাধারণ উপসর্গ থেকে মুক্ত হচ্ছেন, এরপর এই ধরনের রোগীদের করোনামুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে, যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত নয়। পুনরায় টেস্ট না করেই রোগীকে করোনামুক্ত বলা হচ্ছে। এর ফলে অনেকেই বাড়ি গিয়েও নানা উপসর্গে আক্রান্ত হচ্ছেন, সংক্রমণ ঝুঁকিও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

দীর্ঘ সময় করোনা পজেটিভ থাকার কারণ সম্পর্কে আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম আলমগীর গতকাল সংবাদকে বলেছেন, ‘এটা বিভিন্ন কারণে হয়। করোনা থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি গিয়েও অনেকে বিভিন্ন ধরনের কম্পিøকেশনে (রোগ জটিলতা) ভোগছেন। প্রথমত করোনাভাইরাসটা নতুন ডিজিস রোগ), এর অনেক কিছুই এখনও আমরা জানি না। তবে হাসপাতালে যা হয়, বিশেষ করে যাদের ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তাদের বেশির ভাগই ভাইরাস নেগেটিভ হয়ে যায়, কিন্তু ভাইরাস শরীরের যেসব অর্গানের ক্ষতি করে সেগুলো থেকে রিকভারি পেতে সময় লাগে। এ কারণেই কারও কারও ক্ষেত্রে করোনা সারতে দীর্ঘসময় লাগছে।’ ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া। বয়স ৬০। গত ১০ জুন থেকে হালকা জ্বর ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। ১৪ জুন তিনি পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ১৭ জুন তার পরীক্ষার রিপোর্ট আসে ‘পজেটিভ’, ওইদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ভর্তি হন। এরপর ২০ জুন পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করা হলে ২২ জুনও রিপোর্ট আসে ‘পজেটিভ’। সর্বশেষ গত ১০ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালেই মারা যান শাহজাহান মিয়া। মৃত্যুর পরদিন তার রিপোর্ট আসে ‘নেগেটিভ’। তিনি করোনার সঙ্গে একমাস লড়াই করার পর মারা যান।

এক সপ্তাহ ‘জ¦র ও সর্দি’তে ভোগে একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ‘মনছুর হোসেন’ (ডাক নাম, বয়স ৪২) নিয়ে গত ১৫ জুন রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নমুনা জমা দেন। দু’দিন পর রিপোর্ট পান ‘করোনা পজেটিভ’। এরপর জ¦র সেরে যাওয়ায় তিন দিন পর পুনরায় নমুনা জমা দিলে রিপোর্ট আসে ‘করোনা নেগেটিভ’। কিন্তু রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ এলেও সর্দি, হালকা মাথা ব্যথা ছিল আরও ২০/২২ দিন।

মনছুর হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘অসুস্থতার পুরো সময়টাই আমি বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু আমার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও সর্দি, মাথা ব্যথাসহ কিছু সমস্যা ছিল। এ কারণে নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার তিন সপ্তাহ পরও নমুনা জমা দেয়। তখন রিপোর্ট আসে ‘করোনা পজেটিভ’। এরপর ৫/৭ দিন আমি পুরোপুরি সুস্থ অনুভব করি। তখন আবারও নমুনা জমা দেয়। রিপোর্ট আসে ‘করোনা নেগেটিভ’। এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ।’ তিনি জানান, করোনা উপসর্গ থেকে তার পুরোপুরি মুক্ত হতে সময় লেগেছে ৩৫/৩৬ দিন।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেছেন, ‘রোগী যতদিন আক্রান্ত থাকবে, যতদিন তার ভাইরাস বের হতে থাকবে, ততদিন সে আরেকজনকে সংক্রমণ করতে পারে। এক্ষেত্রে যদি আইসোলেশন ঠিকমতো হয়... এবং যারা সেবা দেবে তাদের সুরক্ষা যদি ঠিকমতো হয় তাহলে সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াবে না। যে দীর্ঘদিন ভাইরাস বহন করবে তার থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকবেই। এক্ষেত্রে আইসোলেশনের বিকল্প নেই।’

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত তরুণদের সংখ্যা বেশি। কিন্তু করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যা বেশি।

গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীদের ৫৫ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এরমধ্যে আবার ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৮ শতাংশ এবং ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২৭ শতাংশ।

অন্যদিকে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ৬০ বছর ও এর বেশি বয়সী ৩৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

করোনায় বয়স্ক ব্যক্তিদের বেশি মৃত্যু হওয়ার কারণ সম্পর্কে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম আলমগীর বলেন, ‘এটা এলে সারাবিশে^ই হচ্ছে, করোনায় বয়স্ক নাগরিকদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। কারণ বয়স্ক ব্যক্তিরা এমনিতেই নানা কম্পি্লকেশনে ভোগেন। এই অবস্থায় করোভাইরাস শরীরে ঢোকার পর শরীরের অন্য অর্গানের ক্ষতি করে, এতে এক পর্যায়ে ভাইরাস বের হলেও শরীরের অন্য অর্গানের রিকভারি হয় না। এ কারণে বয়স্ক নাগরিকদের বেশি মৃত্যু হচ্ছে।’

সম্প্রতি করোনায় মৃত্যুর হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ সম্পর্কে ডা. এসএম আলমগীর বলেন, ‘এখন যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই গত ছয় সপ্তাহ ধরে অসুস্থ ছিল, হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এই মৃত্যুর হারটাও কমে আসছে। খুব শীঘ্রই সংক্রমণও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।’

এদিকে রাজশাহীর সাংবাদিক আসাদুজ্জামান নূরের করোনা পজেটিভ থেকে নেগেটিভ হতে সময় লেগেছে ৫৭ দিন। মৃদু জ্বরে আক্রান্ত হবার পর গত ১৮ জুন তিনি ‘করোনা পজেটিভ’ রিপোর্ট পান। এরপর টানা চারবার নমুনা পরীক্ষায় রেজাল্ট ‘পজেটিভ’ আসে। গত ১৪ আগস্ট দেয়া নমুনা পরীক্ষায় ‘করোনা নেগেটিভ’ আসে। এই সময়ে দু’দিন জ্বর ছাড়া আর কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু বারবার তার রিপোর্ট পজেটিভ আসছিল।’

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত ৩১ ডিসেম্বর প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর বিশ^ব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পরে করোনা সংক্রমণ। আর বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর গত ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

গতকাল পর্যন্ত দেশে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে দেশে করোনায় মোট ৩ হাজার ৯৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের শীর্ষ দেশের তালিকায় ১৫তম স্থানে রয়েছে। বিশে^র ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।