গোপালগঞ্জ জেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হামিদুল শরীফকে গুলি করে হত্যার নেপথ্যে কাজ করেছে দুই খুনির দুই স্বার্থ। একজন ভেবেছিলেন, হামিদুলকে হত্যা করা হলে তার লোক পরবর্তী মেম্বার হবেন। আরেক খুনি ভেবেছিলেন, হামিদুলকে হত্যা করলে ফেঁসে যাবে তাকে অপহরণ মামলার আসামি করা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফ। কারণ অনাস্থা দেয়াকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কিছুটা দ্বন্দ্ব চলছিল নিহত মেম্বারের। এ ঘটনার প্রধান আসামি রবিউল শরীফকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এর আগে, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পাটুয়াটলি থেকে রবিউল শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। গত রোববার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করা হয় আমির মোল্লাকে। পৃথক অভিযানে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভ্যানচালক সাগরকে গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে সিআইডির এলআইসি শাখা। অভিযান ৩টিরই নেতৃত্ব দেন এলআইসি শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদরদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ) মো. মোমিন হোসেন বলেন, ঘটনার পরপরই সিআইডি ছায়াতদন্ত শুরু করে। প্রথমে ঘটনার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি শনাক্ত করা হয়। পরে ওই মোটরসাইকেলের (গোপালগঞ্জ ল-১১-১৪৮১) সূত্র ধরে একটি পেট্রোল পাম্প ও রুপসা সেতুর টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরা ফুটেজের সহায়তায় আসামিদের শনাক্ত করা হয়। পরে যশোরে অভিযান পরিচালনা করে মোটর সাইকেলের মালিক আমির মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় রবিউলকে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য।
হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, রবিউল ও আমির মোল্লা দুইজনেই যশোরে থাকেন। রবিউলের বাড়ি নিহত মেম্বারের গ্রামেই। এর পাশের গ্রামেই বাড়ি আমির মোল্লার। রবিউল ভেবেছিলেন, হামিদুলকে হত্যা করলে তার লোক পরবর্তী মেম্বার হবে। অন্যদিকে, একটি অপহরণ মামলার আসামি করানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফের উপর ক্ষোভ ছিল আমিরের। কয়েক মেম্বার মিলে অনাস্থা দেয়াকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কিছুটা দ্বন্দ্ব ছিল হামিদুলের। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চেয়ারম্যানকে ফাঁসিয়ে দিতে হামিদুলকে হত্যার চিন্তা করে সে।
পরে রবিউলের সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা করে যশোরের এক সন্ত্রাসীর কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে। ঘটনার দিন ভ্যান থামিয়ে হামিদুলের বুকের বাম পাশে ৪টি গুলি করে আমির মোল্লা। এরপর মোটরসাইকেল যোগেই তারা আবার যশোরে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী সাগরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা তদন্তে বেড়িয়ে আসবে।
গোপিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফ বলেন, আমির মোল্লাকে আমি চিনি না, সুতরাং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর প্রশ্নই আসে না। তবে রবিউল শরীফকে চিনি, সে হামিদুল শরীফের পাশের বাড়ির বাসিন্দা। হামিদুলসহ কয়েকজন ইউপি সদস্য মিলে অনাস্থা আনছে বলে যে কথা সিআইডি কর্মকর্তারা বলেন, তা অস্বীকার করেছেন লাচ্চু শরীফ। প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর হাই স্কুলের কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হামিদুল (৪৫)। এ ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
গোপালগঞ্জ জেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হামিদুল শরীফকে গুলি করে হত্যার নেপথ্যে কাজ করেছে দুই খুনির দুই স্বার্থ। একজন ভেবেছিলেন, হামিদুলকে হত্যা করা হলে তার লোক পরবর্তী মেম্বার হবেন। আরেক খুনি ভেবেছিলেন, হামিদুলকে হত্যা করলে ফেঁসে যাবে তাকে অপহরণ মামলার আসামি করা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফ। কারণ অনাস্থা দেয়াকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কিছুটা দ্বন্দ্ব চলছিল নিহত মেম্বারের। এ ঘটনার প্রধান আসামি রবিউল শরীফকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এর আগে, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পাটুয়াটলি থেকে রবিউল শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। গত রোববার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করা হয় আমির মোল্লাকে। পৃথক অভিযানে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভ্যানচালক সাগরকে গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে সিআইডির এলআইসি শাখা। অভিযান ৩টিরই নেতৃত্ব দেন এলআইসি শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদরদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ) মো. মোমিন হোসেন বলেন, ঘটনার পরপরই সিআইডি ছায়াতদন্ত শুরু করে। প্রথমে ঘটনার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি শনাক্ত করা হয়। পরে ওই মোটরসাইকেলের (গোপালগঞ্জ ল-১১-১৪৮১) সূত্র ধরে একটি পেট্রোল পাম্প ও রুপসা সেতুর টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরা ফুটেজের সহায়তায় আসামিদের শনাক্ত করা হয়। পরে যশোরে অভিযান পরিচালনা করে মোটর সাইকেলের মালিক আমির মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় রবিউলকে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য।
হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, রবিউল ও আমির মোল্লা দুইজনেই যশোরে থাকেন। রবিউলের বাড়ি নিহত মেম্বারের গ্রামেই। এর পাশের গ্রামেই বাড়ি আমির মোল্লার। রবিউল ভেবেছিলেন, হামিদুলকে হত্যা করলে তার লোক পরবর্তী মেম্বার হবে। অন্যদিকে, একটি অপহরণ মামলার আসামি করানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফের উপর ক্ষোভ ছিল আমিরের। কয়েক মেম্বার মিলে অনাস্থা দেয়াকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কিছুটা দ্বন্দ্ব ছিল হামিদুলের। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চেয়ারম্যানকে ফাঁসিয়ে দিতে হামিদুলকে হত্যার চিন্তা করে সে।
পরে রবিউলের সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা করে যশোরের এক সন্ত্রাসীর কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে। ঘটনার দিন ভ্যান থামিয়ে হামিদুলের বুকের বাম পাশে ৪টি গুলি করে আমির মোল্লা। এরপর মোটরসাইকেল যোগেই তারা আবার যশোরে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী সাগরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা তদন্তে বেড়িয়ে আসবে।
গোপিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফ বলেন, আমির মোল্লাকে আমি চিনি না, সুতরাং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর প্রশ্নই আসে না। তবে রবিউল শরীফকে চিনি, সে হামিদুল শরীফের পাশের বাড়ির বাসিন্দা। হামিদুলসহ কয়েকজন ইউপি সদস্য মিলে অনাস্থা আনছে বলে যে কথা সিআইডি কর্মকর্তারা বলেন, তা অস্বীকার করেছেন লাচ্চু শরীফ। প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর হাই স্কুলের কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হামিদুল (৪৫)। এ ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।