পদ্মা সেতু, দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বিশ্বব্যাংক দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেয় : দাবি মসিউরের

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান দাবি করেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বিশ্ব ব্যাংকসহ ঋণদাতা সংস্থাগুলো দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেয়ার পাশাপাশি বিদেশে চাকরির প্রলোভনও দেখিয়েছিল।

গত শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ঠিক হয়ে যাওয়ার পর এক দশক আগের সেই কথা তিনি প্রকাশ্যে আনলেন। যা আগে কখনও সামনে আসেনি।

বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, আইডিবি ও জাইকার অর্থায়নে ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরুর পর দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্ব ব্যাংক। তখন বিশ্ব ব্যাংকের চাপে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করতে হয়, ছুটিতে যেতে হয় সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসাইনকে। মামলাও হয়।

তখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর মসিউর রহমানের পদত্যাগের শর্তও দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু তিনি রাজি হননি। এরপর বিশ্ব ব্যাংক আর এই প্রকল্পে ফেরেনি; আর নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে কাজ শেষ করে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। মসিউর রহমান বলেন, আমার ওপর যে চাপ ছিল যেমন, এখানে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ছাড়া অন্য যারা এতে অর্থায়ন করছে, বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এরা একদিন সকালে আগে সময় ঠিক করে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইল। প্রথমে তারা বলল যে, জাপানের অ্যাম্বাসির অফিসে। আমি বললাম, দেখো জাপান অ্যাম্বাসির অফিসে আমি যাব না। আমার নিজের কাছে যুক্তি ছিল যে, জাপানি অ্যাম্বাসির কাছে যদি আমি যাই, তাহলে যেটা মানুষের ধারণা হবে এবং প্রচার হবে- সেটা হলো, আমি বোধহয় তাদের কাছে নতজানু হয়ে কোন একটা সুবিধা চাচ্ছি। জাপানি অ্যাম্বাসেডরকে বললাম, তুমি তাহলে আমার এখানে আস। জাপানি অ্যাম্বাসেডর বলল, ‘না, তোমার ওখানে গেলে সাংবাদিকদের ফেইস করতে হবে, আমি সাংবাদিকদের ফেইস করতে পারব না’। আমি বললাম, সাংবাদিকদের আমি ফেস করব, তুমি আস।

তিনি বলেন, ওরা এসে আমাকে বলল যে, আমাকে দায়িত্ব ত্যাগ করতে হবে, দেশও ত্যাগ করতে হবে। দেশত্যাগের শর্ত হলো তারা আমাকে বিদেশে বিশ্ব ব্যাংকে বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা কোথাও আমাকে একটা কনসালট্যান্সি জোগাড় করে দিবে এবং আমি যে বেতন চাই, সেই বেতনই তারা ব্যবস্থা করে দেবে। অথবা তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কিছু কাজ ঠিক করে দেবে এবং আমাকে তারা টাকা দেয়ার বন্দোবস্ত করে দেবে। আমার উত্তর হলো দেখো, আমার যদি টাকা করার ইচ্ছা থাকত, তাহলে তোমরা যে দোষারোপ করছ, সেখানেই তো আমি টাকা করতে পারতাম। ওদের যেটা প্রস্তাব, এটা হলো একটা সামঞ্জস্যহীন প্রস্তাব। যে ‘দোষ’ করেছে, তাকে আবার তারা পুরস্কৃত করবে।

সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা ও বন্ধুরাও তাকে বিদেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানান মসিউর। তিনি আরও বলেন, যেটা আমার বলা উচিত হবে এবং না বলাটা অনুচিত হবে যে, এই শক্ত পজিশন নেয়ার ক্ষমতাটা কোত্থেকে আসলো? বিশ্ব ব্যাংক বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কিছু গুরুজন স্থানীয়, যারা প্রভাবশালী, দু’একজন আমার বন্ধু, তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত- বন্ধু হিসেবে তারা আমাকে বলেছে যে, দেখো তোমার নামে এসব ছড়াচ্ছে। তুমি কেন দায়িত্ব ত্যাগ করো না এবং দেশ ছাড় না কেন?

