যাত্রাবাড়ী থেকে অপহরণ লাশ মিললো কালীগঞ্জে

মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ৬ বছর পর রহস্য উদ্ঘাটন

একটি বিদেশি জাহাজে শেফ বা বাবুর্চির চাকরি করতেন জয়নাল আবেদীন। বাড়ি মাগুরায়। ছুটিতে চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছিলেন বাড়ি। রাত ৮টার দিকে বাসযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মোবাইল ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। স্ত্রীকে জানান, বাসটি তখন চট্টগ্রামের সীতাকু- অতিক্রম করছে।

পরদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জয়নালের মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর কাছে ফোন আসে। কিন্তু অন্য পাশে অপরিচিত কণ্ঠ। ওই ব্যক্তি জানায়, জয়নালকে অপহরণ করা হয়েছে। তাকে সুস্থ ফেরত পেতে হলে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। জয়নালের মায়ের সঙ্গেও কথা বলে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি। পরে জয়নালের স্ত্রী ও তার ভাই মারুফ হোসেন অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি ও তার সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। অপহরণকারীরা একটি বিকাশ নম্বর পাঠায়। এরপর আসামিদের চাহিদামত প্রথমে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন তারা।

পরে বিষয়টি মাগুরা থানা পুলিশকে জানালে তারা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জয়নালের অবস্থান চিহ্নিত করে। তার অবস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পারটেক্স নামে এক প্রতিষ্ঠানের কারখানায় বলে জানতে পারে পুলিশ। পরে পুলিশ জানায়, জয়নালকে অপহরণকারীরা হত্যা করেছে এবং তার লাশ উদ্ধার করা হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জ সড়কের কাছে। ঘটনাটি ২০১৫ সালে ৮ অক্টোবরের। ওই ঘটনায় পর গত ৯ অক্টোবর ২০১৫ নিহতের ভাই ইছহাক আলী কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আড়াই বছরেরও বেশি সময় (২০১৫ সালের ৯ অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের ১ মে পর্যন্ত) তদন্ত করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তাও পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু তারা কোন কূল-কিনারা করতে পারেননি। রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে পুলিশ।

তবে আদালত চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ না করে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশন পিবিআইকে।

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান সংবাদকে জানান, পিবিআই ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। আলোচিত এ ঘটনাটি তারা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এবং যে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানো হয়েছে তার ক্লু ধরে রহস্য উদ্ঘাটন করে। এরপর ঘটনায় জড়িত রাসেল খান ও আমজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ঘটনায় জড়িত আরও চারজনের নাম বলেছে। মোট অভিযুক্ত ছয়জন। তার মধ্যে পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্ত দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে শীঘ্রই চার্জশিট দেয়া হবে। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে।

শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২ , ০১ মাঘ ১৪২৮ ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৩

যাত্রাবাড়ী থেকে অপহরণ লাশ মিললো কালীগঞ্জে

মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ৬ বছর পর রহস্য উদ্ঘাটন

বাকী বিল্লাহ

একটি বিদেশি জাহাজে শেফ বা বাবুর্চির চাকরি করতেন জয়নাল আবেদীন। বাড়ি মাগুরায়। ছুটিতে চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছিলেন বাড়ি। রাত ৮টার দিকে বাসযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মোবাইল ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। স্ত্রীকে জানান, বাসটি তখন চট্টগ্রামের সীতাকু- অতিক্রম করছে।

পরদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জয়নালের মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর কাছে ফোন আসে। কিন্তু অন্য পাশে অপরিচিত কণ্ঠ। ওই ব্যক্তি জানায়, জয়নালকে অপহরণ করা হয়েছে। তাকে সুস্থ ফেরত পেতে হলে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। জয়নালের মায়ের সঙ্গেও কথা বলে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি। পরে জয়নালের স্ত্রী ও তার ভাই মারুফ হোসেন অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি ও তার সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। অপহরণকারীরা একটি বিকাশ নম্বর পাঠায়। এরপর আসামিদের চাহিদামত প্রথমে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন তারা।

পরে বিষয়টি মাগুরা থানা পুলিশকে জানালে তারা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জয়নালের অবস্থান চিহ্নিত করে। তার অবস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পারটেক্স নামে এক প্রতিষ্ঠানের কারখানায় বলে জানতে পারে পুলিশ। পরে পুলিশ জানায়, জয়নালকে অপহরণকারীরা হত্যা করেছে এবং তার লাশ উদ্ধার করা হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জ সড়কের কাছে। ঘটনাটি ২০১৫ সালে ৮ অক্টোবরের। ওই ঘটনায় পর গত ৯ অক্টোবর ২০১৫ নিহতের ভাই ইছহাক আলী কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আড়াই বছরেরও বেশি সময় (২০১৫ সালের ৯ অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের ১ মে পর্যন্ত) তদন্ত করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তাও পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু তারা কোন কূল-কিনারা করতে পারেননি। রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে পুলিশ।

তবে আদালত চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ না করে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশন পিবিআইকে।

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান সংবাদকে জানান, পিবিআই ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। আলোচিত এ ঘটনাটি তারা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এবং যে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানো হয়েছে তার ক্লু ধরে রহস্য উদ্ঘাটন করে। এরপর ঘটনায় জড়িত রাসেল খান ও আমজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ঘটনায় জড়িত আরও চারজনের নাম বলেছে। মোট অভিযুক্ত ছয়জন। তার মধ্যে পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্ত দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে শীঘ্রই চার্জশিট দেয়া হবে। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে।