মহিবুল্লাহ হত্যা, আরও ২ জন গ্রেপ্তার : সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয়

­কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আরও ২ রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছে এপিবিএনের সদস্যরা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, জিয়াউর রহমান ও আবদুস সালাম।

শুক্রবার রাতে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একটি টিম উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের উখিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে এপিবিএন। ক্যাম্প নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) নাঈমুল হক গতকাল দুই রোহিঙ্গা গ্রেপ্তারের বিষয়টি সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে এপিবিএনের সদস্যরা মোহাম্মদ সেলিম ওরফে লম্বা সেলিমকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকেও উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হন্তান্তর করা হয়। এ নিয়ে মহ্বিুল্লাহ হত্যায় এ পর্যন্ত তিন সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মহিবুল্লাহ হত্যাকা-ের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের ভাই হাবিব উল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শিবিরে হত্যার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে, পুরো ক্যাম্প জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সন্ত্রাস। খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মাদক পাচার ছাড়াও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার মাত্রা বেড়েই চলেছে।

তার মধ্যে মাদকসংশ্লিষ্ট অপরাধীর সংখ্যা বেশি। ২০১৭ সালে নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ৭৬টি, এতে আসামি ছিল ১৫৯ রোহিঙ্গা। গত চার বছরে প্রায় ১৩শ মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত চার বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ১ হাজার ৩০০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা হয়েছে মাদকসংশ্লিষ্ট ৭৬২টি। খুনের মামলা হয়েছে ৭২টি।

অন্যান্য মামলার মধ্যে ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, অস্ত্র ও মাদক পাচার, মানব পাচার, সরকারি কাজে বাধাদান। এছাড়া জেলা পুলিশের হাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক ৩২ মাদক পাচারকারী গডফাদারের তথ্য রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা কাইসার হামিদ জানান, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কারণে আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন স্থানীয়রা। তাদের সন্ত্রাস শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রাও। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে ইতোমধ্যে খুন, অপহরণ এর শিকার হয়েছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়েছে জেলার অনেক স্থানে। তারা জেলার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস, দখলবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে। আমরা স্থানীয়রা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

টেকনাফের হ্নীলার সৈয়দুল আমিন জানান, রোহিঙ্গাদের যত্রতত্র বিচরণে আমরা উদ্বিগ্ন। এরা এখন স্থানীয়দের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাধ্যমেই ইয়াবা পাচার বেড়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে যারা ইয়াবা পাচারে জড়িত তাদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ীদের। যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইয়াবা ব্যবসা বাধাহীন করতেই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা খুন ও অপহরণে মেতে উঠেছে। এরা শুধুমাত্র মাদক নয়, স্বর্ণ পাচারেও জড়িত। ইতোমধ্যে যারা ধরা পড়েছে তারা সবাই ইয়াবা বহনকারী। তবে গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক প্রতিরোধে কাজ করছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে ৩২ মাদক পাচারকারী গডফাদার চিহ্নিত করা হয়েছে। ইয়াবার বড় বড় চালান পাচারে এই গডফাদাররাই জড়িত।

রবিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২১ , ১৮ আশ্বিন ১৪২৮ ২৪ সফর ১৪৪৩

মহিবুল্লাহ হত্যা, আরও ২ জন গ্রেপ্তার : সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয়

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

­কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আরও ২ রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছে এপিবিএনের সদস্যরা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, জিয়াউর রহমান ও আবদুস সালাম।

শুক্রবার রাতে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একটি টিম উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের উখিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে এপিবিএন। ক্যাম্প নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) নাঈমুল হক গতকাল দুই রোহিঙ্গা গ্রেপ্তারের বিষয়টি সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে এপিবিএনের সদস্যরা মোহাম্মদ সেলিম ওরফে লম্বা সেলিমকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকেও উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হন্তান্তর করা হয়। এ নিয়ে মহ্বিুল্লাহ হত্যায় এ পর্যন্ত তিন সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মহিবুল্লাহ হত্যাকা-ের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের ভাই হাবিব উল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শিবিরে হত্যার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে, পুরো ক্যাম্প জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সন্ত্রাস। খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মাদক পাচার ছাড়াও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার মাত্রা বেড়েই চলেছে।

তার মধ্যে মাদকসংশ্লিষ্ট অপরাধীর সংখ্যা বেশি। ২০১৭ সালে নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ৭৬টি, এতে আসামি ছিল ১৫৯ রোহিঙ্গা। গত চার বছরে প্রায় ১৩শ মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত চার বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ১ হাজার ৩০০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা হয়েছে মাদকসংশ্লিষ্ট ৭৬২টি। খুনের মামলা হয়েছে ৭২টি।

অন্যান্য মামলার মধ্যে ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, অস্ত্র ও মাদক পাচার, মানব পাচার, সরকারি কাজে বাধাদান। এছাড়া জেলা পুলিশের হাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক ৩২ মাদক পাচারকারী গডফাদারের তথ্য রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা কাইসার হামিদ জানান, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কারণে আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন স্থানীয়রা। তাদের সন্ত্রাস শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রাও। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে ইতোমধ্যে খুন, অপহরণ এর শিকার হয়েছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়েছে জেলার অনেক স্থানে। তারা জেলার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস, দখলবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে। আমরা স্থানীয়রা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

টেকনাফের হ্নীলার সৈয়দুল আমিন জানান, রোহিঙ্গাদের যত্রতত্র বিচরণে আমরা উদ্বিগ্ন। এরা এখন স্থানীয়দের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাধ্যমেই ইয়াবা পাচার বেড়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে যারা ইয়াবা পাচারে জড়িত তাদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ীদের। যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইয়াবা ব্যবসা বাধাহীন করতেই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা খুন ও অপহরণে মেতে উঠেছে। এরা শুধুমাত্র মাদক নয়, স্বর্ণ পাচারেও জড়িত। ইতোমধ্যে যারা ধরা পড়েছে তারা সবাই ইয়াবা বহনকারী। তবে গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক প্রতিরোধে কাজ করছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে ৩২ মাদক পাচারকারী গডফাদার চিহ্নিত করা হয়েছে। ইয়াবার বড় বড় চালান পাচারে এই গডফাদাররাই জড়িত।