মসিউর রহমান বলেন, আমি দেশ ছাড়ব না এইজন্য যে, দেশের বাইরে গেলে আমার পায়ের তলায় মাটি থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাহস জুগিয়েছেন, এ কথা বলতে বলতেই লাইভ অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলেন মসিউর। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলে চলেন, আমি যেটা বলি সেটা হলো, আমার ওপর একটা বড় ছায়া আছে। সেই ছায়াটা হল- বঙ্গবন্ধুর ছায়া। ওই ছায়া যতদিন থাকবে, ততদিন আমি নিরাপদ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও সৎ সাহস না থাকলে পদ্মা সেতু হতো না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট শেষ কর্মদিবসে এই ঋণ বাতিল করে দেন। ঋণের অনুমোদন দেয় বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড। বোর্ডকে নাকচ করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের আছে কি না, এই একটা প্রশ্ন থাকতে পারে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরু থেকেই এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এই উপদেষ্টা বলেন, পদ্মা সেতু শুরু হওয়ার আগে বা এই দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংক সোচ্চার হওয়ার আগে যেটা অনুসরণ করা হতো, যে সংস্থা ঋণ দিয়েছে, প্রত্যেকে তাদের নিজের নিজের নিয়ম মেনে চলত। কিন্তু এইখানে বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা এদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যদি বিশ্ব ব্যাংক কোথাও দুর্নীতির জন্য কোন সহায়তা বন্ধ করে তাহলে এরাও সে সহায়তা বন্ধ করবে। এরকম চাপ তারা সৃষ্টি করল। এই যে আন্তর্জাতিক ম-লে চাপ সৃষ্টি এর বিরুদ্ধে একটা পজিশন নেয়া, এটা অত্যন্ত সাহসী না হলে সম্ভব হতো না।

পদ্মা সেতুর চালুর পর বাংলাদেশের উন্নয়ন কিভাবে ত্বরান্বিত হবে সে কথাও তুলে ধরেন তিনি। মসিউর বলেন, উন্নয়ন ততক্ষণ শুরু হয় না, যখন না মানুষের মনে উন্নয়ন স্পৃহা জাগে। দ্বিতীয়ত যতক্ষণ না তাদের এই আস্থা জাগে যে, উন্নয়ন শুধু স্বপ্ন না, উন্নয়ন তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে। আর এই বাস্তবায়ন সম্ভব হয় দেশের নেতৃত্ব ও নীতি যদি সঠিক পথে চলে। জনগণের আস্থা ও স্পৃহাই হলো সব থেকে বড় শক্তি। এই স্পৃহার এখনকার উৎস শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু সেতু যখন শুরু হয়, তখনও বিশ্ব ব্যাংক এটা ‘ভায়াবল’ হবে না বলে আপত্তি তুলেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যখন অনেক উন্নতি হবে, তখন বিশ্ব ব্যাংক আবার নিজে থেকেই ফিরে আসল। বঙ্গবন্ধু সেতু জাতীয় আয়ে ২ থেকে ৪ শতাংশ অবদান রাখছে, যেটা সমীক্ষার থেকেও বেশি।

পদ্মা সেতু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প বাড়বে, মোংলা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং এশিয়ান হাইওয়ে সুবিধা ব্যবহার করে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ছাড়াও দেশের বাইরে যাওয়ার সুবিধা হবে বলে জানান তিনি। এর মানে হলো বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির একটা কেন্দ্রে এসে গেল। এই কেন্দ্রের যে ক্ষমতা, সেটা অর্জনের জন্য আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। সেই কাজের উৎস হলো বিশ্বাস ও আস্থা, যেটা এই নেতৃত্বের কাছ থেকে পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এমন সেতু আগামী ৫০ বা ১০০ বছরেও আর একটি হবে না। বিশ্ব ব্যাংক একটি শতবর্ষী প্রকল্পের অংশীদার হওয়া থেকে নিজেকে বাদ দিয়েছে। বাংলাদেশ এককভাবে এই শতবর্ষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এটা দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দেবে। এটা একটা বড় অর্জন।

পদ্মা সেতু নিয়ে যে ‘ষড়যন্ত্র’ সেটা ‘আপতদৃষ্টিতে’ কোন ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘রাজনীতির সাতকাহন’ নামে আওয়ামী লীগের এ সাপ্তাহিক আয়োজনে সঞ্চালনা করেন দলের উপ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, বক্তৃতা করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

আরও খবর
দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গ করেন ১৬১ বাংলাদেশি
সব নির্বাচনকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শেষ বিদায় একুশের গানের কবিকে
বিশ্বের ৪০ শতাংশ দুগ্ধ উৎপাদন হয় এশিয়ায়
বর্ষার আগে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে, ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি
সরকার ছাত্রদের ধ্বংস করছে ফখরুল
কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন ঠেকাতে ৩৬০ কোটি টাকার প্রকল্প, কাজ শেষ পর্যায়ে
খোমেনি স্টাইলে বিপ্লব করার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি : কাদের
ক্ষমতার পরিবর্তন ২০২৩ সালের আগেই : নূর
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের সুমন মিয়া হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন, ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট শীঘ্রই

রবিবার, ২৯ মে ২০২২ , ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৭ শাওয়াল ১৪৪৩

পদ্মা সেতু, দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বিশ্বব্যাংক দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেয় : দাবি মসিউরের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান দাবি করেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বিশ্ব ব্যাংকসহ ঋণদাতা সংস্থাগুলো দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেয়ার পাশাপাশি বিদেশে চাকরির প্রলোভনও দেখিয়েছিল।

গত শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ঠিক হয়ে যাওয়ার পর এক দশক আগের সেই কথা তিনি প্রকাশ্যে আনলেন। যা আগে কখনও সামনে আসেনি।

বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, আইডিবি ও জাইকার অর্থায়নে ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরুর পর দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্ব ব্যাংক। তখন বিশ্ব ব্যাংকের চাপে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করতে হয়, ছুটিতে যেতে হয় সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসাইনকে। মামলাও হয়।

তখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর মসিউর রহমানের পদত্যাগের শর্তও দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু তিনি রাজি হননি। এরপর বিশ্ব ব্যাংক আর এই প্রকল্পে ফেরেনি; আর নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে কাজ শেষ করে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। মসিউর রহমান বলেন, আমার ওপর যে চাপ ছিল যেমন, এখানে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ছাড়া অন্য যারা এতে অর্থায়ন করছে, বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এরা একদিন সকালে আগে সময় ঠিক করে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইল। প্রথমে তারা বলল যে, জাপানের অ্যাম্বাসির অফিসে। আমি বললাম, দেখো জাপান অ্যাম্বাসির অফিসে আমি যাব না। আমার নিজের কাছে যুক্তি ছিল যে, জাপানি অ্যাম্বাসির কাছে যদি আমি যাই, তাহলে যেটা মানুষের ধারণা হবে এবং প্রচার হবে- সেটা হলো, আমি বোধহয় তাদের কাছে নতজানু হয়ে কোন একটা সুবিধা চাচ্ছি। জাপানি অ্যাম্বাসেডরকে বললাম, তুমি তাহলে আমার এখানে আস। জাপানি অ্যাম্বাসেডর বলল, ‘না, তোমার ওখানে গেলে সাংবাদিকদের ফেইস করতে হবে, আমি সাংবাদিকদের ফেইস করতে পারব না’। আমি বললাম, সাংবাদিকদের আমি ফেস করব, তুমি আস।

তিনি বলেন, ওরা এসে আমাকে বলল যে, আমাকে দায়িত্ব ত্যাগ করতে হবে, দেশও ত্যাগ করতে হবে। দেশত্যাগের শর্ত হলো তারা আমাকে বিদেশে বিশ্ব ব্যাংকে বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা কোথাও আমাকে একটা কনসালট্যান্সি জোগাড় করে দিবে এবং আমি যে বেতন চাই, সেই বেতনই তারা ব্যবস্থা করে দেবে। অথবা তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কিছু কাজ ঠিক করে দেবে এবং আমাকে তারা টাকা দেয়ার বন্দোবস্ত করে দেবে। আমার উত্তর হলো দেখো, আমার যদি টাকা করার ইচ্ছা থাকত, তাহলে তোমরা যে দোষারোপ করছ, সেখানেই তো আমি টাকা করতে পারতাম। ওদের যেটা প্রস্তাব, এটা হলো একটা সামঞ্জস্যহীন প্রস্তাব। যে ‘দোষ’ করেছে, তাকে আবার তারা পুরস্কৃত করবে।

সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা ও বন্ধুরাও তাকে বিদেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানান মসিউর। তিনি আরও বলেন, যেটা আমার বলা উচিত হবে এবং না বলাটা অনুচিত হবে যে, এই শক্ত পজিশন নেয়ার ক্ষমতাটা কোত্থেকে আসলো? বিশ্ব ব্যাংক বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কিছু গুরুজন স্থানীয়, যারা প্রভাবশালী, দু’একজন আমার বন্ধু, তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত- বন্ধু হিসেবে তারা আমাকে বলেছে যে, দেখো তোমার নামে এসব ছড়াচ্ছে। তুমি কেন দায়িত্ব ত্যাগ করো না এবং দেশ ছাড় না কেন?

মসিউর রহমান বলেন, আমি দেশ ছাড়ব না এইজন্য যে, দেশের বাইরে গেলে আমার পায়ের তলায় মাটি থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাহস জুগিয়েছেন, এ কথা বলতে বলতেই লাইভ অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলেন মসিউর। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলে চলেন, আমি যেটা বলি সেটা হলো, আমার ওপর একটা বড় ছায়া আছে। সেই ছায়াটা হল- বঙ্গবন্ধুর ছায়া। ওই ছায়া যতদিন থাকবে, ততদিন আমি নিরাপদ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও সৎ সাহস না থাকলে পদ্মা সেতু হতো না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট শেষ কর্মদিবসে এই ঋণ বাতিল করে দেন। ঋণের অনুমোদন দেয় বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড। বোর্ডকে নাকচ করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের আছে কি না, এই একটা প্রশ্ন থাকতে পারে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরু থেকেই এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এই উপদেষ্টা বলেন, পদ্মা সেতু শুরু হওয়ার আগে বা এই দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংক সোচ্চার হওয়ার আগে যেটা অনুসরণ করা হতো, যে সংস্থা ঋণ দিয়েছে, প্রত্যেকে তাদের নিজের নিজের নিয়ম মেনে চলত। কিন্তু এইখানে বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা এদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যদি বিশ্ব ব্যাংক কোথাও দুর্নীতির জন্য কোন সহায়তা বন্ধ করে তাহলে এরাও সে সহায়তা বন্ধ করবে। এরকম চাপ তারা সৃষ্টি করল। এই যে আন্তর্জাতিক ম-লে চাপ সৃষ্টি এর বিরুদ্ধে একটা পজিশন নেয়া, এটা অত্যন্ত সাহসী না হলে সম্ভব হতো না।

পদ্মা সেতুর চালুর পর বাংলাদেশের উন্নয়ন কিভাবে ত্বরান্বিত হবে সে কথাও তুলে ধরেন তিনি। মসিউর বলেন, উন্নয়ন ততক্ষণ শুরু হয় না, যখন না মানুষের মনে উন্নয়ন স্পৃহা জাগে। দ্বিতীয়ত যতক্ষণ না তাদের এই আস্থা জাগে যে, উন্নয়ন শুধু স্বপ্ন না, উন্নয়ন তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে। আর এই বাস্তবায়ন সম্ভব হয় দেশের নেতৃত্ব ও নীতি যদি সঠিক পথে চলে। জনগণের আস্থা ও স্পৃহাই হলো সব থেকে বড় শক্তি। এই স্পৃহার এখনকার উৎস শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু সেতু যখন শুরু হয়, তখনও বিশ্ব ব্যাংক এটা ‘ভায়াবল’ হবে না বলে আপত্তি তুলেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যখন অনেক উন্নতি হবে, তখন বিশ্ব ব্যাংক আবার নিজে থেকেই ফিরে আসল। বঙ্গবন্ধু সেতু জাতীয় আয়ে ২ থেকে ৪ শতাংশ অবদান রাখছে, যেটা সমীক্ষার থেকেও বেশি।

পদ্মা সেতু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প বাড়বে, মোংলা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং এশিয়ান হাইওয়ে সুবিধা ব্যবহার করে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ছাড়াও দেশের বাইরে যাওয়ার সুবিধা হবে বলে জানান তিনি। এর মানে হলো বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির একটা কেন্দ্রে এসে গেল। এই কেন্দ্রের যে ক্ষমতা, সেটা অর্জনের জন্য আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। সেই কাজের উৎস হলো বিশ্বাস ও আস্থা, যেটা এই নেতৃত্বের কাছ থেকে পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এমন সেতু আগামী ৫০ বা ১০০ বছরেও আর একটি হবে না। বিশ্ব ব্যাংক একটি শতবর্ষী প্রকল্পের অংশীদার হওয়া থেকে নিজেকে বাদ দিয়েছে। বাংলাদেশ এককভাবে এই শতবর্ষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এটা দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দেবে। এটা একটা বড় অর্জন।

পদ্মা সেতু নিয়ে যে ‘ষড়যন্ত্র’ সেটা ‘আপতদৃষ্টিতে’ কোন ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘রাজনীতির সাতকাহন’ নামে আওয়ামী লীগের এ সাপ্তাহিক আয়োজনে সঞ্চালনা করেন দলের উপ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, বক্তৃতা করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।